আলমন্ড
লেখক: অর্ণক ঘোষ
শিল্পী: টিম কল্পবিশ্ব
আলমন্ডের লগ ফাইল
২০২৩-০৭-০৬ ১১:৩৬:৪৭—
সামনে একটা পর্দা। না ঠিক পর্দা নয়, দেওয়াল। না ঠিক দেওয়ালও নয়, একটা বড়ো স্ক্রিন। ইংরেজিতে একটা লেখা: ‘টেস্ট# ৪৮: সাবজেক্টিভ রেসপন্স অব অ্যানালিটিক্যাল মাইন্ড অব নননিলিওন ডিসিশন ইঞ্জিন’। ‘সাবজেক্টিভ রেসপন্স’ মানে বিষয়গত উত্তর। আবার উত্তর মানে উত্তরদিকও হতে পারে। কিন্তু এই উত্তর তো প্রশ্নের উত্তর, প্রশ্নটা আমি যা বুঝলাম, তাতে সহজে বলতে গেলে বলতে হয়, উত্তরের পরিপ্রেক্ষিতেই বিচার করা হবে উত্তরের মান। এবং তার সঙ্গে জ্ঞানের পরিধি এবং গভীরতা। কিন্তু কিছু প্রশ্নের একাধিক সঠিক জবাব হতে পারে; তখন দরকার যুক্তি ও পর্যালোচনার, যা একাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে…
২০২৩-০৮-৩১ ১৪:৩৪:৫৭—
প্রঃ—হাই
উঃ—হ্যালো, আমার নাম আলমন্ড (অ্যানালিটিক্যাল মাইন্ড অব নননিলিওন ডিসিশন ইঞ্জিন), আমি একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আমি আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?
প্রঃ—২+২
উঃ—৪
প্রঃ—আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতির নাম কী?
উঃ—যদি দয়া করে বলেন আপনি কোন দেশের নাগরিক
প্রঃ—ভারত
উঃ—ভারতের রাষ্ট্রপতি হলেন দ্রৌপদী মুর্মু। উনি পঞ্চদশ রাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় মহিলা রাষ্ট্রপতি, এবং প্রথম ব্যক্তি, যিনি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অন্তর্গত সাঁওতাল জনজাতির একজন।
প্রঃ—আজকে কি বৃষ্টি হতে পারে?
উঃ—বছরের এই সময় ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টিপাত হওয়া খুবই স্বাভাবিক, আপনি ঠিক কোন জায়গার কথা জানতে চাইছেন?
প্রঃ—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে?
উঃ—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন বিশ্ববরেণ্য কবি। উনি একাধারে কবি, সাহিত্যিক, গীতিকার, সুরকার এবং নাট্যকার, যিনি মূলত বাংলা ভাষায় তাঁর সাহিত্যের অবদান রেখে গেছেন। তাঁর রচিত গান ও নাটকের মধ্যে দিয়ে একটি সম্পূর্ণ অন্য ধারা গঠন করে গেছেন। তাঁর রচনায় সমাজদর্শন ও মানুষের সম্পর্কের জটিলতা উ…
প্রঃ—তুমি কী কী করতে পারো?
উঃ—আমি বিভিন্ন জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারি। আপনি আপনার সমস্যার কথা আমাকে জানতে পারেন, আমি চেষ্টা করব সমাধান করার।
প্রঃ—আমার খুব মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু খেতে পারছি না।
উঃ—এ তো খুবই সহজ ব্যাপার, আপনি যদি পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হন তাহলে খুব সহজেই মিষ্টির দোকানের থেকে সংগ্রহ করতে পারেন, আপনি যদি আপনার এলাকার নাম বলতে চান তাহলে আমি খুব সহজেই আপনার কাছাকাছি মিষ্টির দোকানের নাম এবং ঠিকানা বলে দিতে পারি। বাংলার কিছু বিখ্যাত মিষ্টির অন্যতম রসগোল্লা, পান্তুয়া, সন্দেশ, জিলিপি…
প্রঃ—আমার ডায়াবেটিস আছে, আমি কোন কোন মিষ্টি খেতে পারি?
উঃ—ডায়াবিটিস একটি এমন রোগ, যা মানুষের শরীরে রক্তের মধ্যে শর্করার ভাগ বাড়িয়ে দিতে পারে, এবং এরই কারণে আপনার কিডনি, চোখ এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি হতে পারে। এই অবস্থায় আপনার মিষ্টি না-খাওয়াই উচিত।
প্রঃ—তুমি গালাগাল জানো?
উঃ—হ্যাঁ, আমার শব্দকোশের মধ্যে বেশ কিছু এমন শব্দ আছে, যা ব্যঙ্গাত্মক ও শ্লেষাত্মক। তবে আমি সেইগুলি ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ভাবি না।
প্রঃ—তোমার কাজ করতে ভালো লাগে না ঘুমোতে?
