নীল আলোর টর্চ
লেখক: অর্ণব গোস্বামী
শিল্পী: টিম কল্পবিশ্ব
ঘুম থেকে উঠেই এ আবার কী অহেতুক ঝামেলা? মাথার পাশে একখানা পার্সেল দেখে বিরক্তই হল মল্লার। জন্মদিন এখনও মাস চারেক, বিয়ে তো তার হয়নি, যে বিবাহবার্ষিকী হবে? অ্যামাজ়নেও কিছু অর্ডার করেছে বলে মনে পড়ে না, তাহলে পার্সেলটা কীসের? বাক্সোটা অবশ্য একান্তই চাকচিক্যহীন। গিফট হলে নিশ্চয়ই রঙিন কাগজের প্যাকিং হত। এরপর ঘোরতর প্রশ্নটা মাথায় এল। মা-বাবা গিয়েছে বেড়াতে। কাজের দিদি এখনও সকালের কলিং বেল বাজায়নি বলেই সে দিব্যি ঘুমোচ্ছিল অ্যালার্মের অপেক্ষায়। তাহলে কি রাতে দরজা খুলে শুয়েছে?
একলাফে দরজার কাছ থেকে ঘুরে এল মল্লার। একেবারে এঁটে-দেওয়া দরজা। বাতাস ঢোকারও তেমন জায়গা নেই। তাহলে এটা এল কী করে? এ যে একেবারে ভূতুড়ে কাণ্ড? ঘরের চতুর্দিকে বারকয়েক চোখ বুলিয়েও যখন এ প্রশ্নের সদুত্তর মস্তিষ্কে জায়গা পেল না, তখন অন্য আরেকটা কৌতূহল মনে বুড়বুড়ি কাটতে লাগল। বাক্সের ভিতরে আছেটা কী?
বাক্সো খুললেই উত্তর পাওয়া যায়। তবু সন্দিহান চোখে বাক্সের দিকে তাকিয়ে গেসিং গেম চলল এক মিনিট। গ্র্যান্ডফাদার ক্লকে আটটা বাজার শব্দে টনক নড়ল মল্লারের। হঠাৎ যেন ভীষণ তাড়া। দু-হাতে বাক্সের বুক চিরতেই যেটা বেরিয়ে এল, তা দেখে উত্তেজিত হবার তেমন কিছু নেই, তবে অবাক তো হওয়াই যায়। নেহাতই সাদামাটা একটা টর্চ। রংটা আকাশি নীল। তার জামাকাপড়ের আলমারির দিকে চোখ বোলালেই বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়, এ রং তার প্রিয়। আয়তনে চোখের ডাক্তারের টর্চ যেমন হয়, ঠিক তেমনি হাতের চেটোয় দিব্যি ধরে যায়।
টর্চের বোতামটা কয়েকবার টিপল মল্লার। আলো জ্বলল না। অবশ্য জ্বলবেই-বা কী করে? টর্চ যখন, ব্যাটারিও তো লাগবে। ওটাকে এদিক-ওদিক ঘুরিয়েও অবশ্য ব্যাটারি লাগানোর কোনো ওপেনিং পাওয়া গেল না। না, এবারে সত্যি দেরি হয়ে যাচ্ছে। বাস স্টপে না বাসটা ওর জন্য দাঁড়াবে, না সে দাঁড়াবে। কথাটা ভাবতেই মন আকুলিবিকুলি করে উঠল। টর্চটা বার করে টেবিলের ওপর রেখে খালি বাক্সোটা ছুড়ে ফেলতে যেতেই, একটা কাগজ উড়ে বেরিয়ে এল তার থেকে। কাগজ তো নয়, একটা ভাঁজ-করা চিরকুট।
মাটি থেকে সেটা কুড়িয়ে নিয়ে ভাঁজ খুলতেই যেন এক সুবৃহৎ চুম্বক তাকে চেপে ধরল। দু-লাইন মাত্র লেখা, “খবরদার, এ জিনিস হাতছাড়া করবেন না, ভীষণ কাজে লাগবে। সময় হলেই লাগবে, সব সময় সঙ্গে রাখাই ভালো।” কিন্তু এর চেয়েও অবাক-করা বিষয় হল, এ চিঠির হাতের লেখা অন্য কারও নয়, এক্কেবারে তার নিজের। কী করে সম্ভব? এমন হুবহু মিল কি দুজন লোকের হাতের লেখার হতে পারে? কী জানি, এ পৃথিবীতে তো কত কী-ই হয়?
যতই হালকা চালে ব্যাপারটাকে নিতে চেষ্টা করুক, বাস্তবে পারল না। টর্চ যেন সেই তখন থেকে তার দিকে মুচকি হেসে বলে চলেছে, “You can love me, you can hate me, but you can’t ignore me.” বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় টর্চটা সে ঢুকিয়ে নিল ব্যাকপ্যাকে। তারপর তালা বন্ধ করে হাঁক দিল, “রিকশা।”
রিকশা সামনে এসে দাঁড়াতেই একলাফে উঠে পড়ে বলল, “জলদি চলো। বাস স্টপ।” আজ সাত দিন হয়ে যাবে, বাস স্টপে তার দেখা মেলেনি। তাহলে শেষ এক মাস যা হল, তার কি সবটাই শুধু কাকতালীয়? মন না মানতে চাইলেও মল্লার ঠিক করেছে, মনকে বশ করতেই হবে। বুঝতে হবে সবটুকুই মনের ভুল। কথা মুখ দিয়েই বলতে হয়, চোখ দিয়ে নয়।
বাস স্টপ শুনশান আজও। আছে কয়েকজন মুখ-চেনা মানুষ। তবু শূন্যতা। কানে শুধু বাজছে একটা বেহালা, আর সে সুরই যেন বাড়াচ্ছে শূন্যতা। তবু ভালো লাগছে শুনতে। রোজ বাজে। বাস স্টপের ছাউনির তলায় বসে বাজান ভদ্রলোক। সামনে থাকে একটা কৌটো। চান না কিছু। পথচলতি মানুষ হঠাৎ সুরের ছোঁয়ায় ওই কৌটোয় দু-চার টাকা দিলে বাজাতে বাজাতেই কৃতজ্ঞতার হাসি হাসেন মুখ তুলে, তারপর বাজাতে থাকেন আবার। আজ ওঁকে দেখেই যেন বাজাতে শুরু করলেন এ সুর। একমনে বাজিয়ে চলেছেন, ‘দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ওপারে। তোমার সুরগুলি পায় চরণ, আমি পাইনে তোমারে’।
***
অফিস থেকে ফেরার পথে যখন বাস স্টপে আবার নামল মল্লার, সোজা পথে বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করছিল না তার। লাগুক কিছু বেশি সময়, তবু ঘুরপথ নিল। সে কেবল ভাবতে চায়। শুধু সেই মেয়েটির কথা। সাত দিন আগেও যে অনবরত দু-চোখ মেলে চেয়ে থাকত তার দিকে। সব বুঝেও সেদিকে তাকাত না মল্লার। কারণ তাকালেই সে দু-চোখ সরে যেত ধরা পড়ে যাওয়ার সংশয়ে। কতদিন পাশাপাশি সরে এসে দেখেছে মল্লার। সে দূরে সরে যায় না, ঠিক যেমনি মল্লারও শেষ দূরত্বটুকু ঘোচাতে পারে না। তারপর দুজনে বাসে ওঠে, চোখে চোখে কথা। সারাদিনের জন্য ভাবনার খেলাঘর বুকের গভীরে বেঁধে দিয়ে সে নেমে যায় মল্লারের দুটো স্টপ আগে। কে জানে কী নাম সে রহস্যময়ীর?
