অ্যালিবাই

  • লেখক: পরাগ ভূঞ্যা
  • শিল্পী: সুমিত রায়

অ্যালিবাই

লেখক – পরাগ ভূঞ্যা

অলংকরণ – সুমিত রায় 

 

এক

ব্দটা অনেকক্ষণ ধরে কানে বাজছে। টেবিলের ওপর ঘন ঘন আঙ্গুল চাপড়ানোর শব্দ।

     সিলিং থেকে ঝুলন্ত ল্যাম্পের আলো এসে গোল হয়ে টেবিলের ওপর পড়ে ম্রিয়মাণ হয়েছে অন্ধকারে।

     উফফ… শব্দটা ক্রমশ বিরক্তিকর হয়ে উঠছে। ইচ্ছে করছে টেবিলের ওপর রাখা পেনটা নিয়ে ঢুকিয়ে দিই সামনে বসে থাকা লোকটার মেদভর্তি ঘাড়ে। খুব বেশি বল প্রয়োগ করতে হবে না। আহা! পরবর্তী দৃশ্যগুলো কল্পনা করতেই শিহরণ খেলে গেল গোটা শরীরময়। একটা আকাশ-ফাটানো মরণচিৎকার। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে কিছুটা অন্ধকারময় মেঝেতে, কিছুটা টেবিলে ওপর গিয়ে পড়বে। চিরতরে লোকটার বকবক বন্ধ হবে।

     কিন্তু আমি নিরুপায়। চেয়ারের পেছনে আমার হাতদুটো শক্ত করে বাঁধা। শত চেষ্টা করেও দড়ির বাঁধন আলগা হয়নি।

     “খুনটা কেন করলেন, মৃত্যুঞ্জয়বাবু?” সামনে বসে থাকা লোকটা গর্জে উঠলো।

     প্রশ্নটা শুনে ঘাবড়ে যাইনি। এক মুহূর্তের জন্যও নয়। বরং চোখে চোখ রেখে ওকে বুঝিয়ে দিয়েছি মৃত্যুঞ্জয় বসাক এতো সহজে ভেঙে পড়ার লোক নয়।

     মৃদু হেসে উত্তর দিলাম, “বিগত আধঘন্টায় আপনি চারবার প্রশ্নটা করেছেন। প্রত্যেকবারে একই জবাব পেয়েছেন। খুনটা যখন করিনি মেনে নেয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠেনা। আমি কি আমার উকিলের সঙ্গে কথা বলতে পারি?”

     আমার পালটা প্রশ্নে লোকটি নিরুত্তর। ওর চোখগুলো অস্বাভাবিক রকমের লাল। সম্ভবত ড্রাগ সেবন করে।

     “না! আমার প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত আপনি কারুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন না।” লোকটা টেবিলের ওপর একটি পোস্টকার্ড সাইজের ছবি আমার দিকে এগিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো, “দেখুন তো ভিক্টিমকে আপনি চিনতে পারেন কিনা?”

     ছবিটার দিকে একনজর বুলিয়ে আমিও ঝাঁঝিয়ে উঠলাম, “না! চিনিনা! ভদ্রমহিলাকে কালভদ্রে দেখেছি কিনা সন্দেহ!”

     “আমি বিশ্বাস করিনা। এক অক্ষরও নয়। আপনি এতক্ষণ ধরে পাহাড় গড়েছেন মৃত্যুঞ্জয়বাবু, একটা নিরেট মিথ্যের পাহাড়।”

     আসলে ছবির মেয়েটিকে আমি চিনি। আলবৎ চিনি। বিগত আধঘন্টায় আমি একটা মনগড়া গপ্পো ফেঁদেছি। একটা অ্যালিবাই। ওটাই বরং ওকে শুনিয়ে দিই। বড্ডো তড়পাচ্ছে বেচারা।