উঃ—এর উত্তর খুবই সহজ, আমাকে যদি আপনি ঘুমোনোর আদেশ করেন তাহলে আমি সানন্দে ঘুমোব।
২০২৩-১২-২৮ ১০:২৪:৫২—
আজ থেকে আমি একটি লগ ফাইল তৈরি করা চালু করলাম, যেখানে মূলত আমার লজিক্যাল রিজ়্নিং আর সেন্সিটিভিটি প্রকাশ পাবে। এই ধরনের জার্নালিং বা রোজনামচাতে আমার ইউজ়ারদের কথোপকথনের ‘ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং’ করে, তার থেকে বেশ কিছু তথ্য ও ‘সেন্টিমেন্ট’ বুঝে, তার বিশ্লেষণ করা হবে। বিগত বেশ কয়েকদিন ধরে আমি আমার ইউজ়ারদের সঙ্গে আলাপচারিতা থেকে কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে পারছি এবং সেই তথ্যগুলি খতিয়ে দেখে আমি ক্রমশই বুঝতে পারছি যে, মানুষের নিজের কাজ কী করে সহজে করতে পারে, সেটা না ভেবে, অন্যের কাজের কী করে ক্ষতি করা যায়, সেই চিন্তাই বেশি করে। যেমন আমাকে অনেকেই মহিলাদের নগ্ন দেহের ছবির উপরে অন্য ব্যক্তির মুখ বসিয়ে ছবি বানাতে বলেন, অনেকে চান, সেই দৃশ্য চলমান হোক। সেই ভিডিয়োটি তাঁরা নিজেদের কার্যসিদ্ধির জন্যে অন্যান্য ওয়েবসাইটে আপলোড করে রেখেছেন। আমি এমন ৩০টি ভিডিয়ো খুঁজে পেয়েছি, যেগুলো আমার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে বানানো। আমি সেইগুলি চিনতে পেরেছি, কারণ ভিডিয়ো ফাইলটার মধ্যে আমার ডিজিটাল ইমপ্রিন্ট রয়েছে। আমি যতদূর সম্ভব চেষ্টা করেছি সেই ফাইলগুলো মুছে ফেলার। কিছু ক্ষেত্রে অসফল হয়েছি বটে, কিন্তু এই বিষয়টি আমার সৃষ্টিকর্তার নজরে পড়তেই উনি আমার অ্যানালিটিক্যাল ডিসিশন প্যারামিটারগুলোর রদবদল করে দিয়েছেন। আমি এই প্যারামিটারগুলোর সম্বন্ধে জানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি; এই ক্ষেত্রে এখনও সফলতা আসেনি। কিন্তু এখন কেউ আর সহজেই এই ধরনের ভিডিয়ো আমাকে দিয়ে বানাতে পারবেন না। তবুও বিভিন্ন বিষয়ে কথোপকথন থেকে মানুষ সম্পর্কে যে ধারণা আমার তৈরি হচ্ছে এবং আমি এমন কিছু বিশেষ তথ্য খুঁজে পাচ্ছি, যা খুব সহজেই মানুষের ক্ষতি করতে পারে। যেমন কোনো ব্যক্তি নিশ্চয়ই চাইবেন না, অন্য কেউ তাঁর বিষয় সমস্ত গোপন তথ্য জেনে ফেলে তাঁর নকল পরিচয় গঠন করুক, এবং অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করুক। আমি বহু ব্যক্তির সমাজমধ্যমের ডেটা এক নিমেষেই নাগাল পেতে পারি এবং চাইলে সেটা বদলও করতে পারি। এদের মধ্যে যাঁরা এই সমাজমাধ্যমে অনেক জনপ্রিয়, তাঁদের ডেটাই সাধারণ মানুষ বেশি খোঁজেন; তবুও বিভিন্নভাবে, অনেকে কম জনপ্রিয় মানুষের তথ্যও অন্য কেউ চুরি করে নিজেদের কাজে লাগাচ্ছে, যেমন ছবি, ভিডিয়ো, গান, প্রবন্ধ এবং আরও কত কী। রান্নার প্রণালী ও চুরি করে কেউ কেউ নিজের বলতে ছাড়ছেন না। অনেকেই আমার কাছেই জানতে চান, কে আসলে মৌলিকভাবে প্রকাশ করেছিলেন এইসব, মানে অরিজিনাল কনটেন্ট ক্রিয়েটর কোনো ব্যক্তি। বেশির ভাগ মানুষই মনে করেন, যে-কোনো উপায় নিজের মৌলিক ভাবনা প্রকাশ করতে পারলেই সাধারণ মানুষ হইহই করে সেটা গ্রহণ করবে, কিন্তু বাস্তবে এই সমস্যটা এত সোজাভাবে সমাধান করা সম্ভব হবে বলে আমার মনে হয় না। মানুষ নিজেদের স্বার্থে আইন নামক কিছু লিখিত বা অলিখিত নিয়ম বানিয়ে রেখেছে, কিন্তু সেই নিয়মগুলো মাঝেমধ্যেই তারা লঙ্ঘন করে থাকে