সমান্তরাল

  • লেখক: পরাগ ভুঁইয়া
  • শিল্পী: রূপক ঘোষ

রজার কিহোলে চোখ রাখল শুভম। বাইরে গাঢ় অন্ধকার। বন্ধ দরজায় জোরে জোরে আঘাত শুরু হল। এর আগেও করেছে বহুবার। শুভমের কপাল ঘামে ভেজা তেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ বেঁচে থাকার তাগিদ ওকে মরিয়া করে তুলেছে।

     পূর্ব স্মৃতি ওর কিছুই মনে নেই কেবল এই বন্ধ ঘরে নিজেকে আবিষ্কার করা ছাড়া প্রথমে মনে হয়েছিল ও কিডন্যাপ হয়েছে কিন্তু ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যাওয়ার পর যখন কেউ দরজা খুলে ভয় দেখাতে এলো না, শুভম বুঝতে পারল ভয়ানক কোনো বিপদের সম্মুখীন হয়েছে।

     ক্লান্ত হয়ে শুভমের দরজায় করাঘাত বন্ধ হল। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে পেছনে ফিরে তাকাল। গোটা ঘর আসবাবপত্রহীন। অনেক উঁচুতে জানালা যদিও বা আছে নাগালের বাইরে। তার ওপর বাইরে থেকে কালো কাগজ আটকানো। বোঝার উপায় নেই দিন না রাত। সাদা নিয়ন আলোই শুভমের একমাত্র সঙ্গী।

     মাঝে মাঝে শুভমের মনে হয় বাইরের পৃথিবী আর নেই। এক রাক্ষুসে নিস্তব্ধতা সব কিছু গিলে ফেলেছে। আর ওই দেয়াল ঘড়িটা এমন অস্বাভাবিক ঘড়ি ও কোনদিন স্বপ্নেও দেখেছে কিনা সন্দেহ। ঘড়িটাতে কোন সময় নির্ণায়ক কাঁটা নেই। তিন, ছয়, নয়, বারোর পরিবর্তে কেবল আট মুদ্রণ করা।

     ক্ষোভের বশে এক নিমেষে শুভম পৌঁছে গেল ঘড়িটার সামনে ওটাকে তুলে আছাড় মারল মেঝের ওপর। তারপর পাগলের মতো হাসতে লাগল। আনন্দটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না, অসহয়তায় শুভমের দুচোখ ভরে জল গড়িয়ে এল।

২৭.১১.২০৪৬

সময় ১৩:৪০

     অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর অবশেষে যন্ত্রটা তৈরি হল। গত ২৯ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল। সৃষ্টির আনন্দে গোটা রাত ঘুমোতে পারিনি। মানব সভ্যতার ইতিহাসে শুধু স্বর্ণাক্ষরে নাম লেখা থাকবে না, প্রয়োজনে গোটা ইতিহাস আমার তৈরি যন্ত্রের দ্বারা ইচ্ছেমত বদলানো যাবে।

     প্যারালাল ইউনিভার্সের অস্তিত্ব, বিজ্ঞান এখনও প্রমান করে উঠতে পারেনি সবই হাইপোথিসিস। কিন্তু এই যন্ত্রের মাধ্যমে যে কোন মানুষ অন্তহীন সম্ভাবনার জগতে পৌঁছতে পারবে।

     আজ যন্ত্রটার অপরিসীম ক্ষমতা পরীক্ষার দিন। গিনিপিগ আমি নিজে। তেজস্ক্রিয় বিকিরণ থেকে বাঁচার জন্য একটি বিশেষ ধরনের পোশাক বানিয়েছি। সঙ্গে রয়েছে ৭২ ঘন্টার অক্সিজেন সরবরাহ করার সিলিন্ডার। আত্মরক্ষার জন্য লেজার গান।

     যন্ত্রটার সঙ্গে লাগোয়া একটি ডিম্বাকৃতি কক্ষ আছে। বাইরের দৃশ্যাবলী পরিষ্কার দেখার জন্য কক্ষটি স্বচ্ছ বানানো হয়েছে। কক্ষে প্রবেশ করে রিমোট দিয়ে যন্ত্র চালু করলাম। ল্যাবরেটরির চারিদিকের দেয়ালগুলো ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছে। তার পরিবর্তে নীলচেবেগুনি বর্ণের কুয়াশা ধীরে ধীরে যন্ত্রটাকে ঘিরে ফেলল।

