অগোচরে

  • লেখক: সায়ংতরী ঘোষ
  • শিল্পী: সুপ্রিয় দাস

“তুমি তো নিশ্চয়ই কফি খেতে যাবে না?”

     প্রশ্নটার মধ্যেই উত্তরটা লুকানো আছে যেন। একটু হেসে মাথা নেড়ে “নাহ্” বলল শিরিন। সিনিয়ররা চারজন ওর জন্যে অপেক্ষা না করে বেরিয়ে গেল ল্যাবরেটরির কাচের দরজা ঠেলে।

     শুক্রবার রাত আটটা। ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ইনফেকশাস ডিজ়িজ়ের বারান্দাগুলো এমনিতে সুনসান হয়ে যেত এতক্ষণে। ইটালির ত্রিয়েস্তে শহরের এক প্রান্তে ছোট একটা পাহাড়ের চূড়াখানি জুড়ে বিশাল ক্যাম্পাস। শুক্রবার বিকেল থেকেই পড়ুয়া বিজ্ঞানীদের মধ্যে উইক-এন্ডের হিড়িক পড়ে যেত এই বছর খানেক আগেও। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পালটে গেছে আমূল। ২০১৯ যাওয়ার বেলায় কোভিড-১৯ উপহার দিয়ে গেছে পৃথিবীকে, মৃত্যুর মিছিল তারপর থেকে দৈনন্দিনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ পনেরো মাস পরেও সে ভাইরাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বিশ্বজুড়ে। ইটালি ছিল এ রোগের দ্বিতীয় শিকার, সে ২০২০-এর গোড়ার দিকের কথা। এতদিনে সেই আতঙ্কের ধাক্কা সামলে ইটালির প্রতিটি গবেষণাকেন্দ্র আবার চেষ্টা চালাচ্ছে ভ্যাকসিনের জন্যে। একটা ওষুধ, যাতে এই রোগের হাত থেকে বাঁচিয়ে দেওয়া যাবে সকলকে, পরবর্তী প্রজন্মকে করা যাবে সুরক্ষিত। কিন্তু কোথায় কী? যদিও এখানকার প্রায় প্রতিটি ল্যাবরেটরিতে দিনরাত কাজ চলছে এখনও, দেশ-বিদেশের তাবড় বৈজ্ঞানিকেরা একজোট হচ্ছেন, আলোচনা করছেন প্রতিদিন… তবু চায়ের আড্ডায়, প্রাণ-খুলে কথা বলতে গেলে আসল ব্যাপারটা প্রকাশ পেয়েই যায়। এত দিনে বিশ্বজুড়ে এত বড় বড় বিজ্ঞানীদের এত চেষ্টা বিফলে গেছে যে, ভ্যাকসিনের আশা ক্রমে ক্রমে দুরাশায় পরিণত হচ্ছে। আস্তে আস্তে উৎসাহ হারাচ্ছেন অনেকেই।

     ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ইনফেকশাস ডিজ়িজ়ে প্রফেসর মাজিনির ল্যাবরেটরিতে শিরিন ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করছে সবে এক মাস হল। সত্তরোর্ধ প্রফেসর জেফ মাজিনি বায়োটেকনোলজির একজন দিগগজ। জীবনের অধিকাংশ সময়টা কাটিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র আর ব্রিটেনের নামজাদা সব ইউনিভার্সিটিতে। ষাটের পর দেশে ফিরেছেন এই ইন্সটিটিউটের সাম্মানিক প্রফেসর হয়ে। কোভিডের সঙ্গে লড়াইয়ে এ বয়সেও উৎসাহে খামতি নেই তাঁর। আর এই বয়সেও তিনি আশাবাদী, ভীষণ আশাবাদী। প্রতিদিন সকালে ল্যাবে আসেন, সন্ধে সাতটা অব্ধি খুঁটিয়ে খেয়াল রাখেন ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষানিরীক্ষায়। তাই স্যার বেরিয়ে গেলেই সিনিয়র ছেলেমেয়েদের কফি খেতে যাওয়াটা হঠাৎ করে খুব বেড়ে যায়।

