‘আদিম মানুষ’ ও ‘ভয়ানক সার্ভে’
লেখক: অর্ণব ভট্টাচার্য
শিল্পী: টিম কল্পবিশ্ব
আদিম মানুষ
এক যে ছিল আদিম মানুষ, সালটা গেছি ভুলে,
ইয়াব্বড়ো গোঁফ, দাড়ি আর জট-পড়া তার চুলে,
গুহার থেকে বেরিয়ে সেদিন পাথর হাতে হেঁটে
খুঁজছিল সে শিকার কোথায়, খিদের জ্বালা পেটে।
হঠাৎ পায়ে ঠেকল কী তার? মুখটা করে নীচু,
দেখল পড়ে রংচঙে খুব, গোল্লামতো কিছু।
খাবার ভেবে যে মুখে দেয়, বাপ রে, সে কী শক্ত!
রাগল ভীষণ আদিম মানুষ, গরম হল রক্ত।
মারল হাতের পাথর সোজা, মারল তাতে কিলও
জানল না হায় গোল্লাটাতে কোন সম্পদ ছিল।
সেই যে, সেবার বিশ্ব জুড়ে, তৃতীয়বারের মতো
দেশগুলো সব লড়ল এবং মরল মানুষ যত,
সেই সেবারই থাকতে বেঁচে, পালিয়ে কিছু লোকে
ওই গুহাতেই সবাই মিলে সেদিন গিয়ে ঢোকে।
তারপরেতে এই পৃথিবীর যা ছিল সব ডেটা,
কেমন করে মরছে মানুষ এবং এটা-সেটা—
ঢুকিয়ে দিল গোল্লামতো স্টোরেজ-গ্যাজেট মাঝে,
ভাবল, যদি ভবিষ্যতে কারও লাগে কাজে।
তাই তারা সেই গোল্লাটাকে লুকিয়ে দিল আর—
দেখতে দেখতে তিনশো বছর হঠাৎ হল পার।
এসব কথাই লেখা ছিল একটা প্রাচীন খাতায়,
পোকায় কাটা ঝুরঝুরে তার হলুদ রঙের পাতায়।
অবাক করার মতন বিষয়, নয় হে প্রলাপ জ্বরের,
তারিখ তাতে স্পষ্ট ছিল হাজার বছর পরের।
একটা কথা এখন আমার ঢুকছে না তাই ঘটে,
ওই লোকটা সত্যিকারের আদিম মানুষ বটে?
ভয়ানক সার্ভে
সব কাজ রোবটের দ্বারা যদি হবে,
রাজনীতি কেন শুধু বাকি থাকে তবে?
এই ভেবে বিশ্বের সেরা এক মাথা,
লিখে যান বিজ্ঞানে নয়া জয়গাথা।
রোবট এক গড়ে দেন মহাবলশালী
দুনিয়ার মানুষেরা খুব দেয় তালি।
রোবটের নিজস্ব ব্রেন ছিল তাই,
স্রষ্টার হাতে আর কোনো কাজ নাই।
শুধু তিনি বলে দেন রোবটের কানে,
“একটা জায়গা বাছো যে-কোনোখানে
স্থানটির পলিটিক্স স্টাডি করে বোঝো,
কোন পথে নেতা হয়, ভালো করে খোঁজো।”
তারপরে দিন কাটে, মাস হয় পার,
রোবটের কোনো খোঁজ আসে না তো আর।
একদিন বিজ্ঞানী গবেষণাগারে
দেখলেন, রোবটটা বসে আছে, আরে!
দুইপাশে রাখা তার টাকা কাঁড়ি কাঁড়ি!
বিজ্ঞানী রেগে যান, মুখ হয় হাঁড়ি।
তা-ই দেখে রোবটটা বলে বসে সোজা
“আমার দোষ তো নেই, ডেটা যে খোঁজা
দেখি প্রায় সব্বাই দুর্নীতিবাজ,
ভাবলাম রাজনীতি এই বুঝি আজ।
থাকলেই টাকা, যায় ভোটগুলো জেতা,
গুন্ডা ও মস্তান হয়ে যায় নেতা।
তাই আমি আজকাল গিয়ে শুধু তেড়ে
সাধারণ মানুষের টাকা নিই কেড়ে।”
বিজ্ঞানী শুনে কন কেঁদে আর হেঁচে
“সার্ভেতে কোন স্থান নিয়েছিলে বেছে?”
রোবটের উত্তর, শুনে নিন বলি,
অলরেডি বুঝেছেন? বেশ তবে চলি।
Tags: অর্ণব ভট্টাচার্য, দশম বর্ষ প্রথম সংখ্যা
