এল ডোরাডো

  • লেখক: রঙ্গন রায়
  • শিল্পী: জটায়ু

অরিজিৎ যখন ক্যানেল পার থেকে ফিরছিল তখন রাত এগারোটা বেজে গেছে। রোহনের বাড়িতে এতটা রাত হয়ে যাবে ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি সে। আসলে রোহন কালই কলকাতা চলে যাচ্ছে। একটা নিউজ চ্যানেলের ওয়েব ডিজাইনিং-এর কাজ পেয়েছে সে। এমটেক করেও এতদিন বসেছিল স্রেফ একটা ভালো মনমতো কাজ পাওয়ার জন্যই। নয়তো অনেক ক’টা জবের অফার রোহন পেয়েছিল। যে কাজটা এখন পেয়েছে তার চেয়েও বড় কোম্পানিতে চাকরির অফার এসেছিল। রোহন নেয়নি। কারণ সাংবাদিকতার সঙ্গে সেগুলোর কোনও সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু এবার আর বসে থাকা চলে না। কাল সকালের সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসে রওনা দিয়ে পরশু মানে সোমবার থেকে কাজে জয়েন করবে সে। এই বয়সের বন্ধুদের যা হয়। কেউ চাকরি পেলে খাওয়াতে হবে, একটু হুল্লোড় হইচই করা। কিন্তু এই হইচই করতে গিয়ে রাত যে এভাবে হইহই করে বেড়ে যাবে তা একদম ভাবেনি অরিজিৎ। ক্যানেল পারের রোহনের বাড়ি থেকে তার বাড়ি মোটামুটি পাঁচ কিলোমিটার। যদিও সোজা রাস্তা ধরে সাইকেল চালালেই সে চলে যেতে পারবে, কিন্তু শুরুতেই তাকে প্রায় কিলোমিটার দুয়েক রাস্তা একেবারে অন্ধকার ধান ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে যেতে হবে। তার মধ্যে আকাশের অবস্থা ভালো না। অনেকক্ষণ ধরেই অল্প অল্প বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। এখন মেঘ ডাকতেও শুরু করেছে। অরিজিৎ সাইকেল থামিয়ে পকেট থেকে অ্যান্ড্রয়েড ফোনটা বের করলো। এগারোটা সাত বাজে। মানিব্যাগের মধ্যে সে সবসময় একটা প্লাস্টিক রাখে, ওটা বের করে নিল। মোবাইলটা ভালোমতো প্লাস্টিক দিয়ে মুড়ে পকেটে রেখে এবার নিশ্চিন্ত হওয়া গেলো। আর ভয় নেই। সে ছাতা আনতে ভুলে গেছে। নিজে ভিজলে অসুবিধা নেই কিন্তু মোবাইল ভিজলেই ভুবন অন্ধকার।

     “ঘটাং” করে একটা শব্দ হবার পরই হুড়মুড় করে সাইকেল নিয়ে রাস্তার পাশের নয়ানজুলিতে পড়ে গেল অরিজিৎ। ভেজা ঝোপঝাড়ে পড়ে তার ব্যাথা লাগেনি যদিও কিন্তু তার চেয়েও বড় বিপদ এসে গেছে। উঠে নিয়ে সাইকেলটার দিকে ভয়ে ভয়ে এগোলো সে। হ্যাঁ, ঠিক যা ভেবেছে। এই রাস্তাটা শুনশান অন্ধকার হওয়ায় জোরে চালাচ্ছিল অরিজিৎ, আর তাতেই এই বিপত্তি। চেন ছিঁড়ে জড়িয়ে গিয়ে সাইকেল একেবারে লক হয়ে গেছে। সাইকেলটা দাঁড় করালো সে। এখানে এত অন্ধকার যে ভালোমতো কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু চেনটা খোলা দরকার, নয়তো হাঁটিয়ে হাঁটিয়েও সে সাইকেল নিয়ে যেতে পারবে না। চাকা একদম লক হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো অরিজিৎ। মাথা কাজ করছে না। এদিকে মেঘের গর্জন যেন রাত বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিয়ে বাড়ছে।

     পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে অরিজিৎ দেখলো, আশ্চর্য! এখানে একফোঁটা টাওয়ার সিগন্যাল নেই! কিন্তু সে তো এখানে আগেও এসেছে! মনে পড়লো এই অজ জায়গাটায় তো সে আগে কখনও মোবাইল বের করে দেখেনি যে টাওয়ার থাকে কি না। নাহ! সমস্যার ওপর সমস্যা! রাস্তায় লোকজন নেই, এমনকি একটা কুকুর পর্যন্ত নেই। থাকার মধ্যে আছে কুপকুপে অন্ধকার। কোথায় যেন পড়েছিল অরিজিৎ যে অন্ধকার হচ্ছে আলোর অনুপস্থিতি, আলো ক্ষণিকের শক্তি, অন্ধকার হল অসীম অনন্ত শক্তি।

