সম্পাদকীয়

  • লেখক: কল্পবিশ্ব সম্পাদকমণ্ডলী
  • শিল্পী: দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (চিত্রচোর)

যে কোনও নতুন পত্রিকার জন্মলগ্নে যে প্রশ্নটা প্রথমেই জেগে ওঠে সেটা হল, কেন? কেন অসংখ্য পত্র-পত্রিকার (তা সে কাগজের হোক বা ই-পত্রিকা) ভিড়ে আবার আরেকটির আগমন? প্রশ্নটা শুনতে একটু নির্মম হলেও, প্রয়োজনীয় তো বটেই। কেবল ভিড় বাড়াতে দলভারী করাটা মোটেই কাজের কথা নয়। তবে সে দলে যে ‘কল্পবিশ্ব’ নেই, কোনোদিন থাকবে না, সেটা শুরুতেই জানিয়ে দেওয়া ভালো। একটি বিশেষ উদ্দেশ্যেই এই পত্রিকাকে দিনের আলো দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। অনেক আলাপ-আলোচনার পর।

     আসলে ‘কল্পবিশ্ব’ যে তিনটি বিষয় নিয়ে কাজ করতে চায় সেগুলি হল কল্পবিজ্ঞান, অলৌকিক এবং ফ্যান্টাসি। এই তিনটি বিষয়কে নিয়ে কথা বলতে গেলে সবাই প্রথমে যে ভুলটা করেন, সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এই বিষয়গুলিকে কেবল ‘শিশুপাঠ্য’ বলে চিহ্নিত করে দেওয়াটা চূড়ান্ত ভুল সিদ্ধান্ত। অথচ সারা পৃথিবী জুড়েই এই জঁরগুলিকে নিয়ে যে সমস্ত কাজ হয়েছে, আজও হয়ে চলেছে তা রীতিমতো বহু-স্তরীয় ও সিরিয়াস। এডগার অ্যালেন পো, এইচ পি লাভক্র্যাফট, আইজ্যাক আসিমভ, আর্থার সি ক্লার্ক, অ্যামব্রোজ বিয়ার্স, রবার্ট ব্লচ, স্টিভেন কিং, রে ব্র্যাডবেরি, জে কে রাউলিং, ক্যালভিনো… আরও কত সাহিত্যিক এই বিষয়গুলিকে নিয়ে যা রচনা করেছেন তা বিশ্বের যে কোনও শ্রেষ্ঠ সাহিত্যের তালিকায় অনায়াসে স্থান করে নেবে। আর কেবল বিদেশেই বা কেন, আমাদের দেশে, বাংলা ভাষাতেও সত্যজিৎ রায় থেকে প্রেমেন্দ্র মিত্র, অদ্রীশ বর্ধন, সিদ্ধার্থ ঘোষ বা অনীশ দেব বিভিন্ন সময়ে এই বিষয়গুলিকে নিয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তবুও এগুলির সঠিক মূল্যায়ন হয়নি।

     অদ্রীশ বর্ধনের সম্পাদনায় ‘আশ্চর্য’ (ভারতবর্ষের প্রথম কল্পবিজ্ঞান পত্রিকা), ‘ফ্যানট্যাসটিক’ কিংবা রণেন ঘোষের সম্পাদনায় ‘বিস্ময়’-এর মতো পত্রিকা আজকাল আর নেই। যে কোনও ধরনের সাহিত্যের নিয়মিত চর্চার ক্ষেত্রে সেই বিষয়ের পত্রিকা থাকাটা খুব দরকার। সেই অভিপ্রায়েই ‘কল্পবিশ্ব’-এর পরিকল্পনা।

     প্রতিষ্ঠিত লেখকদের আরও বেশি এই জঁর এর লেখা লিখতে অনুরোধের পাশাপাশি কল্পবিশ্বের মাধ্যমে আমরা নতুন ইচ্ছুক লেখকদেরও এই পত্রিকার মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ ঘটানোর সুযোগ দেওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য। আমাদের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল প্রত্যেক সংখ্যায় বিভিন্ন দেশের ও বিভিন্ন সময়ের ক্লাসিক কিছু লেখা অনুবাদের মাধ্যমে বাংলার পাঠকদের সামনে তুলে ধরা। এছাড়াও নিয়মিত থাকবে দেশবিদেশের কালজয়ী কিছু লেখকের জীবন ও রচনা পরিচিতি। এই তিনটি বিষয় নিয়ে নিয়মিত চর্চা করে আমরা চাইছি পালে যদি কিঞ্চিৎ বাতাস লাগানো যায়। যদি সামান্য জোয়ারও আসে এই অবহেলিত কল্পনার সমুদ্রে।

     এই সংখ্যায় থাকল অদ্রীশ বর্ধনের নেওয়া সত্যজিৎ রায়ের দুটি বিরল সাক্ষাৎকার। থাকল ভিনগ্রহের বাসিন্দাদের খোঁজখবর নিয়ে প্রচ্ছদকাহিনী ‘মহাকাশের দূত’। সঙ্গে একগুচ্ছ প্রবন্ধ, গল্প, ছড়া, কার্টুন আরও অনেক অনেক কিছু। কোনটা ভালো, কোনটা খুব ভালো আর কোনটা মন্দ লাগল সেটা জানাতে ভুলবেন না।

      প্রিয় পাঠক, আসুন আপনারা-আমরা মিলে গড়ে তুলি এক কল্পনার পৃথিবী।

      ভালো থাকবেন সবাই।

Tags: কল্পবিশ্ব সম্পাদকমণ্ডলী, দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (চিত্রচোর), প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যা, সম্পাদকীয়

Leave a Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!