হামিন অস্ত-উ-হামিন অস্ত

  • লেখক: সমীক্ষণ সেনগুপ্ত
  • শিল্পী: অঙ্কিতা

চকচকে জিনিসটাকে প্রথম দেখতে পেয়েছিল আলেহান।

     ফ্যাক্টরির পেছনের মাঠটায় যেখানটা থেকে বড় উঁচু ঢিপিটা শুরু হচ্ছে, তার ঠিক সামনেটায় পড়েছিল জিনিসটা।

     দূর থেকে দেখতে পেয়ে আলেহান আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় সেটার দিকে, হাতে ধরা ডিভাইসটাকে বন্ধ করে দিয়ে। “পটার” গেমটা খেলতে খেলতেই সে এতোদূর চলে এসেছে, নাহলে মামি তাদের ফ্ল্যাট থেকে তাকে একেবারেই বেরোতে দেয় না। গেমটার জি পি এস লোকেশন এই জায়গাটাতেই দেখাচ্ছিল। গেমের হ্যারি পটারের জন্য এখানেই নাকি গ্রিফিনডোরের সোর্ডটা অপেক্ষা করে আছে বলে…

     মামি এই গেমটা খেলতে বারণ করে তাকে, বলে ভালো না। কিন্তু সেটা তো তাকে খেলতে খেলতে হাঁটতে হয় হয় বলে। মামি নিজে যে একই রকম গেম “পোকেমন” খেলে??

     “সেই টুয়েন্টি-ফার্স্ট সেঞ্চুরির গেম, এখনো খেলে চলেছে…” আলেহান ভাবে।

     যাই হোক, হাঁটতে হাঁটতে জিনিসটার কাছে পৌঁছে গেছে আলেহান। একটা গোল চাকতি মত জিনিস, ট্রান্সপারেন্ট ঢাকনা-ওলা বাক্সে রাখা, মাটিতে ঢুকে আছে অর্ধেকটা, সূর্যের আলো পড়ে চক চক করছে তাতে!

     ট্রান্সপারেন্ট বাক্সটা খুলে হাতে নিয়ে জিনিসটা নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলো আলেহান। দেখল চাকতিটার ঠিক মাঝে বেশ একটা সুন্দর আঙুল-ঢুকে-যাওয়া ফুটোও রয়েছে, আঙুল ঢুকিয়ে চাকতিটা ধরা যায় সেখানে, আর সূর্যের আলো পড়ে যেন অনেকগুলো রঙ খেলছে চাকতিটার উপরে।

 

(২)

চাকতিটা বেশ পছন্দ হয়ে গেল আলেহানের।

     আজকেই তার বেস্ট ফ্রেন্ড নিও আসবে, স্টেটস থেকে। ওরা দুজনেই মডার্ন ওয়ার্ল্ড স্কুলের ছাত্র। স্কুলের হেড-কোয়ার্টার্স আছে জেনেভায়, ওখান থেকেই টিচারর্সরা গোটা পৃথিবীর স্টুডেন্টসদের ক্লাস নেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে, ইন্ডিয়া থেকে আলেহানের মতো এক লাখ ছাত্র একসঙ্গে ক্লাস করে। স্টেটস থেকে যেমন নিও-র মতো লাখ দুয়েক। গ্লোবাল স্কুলগুলোর মধ্যে মডার্ন ওয়ার্ল্ড স্কুলই সেরা।

     তাদের সিলেবাসে ম্যাথস, লজিক, কমিউনিকেশনের মতো সাতটা সাজেক্টস আছে, আর তাদের পড়ানো হয় অনেকটাই গেমসের মাধ্যমে!