     মেঝের ওপর কাঁচের টুকরো আর ঘড়িটার ধ্বংসাবশেষ পড়ে সেদিকে দৃষ্টি যেতেই শুভম চমকে উঠল। এত সাধারণ ব্যাপারটা ওর মাথায় আগে এল না কেন ঘড়িটায় সময় নির্ণায়ক কাঁটা দুটি ছিল। আসলে ওগুলোর গতি এত বেশি ছিল যে খালি চোখে দেখে বোঝার উপায় নেই। আর আট নয় ওটা ইনফিনিটি চিহ্ন ঘড়িটি অন্তহীন সময় নির্দেশ করছিল।

     এই প্রথম বাইরের কোনো শব্দ শুভমের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হল পাশের দেয়ালে কান পাতল শুভম। শব্দটা খুব মৃদু বন্ধ দরজায় আঘাতের শব্দ। কেউ সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করছে মুক্তি পাবার আশায়।

     তাহলে ও একা বন্দি নয়। ওর সঙ্গে আরো কেউ আছে। সঙ্গী লাভের আনন্দে শুভম চিৎকার করে উঠল, ”ও প্রান্তে কে আছেন! আমি শুভম! আমিও আপনার মত বন্দি!”

     বারবার ডাকা সত্ত্বেও ওপারের মানুষটির কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, সমানে দরজা ভাঙার চেষ্টায় রত

     এমন কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় শুভমের মাথায় অদ্ভুত খেয়াল এল। দরজা খোলার চাবি নিশ্চয়ই এই ঘরে কোথাও আছে কিন্তু কোথায়? তাহলে কি এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে মেঝের ওপর থেকে ঘন্টার কাঁটাটা তুলে নিল শুভম। তারপর দরজার কিহোলে ঢুকিয়ে ঘোরাতেই কেল্লা ফতে! দরজাটা একটা যান্ত্রিক শব্দ সহ খুলে গেল। বাইরে দুর্ভেদ্য অন্ধকার।

২৭.১১.২০৪৬

সময় ১৬:০৫

     কি সুন্দর! কি অপূর্ব! ভাষায় বর্ণনা করা মুশকিল। শনি গ্রহের অনুরূপ একখানা বলয় ঘিরে রয়েছে আকাশ জুড়ে রামধনুর মত আকার নিয়ে ক্রমশ সরলরেখায় পরিণত হয়ে দিকচক্রবালে গিয়ে মিশেছে। যেন কোন চিত্রশিল্পীর অলীক কল্পনার বাস্তব রূপায়ণ।

     বাইরের তাপমাত্রা সহনযোগ্য কিন্তু অক্সিজেনের মাত্রা ভীষণ কম এখনও পর্যন্ত প্রাণের কোনো সন্ধান পাইনি যন্ত্রটা একার পক্ষে বয়ে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব ওটা ছাড়াই আমার অভিযান শুরু হবে

     ধূ ধূ মরুভূমি সবুজের কোন চিহ্ন নেই বহুদূরে অনেকগুলো সাদা পাহাড়ের সারি নজরে এল। আপাতত ওটাই হবে আমার গন্তব্যস্থল

সময় ২২:১৩

     এখন রাত্রি নেমেছ নক্ষত্র ভরা আকাশের নীচে তাবু খাটিয়ে কয়েক ঘণ্টার বিশ্রাম আমি নিশ্চিত যে পৃথিবীতে এসে উপস্থিত হয়েছি সেখানে প্রাণের সঞ্চার কোনদিন হয়নি তার বড় কারণ চাঁদের কোন অস্তিত্ব নেই

     সুদূর অতীতে থিয়া নামক গ্রহের সঙ্গে সংঘর্ষে পৃথিবীর কিছু অংশ আলাদা হয়ে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে পরে পৃথিবীর অভিকর্ষ শক্তির প্রভাবে একত্রিত হয়ে চাঁদের সৃষ্টি হয় কিন্তু এই সমান্তরাল জগতে তা উপগ্রহে পরিণত না হয়ে সৃষ্টি করেছে বলয়

     অন্তহীন সম্ভাবনা মহাবিশ্ব সত্যি বিচিত্র।

     লোকটির নাম সুরেশ মিদ্যা শুভমের মতই নিজের নাম ছাড়া আর কিছুই মনে নেই। প্রথমের দিকে লোকটি উন্মাদের মতো আচরণ করছিল পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলতে সুরেশ অনেক স্বাভাবিক হল