     মোবাইলের টর্চটা জ্বালালো সে। উফফফ! আলোই হল আসল শক্তি। কিন্তু ঘন অন্ধকারে একবিন্দু আলো জ্বালালে আশেপাশের অন্ধকার আরও বিভীষিকাময় হয়ে ওঠে। তাড়াতাড়ি ঝুঁকে বসে সে সাইকেলের চেন পরীক্ষা করতে শুরু করলো। হ্যাঁ, ভালোমতোই জড়িয়ে গেছে। এই জট রিপিয়ারিং-এর দোকান ছাড়া খোলা অসম্ভব। রাগের চোটে সে সাইকেলে একটা লাথি কষালো এবার। তারপর মুখে মোবাইলটা কামড়ে ধরে দু’হাত দিয়ে সাইকেলের হ্যান্ডেল ধরে সামনের দিকে রান করাতে চাইলো। জোর লাগালে যদি চেনটা ছিঁড়েখুড়ে অন্তত আলগা হয়! কিন্তু সেই সময় সারা এলাকাটা মুহূর্তের জন্য দিনের মতো আলোকিত হয়েই অন্ধকার হয়ে গেলো, পরমুহূর্তেই ভীষণ জোরে খুব কাছেই কোথাও বাজ পড়লো। আচমকা এই শব্দে ঘাবড়ে যেতেই মুখ থেকে ফোনটা পড়ে গেলো তার, আর সঙ্গে সঙ্গে আলোর শেষ বিন্দুটা গেলো হারিয়ে।

সাইকেল ফেলে দিয়ে রাস্তায় ঝুঁকে পড়ে হাতড়াতে শুরু করলো অরিজিৎ। তার মোবাইলটা… মোবাইলটা কি ভাঙলো নাকি? কিছুক্ষণ অন্ধকার হাতড়ানোর পর হাতে মোবাইলটা ঠেকলো তার। আর ঠিক সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো ঝমঝমিয়ে। ভাগ্যিস মোবাইলে প্লাস্টিক লাগিয়েই রেখেছিল সে। ভিজবে না অন্তত। কিন্তু মোবাইলটা অন হচ্ছে না। যাকগে, বাড়ি গিয়ে দেখা যাবে, বলে যেমনি সে পকেটে ঢোকাতে যাবে তখনই মনে পড়লো, বাড়ি! সে তো অনেকদূর! তার মধ্যে সাইকেলের এই অবস্থা! সে এখন বাড়ি ফিরবে কী করে?

(২)

কিছুক্ষণ হাঁটার পর অরিজিতের নজরে পড়লো কিছুদূরে একটু আলো দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপে সে। সাইকেলটা ঘাড়ে করেই হাঁটা লাগিয়েছে। কিছু করার নেই। ভোগান্তি যাকে বলে! বাড়িতে মা-বাবা হয়তো চিন্তা করছে, অথচ সে কোনও খবরও জানাতে পারছে না।

     একটু একটু রাস্তা এগোচ্ছে আর সাইকেলটা নামিয়ে রাখছে সে। রীতিমতো হাঁফিয়ে গেছে। বৃষ্টির তোড় এত বেশি যে শহরের দিকে একটু পরেই জল দাঁড়িয়ে যাবে। আরও কিলোমিটার খানেক এগোলে শহর। তারপর আর এক কিলোমিটার তার বাড়ি। কিন্তু এদিকে তো কোনও বাড়িঘর নেই? তাহলে আলোটা কোত্থেকে আসছে? তবুও আলোটা দেখে একটু মানসিক জোর পেলো সে। তাড়াতাড়ি অন্তত ওই অবধি তাকে এখন পৌঁছতেই হবে। দম নিয়ে সাইকেলটা ফের ঘাড়ে তুলে রওনা দিলো অরিজিৎ। এবার বোঝা যাচ্ছে যে আলোর উৎস একটা দোকান। কিন্তু এখানে তো কোনও দোকান ছিল না? নাকি ছিল, সে কখনও খেয়াল করেনি! তাই হবে হয়তো। এমনিতেই রোহনের বাড়ির দিকে সে আজ অনেকদিন পর এলো। কিন্তু দোকান যদি হয়ই তাহলে তা এত রাত অবধি এই বর্ষাবাদলের মধ্যে খোলাই বা থাকবে কেন?

