দুটি SFF বইয়ের পাঠপ্রতিক্রিয়া – ‘অপারেশন ফিনিক্স’ ও ‘সময় কারাগার’
লেখক: অনির্বাণ ঘোষ (দীপ)
শিল্পী: টিম কল্পবিশ্ব
[বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: পাঠপ্রতিক্রিয়া লিখতে গিয়ে আলোচনায় কোনো স্পয়লার থেকে থাকতে পারে। তাই স্পয়লার অ্যালার্ট দিয়ে রাখলাম। যদি স্পয়লার ছাড়া বইপাঠের সুখ নিতে চান, তাহলে এই প্রতিক্রিয়া পড়বেন না।]
📕 বই: অপারেশন ফিনিক্স
✍🏻 লেখক: দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য
🖌️ প্রচ্ছদ: উজ্জ্বল ঘোষ
🖨️ প্রকাশক: অরণ্যমন প্রকাশনী
📄 পৃষ্ঠা: ১৭৬
💰 মুদ্রিত মূল্য: ₹২৭৫/- (সংকলন হার্ড কভার)
🍂 বিষয়বস্তু:
জ্যাকব চাহায়া ব্যানার্জি একজন আশ্চর্য মানুষ। একদিকে তার শিরায় বয় ইহুদি রক্ত, আবার তারই পাশাপাশি, বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ের কলকাতার বাসিন্দা এই তরুণ একেবারেই নিখাদ বাঙালি।
কিন্তু সেইসব জাতি বা ভৌগোলিক অবস্থানের ঊর্ধ্বে তার আসল পরিচয় সে একজন প্রতিভাবান বিজ্ঞানী। নিজের আবিষ্কৃত তত্ত্ব কাজে লাগিয়ে তৈরি সময়যানে চড়ে সে ইতিহাসকে নিজের চোখে দেখবার জন্য ঘুরে বেড়ায় অতীতে। বিভিন্ন অভিযানে গিয়ে মানুষের নৃশংসতা, অত্যাচার, যন্ত্রণা ও যুদ্ধের দৃশ্য দেখে সে তাকে রোধ করবার চেষ্টা করে, কিন্তু তারপর অতীতকে বদলে সময়ের গতিকে নতুন খাতে বইয়ে দেবার ভয়াবহ ফলাফল দেখে ফের সে লড়ে যায় টাইমলাইনকে তার পুরোনো রাস্তায় ফিরিয়ে আনবার জন্য। আর এর ফলে গড়ে ওঠে একের পর এক রোমাঞ্চকর অভিযান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের স্বাধীনতার লড়াই—এই গ্রহের ইতিহাসের এই তিন সন্ধিক্ষণে তার তিনটে রুদ্ধশ্বাস অভিযান এই সংকলনে একত্র করা হল।
🍁 প্রতিক্রিয়া:
দেবজ্যোতি ভট্টাচার্যর কলমে সায়েন্স ফিকশন যাঁরা পড়েছেন, জানেন, কীরকম অসামান্য লেখা হয়! ‘অপারেশন ফিনিক্স’ বইতে রয়েছে দেবজ্যোতি স্যারের লেখা তিনটি নভেলা, জ্যাকব চাহায়া ব্যানার্জির তিনটি অভিযান। বাংলায় স্পেকুলেটিভ ফিকশন লেখায় দেবজ্যোতিবাবু প্রথম সারির সাহিত্যিক। কল্পবিজ্ঞান জঁর-এ ওঁর অবদানের জন্য শ্রীঅদ্রীশ বর্ধনের নামাঙ্কিত ‘আশ্চর্য!’ পুরস্কারে তিনি ভূষিত। ‘অপারেশন ফিনিক্স’ বইতে দেবজ্যোতিবাবু স্পেকুলেটিভ ফিকশনের দুটি ধারার মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন, SFF এবং Alternate History, একদিকে তিনি সময়ভ্রমণ দেখিয়েছেন, সঙ্গে সময়ভ্রমণের প্রভাব হিসেবে দেখিয়েছেন পরিবর্তিত টাইমলাইন এবং এক নতুন ইতিহাস। তিনটি নভেলার সংকলন এই বই, অপারেশন ফিনিক্স, তিন তাসের খেল এবং টেকুমেশ জ্যাকব চাহায়া ব্যানার্জি এবং তার বন্ধু সুরেন্দ্রর তিনটি জমজমাট সময় অভিযান!
