সম্পাদকীয়

  • লেখক: কল্পবিশ্ব
  • শিল্পী: দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (চিত্রচোর)

প্রিয় পাঠক, আবার একটি নতুন সংখ্যা। বাংলা তথা ভারতীয় কল্পবিজ্ঞান আন্দোলনের এক অন্যতম পথিকৃত অদ্রীশ বর্ধনকে নিয়েই আমাদের এ বারের সংখ্যা। এটা আমাদের ষষ্ঠ প্রকাশ। ক্রিকেটের ভাষায় ওভার বাউন্ডারি। কাজেই স্পেশাল কিছু করতে হবে, এটা প্রথম থেকেই মাথায় ছিল। অনেক আলোচনার পরে ঠিক হল, যে মানুষটার মাথা থেকেই প্রথম বেরিয়েছিল ‘কল্পবিজ্ঞান’ শব্দটি, ছয়ের দশকে বাংলা কল্পবিজ্ঞানকে নতুন পথ দেখানো মানুষটাকে নিয়েই হোক আমাদের নতুন সংখ্যা।

     থাকছে তাঁর তিনটি অসামান্য রচনা, তাঁকে নিয়ে অন্য সাহিত্যিক ও পাঠকদের শ্রদ্ধার্ঘ্য, তাঁকে নিয়ে দীর্ঘ প্রবন্ধ, নতুন করে তাঁর লেখাকে ফিরে দেখা এবং তাঁর একটি অভিনব বিরাট সাক্ষাৎকার। অভিনব, কেননা এই সাক্ষাৎকার তৈরি হয়েছে তাঁৱ পুরনো একাধিক সাক্ষাৎকারকে মিলিয়ে মিশিয়ে। এগু‌লির সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যার অন্যতম সেরা প্রাপ্তি, অদ্রীশের লেখা চিঠি। এই চিঠিগুলি অদ্রীশ লিখেছিলেন তাঁর সুহৃদ রণেন ঘোষকে। অশীতিপর রণেনবাবু আজও প্রতিশ্রুতি প্রকাশন চালান। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কলম চলছে সমান তালে। একসময় ‘আশ্চর্য’ ও ‘ফ্যান্টাস্টিক’ পত্রিকার সম্পাদনা প্রকাশনার কাজে এই মানুষটিই ছিলেন অদ্রীশের প্রধান সহযোগী। তাঁর ব্যক্তিগত চিঠিগুলি তিনি আমাদের ব্যবহার করতে দিয়ে আমাদের ঋণী করলেন। তাঁর এই সব ব্যক্তিগত চিঠি ব্যবহার করব কি না, তা নিয়ে একটি সংকোচ আমাদের মধ্যে কাজ করছিল। কিন্তু তিনিই আমাদের বললেন, ‘‘ওভাবে ভাবছ কেন? এই সব চিঠি কবেকার লেখা! একটা বয়সের পরে কোনও কিছুই ব্যক্তিগত থাকে না। তোমরা বিনা দ্বিধায় ছাপো।’’ কোনও সন্দেহ নেই, এই চিঠি এক উজ্জ্বল উদ্ধার। যেখানে রক্তমাংসের অদ্রীশকে পাওয়া যাবে। মানুষ তো আসলে সাদা বা কালো হয় না। বরং দুয়ের মিশেলে ধূসর রংটাতেই তাকে প্রকৃত চেনা যায়। এই সব চিঠিতে স্রষ্টা অদ্রীশ, প্রকাশক অদ্রীশ, বন্ধু অদ্রীশ এমন নানা স্তর খুঁজে পাওয়া যাবে। এক অসামান্য প্রচ্ছদ এঁকে সংখ্যাটাকে সর্বাঙ্গসুন্দর করে তুলেছেন প্রতিম দাস। বাংলা কল্পবিজ্ঞান ও ফ্যান্টাসি সাহিত্যের পুরোধা পুরুষটিকে নিয়ে আমাদের এই প্রচেষ্টা আপনাদের খুশি করলেই পরিশ্রম স্বার্থক বলে মনে করব।

     এ ছাড়া মৌলিক গল্প, অনুবাদ, কুইজএ সব তো রইলই। আসুন, উঠে বসা যাক কল্পনার স্পেসশিপে। বাংলা সাহিত্যের এক ফেলে আসা সময়খণ্ড ছুঁয়ে কল্পনার দুনিয়ায় পাড়ি দিই।

     আপনি তৈরি তো পাঠক?