     সাইকেলটা স্ট্যান্ড করে অরিজিৎ যখন দোকানটার সামনে এসে দাঁড়ালো তখন ঠান্ডায় রীতিমতো কাপছে সে। হাত মুখ সাদা হয়ে গেছে। মধ্যমার A লেখা আংটিটা টাইট হয়ে গেছে জলে ভিজে। কিন্তু চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে এই দোকানে আলো এলো কোত্থেকে? এদের কি জেনারেটর আছে? কিন্তু কোনও শব্দ তো পাওয়া যাচ্ছে না! তবে কি ইনভার্টার? যাকগে, যেভাবেই আলো আসুক। আলো আছে এটাই ভরসা।

     দোকানের দরজার ওপর স্ফটিকের মতো উজ্জ্বল একটা জায়গায় নাম লেখা আছে। কিন্তু দোকানের নামটা একটু অদ্ভুত। এল ডোরাডো।

     কাচের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই অরিজিতের নাকে একটা পুরোনো গন্ধ ঝাপটা মারলো। গন্ধটার কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা তার নেই কিন্তু পুরোনো পুরোনো বলেই মনে হল। কাউন্টারে কোনও লোকজন নেই।

     ঘরের চারিদিকে এক ঝলক চোখ বুলিয়ে অবাক হয়ে গেলো অরিজিৎ। বিভিন্ন প্রাচীন বুদ্ধমূর্তি, নানান রকম ঝাড়লণ্ঠন, বিশাল বিশাল কিছু পোর্ট্রেট টাঙানো, নানারকম যন্ত্রপাতি, গালিচা, একটা শো কেসে ছোট ছোট অ্যাশট্রে, পাইপ, ছুরি, নানারকম ঘড়ি— এরকম ঘড়ির কথা অরিজিৎ ফেলুদার গোরস্থানে সাবধান উপন্যাসে পড়েছিল। পেরিগ্যাল রিপিটার। এ ছাড়া অনেক ক’টা বড় বড় পেন্ডুলাম দেওয়া গ্র্যান্ডফাদার ক্লক দেওয়ালে ঝোলানো। একটা সুন্দর ডিজাইনের রকিং চেয়ার। দাবার ঘুটির মতো কয়েকটি বোড়ে রাখা আছে ঘরের এককোনে যা অনেকটা প্রমান সাইজের মানুষের মতো বড়। কাউন্টারের টেবিলের পাশে একটা কাচের শোকেসে বেশ কিছু পুঁথি ও মানচিত্রও চোখে পড়লো। কিন্তু কোনও লোকজন নেই। আজব তো! এটা কি ধরনের দোকান?

     “কেউ আছেন?”

     একটু জোরে গলা খাকারি দিলো অরিজিৎ, চপচপে ভেজা অবস্থায় এভাবে দোকানে ঢুকে ভেতরটা নোংরা করছে দেখে নিজেরই একটু লজ্জা লাগলো তার, কিন্তু বিপত্তি বড় বালাই।

     খানিক পরে দোকানঘরটার কোনের একটা দরজা খুলে গেলো। ভেজানোই ছিল, কিন্তু দরজা সরানোর আওয়াজটা কানে এসেছে। সে বুঝতেই পারেনি ওখানে দরজা আছে। কারণ একগাদা মুখোশ টাঙানো সেখানে। একজন বৃদ্ধ লোক বেরিয়ে এলেন। টকটকে গায়ের রং। নেপালি।

     “দাদা আমি একটু অসুবিধায় পড়ে… মানে দোকানে ঢুকে পড়েছি… এত রাতে দোকান খোলা যে… একটু যদি সাহায্য করেন—”

     “তুমি তো একদম ভিজে গেছো দেখছি। দাঁড়াও, আগে তোমাকে টাওয়েল দিই, ছেত্রী!”

     পরিষ্কার বাংলায় কথা শুনে আশ্বস্ত হল অরিজিৎ, যাক হিন্দি অন্তত বলতে হবে না। সে এমনিতে হিন্দি ভালো বলতে পারে না। বৃদ্ধ নেপালি হলেও এত ঝকঝকে বাংলা বলতে পারে জেনে একটু অবাকই হলো। সঙ্গে সঙ্গে ভেতর থেকে আরেকটা নেপালি ছেলে বেরিয়ে এলো। তার বয়সীই ছেলেটা, সম্ভবত এই ছেত্রী।

     বৃদ্ধ তাকে নেপালি ভাষায় কিছু বলতেই ছেলেটা একবার অরিজিতের দিকে তাকালো তারপর সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে চলে গেলো। বৃদ্ধ বলল, “দাঁড়াও একটু, ও টাওয়েল আনতে গেলো।”

     অরিজিৎ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। কি বলবে বুঝে পেলো না। দোকানটার চারিদিকে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে সে। এবার চোখে পড়লো বিভিন্ন ধরনের করাত, কাটারি, একটা বাঁকানো হাতা, ছুরি, কাঁচি আরও অনেক ধারালো অস্ত্র এক জায়গায় সাজানো আছে।

     বৃদ্ধ তাকে এক দৃষ্টিতে লক্ষ করছিলেন, এবার বললেন, “এরকম দোকানে কখনও আসা হয়নি মনে হচ্ছে?”