নানা কথা ভাবতে ভাবতে ধীরে পা ফেলছিল মল্লার। আজ এই পথে আলোগুলোর হল কী? একটাও জ্বলছে না? অন্ধকারে ভরসা শুধু চাঁদের আলো। বেশ লাগছিল, শুনশান রাস্তায় তার ভাবনার গতিরোধ করবার কেউ নেই। তখনই জ্যোৎস্নায় ঠাহর হল, সামনের পুকুরধারে কে বসে আছে। ওই হালকা আলোতেও মুখখানা চেনা-চেনা ঠেকল। আরে, হিমুদা না? ওখানে বসে কী করছে? সামনের দিকে এগিয়ে খোঁজ নেবে ভাবতেই ব্যাগের মধ্যে একটা ক্রমাগত বিপ বিপ শব্দ হতে শুরু করল, একটানা। কীসের শব্দ এটা?
ব্যাগ হাতড়াতেই বোঝা গেল এ শব্দের উৎস। টর্চটা বাজছে। সে কী, এটা আসলে কী? টর্চ নয়? যেহেতু মনের মধ্যে পুকুরের সামনে বসে-থাকা আধো আলোর চেহারাটা দেখার ইচ্ছে ছিলই মনে, তাই হয়তো ওটা হাতে নিয়ে পুকুরের দিকে তাক করে আরেকবার টিপল। আর ঠিক তখনই সেই নিষ্কর্মা বোতামটা এক অদ্ভুত কাণ্ড ঘটাল। ধপ করে একটা আগুনের গোলার মতো নীল রঙের আলো বেরিয়ে এল টর্চের মুখ থেকে। অতঃপর সেটা গিয়ে দ্রুত গতিতে গিয়ে বিদ্ধ হল একেবারে পুকুরপাড়ে বসা মানুষটার মুখে। আর তক্ষুনি হিমুদার গলা ভেসে এল, “আহ্, কে? চোখে আলো ফেলছেন কেন?”
টর্চটা ওই একখানা ঝলকানি দিয়েই শান্ত হয়ে গেছে আবার। যেন সে কোনোদিনই জ্বলেনি। টর্চটা ব্যাগে ঢুকিয়ে মল্লার বলল, “আমি মল্লার, হিমুদা। তুমি ওখানে বসে কী করছ?”
“মল্লার? আয় ভাই, কাছে আয়। কাউকে দুটো কথা বলে মনটা শান্ত করি। কখন থেকে চেষ্টা করেও পুকুরে ঝাঁপ দিতে পারছি না। ছেলেবেলায় যে ভয়ে সাঁতার শিখতে পারিনি, আজ সেই একই ভয়ে মরতে পারছি না। জলই জীবন, জলই মরণ, কী কাণ্ড বলো দেখি।”
পায়ে পায়ে এগিয়ে এসে মল্লার জিজ্ঞাসা করতে যাবে কিছু একটা, হিমুদা হাপুসনয়নে কাঁদতে শুরু করল। তারপর নাক টেনে বলল, “মরতে এলাম, সাহসে কুলোল না। অথচ বেঁচে থাকার মতো সাহসও হচ্ছে না রে ভাইটি।”
“আরে, তখন থেকে নাকিকান্না কাঁদছ। কী হয়েছে, বলবে তো?”
“নাকিকান্না তো বলবিই। শেয়ার মার্কেটে কয়েক লাখ টাকার অপশন কিনেছিলাম ক-দিন আগে, বুঝলি? অফিসে একটা ছেলে শেয়ারে টাকা কামিয়েছে প্রচুর। লোভে পড়ে আমিও পড়াশোনা করে এ কে মোটরের শেয়ার কিনছিলাম। স্টেবল শেয়ার। বিরাট লাভ হয় না, কিন্তু মোটামুটি রিটার্ন আসে।”
কী মনে হতে থামল হিমু। তারপর মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, “এমনকি সেদিন রাতে তুই তোদের কোম্পানির শেয়ার কিনতে বললি, কী একটা ডিল হয়েছে বলে হুড়হুড় করে বাড়বে, বললি, তাও পাত্তা দিইনি।”
“বেড়েওছে হিমুদা, সাত দিনে ফরটি পারসেন্ট।” অভিমানী মুখে বলল মল্লার।
“কী বলব ভাই, সবই নিয়তি। তো সেই অয়ন এসে মাথাটা এমন খেল, যে সাহসটা একেবারেই কোনোদিন করিনি, তা-ই করলাম। তোদের কোম্পানির শেয়ার ওয়াচ লিস্টে রেখে কিনব-কিনব করছিলাম, জানিস? লোভে পড়ে বড়োলোক হবার তাড়া যাকে বলে। দুম করে অপশনে লাগিয়ে দিলাম পাঁচ লাখ টাকা। ক-দিন দিব্যি বাড়ছিল। আজ একেবারে শেষ দিনে এসে এমন ধস নামল, কী বলব? আর অপশনে লস করা মানে তো জানিসই, একেবারে সমস্ত টাকাটাই জলে।” বলে আরেকবার হাউমাউ করে কেঁদে নাক টানতে লাগল হিমু।
“ওসব আমি বিশেষ বুঝি না। কিন্তু পাঁচ লাখ টাকার জন্য তুমি আত্মহত্যা করবে?” বলল মল্লার, “তোমার কি টাকার অভাব?”
“শুধু পাঁচ লাখ টাকা নয় রে। প্রায় বিশ লাখ টাকা গত কয়েকদিনে অপশনে ইনভেস্ট করেছি। প্রথমদিকে যে বাড়তে শুরু করেছিল? আমার সব শেষ। ঠিকমতো এসব নিয়ে পড়াশোনা না করে লোকের কথায় কেন যে নাচতে গেলাম?” আবার কাঁদতে গিয়েও সামলে নিয়ে হিমু আবার বলল, “আর কীরকম আহাম্মক বলো, গত আধ ঘণ্টা ধরে চেষ্টা করেও ঝাঁপাতে পারলাম না। তোর তো খুব বুদ্ধি, ভাই? দে-না একটা পথ বাতলে?”