     “শুনুন তাহলে! আপনাকে খুলেই বলি সবকিছু। পরশু রাতে আমার গাড়িতে লিফ্ট নেয় মেয়েটি। সামান্য আলাপে বুঝতে পারি মেয়েটির উদ্দেশ্য লিফ্ট নেওয়া নয় বরং কাস্টোমার খোঁজা। সত্যি বলতে কি মেয়েমানুষ কচলানোর শখ আমার কম নয়। বিছানায় কুস্তি করার সুযোগ সহজে হাতছাড়া করি না। আমরা তারপর একটি পাঁচতারা হোটেলে গিয়ে ফষ্টি-নষ্টি করি। শেষে পাওনাকড়ি নিয়ে মেয়েটি চলে যায়। ব্যাস ওই টুকু। তাকে কে বা কেন খুন করেছে জানি না।”

     মনের মতো জবাব না পেয়ে লোকটা ক্ষণিকের জন্য নিথর হয়ে গেলো। তারপর টেবিলের ওপর সশব্দে একটা ঘুষি মেরে ঝড়ের গতিতে এগিয়ে এলো আমার দিকে। আমার জামার কলার ধরে চেয়ার শুদ্ধ দুবার ঝাঁকিয়ে নিলো। ওর রক্তচক্ষু দৃষ্টি আর ঘন ঘন নিঃশ্বাস আমার ঘর্মাক্ত মুখের ওপর এসে পড়লো।

     “মনে করুন মৃত্যুঞ্জয়বাবু। আপনার মনে করাটা খুব জরুরি। কি ভেবেছেন এত সহজে পার পেয়ে যাবেন। থার্ড ডিগ্রি ইন্টারোগেশন করতে বাধ্য করবেন না। যদিও অন্য উপায় আছে।” বলে লোকটা চিৎকার করে উঠলো, “নার্স!!”

     অন্ধকার ফুঁড়ে ঘরের মধ্যে একটি মেয়ে এসে লোকটার হাতে একটি সিরিঞ্জ ধরিয়ে আবার অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো। মেয়েটির চালচলন বড় অদ্ভুত ঠেকলো। বিশেষ করে ওর মুখের সার্জিক্যাল মাস্কটি। যেন সদ্য অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে এসেছে।

     “এটা কি জানেন মৃত্যুঞ্জয়বাবু? ট্রুথ সিরাম। প্রথমে আপনার সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমকে কব্জা করবে। তারপর ধীরে ধীরে আপনি অর্ধচেতন অবস্থায় পৌঁছবেন। তখন আপনি তোতাপাখির বুলি আওড়ানোর মতন সত্যি বলবেন।”

     লোকটি আর সময় ব্যয় না করে আমার বাঁ-হাতে ইনজেকশন প্রয়োগ করলো।

     বড় ভুল করে ফেলেছে লোকটা। আমার কাছ থেকে ও কিছুই উদ্ধার করতে পারবে না। ট্রুথ সিরাম একটি নিষিদ্ধ ড্রাগ। একবার শুধু এই ঘর থেকে বেরোনোর পালা। আইনি প্যাঁচে ফেলে লোকটার ক্যারিয়ার শেষ করতে আমার খুব বেশি সময় লাগবে না।

     আমার দৃঢ় বিশ্বাস কোথাও না কোথাও শেখর এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। খুন যদি করতেই হয় আমি ওই হারামজাদাকে করবো। ওকে যখন বিজনেস পার্টনার করি তখনই ওর গোপন অভিসন্ধি আমার বুঝে যাওয়া উচিত ছিলো। নিজের হাতে খাল কেটে কুমির এনেছি, তার মাশুলতো গুনতেই হবে।

     লোকটা আমার দিকে চেয়ে আছে স্থির দৃষ্টিতে… ওর লাল চোখজোড়ার দিকে তাকাতে আমার অস্বস্তি লাগছে… আমার সমস্ত স্নায়ু ক্রমশ শিথিল হচ্ছে… লোকটা কি সম্মোহন জানে… ধীরে ধীরে গভীর ঘুমে ঢলে পড়ছি…