     যেমন এই ক্লাসের ম্যাথসের সিলেবাসে দুটো গেমস আছে, যেখানে একটা লেভেল থেকে আরেকটায় যেতে গেলে কয়েকটা প্রবলেম সলভ করতে হয়। এরকম অনেকগুলো লেভেল আছে। যারা শেষ অব্দি যেতে পারবে, তারা-ই উঠবে নেক্সট ক্লাসে…

     আসলে, সত্যি কথা বলতে কি, খুব ইন্টেলিজেন্ট কিছু মানুষ ছাড়া আজকাল কেউ অডিও-ভিসুয়াল মিডিয়াম থেকেও কিছু শিখতে পারে না, রিডিং মিডিয়াম তো গত একশ বছরে প্রায় কেউ চোখেই দেখে নি। সহজ থেকে সহজতর মিডিয়ামে পড়তে পড়তে মানুষের এখন এই অবস্থা, এখন গেম ছাড়া মানুষ কিছু বোঝে না।

     আলেহান অবশ্য শুনেছে যারা এই গেমগুলো বানায়, তারা নাকি পৃথিবীর সব চেয়ে ইনটেলিজেন্ট মানুষ ! কিন্তু তারা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকে, বড় বড় কর্পোরেশনগুলো তাদের লুকিয়ে রাখে!!!

     জিনিসটা হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে আলেহান বুঝতে পারে চাকতিটার দুটো পিঠ একরকম না, উল্টো পিঠটা খরখরে, অনেক কিছু যেন আঁকা বা লেখা রয়েছে সেখানে। সে চোখ ছোট করে, অনেক বুঝতে চেষ্টা করলো কি লেখা আছে, কিন্তু পারলো না। যেন দুটো লোকের ছবি, একজন হাত নাড়াচ্ছে, আরেকজন কি একটা বাজাচ্ছে… নাহ, আর পারলো না আলেহান।

 

(৩)

যাইহোক, আজকে নিও-কে জিনিসটা দেখাবে এই আনন্দে যেই না সে ফ্ল্যাটের দিকে পা বাড়িয়েছে, এমন সময়ে, হঠাৎ সে যেন শুনতে পেল সামনের ঢিবিটার থেকে একটা আওয়াজ আসছে!!

     মনের ভুল নাকি? নাহ, আওয়াজটা ঠিকই আসছে… যেন ঠিক আওয়াজ না, যেন হাওয়ার মধ্যে ফিস্ ফিসিয়ে কেউ কথা বলছে…

     আলেহানের দারুণ কৌতূহল হোল। “পটার” গেমটায় সে দেখেছে, হ্যারি পটার ছেলেটা এরকম ফিস ফিস কথা শুনতে পেত। তাহলে সেও কি হ্যারি পটারের মতো…

     আস্তে আস্তে আলেহান আরও এগিয়ে যায় ঢিবিটার কাছে… ঢিবিটা বেশ বড়, আলেহানদের ফ্ল্যাটের তিনটে স্টোরিজের সমান তো হবেই। সে যত কাছে এগোয়, তত আওয়াজটা যেন স্পষ্ট হয়।

     এবার আলেহান বুঝতে পারে… এটা তো কোনো আওয়াজ না, এটা মিউজিক!!

     টুং-টাং করে সুন্দর একটা শব্দ হচ্ছে, সঙ্গে আরও অজানা কিসব আওয়াজ, আলেহানের শুনতে খুব ভালো লাগে।

     সে অনেক মিউজিক শুনেছে… জারভিস, হ্যাল, ডিটো, ম্যকনামারার তৈরি মিউজিক। কিন্তু ওগুলো কোনোটাই ঠিক এটার মতো না… এটা যেন আরও মিষ্টি, আরও সুন্দর… আরও… ম্যাজিকাল! আলেহান যেন আবেশে জড়িয়ে যায়… মন্ত্রমুগ্ধর মতো এগিয়ে যায় সে ঢিপিটার দিকে।

     যেতে যেতে ভাবে “এটা নিশ্চয়ই জারভিস ৯.০ থেকেও উন্নতমানের রোবটের তৈরি মিউজিক… নাহলে এতো ভালো…”

     হঠাৎ থমকে যায় আলেহান!

     দেখে ঢিবির সামনেটায় একটা দরজা!

     এবং মিউজিকটা চেঞ্জ হয়ে গেছে! মিউজিকের সঙ্গে এখন কারা আবার কথা বলছে! মিউজিকের মতো করেই… কিন্তু কি বলছে বোঝা যাচ্ছে না… গলার আওয়াজ শুনে মনে হচ্ছে ঢিবিটার মধ্যে যেন অনেকগুলো লোক আছে!