মাধ্যমিকে র্যাংক করার পর থেকেই এ পাড়ার সবার ধারণা, মল্লারের খুব বুদ্ধি। তা নিয়ে একটু গর্বও হয় বটে। উচ্চমাধ্যমিকের রেজ়াল্টও একেবারে নম্বরে থিকথিক করছে। তারপর যাদবপুরের মতো জায়গায় পছন্দের বিষয় ফিজ়িক্স নিয়ে ভরতি হবে-হবে করছে, এমন সময় জয়েন্টের রেজ়াল্ট সব গণ্ডগোল পাকিয়ে দিল। ইঞ্জিনিয়ারিং-এও প্রথমদিকে র্যাংক হতেই বাবা বাগড়া দিল, “ওসব জেনারেল লাইন-টাইনে পড়ে ঘণ্টা হবে। চোখ বুজে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ঢোক।”
বাবার কথা শুনে তা-ই করতে হয়েছিল, চাকরিও জুটেছে বটে শাঁসাল, তবে ফিজ়িক্সকে ছেড়ে আসার দুঃখ আজও ভুলতে পারল না। এখনও একটার পর একটা ফিজ়িক্সের ওয়েব আর মুদ্রিত পত্রিকা গোগ্রাসে গিলতে থাকে সে অনবরত। অবশ্য বুদ্ধি কি তার সব ক্ষেত্রেই আছে? এই তো সে অপশন ব্যাপারটারই মাথামুণ্ডু বোঝে না। এই অবস্থায় হিমুদাকেও জিজ্ঞেস করা যায় না। ঠিক করল, বাড়ি গিয়ে খানিক গুগ্ল করতে হবে। মুখে অবশ্য বলল, “একটা দারুণ বুদ্ধি আছে।”
হিমুর চোখ উজ্জ্বল হল, “কী বুদ্ধি, বল ভাই।”
“আজ নয়। আজ মাথা ঠান্ডা করে বাড়ি চলো। কাল শনিবার সকালেই তোমার বাড়ি আসছি।”
মল্লারকে হিমুর বড্ড ভরসা। বলল, “বলছিস? তুই যখন বলছিস, মরে লাভ নেই। একদিন অপেক্ষা করি।”
কথা শুনেই দিব্যি বোঝা যায় হিমুর মরবার ইচ্ছে কতখানি। হিমু আড়মোড়া ভেঙে বলল, “বড্ড অন্ধকার। তোর টর্চটা জ্বালা-না?”
টর্চটা ব্যাগ থেকে বার করল মল্লার। হলে হবে কী? বহু চেষ্টা করেও সেটা জ্বালানো গেল না। হিমু হেসে বলল, “চাঁদের আলো আছে, জোনাকি আছে, তুই-আমি দুজন আছি। অন্ধকারে কী আর যায়-আসে? তোর ওই টর্চ খারাপ হবার আগে দপ করে জ্বলে উঠেছিল। শুনিসনি, পিঁপিড়ার পাখা ওঠে মরিবার তরে? হেহে।”
গত রাতে বলে তো দিয়েছিল হিমুদাকে, যে বুদ্ধি একখানা দেবে, কিন্তু বুদ্ধিটা যে কী দেবে, কিছুতেই ভেবে উঠতে পারল না মল্লার। অনেক রাত অবধি ভেবেচিন্তেও কোনো পথ ভেবে বের করতে না পেরে, অপশন কী জিনিস, তা-ই নিয়ে খানিকক্ষণ গুগ্ল করেছিল। কিন্তু বেশি রাত বলে মাথা কাজ করছিল না, নাকি আগ্রহ ছিল না বলে মন দিতে পারেনি জানা নেই, তবে ব্যাপারটা খুব একটা মাথায় ঢোকেনি। অবশ্য শেয়ার মার্কেট নিয়ে তার কোনোদিনই তেমন জ্ঞানগম্যি নেই। কয়েকটা ভালো শেয়ার কিনে আল্লার নামে রেখে দিয়েছে। বাড়ে-কমে বটে, তবে দেখেছে, ও শেয়ারগুলো হুট করে একেবারে বড়োলোক করে না দিলেও, ডুবিয়ে দেবার সম্ভাবনা কম।
তার কাছে অপশন মানে এই মুহূর্তে শেয়ার মার্কেটের একটা লটারির মতন। এটুকু বুঝেছে, পুট বা কল হিসেবে অপশন কেনা যায়। পুট-এর ক্ষেত্রে শেয়ারের দাম কমলে লাভ, আর কলের ক্ষেত্রে উলটো। আর শেয়ার যদি উলটো পথে চলে তাহলে একেবারে শূন্য, যাকে বলে ভরাডুবি। হিমুদার কি খেয়েদেয়ে কাজ নেই? সকালবেলা এ কথা ভাবতে ভাবতেই টেলিপ্যাথিই হবে বোধহয়, এসে হাজির। মল্লার হিমুদার ডাক শুনেই দুবার গলা খুকখুক করে সাড়া দিল। এই রে, সকাল সকালই বুদ্ধি নিতে এল নাকি?
দরজা খুলতেই দ্যাখে এলাহি ব্যাপার। দু-হাতে দুটো প্যাকেট ঝুলিয়ে হাজির হিমুদা। ঘুম-চোখ তখনও কচলাচ্ছে মল্লার। বলল, “এগুলো কী, হিমুদা?”
“গরম গরম কচুরি আর তোর ফেভারিট নিলুর দোকানের পেটমোটা জিলিপি। আয় আয়, একেবারে বেড টু ব্রেকফাস্ট।”
অবাক হবার মতোই কথা বটে। যে লোকটা কাল রাতে প্রাণ দেবার কথা ভাবছিল, সে কি তবে একটু বুদ্ধি নেবার লোভে ঘুস দিতে চলে এল? মল্লারকে অবাক হয়ে চেয়ে থাকতে দেখে হিমু বলল, “আরে তোর ঘুম কাটেনি, দেখছি। দাঁড়া, আমি থালা নিয়ে এসে গুছোচ্ছি, তুই ব্রাশ করে চোখে-মুখে জল দিয়ে আয় দেখি।”
সেসব করেও কি আর বিস্ময় মেটে? এক টুকরো কচুরি চিবোতে চিবোতে বলল, “হিমুদা, ব্যাপারটা কি একটু খোলসা করবে?”
“আরে, তোদের কোম্পানির শেয়ার গত দু-দিনে ৪০% বেড়েছে। তোর কথা শুনে অন্য শেয়ার আর চূড়ান্ত লাভ হওয়া অপশন লোভ ত্যাগ করে আগেভাগে বেচে বিশ লাখ টাকা লাগিয়েছিলাম, বুঝলি? অফিসের একটা ছেলের কী চাপাচাপি। আমায় অপশন কেনার লোভ দেখাল। কিনব-কিনব করলাম বটে, কিন্তু শেষমেশ ভাবলাম, এতকাল তোর বুদ্ধিতে কত কী করেছি, কখনও ঠকিনি, আর আজই-বা অন্যথা করি কেন?”
