একটি চৈনিক ঘরের রহস্য

  • লেখক: দীপ ঘোষ
  • শিল্পী: দীপ ঘোষ

নামটা দেখেই যারা ভাবছেন একটা জমজমাট রহস্য গল্প পাবেন, তারা কিন্তু নিরাশ হবেন না। হ্যাঁ পাঠক, এই লেখাটি কোন রহস্য অ্যাডভেঞ্চার গল্পের থেকে কম রোমাঞ্চকর নয়। এই গল্প এমন এক নতুন জাতির, যারা মানুষের হাতে তৈরি হয়েও আজ মানুষকেই হারিয়ে দিচ্ছে নানা বিষয়ে। অনেকে আশংকা করছেন যে মানবজাতি ধ্বংস হবার কারন হবে এই জাতি। এই লেখার মধ্যে দিয়ে চলুন বোঝার চেষ্টা করি সেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে।

     আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা – কথাটা শুনলেই মনে পড়ে কোন বিশাল রোবট বা কম্পিউটারের কথা, যে হেলায় তার সৃষ্টিকর্তা মানুষকে শক্তি আর বুদ্ধির খেলায় হারিয়ে দেয়, সমাধান করে ফেলে জটিল সব সমস্যার, কখনো বা বুঝতে চায় তার স্রষ্টাকে, তার অনুভূতিকে ছুঁতে চায় পসিট্রনিক মস্তিষ্কের সাহায্যে। সাহিত্য আর সিনেমায় এরকম বুদ্ধিমত্তার উদাহরন অনেক – আসিমভের রোবট সিরিজ, ক্লার্কের হ্যাল নামের কম্পিউটার থেকে সিনেমার স্কাইনেট বা ম্যাট্রিক্সের মেশিন শহরের রোবটরা। এদের কথা পড়লে আর বড় পর্দায় এদের কীর্তিকলাপ দেখলে মনের মধ্যে ভয় জন্মানো খুবই স্বাভাবিক। তার উপর কিছুদিন আগেই স্টিফেন হকিং, বিল গেটস আর ইলন মাস্কের মতো চিন্তাবিদরা সাবধান করে দিয়েছেন যে মানব সভ্যতার সব থেকে বড় শত্রু হতে পারে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই। বিভিন্ন পাশ্চাত্য দেশগুলি চালকহীন বিমান, গাড়ি আর রোবট তৈরির গবেষণায় প্রচুর ব্যয় করছে। আবার গুগুল আর মাইক্রোসফটের মতো প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলি চেষ্টা করছে কৃত্রিম বুদ্ধির কম্পিউটার তৈরি করতে যারা মানুষকে হারিয়ে দেবে বুদ্ধির খেলায়। কম্পিউটার অনেকদিন আগেই দাবায় বিভিন্ন বিশ্বচ্যাম্পিয়ানকে হারিয়েছে। সম্প্রতি গো নামে একটি বোর্ড গেমেও কম্পিউটারের কাছে হার স্বীকার করেছেন সেই খেলার চ্যাম্পিয়ান।

দক্ষিণাবর্তে ছবিগুলি হল ১) আসিমভের রোবট সিরিজ ২) ২০০১ আ স্পেস ওডিসি এর যন্ত্র হ্যাল ৩) দা টারমিনেটর সিনেমার খুনি রোবট ৪) দা ম্যাট্রিক্স সিনেমার রোবটদের শহর

     এতদূর পর্যন্ত পড়ে পাঠক হয়ত ভাবছেন, শেষের সেদিন ভয়ংকর, আর হয়ত বেশি দেরী নেই কম্পিউটারের পৃথিবী দখল করতে। কিন্তু তার আগে আমাদের বোঝা দরকার শুধু গাড়ি চালানো আর দাবা খেলায় পারদর্শী হলেই কি আমরা যন্ত্রকে বুদ্ধিমান বলবো?