     আলেহান এবার ভয় পেল! একবার ভাবল পালিয়ে যাবে… মামির কাছে সে শুনেছে অনেক দিন আগে হিটলার বলে একটা মনস্টার নাকি এরকম ঢিবির মধ্যে মানুষদের ঢুকিয়ে মেরে ফেলত! সেই হিটলার এখানে বাসা বাঁধেনি তো?

     কিন্তু তা কি করে হয়? সে তো অনেকদিন আগেকার কথা, হিটলার এতদিন বেঁচে থাকতে পারে নাকি?

     ইতিমধ্যে কিন্তু মিউজিকটা সুরের মায়াজাল বিস্তার করতেই থাকছে। আলেহান অনেক কষ্ট করে শুনে কিছু কথা যেন বুঝতেও পারে, ইংলিশ-ই তো মনে হচ্ছে। কিন্তু কেমন অন্যরকম…

     নাহ, এতো ভালো মিউজিক কোনো মনস্টারের হতে পারে না… এটা নিশ্চয়ই কোনো উন্নত রোবটের।

     তাই সাতপাঁচ ভেবে সে ঠিক করল, ঢিবির মধ্যে ঢুকতেই হবে। নাহলে কখনই ভেতরের রহস্যটা জানা যাবে না। আর তাছাড়া তার হাতের ডিভাইসটা তো রয়েছেই, কিছু সমস্যা হলে সেখান থেকে মামিকে সিগনাল পাঠানো যায়ই…

     আলেহান এগিয়ে যায় দরজার দিকে। ঢোকবার সময়ে সে দেখে দরজার কিছুটা ওপরে একটা বড় সাইনবোর্ডে “Mu___ W___d”লেখা। আরও কয়েকটা অক্ষর লেখা ছিল, কিন্তু সেগুলো ভেঙ্গে পড়ে গেছে…

     “তাহলে এই ঢিবিটা আসলে একটা… বিল্ডিং…” আলেহান অবাক হয়ে ভাবে, “তাই এটার একটা দরজা আছে…”

     দরজাটা জোরে ধাক্কা দিতেই খুলে গেল। খুলতেই আলেহানের নাকে একটা ভিজে গুমোট বোটকা গন্ধ ঝাপটা মারলো। এবং সেই সঙ্গেই মিউজিকের ভল্যুমটা যেন দশগুণ বেড়ে গেল… যেন কোনো বিশাল অডিটোরিয়ামে কোনো জারভিস ৯.০ বা শঙ্কর ১১.৪ পারফর্ম করছে!

 

(৪)

আলো থেকে ঢুকেই চোখে একেবারে অন্ধকার দেখে আলেহান… কিছুক্ষণ পর চোখ সেট হলে, দেখে একটা প্রকাণ্ড বড় ঘরের মধ্যে সে দাঁড়িয়ে রয়েছে!

     তার চারিপাশে শপিং মলের মতো ভর্তি র‍্যাক। আর র‍্যাকে ভর্তি গোল চাকতির বাক্স, তার হাতে ধরা জিনিসটার মতোই!

     “তার মানে এটা একটা শপিং মল… গোল চাকতির শপিং মল…” আলেহান ভাবে…”, কিন্তু জিনিসগুলো কি?”

     আলেহান আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় র‍্যাকগুলোর মধ্যের লেন দিয়ে… সে দেখে চাকতিগুলোর কৌটোয় খুব ধুলো জমেছে, কিন্তু ভেতরের চাকতিগুলো বোধহয় অক্ষত রয়েছে, তার হাতেরটার মতো। ঢাকনাগুলোর উপর নানা রকমের ছবি – কোনোটায় একটা রোগা দেখতে লোক ডান্সিং পোজে দাঁড়িয়ে রয়েছে, কোনোটায় তিন-চারটে লোকের ছবি, কোনোটায় কিছু ছবি নেই, শুধু লেখা… আলেহান দেখতে দেখতে এগিয়ে যায়…

     ইতিমধ্যে মিউজিকটায় আবার লোকের কথা থেমে গেছে, শুরুর দিকে যে টুং-টাং মিষ্টি আওয়াজটা হচ্ছিল, সেটাই যেন আবার ফিরে এসেছে আরও মিষ্টি হয়ে…