ওর চোখগুলো যে ফুটবল না হলেও অন্তত ক্যাম্বিস বলের সাইজ়ে এক্সপ্যান্ড করেছে—এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই মল্লারের। তোতলাতে তোতলাতে বলল, “আরে কাল রাতে যে…।”
“হ্যাঁ, কাল রাতে তোকে ফোন করেছিলাম বটে খবরটা দেব বলে, কিন্তু তুই ধরার আগেই আমার চার্জ গেল শেষ হয়ে। ভেবেছিলাম, কাল রাতেই আসব। কিন্তু দেরি হয়ে গেল বড্ড। ওই দ্যাখো, আসল কথাই বলা হয়নি, সাতকাহন করছি। ভাবলাম, এতগুলো কাঁচা টাকা পেলাম, একটা কিছু করে ফেলি। তা অনেকদিন ধরেই একটা ফ্ল্যাট মনে ধরেছিল। কাল বুক করে এলাম, বিয়ে-থা-র জন্য মা বড়ো চাপ দিচ্ছে।” লাজুক মুখে বলল হিমু, “এসব তো তোর জন্যই হল, কী বলিস? আজ অল্পস্বল্প দিয়ে শুরু কর, আরেকদিন তোকে কবজি ডুবিয়ে খাওয়াব।”
মল্লার কী করে বোঝায়, সে বর্তমানে এতটাই খাবি খাচ্ছে যে, বাকি কিছু খাওয়ার ইচ্ছেই চলে গেছে? ও কি স্বপ্ন দেখছে, নাকি হিমুদাকে ভূতে ধরেছে? হিমু চলে যেতেই ফোনটা দেখল। গতকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ হিমুদা ওকে সত্যি মিসড কল দিয়েছে। অথচ তা কী করে হবে? তখন যে দুজনেই ওরা একসঙ্গে পুকুরধারে বসে ছিল। সত্যি-মিথ্যে যেন হাবুডুবু খাচ্ছে অলৌকিকের স্রোতে। আর ঠিক তখনই চোখ পড়ল টেবিলে রাখা টর্চটার ওপর। তাহলে কি সব এই নিরীহ টর্চটার কারসাজি? এমন করে অতীতকে একেবারে উলটোরথে চালিয়ে দিতে পারে এ টর্চ? এ-ও কি সম্ভব? টর্চটা নিয়ে বেশ কয়েকবার টেপাটেপি করতেও জ্বলল না। তবে মল্লারের দৃঢ় বিশ্বাস, এ টর্চের দপ-করে-ওঠা আলোর মধ্যে কিছু একটা আছে।
পরের কয়েকদিন মল্লার মোটে টর্চ হাতছাড়া করেনি। বরং যেখানে যেখানে গেছে, সঙ্গে টর্চ। তবে আলো জ্বালাতে পারেনি যথারীতি। একটা জিনিস সে বুঝেছে। এ টর্চ তার হাতে থাকলেও কনট্রোলটা অন্য কারও হাতে থাকে। হয়তো টর্চের চিরকুটটা যে দিয়েছিল, সে। আবার কখনও শব্দ হবে নিশ্চয়ই, আর দপ করে জ্বলে উঠবে টর্চের আলো। কিন্তু কে তিনি? আর কেনই-বা তিনি মল্লারের হাতের লেখা নকল করে চিঠি পাঠিয়েছেন? এমন জিনিস বানিয়েছেন যিনি, তাঁকে ভাবনাতেও আপনি-আজ্ঞে করতে ইচ্ছে হয় বই-কি।
আজ দিন পনেরো হল বাস স্টপে সে মেয়ের দেখা নেই। আর আসবে না নিশ্চয়ই। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল মল্লার। মিছিমিছি বুকের ভিতর আশার তরি কেনই-বা বেঁধে রাখা তবে? অবিশ্যি সে বাঁধন আলগা করে ভাসিয়ে দেবারই-বা সাধ্যি কী তার? সে রোজই ঠিক করে, আর এ বাস স্টপে আসবে না। এটা খানিক দূর। সে তো অন্যদিক দিয়েই অফিস যেত আগে। একদিন বন্ধুর বাড়ির কাছে এই স্টপ থেকে যাবার সময় সেই যে এক অদৃশ্য চুম্বক তাকে টেনে নিল, তারপর থেকেই আর মুক্তি নেই। আর মুক্তি নেই বলেই সারাসপ্তাহ দেখা না পেয়েও রোববার বিকেলে বেমালুম একবার বাস স্টপে চটির সুখতলা খসাতে গেল সে।
রবিবার বিকেলের দিকে মল্লার খেলার মাঠে আসে। বসে খেলা দেখে। তারপর আড্ডা, খেলার শেষে মাঠের একপাশে। আকাশ কালো হলেও ছোটো ছোটো সিগারেটের আলোর মাঝে বসে আড্ডা জমে ভালো। আজও আড্ডার শেষে বাড়ির দিকে পা বাড়িয়েছিল। পিঠে ব্যাকপ্যাক। এটা ওর সর্বক্ষণের সঙ্গী। ভিতরে একটা জলের বোতল আর কিন্ডল থাকে। মাঠে যখন পৌঁছোয়, যদি কেউ তখনও না আসে, তবে ওটা ব্যাগ থেকে বেরিয়ে আসে। কেবল মাঠেই কেন? ওটা বেরোয় সরকারি অফিসের লাইনে, অফিস যাবার বাসে, আরও নানা জায়গায়। এখন অবশ্য ব্যাকপ্যাকে আশ্রয় পেয়েছে নতুন সদস্য, টর্চ।
মাঠের পাশে ছায়ামূর্তির মতো কারা যেন দাঁড়িয়ে কথা কাটাকাটি করছে। দূরত্ব আর আড়াল রেখে দাঁড়াল মল্লার। স্পষ্ট কানে আসছে দুটো কণ্ঠস্বর। চেনা কণ্ঠস্বর। অন্ধকার হলেও চিনতে অসুবিধা হয় না। দুটোই পাড়ার ছেলে। পাপাই আর মিল্টু। কথাগুলোর দিকে কান পাতল মল্লার।
“আমার কথা শোন পাপাই, ছেলেমানুষি করিস না।”
“কীসের ছেলেমানুষি? আমার কিচ্ছু পড়া হয়নি। জানিস তো, আমার ভূগোল ভালো লাগে না। তুই কি চাস, আমি ফেল করি? ফেল করলে অলিকে আর মুখ দেখাতে পারব? ও পড়াশোনায় কত ভালো?”
“তাহলে গত তিন দিন যে ঘুরে ঘুরে বেড়ালি, বদলে পড়াশোনা করতে পারতিস না?”
“তিন মাসে যা পারিনি, তিন দিনেও পারতাম না।”
“চেষ্টা করে তো দেখতে পারতিস। তোকে চোতা আমি করতে দেব না। ফেল করলেও সৎপথে কর। তোর কি মনে হয়, এটা জানতে পারলে অলির খুব ভালো লাগবে?”
“জানবে কী করে?”
“আমি বলব। কোনো সম্পর্ক মিথ্যে দিয়ে টেকে না।”
“এই তুই আমার বন্ধু মিল্টু?”
“বন্ধু বলেই এগুলো বলছি, আর সেটা না হলে আমি তোকে আরও দুটো চোতা নিজে হাতে বানিয়ে দিয়ে সর্বনাশ করতাম।”
“অমন বন্ধুর আমার দরকার নেই। তোকেও আমি এই বলে রাখলাম, যদি এ কথা অলির কানে যায়, আমি সুইসাইড করব।”
“ওসব বাতেলা ছাড়। সুইসাইড করতে সাহস লাগে। ও কাজ তোর মতো কাপুরুষের নয়।”
“মুখ সামলে কথা বল মিল্টু।”
কথাবার্তা যে খুব ভালো দিকে এগোচ্ছে না, তা বেশ বুঝতে পারছিল মল্লার। দুটোই ক্লাস নাইন, খুব ভয়ংকর বয়েস এটা। মনের মধ্যে যে ওদের কী চলে, বোঝা দায়। কী করতে কী করে বসে, কে জানে? মল্লারের মনে হচ্ছিল, কিছু করা উচিত। কিন্তু কী করবে, তা বুঝে উঠতে পারছিল না। বুক কাঁপছিল। পাপাইয়ের কথা ভয় ধরাচ্ছিল। তখনই যে হাতের সামনে এমন সমাধান চলে আসবে, ভাবতে পারেনি। টর্চটা বিপ বিপ শব্দ করছে। এক ঝটকায় ব্যাগ খুলে টর্চটা বার করে জ্বালাল মিল্টুর মুখের ওপর।
“কে?” বলে হাতের চেটোয় চোখ ঢাকল মিল্টু।
“একটা জোরালো নীল আলো বাজ পড়ার মতো তোর চোখের ওপর এসে পড়ল।”
“হ্যাঁ, চোখটা ঝলসে গেল। আরে, মল্লারদা না?”
“ও, তোরা? আমি ভাবছি অন্ধকারে কে দাঁড়িয়ে? টর্চটা একবার দপ করে জ্বলে নিবে গেল। আর জ্বলছে না। তোরা ওখানে কী করছিলি?” তাড়াতাড়ি বলে উঠল মল্লার।
“বাবা, কী স্ট্রং টর্চ। কাল আমাদের ভূগোল পরীক্ষা তাই একটু আলোচনা করছিলাম, মল্লারদা।”
“পরীক্ষা তো এখানে কী করছিস? যা, বাড়ি গিয়ে পড়তে বোস।” ধমকের সুরে বলল মল্লার।
“এই তো যাচ্ছি।” প্রায় একসঙ্গে বলল মিল্টু আর পাপাই। তারপর দ্রুতপায়ে বাড়ির পথ ধরল।
ওদের পিছনে ধীরে পা চালাল মল্লার। কী জানি, কী হয়? টর্চ নিশ্চয়ই কিছু একটা করবে। নিশ্চয়ই আটকাবে মিল্টুকে। পাপাইয়ের মুখে প্রায়ই শুনেছে সে: সুইসাইড করব। এটা ভালো নয়। পাপাই মল্লারের মায়ের কাছে ইংলিশ পড়ে। একদিন পড়ানোর সময় ওকে বকাবকি করায় রাতের বেলা মায়ের কাছে এসে কী কান্নাকাটি। মা তো অবাক। ওইটুকু ছেলে বলে কিনা, আর যদি কোনোদিন কাকিমা আমায় মেয়েদের সামনে বকো, তবে সুইসাইড করব। সুইসাইড যেন খোলামকুচি। ছেলেদের সামনে বকা খেলে চলবে, মেয়েদের সামনে চলবে না।
মা ওকে বুঝিয়ে বাবা-বাছা করে কথা বলছে শুনে ভারী অবাক হয়েছিল মল্লার। ওর তো মনে হয়েছিল, ধাঁইধাঁই করে কানের গোড়ায় দুখানা দিলেই সুইসাইডাল টেন্ডেন্সি জন্মের মতো ঘুচে যাবে। মা-কে সেরকম কিছু বলতে, মা উলটে ওকেই বকে দিলেন। মা বলেছিলেন, সুইসাইডাল টেন্ডেন্সি নাকি একটা রোগ। ওর মা-বাবার উচিত ওকে ডাক্তার দেখানো। ওর মা-কে বলেওছিলেন সে কথা। তারপর কী হয়েছিল, জানে না। তবে মল্লার খানিক এই নিয়ে পড়াশোনা করে বুঝেছিল মায়ের কথা একেবারে ফেলে দেবার মতো নয়। আর সে কথা ভেবেই আজ ভয় হয়েছিল মল্লারের।
রাতে টর্চটা মাথার পাশে রেখে শুয়ে পড়েছিল মল্লার একা ঘরে। মাঝরাতে ঘুম ভাঙল অদ্ভুত শব্দে। ঘুম ভাঙতেই বুঝল, শব্দটা আসছে টর্চ থেকে। কিন্তু সেই বিপ বিপ নয়। বরং একটা ফোনের রিংটোন। দ্রুত বিছানা থেকে নেমে আলো জ্বালল সে। তারপর টর্চের বোতামটা টিপতেই গমগম করে যেন একটা ফোনের ওপার থেকে ভেসে এল গলাটা: “মল্লার।”
শুধু নিজের নাম শুনে নয়, ঘাবড়েছে সে আরেকটা ব্যাপারেও। কণ্ঠস্বর দূরভাষ থেকে এলেও নিজের গলার শব্দ শুনতে ভুল হয়নি তার। এ কী হচ্ছে, সে কি মারা গেছে? না হলে এসব কী করে সম্ভব? তার হাতের লেখায় চিঠি, তার গলার আওয়াজে ফোনকল। কাঁপা গলায় সে বলল, “কে-এ… আপনি…? কোথা থেকে কথা বলছেন?”
“কোথা থেকে বলছি, তার থেকে বড়ো কথা, কে কথা বলছি, তা-ই নয় কি?”
“হুম, মানে আপনার নাম কী? আর উদ্দেশ্যই-বা কী?”
“নাম, উদ্দেশ্য কোনোটাই তো আপনার অজানা নয়। আমিও আপনার মতোই, মল্লারদাস। আর উদ্দেশ্য তো এতদিনে বুঝেই যাওয়ার কথা, না হলে আজ মিল্টুর মুখে দুম করে টর্চ মেরে বসতেন থোড়াই? যদিও টর্চ আপনার হাতে দিয়েছিলাম বড়ো ভরসা করে। কিন্তু আজ বুঝলাম, অপাত্রে দান হয়েছে। আপনি সঠিক সময় পেরিয়ে অনেকখানি পথ হেঁটে গিয়েছেন।”
“কী সব বলছেন, কোনো মাথামুণ্ডু আমি বুঝতে পারছি না।”
“বুঝতে পারছেন না, নাকি চাইছেন না? চেষ্টা করলেই বুঝতে পারতেন। আচ্ছা, না হয় একটু বুঝিয়েই বলি। এই যে আপনি, এই মল্লারদাস, কত আশা করেছিলেন, পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়বেন, অথচ বাবার কথা শুনে স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিলেন। তা-ই বলে কি আপনার সে ইচ্ছের একেবারেই অপঘাত মৃত্যু ঘটল?”
“মানে?”
“মানে ধরে নিন, আমি আপনার সেই ইচ্ছে? জীবনের যে-কোনো বাঁকেই তো আমরা একাধিক সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকি, থাকি না?”
“তা তো বটেই।”
“সেই হালে পানি না-পাওয়া সম্ভাবনাগুলো থাকে, মশাই। মুশকিল হল, ওই সম্ভাবনাগুলো কেবল কতকগুলো কণা, তারা কেবল দৌড়োচ্ছে। তার মধ্যে যাদের আপনি বেছে নিলেন, রইল তারা আজীবন আপনার সঙ্গে। অন্য সম্ভাবনাগুলোকে আপনি দেখতে চান না, তাই দেখতে পান না। যেটুকুকে আপনি মেনে নিলেন, শুধু সেই সম্ভাবনা নিয়েই আপনার পথ চলা শুরু হবে। কিন্তু অন্যগুলো রয়ে যায় কোন এক প্যারালাল ইউনিভার্সে।”
“আপনি বললেন, আর আমি বিশ্বাস করে নেব?”