     অরিজিৎ হেসে নিয়ে বললো, “হ্যাঁ, আসলে এখানে এরকম দোকান আছে সেটাই জানতাম না, তাই একটু অবাক তো লাগছেই। মানে এটা কীসের দোকান? এত পুরোনো সব জিনিসপত্র—”

     “এটা একটা কিউরিও শপ।”

     কিউরিও শপ! এরকমই হয় তাহলে কিউরিউ শপ! ঠিক যেরকম গল্পের বইয়ে বর্ণনা পড়েছে সে। হ্যাঁ, এতো ঠিক সেরকমই দোকান! তাহলে এটা তার মাথায় এলো না কেন? তার চেয়েও বড় কথা জলপাইগুড়িতে কিউরিওশপ কবে খুললো? আর যদি খুলেও থাকে তাহলে সে জানে না কেন?

     ছেত্রী ছেলেটা সঙ্গে সঙ্গে টাওয়েল নিয়ে এসেছে। অরিজিতের কাছে এসে সেও বাংলাতেই বলল, “ব্রো, পুরো ভিজে গেছো তো! তাড়াতাড়ি মুছে নাও।”

     টাওয়েলটা থেকে কেমন অগুরু অগুরু একটা গন্ধ! চটজলদি মাথাটা মুছে ফেললো সে। তারপর শার্টটা খুলে ফেলে গাটাও মুছে নিলো।

     টাওয়েলটা ফেরত দিয়ে অরিজিৎ শার্টটা কোথায় রাখবে বুঝে পেলো না। ছেত্রী বললো, “আমাকে দাও।” অরিজিৎ দিতে দ্বিধা করছিল, ছেলেটা হেসে নিয়ে হাত থেকে শার্টটা নিয়ে দোকানের দরজার কাছে একটা হ্যাঙারে টানিয়ে দিলো। বোঝাই যাচ্ছে হ্যাঙারটিও বেশ পুরোনো। ওটাও সম্ভবত অ্যান্টিক কালেকশনই।

     অরিজিৎ এবার বৃদ্ধের দিকে তাকিয়ে বললো, “অসংখ্যা ধন্যবাদ”, ছেত্রীর দিকে তাকিয়েও একটা হাসি দিলো সে। বৃদ্ধ বললেন, “তোমার কী বিপদ হয়েছে, বললে না তো?” অরিজিৎ সঙ্গে সঙ্গে বললো তার সাইকেলের বিপর্যয়ের কথা। সব শুনে তিনি বললেন, “কিন্তু তাহলে তো তোমার সমস্যা আমরা সলভ করতে পারবো না। সাইকেল মেকার তো আমরা নই।”

     অরিজিৎ সঙ্গে সঙ্গে বললো, “না না, আমি শুধু একটু আশ্রয়ের জন্য দোকানে ঢুকেছি। আর একটা ফোন—” অরিজিৎ সঙ্গে সঙ্গে নিজের মোবাইল ফোনটা পকেট থেকে বের করলো, এটার কথা সে ভুলেই গেছিলো।

     “ফোন?” বৃদ্ধ প্রশ্ন করলেন।

     “হ্যাঁ, আসলে আমার ফোনটা অন হচ্ছে না—” মোবাইলটা প্লাস্টিক থেকে বের করতে করতে সে বললো, “এদিকে বাড়িতে কোনও খবর দেওয়া নেই। চিন্তা করছে হয়তো—”

     “কিন্তু ল্যান্ডলাইন তো ডেড হয়ে আছে। আর আমাদের মোবাইল নেই।” বৃদ্ধ জানালেন।

     অরিজিৎ ফাঁপরে পড়লো। অন্তত বৃষ্টির হাত থেকে নিস্তার মিললেও ফোনের সমস্যাটা মিটলো না। না জানি বাবা মা কিরকম চিন্তাই না করছে! বিশেষত মা-

