সম্পাদকীয়

  • লেখক: কল্পবিশ্ব সম্পাদকমন্ডলী
  • শিল্পী:

ল্পবিশ্বের বন্ধুরা, সবে মাঘের শুরু অথচ শীত প্রায় পালাই পালাই করছে কলকাতা থেকে। সেদিন এক বন্ধু মজা করে বলছিলেন এ সবই কল্পবিশ্বের ক্লাই-ফাই এফেক্ট। তবে ব্যাপারটা কিন্তু সত্যিই আর মজার পর্যায়ে থাকছে না, পৃথিবীর সব দেশ চিন্তিত আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা নিয়ে। বাঙালীর এক অন্যতম উৎসব বইমেলা এসে গেল প্রায়, কিন্তু কল্পবিশ্বের দপ্তরে কারো মন ভালো নেই। কি করেই বা থাকবে বলুন তো? বাংলায় স্পেকুলেটিভ ফিকশনের অন্যতম কাণ্ডারী শ্রী অদ্রীশ বর্ধন চরম অসুস্থতার মধ্যে ভর্তি আছেন এন আর এস হসপিটালের ইন্টেন্সিভ কেয়ারে। বয়স জনিত কারণে উনি হার্ট, কিডনী, ব্রেইন ও হিমোগ্লোবিন সংক্রান্ত নানা অসুখে ভুগছেন। এই বয়সে এসে হয়ত অসুস্থতা অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু অস্বাভাবিক হল অদ্রীশের প্রতি বইপাড়ার বৌদ্ধিক সমাজের চরম উদাসীনতা । চার দিন নাম মাত্র চিকিৎসায় তিনি পড়ে ছিলেন জেনারেল বেডে, চরম অব্যবস্থায় রক্ত পর্যন্ত দেওয়া যায়নি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া। অথচ এর মধ্যে অদ্রীশের সমসাময়িক বা জুনিয়র লেখক বা তাঁর অগণিত প্রকাশকদের মধ্যে কেউ এগিয়ে আসেননি সাহায্য করতে। আজকাল শুনি নাকি বাংলায় স্পেকুলেটিভ ফিকশানের জোয়ার এসেছে, অথচ সেই জোয়ারের অগ্রদূত, বাংলার প্রথম কল্পবিজ্ঞান পত্রিকার সম্পাদক, পঞ্চাশেরও বেশি বছর ধরে একহাতে সাইফি, ফ্যান্টাসি, রহস্য, ভূত আর অনুবাদ গল্প লিখে যাওয়া মানুষটিকে যোগ্য সম্মান দিতে এত কুণ্ঠা কেন বইপাড়ার? কল্পবিজ্ঞান শব্দটির রচয়িতা, আশ্চর্য! ও ফ্যান্টাসটিক পত্রিকার সম্পাদক, সাই ফি সিনে ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা, ফ্যানটাসটিক প্রকাশনার কর্ণাধার, শতাধিক বই এর রচয়িতা অদ্রীশ বর্ধনের বইগুলির বিক্রি এখনো ঈর্ষণীয়। তবুও সারা জীবনে বড় কোন সাহিত্য সম্মান পেলেন না তিনি! এর থেকেই বোঝা যায় বাঙালীর সাহিত্যসমাজে এখনো স্পেকুলেটিভ আর থ্রিলার ব্রাত্য হয়েই আছে।

 