Tags: দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা, সম্পাদকীয়

4 thoughts on “সম্পাদকীয়

  • August 12, 2017 at 9:52 am
    Permalink

    আমার চাইতে অনেক ছোট এক বন্ধুর, আমরা দুজনেই কল্পবিজ্ঞানের বিশাল ভক্ত এবং সেজন্যেই বন্ধুত্ব, কাছে আপানাদের এই পত্রিকা সম্মন্ধে জানতে পারলাম এবং লাফিয়ে পড়ে আপনাদের পত্রিকা সাইটে গিয়ে পড়া শুরু করলাম। কল্পবিজ্ঞানের সঙ্গে প্রেম কৈশোরে! আপনাদের ই-ম্যাগাজিন পড়াটা প্রথম শুরুটাই হল কিংবদন্তী কল্পবিজ্ঞান লেখক অদ্রীশ বর্ধনকে নিয়ে সংখ্যায়। অদ্রীশ বর্ধন বাংলায় কল্পবিজ্ঞানের পথিকৃৎ এটা জানা হলেও তার লেখা পড়ে বড় হওয়াটা যে কি অনুভুতির সঞ্চার করে সেটা লিখে বা বলে বোঝানো অসম্ভব। আর নবনীতা দেবসেনের মত আমিও বলি যে, আপনাদের পত্রিকার জন্মমুহুর্তের ভিডিও দেখে আমিও প্রথম অদ্রীশবাবুকে প্রথম চাক্ষুশ দেখলাম।আপনাদের ভিডিও-র জন্য ধন্যবাদ! ওনার অনেক লেখা আজ আর আমার কাছে নেই কিন্তু যে ভালবাসার জন্ম উনি দিয়ে গেছেন কল্পবিজ্ঞানের জন্য সেটার জন্য অনেকের মত আমিও ওনার কাছে ঋনী। ওনাকে সশ্রদ্ধ প্রণাম ঐ রকম একটা হিমালয় প্রমাণ একটি উদ্যোগকে বাস্তবায়িত করতে পারার জন্য। আজ বাংলায় যতটুকু কল্পবিজ্ঞান নিয়ে সচেতনতা সেটা কিন্তু ওনার জন্যেই। ঐ ষাট এবং সত্তর দশকের পর কিন্তু বাংলায় কল্পবিজ্ঞানের জগতে একটা বিশাল সময় ধরে খরা এবং আমরা যারা কল্পবিজ্ঞানের তৃষিত পাঠক তারা ধীরে ধীরে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমার অবশ্য কল্পবিজ্ঞানের সঙ্গে যোগাযোগ রয়ে গেছে, অনিয়মিত ভাবে হলেও। বাংলায় কল্পবিজ্ঞানের অভাব দেখে তৃষ্ণা মেটানো বিদেশি কল্পবিজ্ঞানের সাহিত্য পড়ে। এক অন্য জগত, একটা প্যারালাল মহাবিশ্বের মধ্যে যেন বিচরণ সেটা চলতে আরম্ভ করেছিল। একসময় কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের পাশাপাশি মন দিলাম সায়েন্স ফিক্‌শান সিনেমা দেখায়। বিশ্বের ভাল ভাল সব সাইফাই সিনেমা মন কেরে নিল। সবসময় মনে হত বাংলায় যদি থাকত একটা পত্রিকা বা গোষ্ঠি!অনেক বারই মনে হত যে এরকম একটা কিছু করলে হয়। অদ্রীশ বর্ধন মহাশয়ের শুরু করেদিয়ে যাওয়ার পর ধারাটা যদি বজায় রাখা যেত! এইসব ভাবনা মাঝে মাঝেই মাথায় হানা দিত। কখনো কখনো নিজেই লেখার কথা ভাবতাম কিন্তু লিখেই বা হবে কি কোথাও কল্পবিজ্ঞান নিয়ে সেরকম কোন উৎসাহ নেই। বন্ধুদের কখনো সখনো বলে দেখেছিলাম কিন্তু সে ব্যাপারে কোন সারা পাইনি। তাই এইসব ভাবনা চিন্তা শুধু ‘ভাবনা চিন্তা’ হয়েই থেকে যেত। বিদেশে বিখ্যাত সব কল্পবিজ্ঞান পত্রিকার কিছু এখনো রয়ে গেছে। সেসব দেখে আর নিজেদের অভাবের কথা ভেবে মাঝে মাঝেই খারাপ লাগত। প্রচলিত প্রকাশনার পাশাপাশি তাদের ওয়েব আছে ভারশান এবং আছে উৎসাহী উদ্যোগী মানুষেরা। আমি ইন্টারনেট-এ অনেক বার খোঁজ করে দেখছি এখানে কোন সেরকম কোন পত্রিকা খুঁজে পাইনি। আপনাদের পত্রিকার কথা কিছুদিন আগে জেনে পুরোন উৎসাহটা প্রবল ভাবে ফিরে পেলাম। জীবিকার সুত্রে ২০১৬ তে রাজের বাইরে ছিলাম তাই জন্মলগ্নেই এই পত্রিকার কথা তখন জানতে পারিনি। মনে হয় এবার থেকে এই পত্রিকার সঙ্গে অন্ততঃ কল্পবিজ্ঞানের এক পাঠক হিসেবে যুক্ত থাকতে পারব! এইসবের মাঝেই আপনাদের পত্রিকার কথা জানতে পেরে অত্যন্তঃ আনন্দে মন ভরে উঠল। একটা ব্যাপার একটু বলা মনে হয় প্রয়োজন এ প্রসঙ্গে, সায়েন্স ফিক্‌শান কে শুধু শিশু সাহিত্য বা ঐ ফ্যান্টাসি জঁর এর গোত্রে সীমায়িত করে রাখার মানসিকতা কিত্নু এখনো বিদ্যমান। এটা বোঝানো এখনো এখানে খুব দূরহ যে সায়েন্স ফিক্‌শান কেন একটা সিরিয়াস চর্চার বিষয় হতে পারে এবং কেন এর গুরুত্ব সাহিত্যের অন্য শাখার মত বা কোন কোন ক্ষেত্রে বেশ বেশীই। বিদেশে ইউনিভার্সিটিতে সায়েন্স ফিক্‌শান নিয়ে আলাদা করে পড়াশোনা, তাই নিয়ে গবেষণা করার জায়গা আছে! সায়েন্স ফিক্‌শান কনভেনশানে বিশিষ্ট বিজ্ঞানীরা যোগদান করে থাকেন। একথা জানা হলেও অনেক সময়ই তার গুরুত্ব আমাদের আছে ধরা পরে না। প্রথমদিকে শুধু গল্পের টানে পড়লেও পরে ধীরে ধীরে সাহিত্যের এই জঁর-এর গুরুত্ব উপলব্ধি করেছি। যাই হোক আপনাদের এই উদ্যোগ বাংলায় কল্পবিজ্ঞান নিয়ে সিরিয়াস চিন্তা ভাবনা, চর্চা শুরু করবে এই কামনা করি। কামনা করি অদ্রীশ বাবু সুস্থ থেকে শতায়ু হোন!