     আলেহান অবাক হয়ে চারপাশ দেখতে থাকে, আওয়াজটা আসছে ঘরের শেষে রাখা একটা বড় বাক্সের মতো জিনিসের থেকে। আলেহান ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় সেটার দিকে, ধাপে ধাপে মিউজিকটাও বাড়তে থাকে, দারুণ লাগে তার… বক্সের সামনে পৌঁছে দেখে সেটার উপর কাঁচের গায়ে কিছু লেখা ফুটে আছে।

     আলেহানকে কোনোদিন কোনো লেখা পড়তে হয়নি কষ্ট করে… তাদের সিলেবাসের গেমসগুলোয় মিনিমাম লেখা থাকে, মুলত সাইন দিয়েই কাজ হয়। কিন্তু আলেহানের কেন জানি না, মনে হোল বক্সের এই লেখাটা পড়া দরকার!

     অনেক চেষ্টা করে সে পড়ল – “E A G L E S” আর তার তলায় লেখা – “HELL FREEZES OVER” – R E P E A T

     আলেহান কিছুই বুঝল না, কিন্তু অক্ষরগুলো চিনতে পেরে তার অদ্ভুত আনন্দ হোল! আজকে বাড়ি গিয়ে তার মামিকে সব ঘটনা বলবে… বলবে সে রাইটিং পড়তে পেরেছে!

      এমন সময়ে হঠাৎ সে দেখল বক্সটার সামনেই টুলের উপর একটা ঢাকনা পড়ে রয়েছে, এতক্ষণ সে যেরকম গোল চাকতিগুলোর ঢাকনা দেখছিল, ঠিক সেরকম ! কিন্তু কি আশ্চর্য, ঢাকনা খুলে দেখে ভেতরে চাকতিটা নেই! এটা তো খালি ঢাকনা! তাহলে?

     আলেহান কিছুক্ষণ হাঁ করে তাকিয়ে রইল বক্সটার দিকে। বক্সটার মিউজিক প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, ঠিক যেই না শেষ হোল, ওমনি মনে হোল এক ঘর মানুষ যেন উল্লাসে ফেটে পড়ল!

     খুব চমকে গেছিল আলেহান, কিন্তু হঠাৎই তার কাছে যেন সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেল!

     এই মিউজিকটা কোনো রোবট বাজাচ্ছে না, মিউজিকটা আসছে এই বক্স থেকে। আর এই ঢাকনাটা ফাঁকা, মানে এটার চাকতিটা নিশ্চয়ই বক্সের মধ্যে কোথাও ঢোকানো! এই চাকতিটার নামই বোধয় ওই “E A G L E S” না কি, যেটা ও পড়লো এতো কষ্ট করে…

     “আচ্ছা, তার মানে চাকতিগুলোয় মিউজিক হয়…” আলেহান মনে মনে বলল…” কিন্তু কে বানাল এই মিউজিকগুলো? মামি তো বলেছিল পৃথিবীর সব রোবটের সব মিউজিক নাকি “টেগোর” বলে একজন ভগবান বানিয়ে দিয়ে গেছেন অনেকদিন আগে… তাহলে?” টেগোরের ছবি সে দেখেছে, অনেক সাদা দাড়ি-ওলা, শান্ত, গম্ভীর মানুষ… দেখলে মনের ভেতরটাও কেমন শান্ত হয়ে যায়…

     কিন্তু এই ঢাকনায় যে ছবিটা আছে, সেটা কিন্তু টেগোরের মতো নয়। এখানে পাঁচটা মানুষ বিভিন্নভাবে বসে, দাঁড়িয়ে রয়েছে… একজন খুব মিষ্টি করে হাসছে, আরেকজনের অনেক লম্বা চুল…

     “তাহলে এরাই কি এই মিউজিকটা…”, আলেহান ধন্ধে পড়ে যায়…” রোবট ছাড়া কেউ মিউজিক বানাতে পারে নাকি? টেগোর তো গড, তাই তিনি মিউজিক বানাতে পাড়তেন, সঙস, পোয়েমসও লিখতে পারতেন। কিন্তু তাই বলে এরা? এরাও কি গড? মামিকে বাড়ি গিয়ে জিজ্ঞাসা করতে হবে…”

 

(৫)

আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে সামনের দেওয়ালটার দিকে আলেহানের চোখ চলে যায়… সেখানে দেওয়ালে আঁকা তিনটে বড় বড় ছবি!

