সম্পাদকীয়
লেখক: কল্পবিশ্ব সম্পাদকমণ্ডলী
শিল্পী: টিম কল্পবিশ্ব
এ বছরের শারদীয় সংখ্যার সম্পাদকীয় লিখতে বসেছি যখন, তখন কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া ভয়াবহ মেঘভাঙা বৃষ্টির আঘাত বুকে নিয়ে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কষতে ব্যস্ত। এতগুলো মানুষের বছরভরের পরিশ্রম তলিয়ে গেছে জলের তলায়, ছাপার কালি চোখের জলে ঝাপসা হয়ে গেছে বেমালুম। প্রকাশক, মুদ্রক, বইবিক্রেতা—ক্ষতি হয়েছে সকলেরই। সামনেই বইমেলা। আশা করি, পাঠকদের ভালোবাসায় সেই বইমেলার আগেই বইবাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে। না দাঁড়িয়ে উপায় নেই, একটি ক্ষয়িষ্ণু আঞ্চলিক ভাষাকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার সুমহান দায়িত্বটি তার কাঁধেই ন্যস্ত। তাই আসুন, নতুন ভরসায় বুক বেঁধে আবার আমরা বাংলা বইয়ের দুনিয়ায় ডুবে যাই।
এবার আসি আমাদের কল্পবিশ্বের কথায়। কল্পবিজ্ঞানপ্রেমী পাঠকদের অকুণ্ঠ ভালোবাসা আর শুভেচ্ছায় এ বছরটা আমাদের কেটেছে প্রতিবারের মতোই ঘটনাবহুল। পুজো সংখ্যার জন্য লেখা এসেছিল অসংখ্য। দেশের নানা প্রান্ত থেকে, এমনকী দেশের বাইরে থেকেও যে কত লেখা এসেছে তার ইয়ত্তা নেই। সেসব লেখা পড়ে নিক্তি মেপে বিচার করে পাঠকদের জন্য পত্রিকাকে সাজিয়ে তুলতে তাই বছরভর চলে অক্লান্ত পরিশ্রম। সব দায়িত্ব পালন করে পুজোর ঠিক আগেই কল্পবিশ্বের শারদ সংখ্যা প্রকাশিত হল যাদের জন্য, তাদের নামগুলো না বললে ভারী অপরাধ হবে। দীপ ঘোষ, সন্তু বাগ আর সুপ্রিয় দাসের অভিভাবকত্বে এইবারের নবীন সম্পাদকেরা দারুণভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রমিত নন্দী, রাকেশ দাস এবং দেবরাজ মৌলিকের জন্য তাই কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। সংকল্প সেনগুপ্তও প্রতিবারের মতোই বর্ণশুদ্ধির কাজটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছেন। আর কল্পবিশ্বের অসাধারন প্রচ্ছদটি অক্লান্ত পরিশ্রমে ফুটিয়ে তুলেছেন আমাদের সকলের প্রিয় শিল্পী উজ্জ্বল ঘোষ। ধন্যবাদ জানাই গোটা কল্পবিশ্বের সম্পাদকীয় টিমকে। ধন্যবাদ জানাই সেই সব কল্পবিজ্ঞানপ্রেমী পাঠকদের, যাঁদের প্রশ্রয় ছাড়া বারেবারে এইভাবে ফিরে আসার উৎসাহ পাওয়া সম্ভব ছিল না।
আরেকটি সংবাদ জানিয়ে রাখি এইবেলা—আগামী ডিসেম্বর মাসেই সায়েন্স ফিকশন অ্যান্ড ফ্যান্টাসি সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার হাত ধরে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এক অভূতপূর্ব কল্পবিজ্ঞান কনফারেন্স। সেখানে কল্পবিশ্বের সঙ্গে আয়োজক হিসাবে আছেন যাদবপুর ইউনিভার্সিটি, আইআইএম জোকা এবং ব্রিটিশ সায়েন্স ফিকশন অ্যাসোসিয়েশন। সেখানে উপস্থিত থাকবেন দেশ বিদেশের নানা সম্মাননীয় অতিথিরা, কল্পবিজ্ঞান ও ফ্যান্টাসি নিয়ে নানা দিকদর্শী বিষয় নিয়ে চলবে দেদার আলোচনা, তর্ক ও বিশ্লেষণ। আশা করি, আপনাদের সকলের শুভেচ্ছায় এই কনফারেন্স সর্বতভাবে সফল হয়ে উঠবে। কনফারেন্স মিটলেই বেজে উঠবে আগামী কলকাতা বইমেলার আগমনী গান। কল্পবিশ্ব প্রতিবারের মতোই এবারও সেখানে উপস্থিত থাকছে একরাশ নতুন ও পুরোনো বইয়ের ডালি নিয়ে। লেখক, সাহিত্যিক, শিল্পী, মুদ্রক, সহ-প্রকাশক, পাঠক—সবাইকে নিয়ে সেখানে শুরু হবে আনন্দমেলা।
আকাশ জুড়ে মেঘ বৃষ্টির খেলা, সোনালি রোদ আর হাতে কল্পবিশ্বের শারদ সংখ্যা নিয়ে, আসুন আমরা বরণ করে নিই মা দুর্গাকে। শপথ নিই, শত সহস্র বিপর্যয়কে পেরিয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে আমরা পৌঁছে দেবো এক অনন্য উচ্চতায়। বইয়ের জয় হোক, জয় হোক বাংলা ভাষার!
ধন্যবাদান্তে
কল্পবিশ্ব সম্পাদকমণ্ডলী