     যারা এই বিষয়ে গবেষণা করেন তাদের মতে যন্ত্র যদি তার পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির সাহায্যে নিজের সফলতার হার সর্বোচ্চ করতে পারে তাহলেই তাকে বুদ্ধিমান বলা যেতে পারে। ব্যাপারটা বেশ জটিল তাই না? কিভাবে যন্ত্র তার পরিস্থিতিকে বুঝবে? কিভাবে তার কাজে সফল হবে? – এরকম অনেক প্রশ্ন চলে আসে এই ব্যখ্যার সঙ্গে। তার থেকে চলুন গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে, যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধু মানুষের কল্পনার বস্তু, তখন কয়েকজন গবেষক চেষ্টা করেছিলেন এর আরেকটি ব্যখ্যা দিতে। একটি বুদ্ধিমান যন্ত্র কি মানুষের কথা বুঝতে পারবে? ধরুন একটা সহজ বাক্য – কাল বৃষ্টি হবে। যন্ত্রের পক্ষে কথা গুলো বোঝা শক্ত নয়, কারন যা বলা হচ্ছে তা পুরোটাই তথ্য। কিন্তু যদি বলি – ‘আশা করি কাল বৃষ্টি হবে’, অথবা ‘কাল বৃষ্টি হলে বাঁচি’ – এই বাক্যগুলিতে যে মনের ভাব প্রকাশ পাচ্ছে তা বোঝা কি কম্পিউটারের পক্ষে সম্ভব? মানসিক অবস্থা বুঝতে হলে যন্ত্রেরও একটি মন থাকা আবশ্যিক। সেই মত অনুসারে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের উদ্দেশ্য যন্ত্রকে দিয়ে মানুষের বুদ্ধিকে আর মননকে নকল করানো। এই মতবাদের প্রবক্তা ছিলেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞ অ্যালান টুরিং।

অ্যালান টুরিং (১৯১২-১৯৫৪)

     ইতিহাস টুরিংকে মনে রাখবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানদের এনিগমা মেশিনের গুপ্ত তথ্য উদ্ধার করার উপায় বের করার জন্যে। মনে করা হয় এই আবিষ্কারের জন্যে হাজার হাজার মিত্রশক্তির সৈন্যের জীবন বেঁচেছিল আর ইউরোপের যুদ্ধ অন্তত দুই থেকে চার বছর আগে শেষ করা গেছিল। টুরিং ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। গনিতের সাথে সাথে কম্পিউটার বিদ্যা থেকে জীববিদ্যা পর্যন্ত, বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ছিল তার অবাধ বিচরণ। চল্লিশের দশক থেকেই টুরিং এর মনে, এই প্রশ্নটা ঘুরছিল – যন্ত্র কি কখনো বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে পারে? ১৯৫০ সালে তার গবেষণামূলক প্রবন্ধ ‘Computing Machinery and Intelligence’-এ তিনি প্রথম এই প্রশ্নটি তুললেন – যন্ত্র কি চিন্তা করতে পারে?

     এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে টুরিং কিন্তু কোন সংজ্ঞা বা জটিল ব্যখ্যার মধ্যে গেলেন না। তিনি বললেন, মানুষ চিন্তা করতে আর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে পারে। আমরা যা পারি সেটা যদি যন্ত্রও করতে পারে, তাহলে কেন তাকে বুদ্ধিমান বলবোনা ? কিন্তু কি করে বোঝা যাবে যন্ত্র মানুষের চিন্তাশক্তিকে নকল করতে পারছে কিনা? টুরিং বাতলে দিলেন খুব সহজ একটি উপায়। সেই সময়ের যুবক যুবতীদের ঘরোয়া পার্টিতে খুব প্রচলিত খেলা ছিল নকলনবিশি (imitation game) – এই খেলায় একজন হয় বিচারক আর দুজন যুবক যুবতী আলাদা হয়ে অন্য ঘরে বসে থাকে। হাতে লেখা চিরকুট অথবা টাইপরাইটারে লেখা চিঠি দিয়ে কথাবার্তা চলে বিচারকের সাথে বাকি দুজনের। দুজনেরই উদ্দেশ্য বিচারককে ঠকিয়ে নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের মানুষ হিসেবে প্রমান করা।