     একটায় চারটে সাদা লোক হেঁটে রোড ক্রস করছে, আর একটায় গগলস পরা কালো চুলের একটা লোক পিয়ানোর মতো কি একটা বাজাচ্ছে আর সামনের মাইক্রোফোনটায় কিছু একটা বলছে… লোকটাকে দেখে ইন্ডিয়ান বলে মনে হোল আলেহানের, কিন্তু কস্মিনকালেও সে এই দুটো ছবির একটাকেও দেখেনি কখনও।

     সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং মাঝের সবচেয়ে বড় ছবিটা…সাদা কালো ছাড়া অন্য কোনো রঙ নেই, কিন্তু ছবিটায় একজন হ্যান্ডসাম মানুষ আলগোছে হাতটা মাথার পেছনে রেখে বসে আছে, লোকটার চোখদুটো খুব ধীর,শান্ত, কিন্ত দারুণ ইনটেলিজেন্ট।

     আলেহানের খুব চেনা লাগে ছবিটাকে… কোথায় যেন দেখেছে…

     ভাবতেই হঠাৎ তার মনে পড়ে যায়!

     “আরে, এটা তো রে-এর ছবি!” অস্ফুটে বলে ওঠে সে।

     তার মামির ঘরে আলেহান এই ছবিটা দেখেছে। মামি বলেছিল রে ইস দা গড অফ পিকচারস, ছবির দেবতা “রে”… পৃথিবীর সমস্ত ছবি নাকি ওঁর বানানো – সাদা, কালো, লাল, নীল, রঙিন, স্টিল ছবি, মুভিং ছবি… সব। এমনকি গাছের সবুজ রঙ, আকাশের নীল রঙ, সূর্যের লাল রঙ – সবই ওনার দেওয়া!

     তাই তো পাপা যখন ক্যামেরা নিয়ে ফোটোশুট করতে যায়, তখন রে-এর ছবিতে ওয়ারশিপ করে যায়। আর প্রতি সেকেন্ড মে খুব ধুম-ধাম করে রে-এর বার্থডে সেলেব্রেশন করা হয়।

     নিও-রা অবশ্য “রে” গডকে মানে না। তাদের ছবির দেবতার নাম কুব্রিক। অবশ্য তাতে কিছু যায় আসে না, কারণ কুব্রিক আর রে একে অপরের ফ্রেন্ড!

     আলেহান মামিকে জিজ্ঞাসা করেছিল ‘রে’ কি মানুষ ছিলেন নাকি এলিয়েন? মনস্টার হিটলারের মতোই ‘রে’ কি একসময়ে পৃথিবীতে থাকতেন?

     মামি কোনও স্যাটিসফাইং উত্তর দিতে পারেনি আলেহানকে। বলেছিল, “রে গড ছিলেন, সোনা… উনি কি আমাদের মতো মানুষ ছিলেন নাকি? নাহলে এতো কিছু কাজ একসঙ্গে কেউ করতে পারে? পি. মিটারকে বানিয়েছেন তিনি, যিনি ইন্ডিয়ার সবচেয়ে বড় ডিটেকটিভ ছিলেন, টি. শঙ্কুকে বানিয়েছিলেন তিনি, যিনি কতো বড় সায়েন্টিস্ট! তারপর পৃথিবীর সমস্ত পিকচারস তিনি বানিয়েছেন… কোনো মানুষ এতকিছু করতে পারে?”

     “কিন্তু এখানে যে রে-এর ছবি? তাহলে এটা কি রে-এর টেম্পল???” আলেহান ভাবে। বাড়ি গিয়ে সে মামি-পাপা দুজনকেই নিয়ে আসবে এই জায়গাটা দেখাতে।

     “কিন্তু এই টেম্পলটা কারুর চোখে পড়েনি কেন এতদিন?” আলেহান অবাক হয়ে ভাবে… “এদিকের ফ্যাক্টরিটা অনেকদিন হোল বন্ধ তো, তাই হয়তো এদিকে কেউ আসেনা… আর আসলে সবাই খুব বিজি তাদের জবস নিয়ে, এইসব পুরনো টেম্পল নিয়ে কারুর ইন্টারেস্ট নেই।“

