স্মৃতির কুহকজাল

  • লেখক: শিল্পী রয় বসু
  • শিল্পী: শিল্পী রয় বসু

পার করে কোন দূরের চর্তুদশক,

এলেম যেথায় সবুজের অশোক,

রেখেছিলেম মোরা পায়ের চিহ্ন,

জীবন বৃত্তের কোনো বিন্দুতে,

সময়ের এক অপরাহ্ণে,

আমার সেদিনের জন্ম পরিচয়,

যেখানে দিল এক উষ্ণ হৃদয়!

মুহূর্তের বাঁকে,

পটভূমির আঁকে,

দিনের সীমান্তে,

অভীষ্টের সীমন্তে,

ধাঁধাঁর মিলনান্তে,

কোন সে প্রান্তে!

বিভ্রান্তির শেষে,

জ্ঞানগর্ভের তুষে,

গিরিসঙ্কটের আকর্ষণে,

শূণ্যের পথে ধায় প্রাচীনের রণ,

সাথে পুরাকালের উপজাতির মন,

শুধায় হেথায় চিন্তন রেখাবলি,

কেন অজ্ঞেয় ছিল এ সুধী পাতালপুরী?

গভীরের ডাক শুনি সবুজের বিস্ময়,

গুপ্ত সে পথবিহারী বন্য সঙ্গে ধায়!

ফুলরেণু পতঙ্গের অমূল্য সম্পদ,

বায়ুর স্রোতের পরে সে বিতরে রসদ;

খরনদী বয়ে চলে লয়ে প্রতিধ্বনি,

প্রস্তর সে হোক বা জীবের পদধূলি।

রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রকৃতির ছেয়ে থাকে সর্বত্র

তুলনাহীন প্রাচুর্য্য, তবু সে দিশাহারা,

যেথায় ঠিকানার আশ মানবসভ্যতার স্তম্ভ!

উদ্ভিদের প্রাণরস রক্তে ভেজায় ঘাস,

নীর হতে সোমরসসে যাদু এক ত্রাস!

অবিশ্রাম পথ লেখনী বয়ে চলে,

যেথা গত প্রবাহের স্মৃতি জাগে মনে!

এখনো সে বৃক্ষ রয়ে গেছে স্বপনের বাস্তবে,

যার উচ্চতায় একদিন ঘনিয়েছিল বিপত্তিঃ

সেদিন রক্ষাকর্তা ছিলেন আমার অগ্রজ!

রহস্য সকলের কাছে কি ছিল সেই লক্ষ্য,

যার প্রলোভন ভীতকেও করেছিল দক্ষ!

বলিনি এক কাঠবেড়ালীর বাসায় ছিল এ শিশুর মন,

পাছে প্রত্যেকের প্রহসনের পাত্র হয়েও না পাই ছাড়ন!

কালের ওপার থেকে ফিরে আজ কেন মনে হয়,

এতো তেমন কোনো খাড়াইই নয়!

তবে কেন সেদিন সে অসহায় অন্তরাত্মা করেছিল আর্তনাদ?

আজ কোন এক আশ্চর্য অভীপ্সা বল সেই মনের কোণায়,

নির্মেঘ এ চিত্ত আজ ফিরে দেখতে চায়,

এ প্রাচীন কেমন করে নিজেরে করে জয়!

তখনও অবাক হওয়ার বুঝি বাকী ছিল আরোঃ

নিমেষে উচ্চতা আর কালের বাধা করি অতিক্রম,

দেখি সেই বাসাখানি অবিকল রয়েছে সেইরকম!

সৌন্দর্যের রূপ আনমনে করি পান,

সেই শাখাসজ্জা শোনায় এক চিন্তার গান;

সেদিন গোপন কোটরে এক চিরকুট পেয়েছিল স্থান,

অসীম কৌতূহলবশে আজ খুঁজি তার প্রাণ।

একি মায়া নাকি?!” মনে জাগে বিস্ময়,

কালের কোলে তার কিছুমাত্র হয়নিকো ক্ষয়!

আলো, বাতাস, বা ধোঁয়া দেখি সবই তার সয়!

সময়ে জীর্ণ একখণ্ড কাগজের মমতায় মম,

চোখের ধোঁয়াশা জাগায় বারিধারা সম;

যুগের পরাগে আজ মিলন অদ্ভুত,

এযেন বিদিত এক ভবিষ্যত দূত,

নয়নবারি অনর্গল, অবিরত,

তবুও এ এক নতুন প্রভাত,

মৃত্যুর ওপার হতে নবজন্মের রেশ,

আমি যেন জানতেম সে নয়কো শেষ,

হাতছানি দেয় কোন সময়ের রথ,

মিলেমিশে রাঙায় মোর অতীত ভবিষ্যত!

লেখকের কথাঃ রে ব্রাডবেরির লেখা বিখ্যাত কবিতা Remembrance থেকে অনুপ্রাণিত।

Tags: অনুবাদ, কবিতা, দ্বিতীয় বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, পূজাবার্ষিকী, শিল্পী রয় বসু, স্মৃতির কুহকজাল

Leave a Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!