যাই হোক, চলুন পাঠকরা সবাই আজ প্রার্থনা করি যাতে আমাদের প্রিয় সাহিত্যিক আবার সুস্থ হয়ে ওঠেন। পুজোর পর থেকে আমরা শুরু করেছি কল্পবিশ্ব পাবলিকেশনের কাজ। ইতিমধ্যেই বের হয়েছে সাতটি স্পেকুলেটিভ ফিকশানের বই। এরমধ্যে যেমন আছে কল্পবিশ্বের উপন্যাস পর্ব ও সেরা কল্পবিশ্ব, তেমনি আছে ফ্র্যাঙ্কেনস্টেইন ২০০ এর মত অনন্য কল্পবিজ্ঞান চর্চার আকরগ্রন্থ। নবীনা লেখিকা অঙ্কিতা তাঁর প্রথম উপন্যাস কালসন্দর্ভা-তেই সাড়া ফেলে দিয়েছেন। কল্পবিশ্বের সাথে ফ্যানটাসটিক প্রকাশনীর যৌথ উদ্যোগে আসছে লাভক্রাফটের অনুবাদ ও সেরা আশ্চর্য! সেরা ফ্যানটাসটিক। এই প্রথম কল্পবিশ্বের উদ্যোগে বিস্মৃত কল্পবিজ্ঞান লেখক ও পলিম্যাথ সিদ্ধার্থ ঘোষের রচনা সংগ্রহ ফিরিয়ে আনা হল। বইমেলায় স্পেকুলেটিভ ফিকশন প্রেমীদের কাছে এ সত্যিই যেন সব পেয়েছির আসর। এরই মধ্যে নভেম্বর মাসে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আর কল্পবিশ্বের উদ্যোগে হয়ে গেল কলকাতা তথা পূর্ব ভারতের প্রথম তিন দিন ব্যাপী কল্পবিজ্ঞান কনফারেন্স, মেরি শেলির ফ্র্যাঙ্কেনস্টেইন রচনার দ্বিশতবার্ষিকী উপলক্ষে। সারা ভারত থেকে এসেছিলেন এই সময়ের নাম করা কল্পবিজ্ঞান লেখক ও গবেষকরা। আলোচনা হল বাংলা কল্পবিজ্ঞান নিয়েও। কল্পবিশ্বের তরফ থেকে সম্বর্ধনা জানানো হল বিস্ময় সায়েন্স ফিকশন ম্যাগাজিনের লেখক ও সম্পাদকদের। বাংলা কল্পবিজ্ঞানের দুনিয়ায় এই কনফারেন্সটি অবশ্যই মাইলস্টোন হয়ে থাকবে। এছাড়া বাংলা কল্পবিজ্ঞান নিয়ে তোলা হচ্ছে প্রথম দ্বিভাষিক তথ্যচিত্র – কল্পবিশ্ব ও অসলো উনিভার্সিটির সহযোগিতায়। এ এক কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে কল্পবিশ্বকে ঘিরে। এর মধ্যেই এসে গেল কল্পবিশ্বের শীত সংখ্যা। এই সংখ্যায় আমরা মনোনিবেশ করেছি কল্পবিজ্ঞানের পাংক সাব জনরার প্রতি। অপেক্ষাকৃত আধুনিক এই ধারার মধ্যে পড়ে স্টিমপাংক, সাইবারপাংক, ডিজেলপাংক বা সোলার পাংকের মত নতুন সব বিষয়। আশা করি এই সম্পর্কিত প্রবন্ধগুলি বাংলার লেখকদের এই ধরনের নতুন গল্প লিখতে অনেক উৎসাহ দেবে। এই সংখ্যায় থাকছে বাংলার প্রথম শঙ্কু চলচ্চিত্র ‘প্রফেসর শঙ্কু ও এল ডোরাডো’ নিয়ে শ্রী সন্দীপ রায়ের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার। এছাড়া আছে প্রচুর কল্পবিজ্ঞান ও ফ্যান্টাসি গল্প, নাটক ও উপন্যাস ও অন্যান্য বিভাগ। তবে আর দেরী কেন? বইমেলার আগেই পড়ে ফেলা যাক নতুন বছরের সেরা কল্পবিজ্ঞান ও ফ্যান্টাসিগুলো। আপনার পাঠ শুভ হোক।

Tags: তৃতীয় বর্ষ চতুর্থ সংখ্যা, সম্পাদকীয়

6 thoughts on “সম্পাদকীয়

  • January 28, 2019 at 1:48 pm
    Permalink

    I love it to read kalpa biggan.

    Reply
  • January 29, 2019 at 11:07 am
    Permalink

    A ‘fantabulous’ attempt to ‘preach’ the world of fantasy and make-belief! My pronam to Odrish Bardhan, the father of Indian fantasia! Good luck for Kalpa-biswa’ all the way.

    Reply
    • April 9, 2019 at 1:12 pm
      Permalink

      অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। পাশে থাকুন।

      Reply
  • March 28, 2019 at 2:09 pm
    Permalink

    I am doing my research in Satyajit Ray’s Science fiction stories….so, to find this journal is really interesting and helpful for me…. it’s really wonderful…I also want to stay in contact with you….

    Reply
  • March 29, 2019 at 12:01 pm
    Permalink

    মানসিক অলসতার কারণে এতদিনে এই পত্রিকার খোঁজ পেয়ে যারপরনাই আনন্দিত। দু’চারটি গল্প অসমাপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। শীঘ্রই শেষ করে আপনাদের পাঠাতে পারলে মনে শান্তি পাই। হিরেখনির খোঁজ পেয়েছি।

    Reply
  • April 2, 2019 at 2:01 am
    Permalink

    Ei potrikar A to Z somossto line pore felar chesta korechi goto 6 mase. Oti sadhu udyog. Dirghayu kamona Kori.

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!