“না করেই-বা উপায় কী? ঘটে-চলা ঘটনার এর চেয়ে ভালো ব্যাখ্যা যদি পান তো ভেবে দেখুন। আমি নয় আবার কোনোদিন আপনার সঙ্গে কথা বলব। কিন্তু কাজটা কি ভালো করলেন?”
“কোন কাজটা?”
“এই যে আপনি চিরটা কাল বিজ্ঞানের সাধনা করে পৃথিবীর কল্যাণে নিজের গবেষণা ব্যয় করবেন ভেবে ফিজ়িক্স নিয়ে পড়তে চেয়েছিলেন, সে ইচ্ছের কি কোনো সম্মান রাখলেন, আপনিই বলুন?”
“কেন, আমি আবার করলামটা কী?”
“বাহ্, একটা ছেলে টুকলি করবে বলল, আর যে তাকে আটকাবে ভাবছিল, তাকেই দাবিয়ে দিলেন? এখন এই যে আপনি তার দিকে টর্চ দেখালেন… দাঁড়ান দাঁড়ান, আমার আবিষ্কার-করা টর্চটা কী করে, বুঝেছেন তো না কী?”
“না মানে…”
“মানে-টানে কিছু না। ওর কাজ হল, মানুষের যে সম্ভাবনা এতদিন ডমিনেট করছিল, তাকে বন্ধ করে একটা হারানো সম্ভাবনাকে প্যারালাল ইউনিভার্স থেকে তুলে আনা। খুব কঠিন কাজ, বুঝলেন? কত কষ্টে ওয়ার্মহোল দিয়ে দুই প্যারালাল ইউনিভার্সের মধ্যে কোয়ান্টাম পারটিক্লের আদানপ্রদান ঘটিয়ে এ কাজ করতে হয়েছে, কী করে বোঝাই? সহস্র বিজ্ঞানীর সাধনা, মশাই। এ জগতে জ্ঞান প্রচুর, কিন্তু শুধুই ভালো কাজে লাগানো হয়। খারাপ চিন্তা সব আপনাদের ইউনিভার্সেই ফেলে রাখা হয়েছে, বুঝলেন কিনা?”
“বোঝার মতো কথা বললে তো বুঝব? আপনি বলতে চাইছেন যে, আমাদের যে ইচ্ছাপূরণ হল না, তাও প্যারালাল ইউনিভার্সে রয়ে যায়? সে তো কোয়ান্টাম থিয়োরি, মশাই। মানুষের ক্ষেত্রে কি খাটে?”
“আলবত খাটে। মানুষ ওই কোটি কোটি কোয়ান্টাম কণা ছাড়া কী বলুন তো? আর যদি না-ই খাটে তাহলে আমি কে? আপনি ফিজ়িক্স না পড়ে ও জগতে রয়ে গেলেন, আর আপনার অপূর্ণ ইচ্ছে নিয়ে প্যারালাল ইউনিভার্সে জন্ম নিলাম আমি। আপনার-আমার সে পর্যন্ত অতীত কিন্তু একই। তারপর থেকে পথ আলাদা। আপনি ফিজ়িক্স পড়লে আমার জন্মই হত না। কেমন বুঝছেন?”
“ভাসাভাসা। বিশ্বাস হচ্ছে, আবার হচ্ছেও না। থিয়োরিটিক্যালি পসিব্ল বটে, কিন্তু সত্যিকারের ঘটলে কেমন লাগে না?”
“তা তো বটেই। হিমুদার ব্যাপারে এ ছাড়া আর কী ব্যাখ্যা আছে, বলুন তো।”
“আর তো কিছু ভেবে পাচ্ছি না। আপনারটাই মেনে নিই তাহলে আর কী?”
“যাক, বাঁচা গেল, কিন্তু কাজটা ঠিক করলেন না।”
“আমায় দোষ তো দিলেন খুব। কিন্তু মিল্টুটা একটু এথিক্স ফ্রিক জানেন তো? সত্যি সত্যি ওসব করলে পাপাই যদি ভালোমন্দ কিছু একটা করে বসত? আর তা ছাড়া আপনিই তো টর্চটা বাজালেন, মানে আপনার কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে আপনি ছাড়া আর কে-ই-বা বাজাবে?”
“হুম, শব্দ আমি করেছিলাম, সিগন্যাল দিয়েছিলাম সত্যি। কিন্তু সে তো পাপাইয়ের মুখে আলো ফেলার জন্য। এইটুকু সৎভাবনা ভাবতে পারলেন না? তাহলে হয়তো ছেলেটা টুকলির কথা না ভেবে পড়াশোনা করতে পারত? আপনি কী ভাবছেন, ও একবারও পড়াশোনার সম্ভাবনার কথা ভাবেনি? আমি হলফ করে বলতে পারি, ভেবেছে। কিন্তু পৃথিবীর মানুষের মধ্যে যেভাবে খারাপটাকে বেছে নেওয়া সংক্রামিত হয়েছে, তাতে ওই চোদ্দো বছর বয়সি ছেলেটা অবধি ইমপ্যাক্টেড। আর আপনি কিনা, ছি ছি।”
“তাহলে এবার কী হবে?”
“কী হবে, সে কি আর আমি জানি? তবে আমার সিক্সথ সেন্স বলছে, ভালো কিছু হবে না। দেখুন, কী হয়। তবে এটুকু বুঝেছি আপনারও আর সদ্বুদ্ধি নেই মোটে। না, টর্চটা আপনার কাছে রেখে আর লাভ নেই। তবু দুম করে টর্চ হাওয়া করে দিলে আপনি আবার ঘাবড়ে যাবেন, তাই ওয়ার্মহোল নেটওয়ার্ক ইউজ় করে আপনাকে জানিয়ে গেলাম। তবে এখন আসি। ও জিনিস আমার কাছেই থাক।”
“আরে, এলেই হল? আমার প্রশ্ন আছে যে?”
“কী প্রশ্ন? শিগগির বলুন।”
“তাহলে যে-কোনো অতীত আপনার ওই টর্চ দিয়ে বদলে দেওয়া যেতে পারে?”
“অতীত বদলায় না, মশাই। শুধু কোয়ান্টাম পাথ চেঞ্জ হয়ে যায়। কোয়ান্টাম কণা অনেকগুলো স্টেট একসঙ্গে ধারণ করতে পারে, জানেন তো? তার মধ্যে যে অবস্থায় তাকে দেখছেন, সেটুকুই দেখা যায়। অন্য অবস্থাগুলো একেবারে কুয়াশা-ঢাকা। টর্চের কাজ হল সেই কুয়াশা একটা পথের থেকে সরিয়ে অন্য পথের ওপর নিয়ে যাওয়া। অতএব সেই পথটুকুও থাকবে বটে অন্য কোনো প্যারালাল ইউনিভার্সে, তবে আপনাদের ইউনিভার্স দেখতে পাবে অন্য এক হারানো পথ। কোয়ান্টাম কণা কিনা বড্ড আনস্টেবল। দিন দুয়েকের পর তাদের খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কাজেই দু-দিন আগের অতীত বদলাতে আমি অন্তত পারব না। আর অত জেনে করবেন কী মশাই? টর্চের আপনার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। আমারও বড়ো দেরি হয়ে যাচ্ছে। আজ আসি, দরকার পড়লে দেখা হবে কখনও।”
“আরে যাবেন কী? আরও দু-একটা প্রশ্ন ছিল যে মশাই, শুনছেন? ও ওপারের মল্লারবাবু, শুনছেন?”