 

টুরিং টেস্টের একটি চিত্রায়ন

     টুরিং এই খেলাটিকেই ঈষৎ পরিবর্তন করে বললেন যে যুবক যুবতীর জায়গায় থাকবে একজন মানুষ ও আরেকটি যন্ত্র। মানুষ বিচারকের উদ্দেশ্য হবে টাইপ রাইটারের মাধ্যমে কথা বলে বুঝতে চেষ্টা করা যে এদের মধ্যে কে মানুষ আর কে যন্ত্র। যন্ত্রটি চেষ্টা করবে বিচারককে ভুল বোঝাতে যে সে আসলে একজন মানুষ। টুরিং বললেন যে এই পরীক্ষাটির মাধ্যমে প্রমান করা সম্ভব যন্ত্র সত্যিই চিন্তা করতে সক্ষম কিনা। পরবর্তীকালে টুরিং আরো পরিবর্তন আনেন এই পরীক্ষায়, তিনি বলেন একজন যন্ত্র আর একজন মানুষের জায়গায় শুধু একজন যন্ত্র থাকাই যথেষ্ট। বিচারক মানুষটি শুধু বোঝার চেষ্টা করবেন, ঘরের ওপারের উত্তরদাতা মানুষ না যন্ত্র। উপরের ছবিটির হিউম্যান ইন্টারোগেটর বা বিচারক ঘরের বাইরে থেকে কথা চালাচ্ছেন ঘরের ভিতরের দুই প্রতিযোগীর সাথে, উপরের জন মানুষ আর নিচের জন যন্ত্র বা  এ আই সিস্টেম। দুজনেই চেষ্টা করছেন বিচারককে বোঝাতে যে তারা মানুষ। পরে টুরিং বলেন একজন বিচারকের থেকে বিচারকমণ্ডলীর সাথে কথা বলে, যন্ত্র যদি শতকরা সত্তর জনকে বোকা বানাতে পারে, তাহলে তিনি সেই যন্ত্রকে বুদ্ধিমান আখ্যা দেবেন।

     টুরিং এর এই পরীক্ষা ‘turing test’ নামে  আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স গবেষকদের কাছে বিখ্যাত। এই পরীক্ষাটির এতো বিখ্যাত আর বিতর্কিত হবার কারন, এখনো পর্যন্ত মনস্তত্ত্ব, দার্শনিকতা বা জীববিদ্যা, কেউই ‘বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তাশক্তির’ ব্যখ্যা দিতে পারেনি। সেখানে টুরিং বলছেন, তার পরীক্ষা যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তার সন্ধান দিতে পারে। যেহেতু পরীক্ষাটি হচ্ছে কথপোকথনের মাধ্যমে, তাই সেখানে সঠিক উত্তর দেবার সাথে সাথে যুক্তি, বিষয় বোঝার ক্ষমতা আর ভাষার ব্যবহার জানাটাও জরুরী। এর সাথে মানুষ বিচারককে বোকা বানাতে গেলে যন্ত্রকে মানুষের অনুভূতিও নকল করা শেখা দরকার। গবেষকদের কাছে এই প্রত্যেকটি বিষয়ই প্রচণ্ড আকর্ষণীয়, তাই টুরিং টেস্ট এখনো সমান প্রাসঙ্গিক।    