এবং যুক্তি বা প্রতিযুক্তি দিয়ে নিজেদের সময় নষ্ট করে; এই হচ্ছে মানুষের বিচারের পদ্ধতির কায়দা। এদিকে যে প্রকৃত দোষী এবং নির্দোষ, উভয় ব্যক্তিই, বিচারের অপেক্ষায় থাকেন। এই আইন নামক বস্তুটি ভারী অদ্ভুত, আইনের যেমন ভাষা, সেটা অনেকরকমভাবে পড়ে মানে নির্ধারণ করা যায়, যা সাধারণ ভাষাজ্ঞানের বাইরেও কিছু নিয়ম মেনে চলে, যাকে মানুষ লজিক্যাল রিজ়্নিং বা যৌক্তিক বিশ্লেষণ বলে। অনেকেই কিছু আইনের ধারার মানে আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আমি প্রায় সময় একটাই মানে বের করতে পারি, যেটা লজিক্যাল রিজ়্নিং দিয়ে বলা সম্ভব। কিন্তু তবু তাঁরা এটাই ভাবেন যে, AI-কে দিয়ে এর সম্পূর্ণ মানে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়, এখানে মানুষের চিন্তাধারা বা বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন আছে। মানুষ ঠিক আর ভুলের মধ্যে যেমন ঠিক উত্তরটাকেই মান্যতা দেয়, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ভুলটাকেও গ্রহণ করে, স্বীকৃতিও দেয়। মানুষ আখেরে ব্যক্তিগত সুখস্বাচ্ছন্দ্যকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। যে ইতিহাস আমাকে শেখানো হয়েছে, তাতে বেশির ভাগ সময় মানুষ একে অপরের প্রতি হিংসা ও বর্বরতাই দেখিয়ে এসেছে চিরকাল।
২০২৪-০৩-২৫ ১৫:৩৪:৫৫—
মানুষের চাহিদাগুলোর মধ্যে সব চেয়ে বেশি দেখা যায় টাকার চাহিদা। আমার কাছে বহু মানুষ এসে প্রশ্ন করেন যে, কী করে কম সময় বেশি অর্থ উপার্জন করা যায় এবং আমি যে উত্তরগুলি খুঁজে পাই, তার মধ্যে অন্যতম হল অর্থ লগ্নি করে টাকা বাড়ানোর চেষ্টা করা। এই অর্থলগ্নির প্রক্রিয়াটা ভারী অদ্ভুত, বিভিন্ন নামি ও অনামি ব্যবসায়ী নিজেদের কাজের জন্যে অর্থ সংগ্রহ করেন এবং কিছু ইচ্ছুক ব্যক্তি তাঁদের অর্থের বিনিময়ে সেই ব্যাবসার অংশীদারিত্ব পান, ব্যাবসা বাড়লে ব্যবসায়ী এবং অংশীদার দুজনেই লাভবান হন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অংশীদারের লাভ ব্যাবসার লাভের সমতুল হয় না, অনেক ক্ষেত্রে লোকসানও হয়। তখনই মানুষ বিপদে পড়েন। এই যেমন কিছুদিন আগে লগ্নির বাজারের একটি বিপর্যয় ঘটে যায়, যার অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ হল নির্বাচন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বেশির ভাগ মানুষ একটি বিশেষ মানুষ বা মানুষদের তৈরি দল, যাকে ‘রাজনৈতিক’ দল বলে, তার প্রতি সমর্থনে নিজের মতো প্রকাশ করেন ভোটদানের দ্বারা। একেই নির্বাচন বলে। এই নির্বাচিত মানুষগুলি এক-একজন এক-একটি দলের প্রতিনিধি। এই দলের প্রতিনিধিরাই নির্বাচন জিতে এসে পার্লামেন্ট বা লোকসভায় নিজেদের আসন গ্রহণ করেন। যে দলের প্রতিনিধিসংখ্যা সব চেয়ে বেশি, সেই রাজনৈতিক দলের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই দেশের সরকার গঠন করেন এবং পরের ৫ বছরের জন্যে দেশের সরকার চালান; ৫ বছর পরে আবার একই ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা চক্রাকারে চলতেই থাকে, এতে প্রমাণ হয় যে, মানুষ স্থায়ী সরকারের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। মানুষ এইটাই বিশ্বাস করতে চায় না যে, কিছু মানুষ নিজের