    Reply
    • August 12, 2017 at 10:53 am
      Permalink

      অনেক ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মতামতের জন্যে। আপনার সব কথার সাথেই আমরা সম্পূর্ন একমত। দয়া করে আর্কাইভ থেকে আমাদের পুরানো সংখ্যা গুলিও পড়বেন। কল্পবিজ্ঞান গ্রুপে পোস্টের মাধ্যমেও আপনার মতামত জানাতে পারেন। সঙ্গে থাকুন।

      Reply
  • September 12, 2017 at 2:49 pm
    Permalink

    Amar mote ajker diner sob cheye bhalo prochesta ei magazine, jodio comment korte deri hoye gelo.
    amar antorit bashona , jeno ei prochesta bondho na hoy. Amar dwara kono subidha hole oboshyoi janaben.
    ar hya,

    ei magazine tar proper marketing hole bhalo hoy.
    koto habi jabi jinish to romromoiye cholche, sahityer naam e, emon bhalo ekta prochesta pathokera kom porben, eta howa uchit noy.

    dirghojibi hok ei prochesta , kamona kori.

    Reply
    • September 25, 2017 at 10:10 pm
      Permalink

      অনেক ধন্যবাদ সঞ্জয়বাবু, আপনাদের মত পাঠকদের উৎসাহেই তো আমরা এই পত্রিকাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছি। দয়া করে আপনার বন্ধুদের ও কল্পবিশ্বের কথা জানান। সবাই মিলেই আমরা সাহিত্যের এই অবহেলিত শাখাটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।

      Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!