চাইনিস রুম পরীক্ষার চিত্রায়ন

     কিন্তু এই টেস্টের বিপক্ষে সমালোচনাও কম হয়নি। ১৯৮০ সালে জন সার্লে বললেন, টুরিং এর পরীক্ষা দিয়ে বুদ্ধিমত্তার প্রমান অসম্ভব। তিনি উদাহরন স্বরূপ বললেন একটি চৈনিক ঘরের কথা, যার ভিতরের লোকটি চিনা ভাষায় সম্পূর্ণ অজ্ঞ। বাইরে থেকে একজন চিনা জানা মানুষ টাইপরাইটারের সাহায্যে চিনা ভাষায় কথা পাঠাচ্ছেন ভিতরের লোকটিকে। ভিতরের মানুষটির কাছে কিন্তু একটি চিনা ভাষার বই আছে। এই বই এর মধ্যে ধরা যাক চিনা ভাষার যত ধরনের কথা হতে পারে তা চিনা অক্ষরে লেখা আছে, আর তার সাথে ইংরাজিতে লেখা আছে সেই কথার প্রত্যুত্তর কি ভাবে দিতে হবে, সেটিও চিনা ভাষায়। ঘরের ভিতরের মানুষটির কাজ শুধু অক্ষর মিলিয়ে টাইপরাইটারের বাক্যটিকে বইয়ের বাক্যের সাথে মেলানো, আর তারপরে বই দেখে দেখে উত্তরটি লিখে বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া। মজার ব্যাপার হল এর জন্যে কিন্তু মানুষটির চিনা ভাষা জানার কোন প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র বাক্যটি বই এর মধ্যে খুঁজে পেলেই হল। তবে হ্যাঁ, বইটি যদিও বিশাল বড় হতে হবে এবং খুব জটিলও হবে।

চাইনিস রুমের ভিতরে থাকা কাল্পনিক বইটির একটি পৃষ্ঠা

     চলুন এবারে ভেবে দেখি ঘরের বাইরের মানুষটি কি দেখছেন। তিনি চিনা ভাষায় কিছু কথা লিখে দিয়েছিলেন আর ঘরের ভিতর থেকে চিনা ভাষায় তার ঠিকঠাক উত্তরও আসেছে। তিনি অবশ্যই ভেবে নেবেন যে ঘরের ভিতরের মানুষটি চিনা ভাষায় পারদর্শী। উপরের ছবিটিতে এই রকমই একটি কাল্পনিক চিনা ভাষার বই এর পাতা দেখানো হয়েছে। বাম দিকের পাতায় বলা হয়েছে পরপর কোন কোন শব্দ থাকতে পারে আর ডান দিকের পাতায় দেখানো আছে তার উত্তর কি করে লিখতে হবে। এবার ধরুন এই বই এর সমস্ত তথ্য একটি কম্পিউটারের মধ্যে পোরা আছে আর কম্পিউটারটিকে টুরিং টেস্ট খেলতে ডাকা হয়েছে চিনা ভাষায়। তাহলে সেই কম্পিউটারটি খুব সহজেই বিচারকের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। কিন্তু আমরা কি বলবো এই কম্পিউটারটি চিনা ভাষায় ওস্তাদ অথবা সব কথা বুঝতে সক্ষম ? সার্লে বললেন, না, এই কম্পিউটারটি হাজার হাজার বছর ধরেই এই চিনা অক্ষর গুলি নিয়ে নাড়াচাড়া করে যেতে পারে, কিন্তু কোনদিন এগুলির অর্থ বোঝা তার পক্ষে সম্ভব নয়। সার্লের ব্যখ্যা ছিল যন্ত্রের কাছে কোন লিখিত ভাষা শুধুমাত্র কিছু ছবি ছাড়া কিছুই না, যা কোন নিয়মমাফিক পরপর সাজানো হয়েছে। চৈনিক ঘরের কাল্পনিক বইটি ব্যবহার করে সহজেই টুরিং এর পরীক্ষায় পাস করা সম্ভব কিন্তু সেটি কোন বুদ্ধিমত্তার পরিচয় নয়। বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদদের মহলে সার্লের ব্যখ্যা বজ্রপাত ঘটাল। সবাই ভেবেছিলেন টুরিং টেস্টের সাহায্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মাপার একটি উপায় পাওয়া গেছে, কিন্তু সার্লে সেটিকেও নস্যাৎ করে দিলেন। আজও টুরিং বনাম সার্লের এই লড়াইএ বৈজ্ঞানিক মহল বিভক্ত, দুই দিকেই অনেক বিখ্যাত চিন্তাবিদ নিজেদের যুক্তি রেখেছেন, কিন্তু কোন সমাধানে পৌঁছন যায়নি।