     আলেহান একটা চেয়ারের উপর বসে পড়ে, ভাবে, “…হয়তো, এমনও হতে পারে, এটা কোনো টেম্পলও নয়, এটা একটা বিল্ডিং যেটার নাম “Mu” দিয়ে শুরু…কি হতে পারে? মিউজিক??? আর শেষ ওয়ারড-টা? কি হতে পারে? ” আলেহানের মনে হয় সে খুঁজে বার করবেই… দরকার হলে এখানকার সব কটা চাকতি সে বক্সের মধ্যে ঢুকিয়ে ঢুকিয়ে দেখবে, সেগুলোয় কি আছে…

 

(৬)

তার হাতের চাকতিটার দিকে নজর গেলো, হাতটা ঘেমে গেছে গরমে, কিন্ত এবার চাকতির ছবিগুলো সে আরও স্পষ্ট বুঝতে পারে। দুটো লোক – একজন লম্বা, সে হাত তুলে নিশ্চয়ই সঙস গাইছে… আর আরেকজন বেঁটে, সে দুদিকে হাত দিয়ে কি একটা বাজাচ্ছে, ড্রামের মতো… আর… আর নিচে ওটা কি? ছোট্ট করে “রে”-এর ছবি না?

     আলেহান খুঁটিয়ে দেখে, “ওহ গড ! তার মানে এটা ‘রে’-এর তৈরি কিছু একটা!” আলেহানের শিহরন লাগে।

     ইস, লেখাটা অন্য ল্যাঙ্গুয়েজে, বোধহয় বেঙ্গলিতে, তাই আলেহান অনেক চেষ্টা করেও পড়তে পারে না। সে এখনও বেঙ্গলি শেখেই নি…

     এমন সময়ে, হঠাৎ হাতের ডিভাইসটা ভাইব্রেট করে উঠলো ! মামির ফোন !!!

     “আলেহান, হোয়ার আর ইউ? এক্ষুনি বাড়ি এসো!”

     আলেহান ভয় পেয়ে যায়, মামি রেগে গেছে! সে চেয়ার থেকে উঠে তাড়াতাড়ি পেছন ঝেড়ে নেয়, চাকতি-ভরা র‍্যাকগুলো পেছনে ফেলে বেরোয় ‘রে টেম্পল’ থেকে। তার হাতে অবশ্য সেই চাকতিটা ধরা রয়েছে।

     সে বাড়ি গিয়ে মামিকে বলবে আজকের কথা, নিয়ে আসবে এই জায়গাটা দেখাতে।

     “তাহলে মামি নিশ্চয়ই কম রাগ করবে?? বিশ্বাস করবে তার কথা??” ছুটে বেরোতে বেরোতে সে ভাবে।

     আর ঠিক তখনই, শতাব্দি-প্রাচীন বিস্মৃত-প্রায় “Music World“-এর বক্সে-উফারে চলতে থাকবে রিপিট মোডে চালানো “Eagles”-এর গান “The Last Resort”.

“…You can leave it all behind and sail to Lahaina

Just like the missionaries did, so many years ago

They even brought a neon sign ‘Jesus is Coming’,

Brought the white man’s burden down, brought the white man’s reign

 

Who will provide the grand design, what is yours and what is mine?

‘Cause there is no more new frontier, we have got to make it here

We satisfy our endless needs and justify our bloody deeds

In the name of destiny and in the name of God

 

And you can see them there on Sunday morning

Stand up and sing about what it’s like up there

They called it paradise, I don’t know why

You call some place paradise, kiss it goodbye…”

Tags: অঙ্কিতা, কল্পবিজ্ঞান গল্প, গল্প, চতুর্থ বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, পূজাবার্ষিকী, সমীক্ষণ সেনগুপ্ত

2 thoughts on “হামিন অস্ত-উ-হামিন অস্ত

  • October 5, 2019 at 9:50 pm
    Permalink

    বড়ো প্রিয় গান। ডিস্টোপিয়ান দুনিয়ার বুকেও তাকে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত করে তোলার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

    Reply
    • October 6, 2019 at 6:35 am
      Permalink

      Thank you Riju da ☺

      Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!