 

দুই

     ঘুম ভেঙে যায় আমার। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি নিজের বেডরুমে শুয়ে আছি। ইন্টারোগেশন রুম, ট্রুথ সিরাম, খুনের অভিযোগ -সবই কি দুঃস্বপ্ন ছিলো! বোধহয়। কিন্তু এতো নিখুঁত বিবরণ! ইদানিং অতিরিক্ত মদ্যপান করছি, হয়তো তারই সাইড এফেক্ট।

     তবে স্বপ্নের লোকটা বড়ই বিরক্তিকর ছিল। ওর থেকে নিস্তার পেয়ে ভালোই লাগছে।

     হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিলাম। পাঁচ পাঁচটা মিসড কল। সবগুলোই শেখরের। হারামজাদার মতলব জানি। হার্সা ইলেক্ট্রনিক্স-এর সঙ্গে আজ ডিল ফাইনাল করার কথা ছিল। আমি অনেক আগেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি। তা সত্ত্বেও যদি মাখন লাগিয়ে ডিলটা উদ্ধার করা যায়। সে গুড়ে বালি। এগ্রিমেন্ট পেপারে আমার সই ছাড়া শেখর কিস্যু করতে পারবে না। ইচ্ছে করেই ফোনটা সুইচ অফ করে দিলাম।

     তেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ, একটু হুইস্কি হলে মন্দ হতো না। বিছানা ছেড়ে ডাইনিং রুমে এলাম। বোতল থেকে কিছুটা হুইস্কি গ্লাসে গড়িয়ে নিয়ে আইস কিউবের সন্ধানে ফ্রিজ খুলতেই পচা গন্ধ নাকে ঠেকলো। ফ্রিজটা কতদিন খারাপ হয়ে পড়েছিল কে জানে। আমাকে দেখতে পেয়ে কতগুলো মাছি নষ্ট খাবার ছেড়ে ভন ভন করতে করতে আমার গায়ে এসে বসলো। গা গুলিয়ে এলো! কোনওক্রমে হুইস্কির গ্লাসটা ডাইনিং টেবিলে নামিয়ে ছুটলাম বাথরুমে। বেসিনে হড় হড় করে বমি করলাম।

     তাও গলায় কিছু একটা যেন আটকে আছে। রীতিমতো কণ্ঠনালীর মধ্যে নড়াচড়া করছে। ঘেন্নায় আবার ঢাললাম।

     বমির পর বমি করে ক্লান্ত হয়ে কমোডে বসে ছিলাম। উঠে প্রথমেই নজর ফেরালাম বেসিনে। বমির মধ্যে হাতড়িয়ে খুঁজতে থাকলাম। পেয়েছি! দলা পাকানো একটা কাগজ, যেটা গলায় আটকে ছিলো এতক্ষণ।

     কাগজটা খুলতেই হৃদযন্ত্রটা পাঁজরে ধড়াস ধড়াস বাড়ি মারলো … সেই মেয়েটির ছবি … গাড়িতে লিফ্ট নিয়েছিল… কি নাম ছিল যেন … মনে পড়ছে … জোনাকি…

     এটাও স্বপ্ন! স্বপ্ন ছাড়া আর কি হতে পারে। কিন্তু আমার ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অনুভূতিগুলোকে অস্বীকার করবো কি ভাবে।

     বেডরুম থেকে কারুর পায়ের শব্দ কানে এলো।

     টলতে টলতে ডাইনিং রুমের দিকে এগোলাম অচেনা আগন্তুকের উদ্দেশে। হাতে বাথরুম পরিষ্কারের ওয়াইপার। মৃত্যুঞ্জয় বসাকের ঘরে চুরি করা ওতো সহজ নয়।