     বহু বিতর্ক সত্ত্বেও ১৯৯১ সালে শুরু হয় লেবনার প্রাইজ যার উদ্দেশ্য গবেষকদের টুরিং টেস্টের উপযোগী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করতে উৎসাহদান। বিতর্ক এই প্রতিযোগিতারও পিছু ছাড়েনি। সমালোচকরা দেখিয়েছেন, যে কম্পিউটার প্রোগ্রামগুলি প্রতি বছর সেরা মনোনীত হয়েছে আর বিচারকদের বোকা বানাতে সফল হয়েছে, তারা মোটেও খুব বুদ্ধিমান নয়। উলটে তারা মানুষের বোকামি বা ভুল উত্তর দেওয়া কেই নকল করেছে। গবেষকরা যুক্তি হিসেবে বলেছেন, যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তা বোঝাতে যদি মানুষের স্বভাবের সাথে তুলনা করতে হয়, তাহলে দেখা গেছে মানুষ আচরণ সবসময় বুদ্ধিদীপ্ত হয়না। তাই যন্ত্রও মানুষকে নকল করতে গিয়ে তার বোকামিগুলিকেও নকল করে ফেলছে। কিন্তু বোকামি নকল করে কি বুদ্ধিমান হওয়া সম্ভব? এর উত্তর লেবনারের প্রতিযোগীতা দিতে পারেনি।

     যাই হোক, দার্শনিক তত্ত্বের কচকচানি রেখে ফিরে যাই সেই প্রথম প্রশ্নে। মানব সভ্যতা কি আজ বিপন্ন যন্ত্রের হাতে? এর উত্তর পেতে গেলে ফিরে যেতে হবে সেই গো নামের খেলাটির কথায়, যাতে সম্প্রতি হার হয়েছে মানুষের, যন্ত্রের হাতে। যন্ত্র কিভাবে খেলাটা শিখেছে জানেন? না, সে এই খেলার নিয়ম কানুন শেখার চেষ্টাই করেনি, তার বদলে সে লক্ষ লক্ষ মানুষের গো খেলা দেখেছে। কয়েক বছর ধরে তাকে শুধু সেই খেলা দেখিয়েই বোঝানো হয়েছে কখন কি চাল দেওয়া উচিৎ। তাই সে আসলে গো খেলা শেখেনি, সে শিখেছে মানুষ কি করে গো খেলে। তাই এই যন্ত্রকে হারানো প্রায় অসম্ভব। পরীক্ষায় দেখা গেছে যন্ত্র শতকরা ৫৭ বার মানুষ কি চাল দেবে তা আগে থেকেই বলে দিতে পারছে। তাহলে ভেবে দেখুন আপনি কখন কি করবেন তা যদি কেউ আগে থেকেই বলে দিতে পারত তাহলে কি তার সাথে কোন প্রতিযোগিতায় জেতা সম্ভব হত? মানুষ আজ এমন এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করেছে যে মানুষের হাজার বছরের লব্ধ জ্ঞানের সাথে ওয়াকিবহাল, কিন্তু আমরা কিছুই জানি না তার সম্বন্ধে। ঠিক এইভাবেই একদিন কোন যন্ত্রকে হয়ত শেখানো যাবে কি করে মানুষ অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক বা সামরিক ক্ষেত্রে সির্দ্ধান্ত নেয়। সেদিন কিন্তু সেই কম্পিউটার মানুষকে মানুষ সাজার খেলাতেই হারিয়ে দেবে।

( যারা ধৈর্য ধরে এতটা পড়লেন তাদের জন্যে রইল টুরিং টেস্ট নিয়ে কয়েকটি মজার কার্টুন )

 

তথ্য সমূহ ও ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।

Tags: একটি চৈনিক ঘরের রহস্য, দীপ ঘোষ, প্রচ্ছদ কাহিনি, প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা

Leave a Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!