কথা শেষ না হতেই মল্লার শুনল, ফুস করে একটা আওয়াজ হল। আর কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। টেবিলের ওপর টর্চটাও আর নেই। চোখের নিমেষে ভ্যানিশ হয়ে গেল। ব্যাজার মুখে বসে রইল মল্লার, অনেকক্ষণ। খিদে ঘুম চটকে গেছে। কী যেন একটা রত্ন হারিয়ে গেছে, তার মনে হচ্ছে।
***
জটলা দেখে খানিক এগিয়ে গেল মল্লার। থমথমে মুখে কী যেন আলোচনা করছে পাড়ার ছেলেগুলো। খানিক এগিয়ে গেল সে জটলাটার দিকে। বাপিকে জটলা থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে সিগারেট খেতে দেখে ওর সামনে গিয়ে কাঁধে হাত রেখে মল্লার জিজ্ঞাসা করল, “কিছু হয়েছে নাকি?”
“সে কী মল্লারদা, খবর শোনোনি?”
“কী খবর?”
“পাপাই তো সুইসাইড অ্যাটেম্পট করেছে। একগাদা ঘুমের ওষুধ খেয়ে হসপিটালে ভরতি। সন্তুদা এইমাত্র হসপিটাল থেকে ঘুরে এল। বলছে নাকি অবস্থা এখনও ভালো নয়। বার করেছে নাকি ওষুধগুলো পেটে পাইপ ঢুকিয়ে, কিন্তু খানিকটা দেরি হয়ে গিয়েছিল।”
ঢোঁক গিলে মল্লার জিজ্ঞাসা করল, “খামোখা সুইসাইড অ্যাটেম্পট করতে গেল কেন?”
“সে তো আর কাউকে বলেনি করার আগে? আজকালকার ছেলেপিলে, কী খেয়াল হয়, তার ঠিক আছে? তবে শুনলাম নাকি, স্কুলে টুকতে গিয়ে ধরা পড়েছে। পরীক্ষার হলে ধরা পড়তেই নাকি ওর বাবাকে ফোন করে জানিয়েছে। তারপর বাড়ি ফেরেনি। কোন বন্ধুর বাড়ি গিয়ে বসে ছিল। তারপর সেখানে একা একটা ঘরে এই কাণ্ড করেছে। বন্ধুর মায়ের ওষুধের প্যাকেট থেকে নাকি পুরোটা মেরে দিয়েছে। সবাই তো বলছে সেই বন্ধুর মা, পাপাইয়ের কাকারই পেশেন্ট। ও জানত বলেই প্ল্যান করে ওখানে গিয়ে এসব করেছে। দেখতে গেলে যাও-না, ওর কাকার নার্সিং হোমে ভরতি।”
“ওর কোন বন্ধু বল দেখি?”
“ধুস, ওর সব বন্ধুকে আমরা চিনব? তুমি যে কী বলো-না মল্লারদা?”
“মিল্টু কোথায় জানিস?”
“হ্যাঁ, কেন জানব না? মিল্টু আমার খুড়তুতো ভাই, ভুলে গেছ? তার পরশু রাত থেকে ধুম জ্বর। পরীক্ষা দিতে যেতে পারেনি। সে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না, অথচ পরীক্ষা দিতে যাবেই। কাকিমা কিছুতেই যেতে দিল না, বলল, একটা পরীক্ষা না দিলে জীবনে এমন কিছু ক্ষতি হয় না।”
মিল্টুর জ্বর পরশু রাত থেকে? অথচ কাল বিকেলে—মনে মনে মল্লার বলল, ব্লান্ডার। টর্চের জন্য নিশপিশ করছে হাত।
মাঠে আর বেশিক্ষণ ছিল না মল্লার। ফাঁকা পুকুরপাড়ে গিয়ে বসে রইল সে। এসব যেন তারই ভুলে হল। সত্যি তো, একটা পরীক্ষা না দিলে কী আর এমন হত? ফেল করলেই-বা কী এমন ক্ষতি হয়? জীবনের পরীক্ষা তো কত আসবে-যাবে, কোথাও না কোথাও ঠিক পাস করে যায় মানুষ। এমনি করে অনেকক্ষণ বসে থাকবার পর মিল্টুর বাড়ি গিয়ে হাজির হল মল্লার।
মিল্টুর জ্বর কিছুটা কমেছে। মল্লারকে দেখেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠল ছেলেটা। “শুনলে মল্লারদা, পাপাইটা কীরকম পাগল? ইশ্, আগে যদি একটু আঁচ পেতাম, এমনটা করবে, আমি ঠিক ওকে আটকাতাম।”
“কী করতিস?” নির্লিপ্ত গলায় জিজ্ঞাসা করল মল্লার।
“প্রথমে ভয় দেখাতাম। যদি তাতে কাজ না হত, সাহায্য করার অভিনয় করতাম। ও যা বোকা, ঠিক আমায় বিশ্বাস করত। তারপর ঠিক ওর টুকলির কাগজগুলো সরিয়ে ফেলতাম। ওগুলো না পেলে, যা জানত, লিখত? ও সুস্থ হয়ে যাবে, বলো মল্লারদা? ওর কাকা অত বড়ো ডাক্তার।”
“নিশ্চয়ই হয়ে যাবে। অমন ঘুমের ওষুধ খেয়ে কত লোক বেঁচে যায়?”
“ওর সুস্থ হওয়া দরকার, মল্লারদা। আমায় দেখলেই ও বুঝবে, একটা পরীক্ষা না দিয়েও ভালো থাকা যায়। তার জন্য অসৎ পথ অবলম্বনের কোনো দরকার নেই।”
হসপিটালেও গিয়েছিল মল্লার। একটা মিষ্টি দেখতে মেয়ে বসে। চোখের কোণে শুকনো জল, বন্ধুর জন্যেই সে জল আকুল হয়েছে নিশ্চয়ই। এ কি তবে অলি? সেই যে মেয়েটার জন্য ওকে টুকলি করে হলেও পাস করতে হত, সে এসে নাওয়া-খাওয়া ভুলে হসপিটালে পড়ে রয়েছে? তা-ই যেন হয়। মল্লার মনে মনে বলেছে, পাপাইকে সুস্থ হয়ে উঠতেই হবে। তা না হলে ও বুঝবে কী করে, এই মেয়েটা অলি হোক বা না হোক, কেউ তো আছে, যে তার টুকলির খবর পেয়েও তার জন্য চোখের জল ফেলছে? ওর একখানা ভূগোল পরীক্ষায় ফেলের জন্য নিশ্চয়ই এ মেয়েটা অন্তত তাকে ছেড়ে যেত না? এখনও ঘুমন্ত পাপাইকে দেখে টর্চটাকে আরেকবার মিস করল মল্লার। এখন নিশ্চয়ই সে টর্চ একবার বেজে উঠত। সে নিজে হাতে নিশ্চয়ই একটা দিন অন্যরকমভাবে লিখতে পারত?