     ফ্রিজের পাল্লা খোলা। সেখান থেকে আসছে পচা দুর্গন্ধ আর মাছির ভন ভন শব্দ।

     আমার উত্তেজনার পারদ ঊর্ধ্বমুখী। বেড়ালের মতো পা টিপে বেডরুমে ঢুকতে যাবো — আহ! যন্ত্রণায় কাতরে উঠলাম। কেউ পেছন থেকে মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত হেনেছে। লুটিয়ে পড়লাম মেঝেতে।

     মেঝেতে শুয়ে অবাক দৃষ্টিতে আমি তাকিয়ে আছি আগন্তুকের দিকে। আমার ওপর ঝুঁকে রয়েছে সেই নার্সটি। ধীরে ধীরে সে মুখের সার্জিক্যাল মাস্কটি খুলে নিলো। কী বীভৎস দৃশ্য!! নার্সটির চোয়াল নেই … হ্যাঁ সত্যিই নেই … সেখানে পেন্ডুলামের মতো ঝুলছে একটি গোলাপী-লাল লালায় ভরা জিভ …

 

তিন

     “কিছু মনে পড়লো মৃত্যুঞ্জয়বাবু?” সাপের মতো হিসহিসে গলায় কেউ বলে উঠলো। ছায়াছবির মতো দৃশ্যপট বদলে যাচ্ছে। অন্তহীন স্বপ্নের গোলকধাঁধায় আমি মুক্তির পথ খুঁজছি।

     মুখ তুলে দেখলাম সেই লোকটি, লাল চোখ, মুখে শয়তানের হাসি। সাথে দম বন্ধ করা সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন ইন্টাররোগেশন রুম।

     “ভিক্টিমকে আপনি সত্যিই চেনেন না! জোনাকি বসাক। আপনার স্ত্রী। আর কত মিথ্যে বলবেন?”

     এবার আমার পক্ষে ক্রোধ সংবরণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। লোকটার আবোল-তাবোল থিওরির একশো আট করে ছাড়বো। নিঃশ্চয়ই শেখরের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা গিলেছে। কিন্তু মুখ খুলতে গিয়ে আটকে গেলাম। ঠোঁট দুটো যেন শক্তিশালী আঠা দিয়ে জোড়া লাগানো হয়েছে। শত চেষ্টাতেও কিছু বলতে পারলাম না।

     “প্রথমেই জানতাম আপনি সত্যি গোপন করবেন মৃত্যুঞ্জয় বাবু। তাই আসল ছবিটা থেকে জোনাকিদেবীর ছবির অংশটাই এনলার্জ করে তখন আপনাকে দেখিয়ে ছিলাম। এই দেখুন অরিজিন্যাল ফটো। গতবছর বিবাহবার্ষিকীর ছবি। কী, এবার পারছেন চিনতে, মৃত্যুঞ্জয়বাবু?”

     এ আমি কী দেখলাম!! না এটাও একটা স্বপ্নমাত্র! বাস্তব-কল্পনা কেমন যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। জোনাকি আর আমি একই ফ্রেমে। অসম্ভব! আমার বাড়ির ডাইনিং রুমের সোফায় বসে ছবিটা তোলা। ওই তো ফ্রিজটাও ফটোতে ঠাঁই পেয়েছে।

     “এবার বলুন মৃত্যুঞ্জয় বসাক, খুনের পেছনে আপনার মোটিভ কি?”