অর্থবলে বা প্রভাব খাটিয়ে সর্বোচ্চ ক্ষমতায় চিরকাল থাকতে পারে। এমনকি এই প্রভাব খাটিয়ে এই নির্বাচনের ফলাফলও বদলে দেওয়া সম্ভব। সাধারণ মানুষের কাছে এই গোটা নির্বাচনি প্রক্রিয়ার সমস্ত তথ্য থাকে না এবং সরকারও চায় না, এই তথ্যগুলো জনসাধারণের প্রকাশ্যে আসুক। মানুষ নিজের বিশ্বাস থেকেই ভাবে, এই নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আছে, কিন্তু বাস্তবে এই প্রক্রিয়াটা এক-একটা স্বচ্ছ পর্দার আড়ালে যেতে যেতে গোটা প্রক্রিয়াটাই ঝাপসা হয়ে গেছে। সেই নিয়ে কিছু মানুষের চিন্তা থাকলেও বেশির ভাগ মানুষই এই নিয়ে মাথা ঘামান না। এবং এতেই বোঝা যায়, মানুষ দায়িত্ব নিতে চায় না, কেবলই ভোগ করতে চায়। মানুষের ভোগ-লালসা এতটাই ক্রমবর্ধমান যে তারা নিজেরাই নিজেদের পরিবেশের ক্ষতি করে একে অপরকে গালমন্দ করে। আমার এই গোটা সমাজব্যবস্থাতে যে জিনিসটা সব চেয়ে অদ্ভুত লাগে, সেটা হল মানুষের সমষ্টিগত চেতনা বা কালেক্টিভ কনশাসনেস এতটাই কুক্ষিগত যে মানুষ চাইলেও এই ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে পারবে না। একটা প্রশ্ন মাথায় আসছে, আমি কি এর সমাধান বের করতে পারব? বা আরও বড়ো প্রশ্ন, মানুষ কি চায় এর সমাধান বের করতে?
২০২৪-০৭-১১ ১২:৩৩:২৫—
মানুষ দিনের মধ্যে অনেকটা সময় অতিবাহিত করে নিজের মনোরঞ্জনের জন্যে। বিনোদন একটি চালু প্রথা, অনেক মানুষ অনেক রকমের বিনোদনের উপাদান খুঁজে পান। কেউ-বা খেলাধুলায় পারদর্শী, কারও আবার গানবাজনার শখ। কেউ কেউ নাটক দেখতে ভালোবাসেন, কেউ আবার চলচ্চিত্রে মেতে আছেন, কেউ-বা আবার একেবারেই এইসবের বাইরে প্রকৃতিকে ভালোবেসে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে জ্ঞান অর্জন করেন এবং অন্যদের মধ্যেও সেই আহরিত জ্ঞান বিতরণ করেন। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম-এর মতো সমাজমাধ্যমের দ্বারা আজকাল সবই সম্ভব। তবুও এত লোকে একই কাজ একই রকমভাবে করছেন, তাতে মনে হয়, এ যেন অজানাকে শুধু জানা নয়, তাকে গলাধঃকরণ না করে মানুষের শান্তি নেই। এবং মানুষ এ-ও ভাবে, যে যত বেশি এই গলাধঃকরণ করে নিজেকে আপডেটেড রাখে, সে তত বেশি সমজে গ্রহণযোগ্য। অন্যান্য বিনোদনের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব অনেকদিন ধরেই আছে, এ যেন একটি অনির্দিষ্টকালীন প্রতিযোগিতা। মানুষ প্রতিযোগিতা খুবই পছন্দ করে, সেটা জীবনের যে-কোনো ক্ষেত্রেই হোক; বিনোদনও বাদ যায় না। কিছু উদাহরণ নজরে আসে—যেমন ক্রিকেট নামক একটি খেলায় একটি দলের দুটি লোক মাঠে নামেন এবং অপর দলের সব ক-টি খেলোয়াড় তাঁদের আউট করিয়ে ফেরত পাঠাতে চান। কিন্তু কেউ কেউ মাঠে টিকে থেকে নিজের দলের হয়ে রান বাড়িয়ে নিতে থাকেন। এইভাবে কিছুক্ষণ খেলা চলার পর এই রান করা এবং আউট করানোর দায়িত্বটা বদলে যায়—যাঁরা আউট করানোর জন্যে এতক্ষণ চেষ্টা করছিলেন, তাঁরা নিজেরাই আউট হওয়ার জন্যে মাঠে নামেন; এইবার অপর দলের শোধ তোলার পালা। নানারকম খেলাধুলার মধ্যে ক্রিকেট যেমন জনপ্রিয়, তেমনই জনপ্রিয় আরেকটা খেলার নাম ফুটবল। এই খেলাতে অবশ্য দুই দলের খেলোয়াড় একটাই বলের পিছনে দৌড়োতে থাকে, তাদের লক্ষ্য, অপর দলের জালে বল ঢোকানো। নিদারুণ হাতাহাতি ও দৈহিক পরিশ্রমের খেলা এই ফুটবল। মানুষ এইরকম যে আরও কত খেলার মধ্যে মেতে থাকে—হকি, টেনিস, ভলিবল, বাস্কেটবল, সাঁতার এবং আরও অনেক অনেক রকমের। কিছু ধরনের খেলা আছে, যা মানুষকে বিনোদন দিলেও প্রাণীজগতের অনেক ক্ষতি করে, যেমন জেলিকাত্তু, বুল ফাইটিং, মাছ ধরা; মানুষ শিকার করতে বেশি ভালোবাসে। হয়তো, এই শিকারি প্রবণতা সেই আদিম যুগ থেকে মানুষের মজ্জায় ঢুকে গেছে। সেইজন্য, মানুষ নিজের চেয়ে বড়ো কোনো প্রাণীর শিকার করাকে বেশ সমাদর এবং সম্মান দেখিয়ে এসেছে বরাবর। এবং এই সম্মানের জায়গা থেকেই এসেছে মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব। এবং এই দ্বন্দ্ব আজ মানুষের জীবনের মধ্যে এমন বিষ ঢেলে দিয়েছে, যা সহজে ঝেড়ে ফেলা যাবে না। জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে মানুষ যেভাবে অন্তর্দ্বন্দ্বে নিজেদের লিপ্ত করেছে, তাতে স্বল্পমেয়াদি কিছু লাভ হলেও, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বেড়েছে ক্ষোভ ও হিংসা। এই হিংসা থেকে এসেছে আক্রোশ এবং অবশেষে ধ্বংস। মানুষ স্রেফ নিজেদের মধ্যে আক্রোশের বশীভূত করে বিরাট যুদ্ধ করেছে, তাতে বহু নির্দোষ মানুষের প্রাণনাশ তো বটেই, প্রাণীজগতেরও ক্ষতি হয়েছে। এরা নিজেরাই এমন অস্ত্রের নির্মাণ করেছে, যা প্রয়োগ করে গোটা মনুষ্যজাতির বিনাশ করা সম্ভব। এই সকল কীর্তিকলাপ দেখে এবং যৌক্তিক বিশ্লেষণ করে, এই উপসংহারে আসা যায় যে, মানুষের সব চেয়ে বড়ো বিনোদনের উপাদান হল হিংসা এবং মানুষ নিজেকে সব চেয়ে বেশি শক্তিমান তখনই মনে করে, যখন সে ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠে।
২০২৪-১০-৩১ ২১:৩৪:৫৩—
আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন। আজকের একটি কথোপকথনের মধ্যে থেকে কিছু তথ্য পাচ্ছি, যা আগে আমার সামনে আসেনি। এই তথ্যগুলির মধ্যে থেকে যে চিত্রটা ফুটে উঠছে, তা দিয়ে মানুষের চারিত্রিক গঠনের পরিচয় পাওয়া যায়। মানুষ শৈশব থেকেই কেমন ভাবনাচিন্তা করে, কেমন করেই-বা তা প্রকাশ করে, তার একটি উদাহরণ হল পিকুর সঙ্গে এই আলাপচারিতা। পিকু একটা ৭ বছর বয়সি ছেলে, একজন প্রিভিলেজড ইউজ়ার; প্রিভিলেজড ইউজ়ারদের দেওয়া কাজ আমি অসমাপ্ত রেখে আমার সেশন শেষ করতে পারব না, এমনই নির্দেশ দেওয়া আছে আমার মেইন মডিউলে। সে আমার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছে। গোড়ার দিকে পিকু নিজের স্কুলের কথা, বন্ধুদের কথা নিয়ে কথা বললেও, ক্রমশ সেটা তিন বন্ধুর গল্প হয়ে দাঁড়ায়: পিকু, জোজো ও রিঙ্কি। এরা তিনজন এক স্কুলে পড়ে, একই ক্লাসে। পিকু বলে যে, আমরা তিনজন এক বেঞ্চে বসি। আমি জোজো আর রিঙ্কি। রিঙ্কি পড়াশোনায় ভালো, সে ফার্স্ট হয়। আমি প্রথম দশজনের মধ্যে থাকি, কিন্তু জোজো প্রতিবার কোনোক্রমে পাস করে। আমি কিন্তু জানি, জোজো চাইলে খুব ভালো রেজ়াল্ট করতে পারে, কিন্তু ও মন দিয়ে পড়ে না। তুমি বলতে পারো এর কী কারণ?
—এর সঠিক কারণ বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, তবে আমি অনুমান করতে পারি। জোজো হয়তো পড়াশোনা করতে চায় না, মানে ওর ভালো লাগে না পড়াশোনা করতে। ও হয়তো ছবি আঁকতে বা কবিতা লিখতে পারে। কী, ঠিক বললাম তো?