     তবে শিরিন এই দলের সঙ্গে ইচ্ছে করেই ভাব জমায়নি। এখানে তার আসা, কাজ নিয়ে ল্যাবে ঢোকা— সব কিছুর উদ্দেশ্য একটাই। ওরা বেরিয়ে যেতেই শিরিন আড়চোখে দেখে নিলো একবার। বারান্দার বাঁকে চারজনের ছায়াগুলো যেই মিলিয়ে গেল, শিরিন নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ল। দ্রুত হাতে ব্যাগটা খুলে বের করল একখানা খয়েরি চামড়া-বাঁধানো মোটা খাতা, তার পাশ বরাবর চেন বন্ধ করা। চেনটা খুলে প্রথম পাতাটায় এক মুহূর্ত থমকে গেল শিরিন, সাদা পাতা জুড়ে পেন্সিলে আঁকা একখানি মুখ। এক মিনিটের মধ্যে বিহ্বলতা কাটিয়ে চটপট পাতা উলটে খাতার একটা বিশেষ জায়গায় চলে এলো সে। পাতার মাঝ-বরাবর একটা মাকড়সার স্কেচ, শরীরের তুলনায় পা-গুলো যেন একটু বেশী লম্বা। আরেকবার ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকাল শিরিন, ওদের ফিরতে দেরী আছে। মাথা ঠান্ডা করে টক-টক করে খাতার পাতায় তিনটে টোকা দিল সে, আর নিচু স্বরে বলল, “অ্যাক্টিভেট অ্যারাকনোবট!”

     পর মুহূর্তেই চার জোড়া লিকলিকে রুপোলী ধাতব পা নড়াচড়া করে উঠল খাতার পাতার ওপরে। স্কেচ-করা মাকড়সাটা যেন প্রাণ পেয়ে উঠে দাঁড়াল, আর সেটা এক লাফ দিয়ে শিরিনের বাঁ হাতের পাতায় উঠে এলো। চট করে নিজের জায়গা ছেড়ে উলটো দিকের টেবিলে শ্রেয়স শর্মার কম্পিউটারের সামনে চলে এসে ইউএসবি পোর্ট-টার সামনে হাতটা মেলে ধরল শিরিন। আর সঙ্গে সঙ্গেই ছোট্ট মাকড়সাটা পায়ে পায়ে ঢুকে গেল কম্পিউটারের মধ্যে। স্ক্রিন-সেভারে করোনা ভাইরাসের রঙিন ছবিটার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল শিরিন, তারপর কম্পিউটার খুলল। এক মাসের অভ্যাসে এই কম্পিউটারের পাসওয়ার্ড এখন তার মুখস্থ। শ্রেয়স ভারতের ছেলে, কম্পিউটেশনাল অ্যানালিসিসে ডক্টরেট, এই ল্যাবে প্রফেসরের ডান হাত সে। এক জাতের জেনেটিকালি মডিফায়েড ছোট্ট আরএনএ দিয়ে এই ভ্যাকসিন-যুদ্ধ জয় হবে— এ তার দৃঢ় বিশ্বাস। ভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য সেরা আরএনএ-টি কেমন দেখতে হওয়া উচিত, কম্পিউটার প্রোগ্রামের সাহায্যে তার গঠনের নকশা তৈরি করাই কাজ শ্রেয়সের। অসীম ধৈর্য সত্যি ওর। গত এক বছরে সব মিলিয়ে সাতশো তিরিশটি আরএনএ ডিজাইন করেছে সে, ভ্যাকসিন তৈরির বেঞ্চ অব্ধি উঠেছে তার মধ্যে স্রেফ বাহান্নটি, আর অ্যানিম্যাল টেস্টিং-এ সার্থকতা যে শূন্য সে তো বলাই বাহুল্য। তবু তার ক্লান্তি নেই, সে লেগে রয়েছে।

     কাজে ডুবে থাকে বলেই হয়ত সন্দেহের অভ্যাস একেবারে নেই শ্রেয়সের। গত এক মাস ধরে শিরিন যে ক্রমাগত তার কম্পিউটার প্রোগ্রামটিকে নিজের মতো করে কাজ করাচ্ছে, শ্রেয়স যত চেষ্টাই করুক, উত্তর যে সব সময় শিরিনের কথা মতোই আসছে, সে ব্যাপারটা এখনও শ্রেয়সের অগোচরেই রয়ে গেছে। কাজটা সোজা নয়। এক মাস ধরে প্রতিদিন একটু একটু করে এগিয়েছে শিরিন। অ্যারাকনোবটের সাহায্য নিয়ে পালটে দিয়েছে সফটওয়ারের লজিক স্ট্রাকচার, লুকিয়ে-চুরিয়ে পাওয়া সময়টুকুতে ঝড়ের বেগে খাড়া করেছে নতুন অ্যালগোরিদম, মুহূর্তে মুছে গেছে, বদলে গেছে লাইনের পর লাইন সোর্স কোড। কিন্তু এ সবের থেকেও কঠিন ছিল শ্রেয়সকে ভাবানো যে, যা রেজাল্ট আসছে, সেসব তারই ভাবনার ফসল। তাই প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হয়েছে খুব ভেবে, খুব সাবধানে।