     হঠাৎ অরিজিতের নজরে পড়লো ছেত্রী ছেলেটা কেমন করে যেন তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টি যেন স্বাভাবিক না। একবার সে ঠোঁট দুটো জিব দিয়ে চেটেও নিলো। আশ্চর্য তো! এ আবার কী? অরিজিৎ সঙ্গে সঙ্গে কাউন্টারের দিকে ফিরতেই দেখলো বৃদ্ধ কোত্থাও নেই।

(৩)

প্রথমটা হতভম্ব হয়ে গেলেও অরিজিৎ ভাবলো বৃদ্ধ বোধহয় ভেতরে গেছেন। ছেত্রীর উপস্থিতিটা কেন জানি না অস্বস্তিকর। সে দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। বৃষ্টির গতি যেন আরও বাড়ছে। সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। দোকানের সামনেটা ভেসে যাচ্ছে জলে। একটু দূরে তার সাইকেলটা দেখা যাচ্ছে কিউরিওশপের অদ্ভুত স্ফটিকের মতো গ্লোসাইন বোর্ডটার আলোয় ভিজছে। অরিজিতের একদম ভালো লাগছে না এই কিউরিওশপে থাকতে। বাড়িতে না জানি কত চিন্তাই করছে। এমন সময় শপের বড় পেন্ডুলাম ঘড়ি থেকে বারোটা বাজার ঘণ্টি বেজে উঠলো। গীর্জায় রুপোর ঘণ্টা বেজে উঠলে যেরকম মিষ্টি শব্দ হয়, ঠিক সেরকম শব্দটা। অরিজিৎ আবার ফিরে আসতে গিয়ে দেখলো ছেত্রী ছেলেটাও নেই। আশ্চর্য লোক তো এরা? একজন লোককে রেখে এভাবে ভেতরে চলে গেলো? একবার বললোও না! অবশ্য সে তো আর কাস্টমার না, সামান্য একজন আশ্রয়প্রার্থী। যাক অন্তত ছেত্রী ছেলেটার অস্বাভাবিক দৃষ্টির হাত থেকে রেহাই পাওয়া গেলো।

     শার্টটা হ্যাঙারে ঝোলানো আছে। তা থেকে টপ টপ করে জল পড়ছে নিচে রাখা পাপোশটার ওপর। অরিজিৎ এগিয়ে গেলো শার্টের দিকে। খালি গায়ে অস্বস্তিও লাগছে তার। যদিও খালি গায়ে লজ্জা পাবার মত চেহারা তার নয়, তবুও।

     একটু পরে খুঁট করে একটু শব্দ হতে ঘুরে তাকালো সে। কিন্তু যা দেখলো তাতে আতঙ্কে মাথার চুল খাড়া হয়ে যাওয়ার জোগাড়। দেওয়ালের কোনের দিকে হেলান দিয়ে রাখা দাবার ঘুটিগুলো নড়ছে। কিন্তু কে নড়াচ্ছে ওগুলো? পাশে রাখা একটা আনুবিসের মূর্তির মধ্যেও এবার ধীরে ধীরে যেন প্রাণ সঞ্চার ঘটছে। সে কি প্রচন্ড বিপদগ্রস্ত হয়ে ভুল দেখছে? একবার চোখ কচলে নিয়ে ফের তাকানোর পর অরিজিৎ দেখলো কোথায় কি? সব ঠিকঠাক আগের মতোই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ভীষণ অবাক হয়ে গেলো অরিজিৎ! সে কি তাহলে হ্যালুসিনেশনের শিকার? কিন্তু কেন?

     এমন সময় আবার খুঁট করে শব্দ হতেই অরিজিৎ দেখলো দরজার আড়াল থেকে বৃদ্ধ বেরিয়ে আসছেন। হাতে একটা কি যেন বোর্ডের মতো। একদম ছোট বাচ্চাদের ক্যারম বোর্ড যেমন হয়। বৃদ্ধ জিনিসটা কাউন্টারে রেখে অরিজিৎকে ইশারায় কাছে ডাকলেন। একটু ইতস্তত করে অরিজিৎ এগিয়ে গেলো। একটু আগেই সে ওই গুটিগুলোকে নড়াচড়া করতে দেখেছিল এই কথাটা বৃদ্ধকে বললে তিনি নিশ্চয়ই ভীষণ হাসিঠাট্টা করবেন। অরিজিৎ মজার পাত্র হয়ে পড়বে।

     বৃদ্ধ বোর্ডটা দেখিয়ে বললেন, “এই যে যন্ত্রটা দেখছো, প্রাচীন কাব্বালার সঙ্গে এর একটা গূঢ় যোগাযোগ আছে।”

     “কাব্বালা মানে?”