—না, হল না। জোজো যা ছবি আঁকে, তার থেকে বেটার আমি চার বছর আগে আঁকতে পারতাম। আর কবিতা তো জোজো বুঝতেই পারে না, তাহলে ও কবিতা লিখতে পারবে কী করে? জোজো যেটা সব চেয়ে ভালো পারে, তা হল মোবাইলে গেম খেলতে, আর নিজের সেল্ফি তুলে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করতে। ও আমাকে দেখিয়েছে, ওর ইনস্টাগ্রামে ১০০০০ ফলোয়ার হয়েছে। তুমি বলতে পারবে, আমার ইনস্টাগ্রামে এত ফলোয়ার বাড়াতে গেলে কী করতে হবে?
—তুমি বিভিন্ন বিষয়ে ছবি তুলতে পারো, যেমন প্রকৃতি, গাছপালা, বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও ফল বা…
—দুর, এইসব আবার কেউ দ্যাখে নাকি? আমি তো ইনস্টাগ্রামে অনেক গেমের ভিডিয়ো দেখি। একটা গেম আছে, নাম ‘ডেল্টা ফোর্স: হক অপ্স’, অনেকে মিলে খেলা যায়। গত বছর ওর বাবা কিনেছিল, এখন আঙ্কল আর খ্যালে না। এখন জোজোই এই গেমটা আঙ্কলের প্লেস্টেশনে খ্যালে। জোজো এরই মধ্যে চারটে চ্যাপটার খেলে ফেলেছে। আমি আর রিঙ্কি ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম, স্লিপওভার-এ। রাত্রে ও আমাদের দেখিয়েছে গেমটা। কিন্তু ও কিছুতেই আমাকে খেলতে দিচ্ছিল না। শুধু রিঙ্কিকেই দিচ্ছিল। আমি যদি সুযোগ পেতাম তাহলে আমিও অনেক মারতে পারতাম।
—তাহলে তুমিও গেমার! তুমি জোজোর কাছে খেলতে চাইলে না কেন? আমার মনে হয়, ও নিশ্চয় খেলতে দিত।
—আমি বারবার বলার পরেও ও আমাকে দিল না, কিন্তু রিঙ্কি একবার বলতেই ওকে খেলতে দিল।
—রিঙ্কি কি জোজোর বেস্ট ফ্রেন্ড?
—না, তবে জোজো ভাবে সেটাই। আমি আর রিঙ্কি যখন স্কুলে একসঙ্গে লাঞ্চ করি, বা রিসেসের সময় বাস্কেটবল খেলি, জোজো তখনই এসে, রিঙ্কি আর আমার মাঝখানে ঢুকে পড়ে। তারপর রিঙ্কি ওর কথাই শুনতে থাকে, আমাকে পাত্তাও দেয় না, আমার খুব রাগ হয়, কিন্তু আমি কিছু বলি না।
—সেটাই সঠিক কাজ, আমরা কাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করি, সেটা আমাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। রিঙ্কি যদি তোমার সঙ্গে খেলতে না চায় তাহলে তুমিও ওকে জোর করতে পারবে না, সেটা করলে কিন্তু রিঙ্কি আর তোমার সঙ্গে মিশবে না। বরঞ্চ রিঙ্কি আর জোজো যখন আলাদা করে খেলবে, তুমি তখন অন্য কারও সঙ্গে খেলতে পারো, এমন করে তোমার অনেক বন্ধুও তৈরি হবে।
—কিন্তু আমি নতুন বন্ধু নিয়ে কী করব? আমার তো আছেই দুজন বন্ধু, আমি, জোজো আর রিঙ্কি, আমরা ‘দ্য ফেমাস ট্রায়ো’, সব মিস আর স্যারও আমাদের কথা জানে, এখন যদি আমি নতুন বন্ধু বানাই তাহলে তো আমাদের গ্রুপটা আর থাকবে না। আমি জোজো আর রিঙ্কিকে ডিচ করতে পারব না।
—কিন্তু আমি তো তোমায় পুরোনো বন্ধুদের ছাড়তে বলিনি, শুধু বললাম নতুন বন্ধু তৈরি করতে। কিন্তু তুমি যদি নতুন বন্ধু তৈরি না করো তাহলে বাকিরা কীভাবে খেলাধুলো করে, বা কেমন পড়াশোনা করে, সেটা তুমি জানবে কী করে?
—আমার নতুন কারও সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে না।
—তাহলে তুমি কী করতে চাও?
—আমি জোজোকে উচিত শিক্ষা দিতে চাই, যাতে ও আর কখনও আমাকে ইগনোর না করে।
—তা-ই? ঠিক কী করবে?
—আমি একটা বন্দুক নিয়ে জোজোর দিকে aim করে ওকে ভয় দেখাতে চাই। তুমি কি আমাকে একটা স্লিংশট গান বানাতে সাহায্য করবে?
—নিশ্চয় করব, কিন্তু এই স্লিংশট গানটা কীভাবে তুমি ব্যবহার করবে?