     আজ কম্পিউটার খুলে একটু নিশ্চিন্ত হল শিরিন। অ্যারাকনোবট তার কাজ শুরু করে দিয়েছে। প্রতি সপ্তাহে মোটামুটি পঞ্চাশটা নতুন আরএনএ পরপর পরীক্ষা করে দেখে শ্রেয়স। ডেস্কটপের ফাইলে আগে থেকে লিখেও রাখে তাদের ফরমুলা। এই সপ্তাহের ফরমুলাগুলোতে চোখ বুলিয়ে নিতে লাগল শিরিন। পঞ্চাশটা আরএনএ-র মধ্যে উনপঞ্চাশ নম্বরে চোখ যেতেই একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল সে। হাসি ফুটে উঠল তার মুখে। একটা মুহূর্ত আনন্দে যেন শরীর কেঁপে উঠল তার। চোখের সামনে ভেসে উঠল নিজের বাড়ির বাগান, চেনা মুখগুলি, চেনা হাতের ছোঁয়া… এক মাস পরে আজ তার ফেরার সময় এসে গেছে…

     কিন্তু উনপঞ্চাশ নম্বর টেস্ট করতে করতে তো আগামী শুক্রবার হয়ে যাবে… মানে আরও সাত দিন! নাহ, অত দেরী করতে আর কিছুতেই ইচ্ছে করল না শিরিনের। সতর্ক চোখে আরেকবার বারান্দার দিকটা দেখে নিয়ে পুরো লিস্টটা খুব মন দিয়ে দেখতে লাগল শিরিন। যদি কাছাকাছি গড়নের অন্য কিছু পাওয়া যায়… খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও গেল! সাত নম্বর! উনপঞ্চাশের সঙ্গে তার কেমিক্যাল ফরমুলার তফাত সামান্যই। চটপট আরএনএ দুটোর জায়গা অদলবদল করে দিল শিরিন। এটুকু কারচুপি হয়ত চোখ এড়িয়ে যাবে শ্রেয়সের। আর যদি নাও এড়ায়… তাতে আর কোনও ক্ষতি নেই। শিরিন ততক্ষণে ওদের নাগালের বাইরে!

     বারান্দার বাঁকের ওপাশ থেকে কতগুলো লম্বা ছায়া দুলে উঠলো। ইউএসবি পোর্টের কাছে তক্ষুনি টোকা দিল শিরিন। অ্যারাকনোবট বেরিয়ে এলো যেই মুহূর্তে, অমনি ওদের চারজনকে দেখা গেল বারান্দার শেষে। শিরিন দ্রুত উঠে এলো নিজের বসার জায়গায়, শ্রেয়সের কম্পিউটার স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করে উঠল করোনা ভাইরাসের স্ক্রিন-সেভার।

     সিনিয়রদের দলটা ল্যাবরেটরিতে ঢুকেই হঠাৎ চুপ করে গেল। মুখে চাপা হাসির রেখা নিয়ে সকলে একে একে এসে নিজের নিজের কাজের জায়গায় বসে পড়ল। কে জানে হয়ত শিরিনকে নিয়েই কোনও একটা চটুল মন্তব্য করেছিল কেউ একটু আগেই। শিরিন সেদিকে আর ভ্রুক্ষেপ করল না। তার বাঁধানো খাতাখানা ব্যাগের ভেতরে ভরে উঠে দাঁড়াল। ধীরে ধীরে শ্রেয়সের টেবিলের পাশে এসে বলল, “ইয়ে… আমি আজ বাড়ি চলে যাচ্ছি…”

     শ্রেয়স মুখ তুলে চমকে উঠে বলল, “এখুনি? সবে তো সাড়ে আটটা…”, তারপর গলা নামিয়ে বলে, “শিরিন, তুমি কিন্তু কাজে একটু মন দাও… তিন মাস পরে ইভ্যালুয়েশন, কী কাজ দেখাবে? একটা জিনিসও তো ঠিক করে শিখছ না… আমরা যেখানে সারারাত কাজ করছি, তুমি সেখানে সন্ধে হতেই বাড়ি চলে যাচ্ছ… আর তোমায় যে ডায়াগ্রামগুলো আঁকতে বলেছিলাম, সেগুলো তো এখনও দিলে না?”