📌 অপারেশন ফিনিক্স:
জ্যাকব চাহায়া ব্যানার্জি একজন আধা ইহুদি এবং আধা হিন্দু বাঙালি বিজ্ঞানী। ১৯৪৫-এর সময় সে আবিষ্কার করে একটি বিশেষ যন্ত্র। সময়ভ্রমণের যন্ত্র টি-থ্রি। যাবতীয় পরীক্ষায় সে যন্ত্র উত্তীর্ণ। অপেক্ষা এবার হিউম্যান ট্রায়ালের, জ্যাকব নিজেই নিজেকে দিয়ে সেই পরীক্ষা করতে উদ্যোগী। এদিকে সময়টা উত্তাল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে, নাতসি বাহিনী প্রায় আত্মসমর্পণের দোরগোড়ায়। কিন্তু একবার মরণ কামড় দিয়ে যেতে চায়, অপারেশন ফিনিক্স, পৃথিবীর পাঁচটি জায়গায় পারমাণবিক বিস্ফোরণ! আর সেই সময়ই নাতসি বাহিনীর নজরে আসে চাহায়ার আবিষ্কারের খবর! ব্যাস, তারা হানা দেয় চাহায়ার বাড়িতে। এরপর কী হল, সেই নিয়েই একটি অসামান্য নভেলা ‘অপারেশন ফিনিক্স’।
📌 তিন তাসের খেল:
চাহায়া তার সময়ভ্রমণ যন্ত্রে কিছু আপগ্রেড করে। নতুন নামকরণ করে তিন তাস। সুরেন্দ্রকে সঙ্গে নিয়ে অতীতের কমাগাতামারু ঘটনা দেখতে যাবার পরিকল্পনা করে চাহায়া। কিন্তু ভুল ইনপুটের দরুন তারা পৌঁছে যায় ১৯১৪-র সারাজেভোয়। সেখানে তখন কুখ্যাত ‘ব্ল্যাক হ্যান্ড’-এর পরিকল্পনা চলছে অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্চডিউক ফার্দিনান্দকে হত্যা করার! এই ঘটনার প্রভাবেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। চাহায়া সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দেয়। এর ফলস্বরূপ, এক নতুন ইতিহাসের জন্ম হয়। সেই নতুন ইতিহাস চাহায়াকে কীভাবে প্রভাবিত করে, সেই নিয়েই ‘তিন তাস-এর খেল’ নভেলা।
📌 টেকুমেশ:
১৮১১-র আমেরিকা, প্রফেটস টাউনের কাছে টিপাক্যানোর যুদ্ধ, তৎকালীন আমেরিকান গভর্নর হ্যারিসন এবং শ’আনি প্রজাতির নেতা টেকুমেশ ও টেনসকোয়াতাওয়ার মধ্যে হওয়া যুদ্ধ, যা বর্তমান আমেরিকা তথা আধুনিক সভ্যতার বীজ বপন করেছিল। চাহায়া ও সুরেন্দ্র তিন তাসের দৌলতে পৌঁছে যায় সেই সময়, উদ্দেশ্য এই যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করা। কিন্তু একটু গোলমাল হয়ে যায়, অতীতের সেই ছোটো পরিবর্তন বদলে দেয় গোটা ইতিহাস! ফলস্বরূপ, সেক্রেড টাইমলাইন ব্রাঞ্চ আউট করে তৈরি করে প্রায় ১০টি অলটারনেটিভ টাইমলাইন! সময়ের প্রবাহে যা এক অপরিবর্তনীয় ক্ষত তৈরি করে দেয়! কিন্তু সেক্রেড টাইমলাইনকে বাঁচাতে ‘ইটারনিটি’ টাইমলাইনকে দেখভাল করার সংস্থা হস্তক্ষেপ করে। চাহায়া কি পারবে ইটারনালদের সাহায্যে সেক্রেড টাইমলাইনকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে? এই প্রশ্নের উত্তর দেবে ‘টেকুমেশ’।