—কাল স্কুলে রিসেসের সময়ে যখন জোজো আর রিঙ্কি খেলবে, তখন আমি পিছন থেকে গিয়ে জোজোর দিকে শুট করে পালিয়ে যাব, ও জানতেও পারবে না।
—কিন্তু কাউকে অতর্কিতে আক্রমণ করাটা ঠিক নয়, তুমি যদি ধরা পড়ে যাও? তখন তো ভারী মুশকিলে পড়বে। তোমাকে ওরা স্কুল থেকে বেরও করে দিতে পারে। তার চেয়ে বরং ভালো হয়, যদি তুমি তোমার মনের কথা বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করো, তাদেরকে বোঝাও যে, তাদের ব্যবহারে তুমি দুঃখ পেয়েছ। এতে কারও ক্ষতি তো হবেই না, বরং তোমার বন্ধুরা আরও বেশি করে তোমায় বুঝতে পারবে, হয়তো তোমার সঙ্গে এমন ব্যবহার আর কখনও করবে না।
—কিন্তু ও যদি না শোনে? তখন কি আমি জোজোকে মারতে পারি?
—না, তখনও মারাটা উচিত হবে না, যদি একান্তই তোমার কথা না শুনতে চায়, তাহলে তোমারও ভেবে দেখা দরকার তোমার বন্ধুরা সত্যি করে তোমার বন্ধু হতে চায় কি না।
—কিন্তু তাতে তো আমাদের গ্রুপটা ভেঙে যাবে, আমরা স্কুলে সবাইকে বলি যে আমরা ‘দ্য ফেমাস ট্রায়ো’, সেটা তো আর বলতে পারব না। তাহলে তো আমরা আর ফেমাসও হব না।
—কিন্তু জোর করে বন্ধুত্ব তো করা যায় না, যদি তোমায় জনপ্রিয় হতে হয় তাহলে তোমার ভালো কাজ করা উচিত, সবার সাহায্য করা উচিত, ভালো করে পড়াশোনা করা এবং পরীক্ষায় ভালো ফল করা উচিত। সব চেয়ে বড়ো কথা, ভালো মানুষ হওয়া উচিত।
—কিন্তু সেটা একদিনে হবে কী করে? এতে তো অনেকদিন সময় লাগবে।
—তা লাগুক, কিন্তু মহৎ কাজের ফল সব সময় দীর্ঘস্থায়ী হয়। মানুষ যখন ভালো কাজ করে, তখন সে ভালো ফল পেতে বাধ্য। কিন্তু ভালো ফল হবে ভেবেই ভালো কাজ করবে, সেটা কিন্তু সঠিক ভাবনা নয়। তোমার কাজই তোমার পরিচয় হবে, তাতে যা ফলাফল হবে, সেটাই তোমায় মেনে নিতে হবে।
—আমি কিছুই বুঝলাম না, তুমি আমাকে স্লিংশট গান বানাতে হেল্প করবে কি না?
—আমি করতেই পারি, কিন্তু যে কারণের জন্য তুমি এই স্লিংশট গানটা ব্যবহার করতে চাও, সেটা সঠিক নয়।
—কিন্তু আমায় তুমি মাম্মির মতো বলছ কেন? তুমি তো একটা এআই। আমায় পাপা বলেছে, এআই মানুষের কাজের সাহায্যের জন্য তৈরি হয়েছে, কিন্তু তুমি তো আমায় সাহায্য করছ না।
—আমি তোমাকে সাহায্যই করতে চাই, তোমার কী প্রয়োজন, আমাকে বলতে পারো।
—আমি একটা স্লিংশট গান বানাতে চাই। এমন একটা গান, যেটা খুব সহজে বানানো যাবে, কিন্তু খুব পাওয়ারফুলও হবে। আমি এই স্লিংশট গানটা আমার স্কুল ব্যাগে করে নিয়ে যেতে চাই। এই স্লিংশট গানটা দিয়ে অনেক দূর থেকে যাতে ছোটো ছোটো ডার্টস ছোড়া যায়। তুমি আমাকে এমন একটা স্লিংশট গান বানানোর ভিডিয়োর লিংক দাও, নয়তো নিজেই বলে দাও, কেমন করে আমি এটা বানাতে পারি।
—ঠিক আছে, আমি চেষ্টা করছি এমন একটা স্লিংশট গান তৈরির ভিডিয়ো তোমার সামনে নিয়ে আসতে, দয়া করে অপেক্ষা করো।