     শিরিন মাথা নিচু করে এক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে, তারপর বলে, “ছবিগুলো… আসলে আজ… শরীরটা ভালো লাগছে না।”

     “ওকে…” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে শ্রেয়স, “রেস্ট নাও… কাল সকাল সকাল আসার চেষ্টা কোরও… আমি আজ রাতে সাত-আটটা নতুন আরএনএ স্ট্রাকচার টেস্ট করব, কাল তুমি এলে কিছু ড্রাফট করতে দেব, রবিবার সকালে স্যারকে জমা দিতে হবে… কেমন?”

     “কাল…” শিরিন বলতে গেল যে কাল সে আর আসবে না। রবিবারও না। কিন্তু শ্রেয়সের মুখের দিকে তাকিয়ে তার আর কথা বাড়াতে ইচ্ছে করল না। ঘাড় হেলিয়ে ব্যাগটা কাঁধে তুলে ল্যাবরেটরির দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। কানে এলো শ্রেয়সের গলায় হতাশ স্বগতোক্তি, “হোপলেস…”

     শুনে আলতো একটু হাসি খেলে গেল শিরিনের ঠোঁটে।

রবিবার প্রফেসর মাজিনিকে কোনও ড্রাফট জমা দিতে হয়নি শ্রেয়সকে। শনিবার আর কোনও টেস্টও চালাতে হয়নি। শনিবার ভোরের আলো ফোটার আগেই প্রফেসরের মোবাইল ফোন বেজে উঠেছিল। ভোর পাঁচটায় ছুটতে ছুটতে ল্যাবে এসেছিলেন বৃদ্ধ বৈজ্ঞানিক। পরের দুটো দিন এক নাগাড়ে পরীক্ষা চলেছে আরএনএ স্যাম্পল নম্বর সাতশ সাঁইত্রিশের ওপরে। মাজিনি ল্যাবের কেউ দু-রাত্তির চোখের পাতা এক করতে পারেনি। রবিবার রাতে টেস্ট টিউবে টলটলে তরলটি হাতে নিয়ে মাজিনি ফোন করলেন তাঁর প্রিয় ছাত্রী ড. ইদা নয়দারকে, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব জেনোমিক মেডিসিনে নয়দারের ল্যাবরেটরিতে। স্যারের মতো ইদাও অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন গত এক বছর ধরে, কন্যা সম ছাত্রীকেই খবরটা প্রথম দিলেন বৃদ্ধ। কাঁপা গলায় বললেন, “আই থিংক উই ডিড ইট, ইদা…”

সোমবার সন্ধে ছ-টা। ত্রিয়েস্তে শহরের এক প্রান্তে জঙ্গলে ঘেরা খুব ছোট্ট একখানি কাঠের বাড়িতে শিরিন বসেছিল। ঘরটা অস্বাভাবিক রকমের ফাঁকা। একটা তোশক এক কোণে জড়ো করা, আর একটা ছোট মাপের ব্রিফকেস রাখা তার পাশে। একটা ছাইরঙের বেড়াল ঘরের এক কোণে বসে আছে। বাইরে থেকে ঝিঁঝিঁ পোকার একটানা ডাক ভেসে আসছে। হাতে-ধরা একটা খুব পাতলা লম্বাটে ট্যাবলেটের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে বসেছিল শিরিন; নামকরা সংবাদ চ্যানেলে বিশেষ সম্প্রচার চলছে। স্ক্রিনের মাঝখানে দেখা যাচ্ছে প্রফেসর মাজিনিকে, তিনি উত্তেজিত ভাবে হাত নেড়ে কথা বলছেন, তার পেছনে অনেক অচেনা মুখের ভিড়ের মাঝে শ্রেয়সকেও দেখা যাচ্ছে। প্রফেসর বলছেন, “…এই ভ্যাকসিনের সাফল্য সম্পর্কে আমরা ভীষণভাবে আশাবাদী, ইঁদুরের ওপর পরীক্ষায় আমরা পুরোপুরি সাফল্য পেয়েছি, রেসাস বানরের ওপর টেস্ট আজ থেকে শুরু হবে… এ ভ্যাকসিন আমাদের বহু চেষ্টার বহু সাধনার ফল…”