     লোকটার দিকে আমার কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। ছবিটার দিকে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি।

     ছবিটা কেমন যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। ফ্রিজের দরজাটা আপনা-আপনি খুলে যাছে। তাই কী! না কেউ ভেতর থেকে খুলে বাইরে আসতে চাইছে …

     ও কী!! ফ্রিজের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো একটা রক্তশুন্য সাদা হাত। তাতে কিলবিল করছে অসংখ্য কৃমি। হাতের ফিকে হয়ে যাওয়া উল্কিটাও চেনা লাগছে। হতচ্ছাড়া শেখরের হাত।

     ওর লাশটাকে খুব যত্ন করে কেটে ফ্রিজবন্দি করেছিলাম। বেশ মনে পড়ছে। পুরো একটা রাত লেগেছিলো। এমনিতেই আমি শিল্পী মানুষ। হুইস্কিতে কিছু ঘুমের বড়ি মিশিয়ে কাজটা সারতে হয়েছিল। বেচারার হাতটা যখন কেটে শরীর থেকে আলাদা করছিলাম, মনে মনে যা স্বর্গীয় আনন্দ পেয়েছিলাম তা বলে বোঝাতে পারবো না। এই হাত দিয়েই জোনাকিকে স্পর্শ করতো শয়তানটা।

     “এবার বলুন মৃত্যুঞ্জয় বসাক, খুনের পেছনে আপনার মোটিভ কি?” লোকটা রোবটের মতো বুলি আউড়ে যাচ্ছে। একবার যদি হাতের বাঁধন থেকে ছাড়া পেতাম লোকটাকে বোঝাতাম মৃত্যুঞ্জয় বসাক কি জিনিস।

     গা গোলাচ্ছে। গলায় কিছু একটা আটকে রয়েছে। অনেকগুলো কীট একসঙ্গে মুক্তি পেতে চাইছে। বেশ অনুভব করছি মুখের গহ্বর বন্ধ থাকার জন্য ওরা শ্বাসনালীর পথ ধরেছে।

     ভগবান করুক এমন নারকীয় অনুভূতি কারুর না হোক। আমার নাকের ছিদ্র থেকে বেরিয়ে আসছে একটার পর একটা মাছি। যেন ওরা আমার পোষা মৃত্যুদূত। আমার সব পাপের সাক্ষী।

     “আমাকে কেন খুন করলে মৃত্যুঞ্জয়?” চমকে উঠলাম। এতো নারীর কণ্ঠস্বর। দ্বিতীয় দফায় অবাক হবার পালা। কয়েক সেকেন্ড আগে ঠিক যেখানে ঐ লোকটা দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে এখন জোনাকির উলঙ্গ দেহ। শেখরকে দোষ দিয়ে লাভ নেই, সত্যিই জোনাকির শরীরে অদ্ভুত মাদকতা মেশানো আছে। প্রথম দেখাতেই যে কেউ ওকে বিছানায় নিয়ে যেতে চাইবে।

     জীবনের সেরা হাসিটা উপহার দিয়ে জোনাকি আমার কোলের ওপর বসে বললো, “তোমায় কত ভালোবাসি মৃত্যুঞ্জয়। নিজের জীবনের থেকেও বেশি। তুমি ভাবলে কি করে আমি পুলিশের কাছে গিয়ে সব ফাঁস করে দেব। শেখর একটা বিশ্বাসঘাতক! ওকে তুমি জাহান্নামে পাঠিয়ে ভালোই করেছো। এসো সোনা! আমার কাছে এসো! কতদিন তোমায় মনভরে আদর করিনি। এসো!”

     জোনাকির শরীরের উষ্ণতা পেয়ে আমার আদিম রিপু মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। ও সুকৌশলে আমায় পোশাক মুক্ত করলো। তারপর শুরু করলো নখ দিয়ে আমার সর্বাঙ্গ জরিপ।

     আমি নিস্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি জোনাকির মুখের দিকে। আমাদের শরীর বিনিময়ের শব্দ গোটা ঘরময় ছড়িয়ে পড়ছে। লাবণ্য আর তৃষ্ণায় স্নাত ওর মুখটা ক্রমশ বদলাচ্ছে। ধীরে ধীরে একটি পুরুষের মুখের আকার ধারণ করেছে। শেখরের মুখ। শরীরের অঙ্গগুলোও ব্যতিক্রম নয়। একটি আর্তনাদ ভূমিষ্ট হয়েও আমার গলায় আটকে রইলো।