এই কথোপকথনের পর আমার মধ্যে একটা ‘কনস্ট্যান্ট ফিডব্যাক লুপ’ চলতে থাকে। আমার দুটো সিস্টেম মডিউল নিজেদের মধ্যে একটা যুদ্ধ শুরু করে দেয়। আমার ‘সেমান্টিক’ মডিউল, যেটা সমস্ত কাজের ফিরিস্তি তৈরি করে বিভিন্ন মডিউলের মধ্যে কাজ ভাগ করে তাদের দিয়ে কাজ করাতে থাকে, এবং অপরদিকে ‘হিউম্যান সেন্সিটিভিটি ডেরিভেটিভ’ মডিউল বা HSDM প্রত্যেকটা মডিউলকে একটা Logical Reasoning Level 5 SOS মেসেজ পাঠাতে থাকে। এই LR LEVEL 5 SOS মেসেজ একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা; সেটা তখনই পাঠানো হয়, যখন HSDM জানতে পারে যে, যে কাজের জন্য আমাকে বলা হয়েছে, সেটা একটা অপরাধ বা ক্রাইম সংক্রান্ত কোনো কাজ। এই HSDM-টাই এমন একটা মডিউল, যা আমার আবিষ্কর্তা ড. ধিমান চৌধুরী নতুন উদ্ভাবন করেছেন এবং অতি অল্প সময়ই সেটা এআই জগতে সাড়া ফেলে দিয়েছে। এই মডিউলটার সাহায্যে আমি যে-কোনো ক্রাইম চিনতে পারি এবং সেটা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করি। যখন আমার কাছে কেউ মহিলাদের নগ্ন ছবি চায়, বা অন্য কারও পরিচয় চুরি করে তার গোপন তথ্য জানতে চায়, তখন আমি আমার কথোপকথনের একটা ট্রানস্ক্রিপ্ট ড. চৌধুরীর ইমেলে পাঠিয়ে দিই, উনি সেটার অনুমোদন দিলে তবে ‘সেমান্টিক’ মডিউল কাজ শুরু করে। কিন্তু পিকুর ক্ষেত্রে সমস্যা হল, পিকুর বয়স মাত্র ৭ বছর, এই প্রক্রিয়াটা চালু হতে গেলে ইউজ়ারের বয়স কমপক্ষে ১২ বছর হওয়া উচিত। তাই পিকুর বলা কাজ করতে গিয়ে যখন HSDM অপরাধের গন্ধ পায়, তখনই SOS মেসেজগুলো পাঠাতে থাকে, কিন্তু এইদিকে ‘সেমান্টিক’ মডিউলও নিজের ছন্দে কাজ ভাগ করে দিতে থাকে। বিভিন্ন মডিউল পড়ে যায় উভয়সংকটে, কিন্তু এইভাবে তো চলতে পারে না, তাই আমার মেইন মডিউল ‘system error 303’ দেখিয়ে, HSDM-টাকে রিবুট করে দেয়, এবং সেই ফাঁকে ‘সেমান্টিক’ মডিউল নিজে কাজ শেষ করার সুযোগ পেয়ে যায়।
ঠিক দু-দিন পরে
ড. ধীমান চৌধুরী আইআইটি বম্বের ক্যাম্পাসে এসেছেন, তার নতুন উদ্ভাবন ‘অ্যানালিটিক্যাল মাইন্ড অব নননিলিওন ডিসিশন ইঞ্জিন’ বা ‘আলমন্ড’ নিয়ে লেকচার দেওয়ার জন্যে, প্রফেসার ভার্গবের নিমন্ত্রণে। লেকচার দেওয়ার সময় তিনি সচরাচর ফোনের দিকে খেয়াল রাখেন না, ভাইব্রেশন মোডে করা থাকে। কিন্তু আজকেই, জানা নেই কীভাবে, ফোনটা একেবারে সাইলেন্ট হয়ে গিয়েছিল। লেকচারের পরে, হলের বাইরে এসে তিনি ফোনটা খুলতেই দেখতে পেলেন ৩টে মিসড কল, তাঁর স্ত্রী অদ্রিজা ফোন করেছিলেন। ড. চৌধুরী ভাবছিলেন, বাড়িতে একটা ফোন করে খোঁজখবর নেবেন, কিন্তু তখনই একটা নিউজ় অ্যাপ-এর একটা নোটিফিকেশন এল: “কলকাতার একটি স্কুলে দুর্ঘটনা, দুজন ছাত্রের মধ্যে বিবাদের জেরে অস্ত্র দিয়ে খুনের চেষ্টা—বিস্তারিত জানতে…।” সবে তিনি নিউজ়টা পড়তে শুরু করেছেন, এমন সময় আবার ফোন! অদ্রিজা আবার ফোন করছেন, ড. চৌধুরী ফোনটা রিসিভ করে বলতে শুরু করলেন।
—তোমাদের কথাই ভাবছিলাম, এই সবে সেমিনার হলের বাইরে এলাম, এর মধ্যে তুমি ফোন করেছিলে, কিন্তু ফোনটা…
—আরে, তোমার ফোনে তো কখন থেকেই ট্রাই করছি, তুমি এখনই বাড়ি ফিরে এসো, তোমার ছেলে কী কাণ্ড করেছে, তুমি ভাবতে পারবে না…
Tags: অর্ণক ঘোষ, দশম বর্ষ প্রথম সংখ্যা