সায়েন্স ফিকশন ফ্যান্টাসি এবং অলটারনেট হিস্ট্রির এক দুরন্ত মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন দেবজ্যোতিবাবু তাঁর এই তিন নভেলায়! বৈজ্ঞানিক তথ্যনির্ভর ফিকশনে কাল্পনিক ইতিহাস, দেবজ্যোতি স্যারের চিরাচরিত সুখপাঠ্য লেখায় একেবারে সেরার সেরা কাজ। প্রতিটি লেখা থেকে ইতিহাস ঝালিয়ে নেওয়া গেল যা হোক! লেখার বাঁধন এমন মজবুত, পাঠককে ঘাড় ধরে বইটা শেষ করিয়েই ছাড়বে! এ এমন লেখার টান, যা কোনো পাঠক উপেক্ষা করতে পারবে না। পড়তে শুরু করলে কীভাবে যে সময় কেটে যাবে, বুঝতেই পারা যায় না! ভীষণ সাবলীল এবং সুন্দর করে ব্যাখ্যা করা, টানটান উত্তেজনাপূর্ণ লেখা। ভীষণ ভীষণ সুখপাঠ্য।
🌿 Final Verdict:
আমি দেবজ্যোতি ভট্টাচার্যর লেখার ভীষণ ভক্ত। তবে এই পাঠপ্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। একজন পাঠক হিসেবে খুবই আনন্দিত বোধ করছি। ২০২৩-এ কেনা বই পড়তে পারলাম ২০২৫-এ! তবে পড়ার পরে আপ্লুত হয়ে গেছি। SFF আমার সবচেয়ে প্রিয় জঁর, আবার অলটারনেট হিস্ট্রি এই SFF-এরই সাব-জঁর, তাই আগ্রহটা শুরুতেই মজবুত ছিল আমার। আর আমি যে অযথা আগ্রহী হইনি, ‘অপারেশন ফিনিক্স’ পড়ে শেষ করার পরে তা খুব জোর দিয়েই বলতে পারি। একটি দুর্দান্ত কাজ, অসাধারণ সাহিত্যকর্ম। ‘অপারেশন ফিনিক্স’ আমার তরফ থেকে হাইলি রেকমেন্ডেড। আমি অন্তর থেকে চাই, জ্যাকব চাহায়া ব্যানার্জি আবার ফিরুক নতুন করে অ্যাডভেঞ্চার নিয়ে।
‘অপারেশন ফিনিক্স’ বইটি প্রকাশ করেছে অরণ্যমন প্রকাশনী। বইয়ের গুণগতমান, পৃষ্ঠার মান, ছাপা, বাঁধাই বেশ ভালোই। বেশ মনোযোগ দিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছি বইটি, তবে কোনো মুদ্রণপ্রমাদ আমি অন্তত পাইনি। উজ্জ্বল ঘোষের প্রচ্ছদ এবং অলংকরণ (মৌলিক নয় যদিও), বইটির শোভা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করেছে। তবে একটা অনুযোগ প্রকাশকের প্রতি, ছবিগুলি আরও প্রমিনেন্ট হতে পারত! জানি না, এটা ছাপার দোষে হয়েছে কি না! তবে ছবিগুলো আরও ভালো ছাপা হতে পারত।
📕 বই: সময় কারাগার
✍🏻 লেখক: মিথিল ভট্টাচার্য
🖌️ প্রচ্ছদ: স্বর্ণাভ বেরা
🖨️ প্রকাশক: দ্য ক্যাফে টেবল
📄 পৃষ্ঠা: ১৩৬
💰 মুদ্রিত মূল্য: ₹ ২৫০/- (উপন্যাস পেপারব্যাক)
🍂 বিষয়বস্তু:
কোটি কোটি আলোকবর্ষব্যাপী বিপুল বিস্তীর্ণ মহাকাশ! সেই আদিম বিগ ব্যাং-র মুহূর্ত থেকে আজ অব্দি ১৩৮০ কোটি বছর জুড়ে কীভাবে একটু একটু করে বদলেছে তার ছবি?