     “প্রাচীন ইহুদি তন্ত্রবিদ্যা।”

     অরিজিৎ অবাক হয়ে বোর্ডটা দেখলো। তাতে একটা ছ’কোনা তারা আঁকা আছে। অনেকটা চাইনিজ চেকার বোর্ডের ছকের মতো। সে বললো, “তন্ত্র সাধনার সঙ্গে যোগাযোগ আছে না ছিল? এতো আপনি এখানে বিক্রির জন্য রেখেছেন।”

     “হ্যাঁ, ছিল। এটা স্টার অব ডেভিড। এর মধ্যে দিয়ে অন্ধকারের প্রহরীর যোগাযোগ ছিল। পৃথিবীর পাতাল রাজ্যের অন্ধকারের দেবতা। এই যন্ত্রের মধ্যে দিয়েই তান্ত্রিকেরা প্রথম তাঁর জাগরণ ঘটায়।”

     অরিজিৎ এবার বিরক্ত হল। এসব ফালতু বুজরুকের গল্প এখন শুনতে হবে তাকে? উফফফ! এযে বৃষ্টির হাতে পড়ে আশ্রয় চেয়ে উল্টো বিড়ম্বনা! এমনিতেই মন মেজাজ ভালো নেই। বাবা মা না জানি কতটা টেনশন করছে—

     “কী হল? চুপ করে আছো যে?”

     “না, মানে আমার এসব বিষয়ে তেমন কোনও ইন্টারেস্ট নেই।”

     “হুম। কিন্তু আমার যে মনে হচ্ছে তুমি ভীষণ ভয় পেয়েছিলে একটু আগেই, এই ঘরেই!”

     অরিজিৎ এবার চমকে উঠলো। সে ভয় পেলেও তার এক্সপ্রেশন খুব একটা ছিল না। তবে কি এই ঘরে সিসিটিভি বসানো আছে? কারণ যখন সে ভয় পেয়েছিল তখন বৃদ্ধ বা ছেত্রী কেউই ঘরে ছিল না। বৃদ্ধ নিশ্চয়ই ভেতরের ঘরে বসে—

     “না, ভয় না, ওই আর কি, হ্যালুসিনেশন মতো। আসলে চারপাশে তো একদম ফাঁকা, দোকানেও আপনারা কেউ ছিলেন না, এদিকে বৃষ্টি পড়ছে, বাড়ি ফিরব— টেনশন—”

     “অ। আচ্ছা। তবে তুমি এসেছো যখন কিছু একটা কিনে নিয়ে যাও। এখানে সবরকম বিষয়ের প্রাচীন জিনিসপত্র আছে।”

     অরিজিৎ বুঝলো কিছু একটা তাকে কিনতেই হবে। তবে ওরা এত রাত অবধি দোকান খুলে কেন রেখেছে এটা জানা হল না। কিন্তু কিছুতেই এই প্রশ্নটা সে জিজ্ঞেসও করতে পারলো না। শত হলেও দোকানটা খোলা ছিল বলেই না…

     আনুবিসের মূর্তিটা ভালো ছিল বা সেই দাবার গুটিগুলোও। কিন্তু ওগুলোর দিকে এখন তাকালেই গা’টা কেমন ছমছম করছে। কাজেই কিনলে ওগুলো কেনা যাবে না। মানুষের মতো বড় আনুবিস বা দাবার গুটি একটা বাড়িতে রাখলে ব্যাপারটা দারুণ হত, কিন্তু …

     “ওই পেরিগ্যাল রিপিটারের দাম কত?”

     অরিজিতের প্রশ্নে বৃদ্ধ অবাক হয়ে চাইলো, তারপর হেসে নিয়ে বললো, “না না ওগুলো পেরিগ্যাল রিপিটার নয়। ওটা সাধারণ ট্যাঁকঘড়ি। তবে সাধারণ বললেও সাধারণ নয়। ওর একটা ইতিহাস আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একজন ভারতীয়কে ইহুদী সন্দেহে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে চালান করা হয়। ওই ঘড়িটা সেই ভারতীয়ের ছিল। ১৯৪৫ সালে অক্ষশক্তির পতন ঘটলে জার্মানিরও পতন ঘটে। সেই ভারতীয় আগেই মারা যায়, র‍্যাদার তাকে মেরে ফেলা হয়। এরপর নিলাম ও বিভিন্ন হাত ঘুরে ওই জিনিস জলপাইগুড়ির একজন অ্যান্টিক সংগ্রাহক এবং চা বাগানের ম্যানেজার জনসন সাহেবের হাতে আসে। সেখান থেকে আমি।”

     বৃদ্ধ থামলেন। অরিজিৎ বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে। এত ইতিহাস কি সত্যিই আছে ওতে? নাকি বুড়ো গছানোর জন্য তাকে মিথ্যা ইতিহাসের গল্প শোনালো? অরিজিৎ সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছে দেখে বৃদ্ধ নেপালি বললেন, “বিশ্বাস হচ্ছে না তাই তো? নাও আমি সময় ঘুরিয়ে দিচ্ছি, নিজেই দেখে এসো।”

     “মানে?”