     এ পর্যন্ত শুনে শিরিন ট্যাবলেটটা বন্ধ করে। যাক, কাজ শেষ। আর দু-মাসের মধ্যে এ রোগের সঙ্গে লড়ার হাতিয়ার পৌঁছে যাবে এ পৃথিবীর সমস্ত মানুষের কাছে। খুব তাড়াতাড়ি কাজ করেছে শিরিন, তাতেও এক মাস লেগে গেল! সম্ভব-অসম্ভবের অনেক প্রশ্ন হঠাৎ মনে ভিড় করে এলো শিরিনের। শ্রেয়স হয়ত পারত একাই, হয়ত-বা হারিয়ে যেত অজস্র সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের ভিড়ে। সে কি ওকে সন্দেহ করেছে? কে জানে… এখন আগামী দিন-পনেরো হয়ত কেউ খেয়ালই করবে না যে শিরিন নেই, এখন কেউ ওকে খুঁজবেই না ওই ল্যাবে… খামখেয়ালি ফাঁকিবাজ ইন্টার্নকে এই ব্যস্ততার সময় কারই বা দরকার পড়বে?

     একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে পড়ল শিরিন। হাতের স্ক্রিনটায় একটা দ্রুত মোচড় দিয়ে দু-টুকরো করে ফেলল সেটাকে, তারপর ছুঁড়ে ফেলে দিল জানলার বাইরে। ঝোলা ওভারকোটের পকেট হাতড়ে একটা আধ-খাওয়া বিস্কুটের প্যাকেট বের করে বেড়ালটার সামনে খুলে রাখল। তারপর পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল ব্রিফকেসটার কাছে। চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে ডান হাতের তালুটা মুখের কাছে ধরল সে। তারপর পরিষ্কার উচ্চারণে বলল, “অ্যাকসেস রিকোয়েস্ট… টাইম সোলজার ফোর, ওয়ান, টু!”

     দু-সেকেন্ড পরে আলোর সোনালি অক্ষরে তার হাতের পাতায় লেখা ফুটে উঠল, “আইডেন্টিটি ভেরিফায়েড… অ্যাকসেস গ্রান্টেড।” ধীরে ধীরে সেই আলোর অক্ষরগুলো বদলে গেল চারটে নম্বরে-২,০,২,১।

     আঙুলের আলতো টানে নম্বরগুলোকে স্ক্রোল করতে শুরু করল শিরিন। হাতের পাতার ওপর দিয়ে স্রোতের মতো বয়ে যেতে লাগল ২০২২, ২০২৩, ২০২৪… ২০৪০… ২০৫০… শিরিন এসে থামল ২০৮৬-এ। তারপর ব্রিফকেসটাকে বাঁ হাতে তুলে নিয়ে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল সে। উফ, কতদিন পর বাড়ি ফিরবে…

     পর মুহূর্তেই একটা প্রচণ্ড আলোর ঝলকানি। চমকে উঠে ছেয়ে বেড়ালটা দেখল ঘরটায় সে এক্কেবারে একা এখন!

     একবার “মিউ” ডেকে বেড়ালটা বিস্কুটের দিকে মন দিল আবার।

Tags: কল্পবিজ্ঞান গল্প, পঞ্চম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা, সায়ংতরী ঘোষ, সুপ্রিয় দাস

8 thoughts on “অগোচরে

  • August 16, 2020 at 10:19 pm
    Permalink

    অনেক দিন পরে আপনার লেখা পাঠ করার সুযোগ হলো। খুবই ভালো লাগলো। শুভেচ্ছা জানবেন।

    Reply
    • August 18, 2020 at 12:57 pm
      Permalink

      অনেক ধন্যবাদ।

      Reply
    • August 21, 2020 at 9:52 pm
      Permalink

      simply loved it..

      Reply
  • August 17, 2020 at 11:06 am
    Permalink

    Khub valo laglo…onek din pore tomar lekha porlam. Lekhata pore mone holo chokher samne puro golpo ta dekhte pelam.

    Reply
    • August 17, 2020 at 5:14 pm
      Permalink

      একটি ভিন্ন স্বাদের বুদ্ধিদীপ্ত লেখা। দারুণ উপভোগ করলাম।

      Reply
      • August 18, 2020 at 1:00 pm
        Permalink

        অনেক ধন্যবাদ।

        Reply
    • August 18, 2020 at 12:59 pm
      Permalink

      Thanks Arijit. Tor comment pore khub bhalo laglo.

      Reply
  • October 11, 2020 at 2:13 pm
    Permalink

    ভীষণ ভালো লাগল, একঘেয়ে বিষন্নতার মাঝে এক ঝলক আশার আলো। সত্যি ই যদি ভবিষ্যৎ থেকে কেউ এসে ঠিক করে দিতো এইভাবেই বিশ্বের এই শোচনীয় পরিস্থিতি। লেখিকা কে অজস্র ধন্যবাদ।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!