     শুভমের নির্দেশ অনুসরণ করে দেয়াল ঘড়ির কাঁটাটি ব্যবহার করে সুরেশ মুক্তি পেল।

     সুরেশের শারীরিক অবস্থা শোচনীয় পায়ে হেঁটে যাওয়ার মতো শক্তি নেই ওর রুগ্ন হাতটা শুভমের কাঁধের ওপর ভর করে দুজন এগিয়ে গেল অন্ধকারের মধ্যে

     হাঁটতে হাঁটতে শুভমের মনে অসংখ্য প্রশ্নের ভিড়। ওকি স্বপ্ন দেখছে? না জায়গাটা সাক্ষাৎ নরক? কেন আগের কোনো স্মৃতি ওর মনে নেই? আর কতক্ষণ এই অন্ধকার ভেদ করে এগিয়ে চলবে? শুভম ধরেই নিয়েছে এই গোলকধাঁধা থেকে বেরোনোর কোনো পথ নেই আত্মহত্যা ছাড়া তবুও একবার শেষ মুক্তির প্রয়াস

     আলো! আলো! দেখো!”, সুরেশের ক্লান্ত গলার স্বরে শুভম চেতনা ফিরল ওপরের দিকে দৃষ্টি গেল শুভমের বহু উঁচুতে একটি ছিদ্রের মধ্য দিয়ে সূর্যরশ্মি ভেতরে ঢুকছে সেই সঙ্গে কংক্রিটের ভাঙা টুকরো সশব্দে এসে পড়েছে মেঝের ওপর ছিদ্রটা সদ্য তৈরি হয়েছে নইলে ওদের নজর এড়াতো না

     এই সামান্য আলোর প্রভাবে চারিপাশ আবছা হলেও বোঝা যাচ্ছে যতদূর দেখা যায় বন্ধ দরজার সারি সংখ্যায় হাজার হতে পারে আবার লক্ষাধিকও হতে পারে শুভমের অনুমান প্রত্যেক কক্ষে তাদের মতো কেউ না কেউ বন্দীদশায় রয়েছে জায়গাটি আসলে একটি দৈত্যাকার কারাগার

     শুভম ও সুরেশ দুজনেই নিথর দুটো বিশাল আকারের বাদুড় ছিদ্রটা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেছে আতঙ্কে সুরেশ চিৎকার করতে যাচ্ছিল, শুভম হাত দিয়ে ওর মুখটা চেপে ফিসফিসিয়ে বলল, “চুপ! কোনো শব্দ নয় নইলে ওরা জানতে পারবে

২৮.১১.২০৪৬

সময় ১১:২৭

     ভুল মারাত্মক ভুল করে ফেলেছি যন্ত্রটা ফেলে আশা উচিত হয়নি অক্সিজেন সিলিন্ডারে লিকেজ হয়েছে আমি আর ফিরতে পারবো না তার আগেই অক্সিজেন ফুরিয়ে যাবে

     তপ্ত মরুভূমির বালি আমার চলার গতিকে মন্থর করছে তেষ্টায় আর খিদের জ্বালায় আমি নাজেহাল সিদ্ধান্ত নিলাম অভিযান বন্ধ করব না ভাগ্যে যা লেখা আছে দেখা যাবে

     বেশ কিছু দূরত্ব অতিক্রম করার পর বালির ওপর উড়ন্ত কোনো প্রাণীর ছায়া দেখতে পেলাম আমি বিস্ময়ে হতবাক কারণ আমার গণনা অনুসারে এই পরিবেশে প্রাণের সঞ্চার হওয়া অসম্ভব ওপরে দৃষ্টি গেল পাখিটি বেশ বড় সম্ভবত টেরাসরাস বা ওই জাতীয় কিছু হবে বিপদ আসন্ন লেজার গানটা হাতের কাছেই রাখলাম

     অনুমান ভুল হয়নি জন্তুটা আমাকে লক্ষ্য করে তীর গতিতে নেমে এল লেজার গানটা নিয়ে পরপর দুটো ফায়ার করলাম প্রথমটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও দ্বিতীয়টা নিশানায় গিয়ে লাগল ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে জন্তুটা গিয়ে পড়ল প্রায় কুড়ি ফুট দূরে জন্তুটাকে কাছ থেকে দেখে আমার হাড় হিম হওয়ার উপক্রম এটা কোনো ডাইনোসরাস নয় একটি মানুষ, বরং মানুষ বাদুড় বলা যেতে পারে মৃতদেহের বেশ কিছু ছবি তুলে আবার পথ চলা শুরু

     যে সাদা পাহাড়গুলোর উদ্দেশে আমার অভিযান শুরু হয়েছিল তার প্রায় কাছে চলে এসেছি মাত্র ১৬ ঘন্টার অক্সিজেন বেঁচে আছে হয়তো এটাই শেষ ডাইরি লেখা

     সুরেশকে বেশিক্ষণ আটকানো গেল না শুভমের হাতটা টেনে ফেলে দিয়ে পাগলের মতো খোঁড়াতে খোঁড়াতে চিৎকার করল, “আমি এখানে! আমি এখানে! আমাকে মুক্তি দাও!”