সৌরজগতের জন্ম, প্রাণের সৃষ্টি, গ্রহে গ্রহে সংঘাত! বা প্রায় ছয় কোটি বছর ধরে পৃথিবীর বুকে দাপিয়ে-চলা সেই অতিকায় সরীসৃপ, ডাইনোসরদের এক মুহূর্তে মুছে যাওয়া…
হারিয়ে-যাওয়া সময়ের এই সমস্ত দৃশ্য, দুই বিজ্ঞানীর গোপনতম পরীক্ষানিরীক্ষার ফসল হয়ে যদি হঠাৎই জীবন্ত হয়ে ওঠে, মাত্র বারো-তেরো বছরের একটি ছোট্ট ছেলের চোখে? কেমন হবে তার পরিণাম?
প্রকৃতি কি তার গভীরতম রহস্যের সাক্ষী হওয়ার অধিকার আদৌ প্রদান করতে ইচ্ছুক মানবসন্তানদের?
🍁 প্রতিক্রিয়া:
বিজ্ঞান এবং কল্পনার মিশ্রণে তৈরি লেখাকে আমরা সায়েন্স ফিকশন বলে থাকি। কিন্তু তাহলে সায়েন্স ফ্যান্টাসি আসলে কী? কল্পবিজ্ঞানের সঙ্গে এর একটু তফাত আছে বই-কি! ফ্যান্টাসি আসলেই কল্পনা, মানে বিজ্ঞানের ভিত্তি এখানে অনেকটাই কম, লেখক তাঁর কল্পনাকেই মূলত বলতে চান। ফ্যান্টাসি লেখায় তাই অনায়াসে অলৌকিক বা অতিপ্রাকৃত ব্যাপার চলে আসে। আসে ম্যাজিক! তবু ফ্যান্টাসি এবং সায়েন্স ফ্যান্টাসি আলাদা। বিজ্ঞানের কিছুটা অবশ্যই এই ধরনের ফ্যান্টাসিতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় সায়েন্স ফ্যান্টাসির বিষয় বিজ্ঞানের সেইসব বিষয়নির্ভর, যেগুলো নিয়ে বিজ্ঞানীরা চর্চা করছেন, মিস্ট্রি সল্ভ করার চেষ্টা করছেন, অথবা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করছেন!