     আঁতকে উঠলো অরিজিৎ! তার আগেই বৃদ্ধ তার প্যান্টের পকেটে ট্যাঁকঘড়িটা চালান করে দিয়েছে। এত দ্রুত ঘটনাটা ঘটে গেলো যে অরিজিৎ বুঝতেই পারলো না কিছু। মুহূর্তের মধ্যে সারা পৃথিবীটা যেন দুলে উঠলো, সেই আনুবিস ও দাবার গুটিগুলো এবার সত্যি সত্যিই এগিয়ে আসছে যেন তার দিকে। একটু একটু করে। অতি ধীর পায়ে ওরা এগিয়ে আসছে। অসীম আতঙ্কে অরিজিৎ তাকিয়ে দেখছে এল ডোরাডো কিউরিওশপ নিমেশেই বদলে যাচ্ছে। সেই ছয়কোনা তারা আঁকা ছোট্ট ক্যারম বোর্ডের মত যন্ত্রের মধ্যে থেকে এক আতঙ্ক ঘন শব্দ ভেসে আসতে শুরু করলো, যেন কোনও মন্ত্রপাঠের মধ্যে দিয়ে জাগিয়ে তোলা হচ্ছে অন্ধকারের প্রহরীকে। একটা বোঁটকা গন্ধে ঘর ছেয়ে যাচ্ছে। এবং ঝড়াম করে এল ডোরাডো কিউরিওশপটা বদলে গেলো একটা খোলা প্রান্তরে। অজস্র মানুষকে বন্দী করে বন্দুকের ডগায় অমানবিকভাবে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যাচ্ছে আনুবিস ও দাবার বোর্ডের সেনাদল। মানুষগুলো চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে দেবতা জিউসের নাম উচ্চারণ করছে প্রচন্ড ভয়ে। তাদের সামনে একটা বিশাল বড় কাচের ঘর। চেম্বার। আর সেই ছয়কোনা তারাটা স্বোয়াস্তিক চিহ্নে বদলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। প্রহরী বের হয়ে আসছে। ইহুদিরা যে অন্ধকারের প্রহরীকে সবচেয়ে ভয় পায়, সে এগিয়ে আসছে অরিজিতের দিকে। তার ঠোঁটের ওপরে একটা বাটারফ্লাই গোঁফ।

(৪)

বৃষ্টি কমে গেলেও আকাশ মেঘলা। রোহনের আজ কলকাতা যাওয়া। ট্রেনের রিজার্ভেশন করাই আছে। তাই খেয়ে দেয়ে রোহন হাঁটা দিলো বাড়ি থেকে। কাল অনেক রাত অবধি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মেরে দারুণ সময়টা কেটেছে। আবার যে কবে জলপাইগুড়ি আসতে পারবে কে জানে। স্কুলবেলার সব প্রিয় বন্ধুদের জন্য মনটা খারাপই হয়ে আছে তার। ওদের মধ্যে অরিজিৎই এখনও চাকরি পায়নি খালি। ওর জন্য তাই সব বন্ধুরা কত চেষ্টাই না করছে। রোহনের খুব ইচ্ছে কলকাতাতে ওকে কোনও ব্যবস্থা করে দেওয়া। তাহলে দুই বন্ধুতে একসঙ্গে থাকা যাবে।