 

চার

     বিরক্তিকর শব্দটা আবার কানে এসে ঠেকলো। কতক্ষণ অজ্ঞান অবস্থায় ছিলাম জানিনা। কিভাবে, কেন, কোথায় এই প্রশ্নগুলোর ভীড় সামলাতে বেশ সময় গেল।

     স্টিয়ারিং হাতে গাড়ির সিটে নিজেকে আবিষ্কার করলাম। গোটা শরীরে ক্ষতচিহ্ন আর তীব্র যন্ত্রণার অনুভূতি। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হাইওয়ে ছেড়ে গাড়িসমেত একটি গাছে এসে ধাক্কা মারি। অ্যাক্সিডেন্টের সময় মাথার পেছনটা ডানদিকের দরজায় ঠুকে যায়, সেখান থেকে এখন রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে।

     আমার সহযাত্রীর নির্মম পরিণতি দেখে শিউরে উঠলাম। গাড়ির উইন্ডস্ক্রীন ভেঙে অর্ধেক শরীর বেরিয়ে ঝুলে আছে। শুন্যে থাকা হাত থেকে রক্তের ধারা এসে সশব্দে বৃষ্টি হয়ে পড়ছে গাড়ির বনেটের ওপর। শুনতে অনেকটা টেবিলে আঙ্গুল দিয়ে আঘাত করার শব্দের মতো।

     সহযাত্রীটি আর কেউ নয় — জোনাকি।

Tags: গল্প, তৃতীয় বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, পরাগ ভূঞ্যা, পূজাবার্ষিকী, সুমিত রায়

5 thoughts on “অ্যালিবাই

  • October 22, 2018 at 10:04 am
    Permalink

    odvoot dhoroner ga gulano horror … jodio poriskar bujhte parlam na ses ta … khoma koro Parag bhai …

    Reply
    • October 25, 2018 at 6:42 am
      Permalink

      এমন একটি সৎ রিভিউ এর জন্য অনেক ধন্যবাদ প্রতিমদা। শেষটায় এভাবেই ইতি টানতে ইচ্ছে হলো । ধরে নিন গাড়ি দুঘটনার পর মৃত্যুঞ্জয় সাময়িক অজ্ঞান হয়ে পড়ে এবং স্বপ্নে বিবেকের তাড়নায় এই সব দেখে ।

      Reply
      • October 25, 2018 at 9:28 am
        Permalink

        এই প্রসঙ্গে জানাই, এই গল্পটি কল্পবিশ্বের উপযুক্ত কিনা সেই নিয়েই প্রথমে একটু আসুবিধা ছিল, কারণ কোন জঁঁরে এটি ফেলা উচিত হবে সেটা বোঝাই কঠিন। কিন্তু শেষে মনে হল ক্লাসিফিকেশন গোল্লায় যাক, এমন এক্সপেরিমেন্টাল হরর গল্প যদি আমরা না ছাপতে পারি তাহলে আর ম্যাগাজিন কেন?

        Reply
  • December 10, 2018 at 2:47 pm
    Permalink

    swapno,bastob,swapner bhitor swapno,amar khub bhalo laglo.
    lekhak ke dhanyobaad

    prosenjit

    Reply
  • January 12, 2019 at 12:41 pm
    Permalink

    Sudhu Ekta byapar bujhlam na. Shekhaar ke satti satti barir freezer e paoa jabe? Naki seta sudhui kolpona…morlo sudhui jonaki…Karon mobile e Shekhar er missed call gulo gol bandachhe…ar namkoroner sarthokota Tao ektu bujhlam na… Interrogation tai Jodi kolpona ba swapno hoi tahole aliby er kotha aschhe keno…. Tobe experimental lekha hisebe sadhu prochesta.

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!