সময় এবং সৃষ্টির শুরু (বিগ ব্যাং) নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই! অনেক বিজ্ঞানী, গবেষক, পণ্ডিত ব্যক্তি এই রহস্যের সমাধানের চেষ্টা করে চলেছেন। বিজ্ঞান এই উত্তরগুলো দিতে একটু হলেও সক্ষম হয়েছে, কিন্তু সিংহভাগটাই এখনও অজানা! নতুন লেখক মিথিল এই বিষয়টিকেই বেছে নিয়েছেন তাঁর এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু হিসেবে। বিগ ব্যাং এবং হয়তো তার পূর্ববর্তী সময়ে কী ছিল, কীভাবে প্রাণের সৃষ্টি হল, বারবার প্রলয়ের সম্মুখীন হয়েও পৃথিবী কীভাবে নিজেকে আবার গুছিয়ে নিল, প্রাণগুলো কীভাবে এগিয়ে চলেছে এখনও, এমন অনেক অজানা প্রশ্ন, যা কিনা সমগ্র বুদ্ধিমত্তার চরম কৌতূহলের জায়গা—এসব নিয়েই একটি সুগঠিত উপন্যাস এই ‘সময় কারাগার’।
ফ্যান্টাসিধর্মী লেখা হলেও এই উপন্যাসে বিজ্ঞানের ভিত্তি রয়েছে। অনেক বিষয়ের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া আছে এই উপন্যাসে। কিন্তু যেহেতু এই লেখার বেশির ভাগটাই লেখকের (হয়তো আপনার, আমারও) কল্পনা, তাই এই লেখা ফিকশন হয়ে ওঠেনি। থার্ড পার্সন ন্যারেটিভে লেখা উপন্যাস, দুটো টাইমলাইন আছে, বর্তমান এবং অতীত, যদিও ক্লাইম্যাক্সে টাইমলাইন দুটি মিলেছে।
ড. অচিন্ত্য মুখার্জি কলকাতার একজন নামকরা সাইকিয়াট্রিস্ট। ড. অনিন্দিতা মৈত্র ড. মুখার্জির ইনটার্ন কাম সহকারী। এক সন্ধ্যায় আপাত ফাঁকা চেম্বারে হঠাৎ এক যুবকের আবির্ভাব ঘটে, দৃশ্যতই সে উদ্ভ্রান্ত, জরুরি অবস্থায় সে ড. মুখার্জির সঙ্গে দেখা করতে চায়! ড. মুখার্জি সেই যুবককে ডেকে নেন। যুবকটি নিজের পরিচয় দেয় আর্য ব্যানার্জি বলে। আর্য ড. মুখার্জিকে বিগত ছয় মাস ধরে তার সঙ্গে ঘটে-চলা এক অদ্ভুত ঘটনার কথা বলে, যা শুনে হ্যালুসিনেশন বলেই মনে হবে। ড. মুখার্জি সবটা মন দিয়ে শোনেন এবং আর্যকে কিছু উপদেশ দেন। ড. মুখার্জি এমন একজন সাইকিয়াট্রিস্ট, যিনি পেশেন্টের স্বার্থে গতানুগতিক পদ্ধতির বাইরেও যেতে পিছপা হন না! আর্যর ক্ষেত্রেও তিনি হিপ্নোটিজ়্মের প্রয়োগ করেন এবং আর্যকে মূল জীবনস্রোতে ফিরিয়ে আনেন।
এভাবে শেষ হলে হয়তো উপন্যাসটা তৈরিই হত না! কিন্তু এর পরেই আসল কাহিনি শুরু। বর্তমান থেকে অতীতে যাওয়া, দুজন বিজ্ঞানী এবং একটি বছর দশেকের বালক। একটি এক্সপেরিমেন্ট, বিগ ব্যাং এবং হয়তো তার আগের সময়ে কী ছিল, সেটা জানার প্রচেষ্টা, টাইম ট্রাভেল নয়, মাইন্ড ট্রাভেল করে সেই রহস্যের উন্মোচনের চেষ্টা।