     রোহন হাঁটতে হাঁটতে ক্যানেলের পার থেকে বটতলা অবধি না এলে টোটো পাবে না। এখন সকাল আটটা বাজে। ন’টা দশে টাউন স্টেশন থেকে ট্রেন। হাঁটতে হাঁটতে বড় বেশি বিষন্ন লাগছে মনটা। হঠাৎ কিছুদূর আসার পর রোহন একটা সাইকেল পড়ে থাকতে দেখলো রাস্তার ধারের মাঠে, কাদার মধ্যে। খুব চেনা চেনা সাইকেলটা। কোথায় দেখেছে সে— আরে এতো অরিজিৎ এর সাইকেল! এতে চড়ে ওরা কত ঘুরেছে স্কুল লাইফে। রোহন সাইকেল চালাতে পারে না, তাই অরিজিৎ ওকে সামনে বসিয়ে সারা শহর ঘুরে বেড়াতো। কালও তো এটা নিয়েই অরি এসেছিল, তাহলে এটা এখানে কেন? ভীষণ অবাক হয়ে রোহন নেমে এলো সাইকেলটার কাছে। তার আশপাশে ফাঁকা মাঠ, ঝোপঝাড়। সাইকেল থেকে কিছুদূরে একটা শার্ট পড়ে আছে দেখে বুকটা ধক করে উঠলো রোহনের। এতো অরিজিতের শার্ট! কি হয়েছে ওর? কিন্তু সাইকেল আর শার্ট ছাড়া আর কিচ্ছু দেখতে পেলো না এই ফাঁকা জায়গায়। সত্যিই তো, কাল রাতে অরিজিতের বাড়িতে পৌঁছে হোয়াটস অ্যাপে একটা ম্যাসেজ দেওয়ার কথা ছিল— ও তো দেয়নি— তা ছাড়া দেবেই বা কি করে, কাল তো সারারাত সব নেটওয়ার্ক বন্ধ ছিল! সঙ্গে সঙ্গে রোহন পকেটে হাত দিয়ে মোবাইলটা বের করে নিয়ে ফোন করলো অরিজিতের নম্বরে। ফোন সুইচ অফ!

     এমন সময় খানিকটা দূরে কি একটা চকচক করছে দেখে রোহন এগিয়ে গেলো সেদিকে। তার কপালে এমনিতেই চিন্তার একটা ভাঁজ ছিল, চকচকে জিনিসটা দেখে তা আরও খানিকটা বেড়ে গেলো। এই জায়গাটা একদম কাদা কাদা হয়ে আছে। ধান লাগাচ্ছে এখন সব জায়গায়। কাল রাতের বৃষ্টিতে সদ্য বসানো চারাগুলো বেঁকে গেছে।

     একটা টিফিন বক্স!

     “স্ট্রেঞ্জ!” আপনমনেই বলে উঠলো রোহন। তার অরিজিতের জন্য ভীষণ চিন্তা হচ্ছে।

     টিফিন বক্সটা কুড়িয়ে নিয়ে ভীষণ কৌতুহলের সঙ্গে এক ঝটকায় সেটা খুলে ফেললো রোহন। কিন্তু যে দৃশ্য সে দেখলো তা সারাজীবনের জন্য তার মানসিক ভারসাম্য ধ্বংস করতে সবলভাবে সক্ষম। বাক্সের মধ্যে রয়েছে খানিকটা রান্না করা মাংস, অনেকটা শুয়োরের মাংসের মতো ডুমো ডুমো, দারুন গন্ধ বেরোচ্ছে তা দিয়ে। কিন্তু মাংসের মধ্যে থেকে উঁকি দিচ্ছে একটা আংটি পরিহিত মানুষের মধ্যমা আঙুল। তাতে ইংরেজি হরফে ‘A’ লেখা আছে।

(৫)

মুশফিকুর জোরে বাইক চালাচ্ছে। হলদিবাড়ি থেকে জলপাইগুড়িতে ভোরবেলা ঢোকার কথা তার। ভোর চারটায় ওরা সব বন্ধুরা মিলে দার্জিলিং বেড়াতে যাবে। কিন্তু আকাশ খুব দ্রুত খারাপ হতে শুরু করেছে। এরকমটা আশা করেনি মুশফিকুর। ঠিক এমন সময় বাইকের চাকা গেলো পাংচার হয়ে। মুশফিকুর বাইক থেকে নেমে চাকা দুটো পরীক্ষা করলো। দুটোই পাংচার। কিন্তু পাংচারটা হল কি করে! ঠিক তখনই বৃষ্টিও নেমে পড়লো ঝমঝমিয়ে। অগত্যা অন্ধকারে ভিজতে ভিজতে মুশফিকুরকে বাইক ঠেলেই রওনা দিতে হলো। কিচ্ছু করার নেই। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তো আর ভেজা যায় না।

     কিছুদূর এগোনোর পর একটা দোকানের গ্লোসাইনবোর্ড চোখে পড়লো তার। খোলা আছে এখনো! যাক!  আশায় বুক বেঁধে মুশফিকুর এগিয়ে গেলো দোকানটার দিকে।

     দোকানের নামটা খুব অদ্ভুত। এল ডোরাডো।

Tags: গল্প, জটায়ু, পঞ্চম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা, রঙ্গন রায়, হরর গল্প

2 thoughts on “এল ডোরাডো

  • October 11, 2020 at 3:18 pm
    Permalink

    রুদ্ধশ্বাস

    Reply
    • June 13, 2022 at 11:50 pm
      Permalink

      Interesting ☺️

      Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!