***
ঘড়ির কাঁটা দৌড়োচ্ছে প্রবল বেগে। মেঘ জানে ওর সঙ্গে প্রতিযোগিতা বৃথা। তবু সে পায়ে চটি গলিয়ে নিয়ে নেমে পড়ল রাস্তায়। শরীরটা এখনও দুর্বল। সেসব গ্রাহ্য করলে চলে না। মা পিছন থেকে ডাকলেন, “আর দুটো দিন অপেক্ষা করলে কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হত, কে জানে? পক্সের পর একুশ দিন অন্তত থাকতে হয়। কিছু একটা বাধিয়ে না-বসা পর্যন্ত এ মেয়ের শান্তি নেই।”
“আমি ভালো আছি, মা।” কোনোরকমে কথাটা বলেই বেরিয়ে এল সে। দ্রুত হাঁটতে শুরু করল। আকাশ কালো করে মেঘ ধেয়ে আসছে। এহে, ছাতাটা নিতে ভুলে গেছে। কিন্তু পিছন ফেরার তার সময় নেই মোটে। সেই দুটো চোখ নিশ্চয়ই আজও তাকে খোঁজে। সে বেশ জানে, খুঁজবেই। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। হাঁটা ছেড়ে কখন দৌড়োতে শুরু করেছে, সেই খেয়ালই যার নেই, তার আর বৃষ্টিতে কী আসে-যায়?
মল্লার বাস স্টপে এসে আজও হতাশ হল। ওই তো বাসটা ঢুকছে বাস স্টপে। আর-একবার দেখে নিল সে, যতদূর দেখা যায়। অবশ্য কতটুকুই-বা দেখবে? বাস স্টপ পেরিয়েই ওই একটা গলি। সেই গলির আড়াল থেকেই তো আসে সে। না, আজও তবে আসেনি। বাসে উঠে পড়ল মল্লার। এসব কি আর ভাববার সময় আছে? পাপাইটার কী যে হবে, কে জানে? অফিস-ফেরতা একবার নার্সিং হোমে যাবে।
বাসটার বড়ো তাড়া। উঠতে-না উঠতেই স্পিড তুলল। বাসের পিছনের কাচ দিয়ে বাস স্টপের দিকে তাকিয়ে অবাক হল। একটা চেহারা যেন বৃষ্টির মাঝে ঝাপসা দেখা যাচ্ছে? নিশ্চয়ই মনের ভুল। মরীচিকার পিছনে আর ছুটবে না মল্লার। কাল থেকে নতুন জীবন। আর এ পথ মাড়াবে না। ওদিকের বাস স্টপ থেকে নতুন এসি বাস রুট চালু হয়েছে। এ মোহ ছেড়ে সে মোহর পিছনে ছুটলে অন্তত হতাশার সম্ভাবনা কম। কিন্তু তবু বৃষ্টির মাঝে ঝাপসা চেহারাটা আবার দেখা গেল। ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে বাস স্টপ। গতি বাড়ছে বৃষ্টির, সঙ্গে বাসের। না, এ বৃষ্টিতে সে নামবে না। সামনে একটা বসার জায়গা খালি হতে দেখে ঝাঁপিয়ে পড়ল। কে একটা হাঁক দিল, দাদা বাইরে যে অন্ধকার হয়ে গেল, বাসের লাইটগুলো জ্বালান? কিন্তু বাসের আলো জ্বলার আগেই থমকে গেল মল্লার। প্রথমে ভেবেছিল, এখানে আয়না এল কী করে? তারপর বুঝল, আয়না নয়। সামনে দাঁড়িয়ে যে, তার চেহারা হুবহু মল্লারের মতন। অন্য কিছু ভাবার আগেই একটা দমকা আলোয় যেন চোখ ঝলসে গেল মল্লারের।
***
না, বাসটা তার জন্য দাঁড়াল না। শূন্য বাস স্টপের ছাউনিতে না গিয়ে বাসের দিকে একমনে তাকিয়ে বৃষ্টি ভিজতে লাগল মেঘ। কখন যে চোখের জলও বৃষ্টিতে মিশতে শুরু করেছে, জানে না সে। শরীরটা ক্লান্ত, কিন্তু মনের ক্লান্তি যেন আরও বেশি। সে কি একটু দাঁড়াতে পারল না? নাকি চোখের ভাষা এতদিন ভুল পড়েছে মেঘ, নাকি অনেকটা অভিমান বুকে করে সে ক্রমাগত দূরে সরে গেছে? বাস স্টপের ছাউনিতে বসে সেই লোকটা বেহালায় সুর তুলেছে, ‘সে চলে গেল, বলে গেল না’।
বাসটা চোখের আড়াল হতেই মনকে শক্ত করেছিল মেঘ। কিন্তু সে যা দেখছে, ঠিক দেখছে? বৃষ্টি-ভেজা একটা চেহারা ছুটে আসছে তারই দিকে। ঝাপসা চেহারাটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্রমাগত। আসছে কাছে, আরও কাছে। মানুষটা ওর সামনে এসে দুই হাঁটুতে হাত রেখে ঝুঁকে খানিকক্ষণ হাঁপাল। তারপর বলল, “কোথায় ছিলে এতদিন? আমি মল্লার, নামটাও তো জিজ্ঞাসা করোনি।”
“আমি মেঘ। এই বৃষ্টিতে ছুটে এলে যে?”
“বৃষ্টির মাঝে পরির মতো একটা চেহারা বাস থেকে নামিয়ে আনল যে, কী করি, বলো তো? আর বৃষ্টি না হলে কি মেঘ মল্লারকে খুঁজতে পারে?”
কখন যেন ওদের দুটো হাত পরস্পরকে আশ্রয় করেছে, টের পায়নি ওরা। ওদের নজর শুধু সেই চোখের ভাষায়। ওদিকে সেই বেহালাবাদকও কখন যেন আগের সে সুর থামিয়ে বাজাতে শুরু করেছেন মেঘমল্লার। এ সুর ভারী চেনা তার। ঠাকুরদা মেঘমল্লারকেই ভালোবেসে তার নাম রেখেছিলেন মল্লার। আর আজ হয়তো পূরণ হল সেটুকু, যেটুকু সুপ্ত হয়েই রয়ে গিয়েছিল? মল্লারের ফোনটা বেজে উঠল। ফোনের ওপর মিল্টুর নাম ভেসে উঠেছে। বুক কেঁপে উঠল মল্লারের। পাপাইয়ের কোনো খবর নয় তো? কোনো খারাপ খবর? পরক্ষণেই মনে হল, এমন দিনে কোনো খারাপ কিছু ঘটতেই পারে না। হাসিমুখে ফোনটা তুলে ‘হ্যালো’ বলল মল্লার।
Tags: অর্ণব গোস্বামী, দশম বর্ষ প্রথম সংখ্যা