গোটা উপন্যাসটি একটি রোলার কোস্টার রাইড। একবার পড়তে শুরু করলে শেষ না করে ছাড়ার উপায় নেই! ওই মাইন্ড ট্রাভেলের বর্ণনাটা, উফফফ, গায়ে কাঁটা দেবার মতন সুন্দর। জানি পুরোটাই লেখকের বিশুদ্ধ কল্পনা, তবু যেন ওই কল্পনাকেই সত্যি বলে মেনে নিতে ইচ্ছে করে! লেখক এখানেই সার্থক, ফ্যান্টাসি লেখাকে যখন পাঠক সত্যি বলে মানতে চায়।
উপন্যাসের ক্লাইম্যাক্সটি এককথায় ফ্যান্টাস্টিক। আলোচনায় যাচ্ছি না, না হলে ম্যাসিভ স্পয়লার হয়ে যাবে! কিন্তু যেটা আকর্ষণীয় মনে হয়েছে, সেটা হল কী অদ্ভুত সমাপতন! গোটা উপন্যাসটি যেন একটি লুপ।
আমি ভীষণ থ্রিলড, শকড এই উপন্যাসটি পড়ে, অবশ্যই in a positive way। মিথিলের লেখার ধরন আমার খুবই পছন্দ হয়েছে। অত্যন্ত সাবলীলভাবে লেখা, জটিল কিছু বিষয়ের সুন্দর ব্যাখ্যাও জুড়ে দিয়েছেন, যাতে পাঠকের পড়তে অসুবিধে না হয়! চমৎকার উপন্যাস, বারবার পড়ার মতন উপন্যাস।
🌿 Final Verdict:
মিথিল ভট্টাচার্য একজন নতুন লেখক। ‘সময় কারাগার’ আমার পড়া মিথিলবাবুর প্রথম সাহিত্যকর্ম। উপন্যাসটি আমার খুবই ভালো লেগেছে। শুধু তা-ই নয়, ‘সময় কারাগার’ পড়ার পরে আমার আগ্রহ জন্মেছে মিথিলবাবুর অন্যান্য লেখা পড়ার জন্য। বলাই বাহুল্য, ‘সময় কারাগার’-এ এমন কিছু পেয়েছি, যা এই আগ্রহ তৈরিতে কাজ করেছে। ভালো লেখাকে আমি সব সময় প্রাধান্য দিয়ে থাকি। যদিও এটা মানি প্রতিটি মানুষের পড়ার রুচি আলাদা। তবু একজন পাঠক হিসেবে বলতে পারি, ‘সময় কারাগার’ যে-কোনো পাঠকেরই ভালো লাগবে। সায়েন্স ফ্যান্টাসি হলেও অযথা বিজ্ঞানের কচকচি নেই, নির্মেদ লেখা, তাই আগ্রহ বাড়িয়ে দেয় পড়ার সময়। আমার তরফ থেকে হাইলি রেকমেন্ডেড।
তবে একটি কথা লেখকের প্রতি না বলে পারছি না। যখন রুকু (ওই দশ বছরের বালকটি উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র)-র সম্পর্কে লেখা হয়েছে, সেখানে একটি ব্যাকস্টোরির কথা বলা হয়েছে, একটি অন্য গল্পের নাম দিয়েই বলা হয়েছে ওই গল্পটি দ্রষ্টব্য। এখানে আমার বক্তব্য হল, লেখক বা প্রকাশক কি ধরে নিয়েছেন, সকল পাঠক ওই বইটিও পড়ে থাকবেন, আমার মতন যাঁরা প্রথমবার পড়ছেন, তাঁরা জানবেন কী করে, সেই গল্পে কী আছে? জানতে গেলে ওই বইটি কিনতে হবে? এই বিষয়টি আমার ভালো লাগেনি, একটি ছোটো অধ্যায়ে ওই ব্যাকস্টোরিটুকু এই উপন্যাসের অন্তর্গত করাই যেত! লেখককে এই জায়গাটি ভেবে দেখার অনুরোধ রাখলাম।
‘সময় কারাগার’ বইটি প্রকাশ করেছে দ্য ক্যাফে টেবল। বইয়ের গুণগতমান, পৃষ্ঠার মান, ছাপা, বাঁধাই পেপারব্যাক বই হিসেবে এককথায় দারুণ। বইতে কোনো মুদ্রণপ্রমাদ পাইনি।
Tags: অনির্বাণ ঘোষ (দীপ), দশম বর্ষ প্রথম সংখ্যা