     প্রচন্ড স্নায়বিক চাপের মধ্যেও শুভমের মতিভ্রম হয়নি পরিস্হিতির আভাস পেয়ে সুরেশকে ফেলে সে উল্টোদিকে রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ানো শুরু করল জন্তুদুটি সুরেশের রুগ্ন দেহটি শূন্যে তুলে নিল তারপর দুখণ্ড করে বহুদিনের জমানো খিদে মেটাতে লাগল

     শুভম শীঘ্রই বুঝতে পারল দৌড়ে বেশিক্ষণ ওদের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে না উদভ্রান্তের মত বন্ধ দরজাগুলোকে ঠেলতে লাগল অন্যদিকে জন্তুদুটি শুভমের অস্তিত্ব টের পেয়েছে এক পৈশাচিক ডাক দিয়ে ওরা শুভমের পিছু নিল।

     পাশাপাশি দুটো ঘরের মাঝে সরু গলি আছে একজন মানুষ অনায়াসে ঢুকতে পারে শুভম ওখানেই আশ্রয় নিল আর মাত্র কয়েক মুহূর্তের ব্যবধান অবধারিত মৃত্যু দুর্বার গতিতে এগিয়ে আসছে

২৯.১১.২০৪৬

সময় ১৪:১৫

     প্রত্যেকটি ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া আছে যন্ত্রটা সৃষ্টি করেই ধ্বংস করে ফেলা উচিত ছিল অন্তহীন সম্ভাবনার রূপ যে এত ভয়ঙ্কর হতে পারে কল্পনা করতে পারিনি আমার স্মৃতি গুলো ক্রমশ লোপ পাচ্ছে দুটো টাইম লাইনের স্মৃতিগুলো একে অন্যের ওপর ওভারল্যাপ করার দরুন কোনটাই মনে থাকছে না

     যখন সাদা পাহাড়গুলোর কাছে পৌঁছলাম, সূর্য মধ্যগগণে বিরাজমান আমার যন্ত্রের অসংখ্য প্রতিলিপি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে মরুভূমির বালির ওপর শুধু আমি একা নই সমান্তরাল বিশ্বের বহু আমিনিজ নিজ বানানো যন্ত্রের দ্বারা কোনো না কোনো সময়ে হাজির হয়েছি এই পৃথিবীতে তারপর যোগ্যতমের উদবর্তন যারা সবল ছিল তারা এই পরিবেশে বিকশিত হয়েছে খিদের জ্বালায় একে অন্যকে ভক্ষণ করেছে পরিণত হয়েছে মানুষ বাদুড়ে আর ঐ সাদা পাহাড়গুলো ওগুলো মৃতদের হাড়ের স্তূপ

     এই বিবর্তনের প্রক্রিয়া অনন্তকাল ধরে চলবে এ হতে দেওয়া যায় না এর পরিসমাপ্তি ঘটাতেই হবে হয়তো নিষ্ঠুর, নির্মম কিন্তু এর একটাই সমাধান আমার সমস্ত সমান্তরাল সত্তাগুলোকে বন্দি রাখতে হবে

     বালির মধ্য থেকে একখানা যন্ত্র তুলে নিতে বেশ বেগ পেতে হল একদল মানুষ বাদুড় মৌমাছির ঝাঁকের মত আমাকে লক্ষ করে ধেয়ে আসছে এক মুহূর্ত দেরি না করে যন্ত্র চালু করলাম নীলচেবেগুনি বর্ণের কুয়াশা আবার ঘিরে ফেলল আমাকে

Tags: কল্পবিজ্ঞান গল্প, কল্পবিজ্ঞানের গল্প, দ্বিতীয় বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, পরাগ ভুঁইয়া, পূজাবার্ষিকী, রূপক ঘোষ, সমান্তরাল

2 thoughts on “সমান্তরাল

  • October 20, 2017 at 3:11 am
    Permalink

    অনেক দিন পর এত ভালো, এবং মগজের পক্ষে এত পুষ্টিকর কোনো গল্প পড়লাম। দারুণ লাগল। আরো লিখুন।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!