পোকা
লেখক: রাজকুমার রায়চৌধুরী
শিল্পী: দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য্য
পোকা
লেখক – রাজকুমার রায়চৌধুরী
অলংকরণ – দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য্য
১
কমপিউটার টেবিলের তলা পরিষ্কার করতে গিয়ে অংশুমান বাবু পোকাটা প্রথম লক্ষ করেন৷ বিটল্ জাতীয় পোকা৷ অংশুমান প্রথমে ভেবেছিলেন লেডিবার্ড জাতীয় বিটল্৷ কিন্তু লেডিবার্ডের স্পট এটার গায়ে নেই৷ ঝাঁটা দিয়ে পোকাটা তাড়াবার কথা মনে হলেও ভাবলেন থাক৷ পোকাটা দেখতে বেশ টকটকে লাল, চেহারাটা ন্যানো গাড়ির মতো৷ মাথায় খুব ছোট দুটো অ্যান্টেনা আছে৷ যাদের রং সবুজ৷
অংশুমান সরখেল নাম করা আই টি কোম্পানীতে কাজ করেন৷ যাদবপুর থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বি টেক৷ পরে দিল্লী আই আই টি থেকে এম টেক করেছেন৷ হায়ার সেকেন্ডারীর পর বায়োলজি না পড়লেও পপুলার বায়োলজির বই পড়েন, জীবজন্তুর উপর মায়াও আছে৷ তা ছাড়া ওঁর কাজের ব্যাপারেও বায়োলজি এবং বিশেষ করে মলিকিউলার বায়োলজির কিছু প্রাথমিক জ্ঞান দরকার৷ পোকাটা অংশুমান বাবুকে দেখে বিচলিত হয়েছে বলে মনে হল না৷
২
অংশুমান বাবু গুগল সার্চ করে জানলেন প্রায় চার লক্ষ ধরণের বিটল্ আছে৷ সমস্ত প্রাণী জগতের শতকরা তিরিশ ভাগই হল বিটল্ শ্রেণীভুক্ত পোকা৷ কয়েক বছর লেগে যাবে জানতে এই পোকাটা কোন শ্রেণীর৷ অবশ্য কমপিউটার বায়োলজির দৌলতে ছবি দেখেই জানা সম্ভব একটা পোকা কোন শ্রেণীর৷ তবে সেই সফটওয়্যার অংশুমান বাবুর কাছে নেই৷
অংশুমান বাবুর বয়স পঁয়ত্রিশ, এখনও বিয়ে করেননি৷ তবে ওঁর এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী আছেন৷ নাম শর্বরী রায়৷ বায়োলজির প্রফেসর৷ অংশুমান বাবুর কোম্পানী কমপিউটার বায়োলজির সফটওয়্যার তৈরী করে৷ এই গবেষণার সঙ্গে অংশুমান বাবুও জড়িত৷ পুনেতে কমপিউটার বায়োলজির এক কনফারেন্সে শর্বরীর সঙ্গে ওঁর আলাপ হয়৷ তারপর ঘনিষ্ঠতা হতে বেশী দেরী হয়নি৷ শর্বরী রায়ের দু-বছর আগে বিয়ে হয়েছিল, সে বিয়ে এক বছরের বেশী টেঁকেনি৷ স্বাভাবিক কারণেই শর্বরী পুরুষদের ব্যাপারে একটু বেশী সাবধানী৷ তবে অংশুমানের বুদ্ধি, কিশোর সুলভ সরলতা ও সেন্স অফ হিউমার শর্বরীর খুব ভালো লাগে৷
শর্বরী জার্মানীতে গেছে চার সপ্তাহের জন্য, গবেষণা কাম কনফারেন্স৷ অংশুমান পোকাটার ছবি তুলে ইমেলে ছবি এবং পোকাটার শারীরিক বিবরণসহ শর্বরীকে পাঠিয়ে দিলেন৷ আধ ঘন্টার মধ্যে জবাব এল৷ মামুলী দু-চারটে কথার পরেই শর্বরীর প্রশ্ন পোকাটা কী খায়?
৩
শর্বরীর প্রশ্ন দেখে অংশুমান একটু হতবাক হন৷ পোকাদের খাওয়ার কিছু অভাব আছে বলে ওঁর জানা ছিল না৷ বিশেষ করে বিটল্ পোকাদের৷ ওরা তো পচা-গলা সব কিছু খায়৷ তবে এটা যদি নতুন প্রজাতির হয় তবে আলাদা ফুড হ্যাবিট হবে৷ এই প্রজাতির বিটল্ হয়ত অংশুমানিয়া বলে পরিচিত হবে৷ ভেবেই অংশুমান রোমাঞ্চিত হলেন৷
তবে একটা জিনিস ভাবাচ্ছিল ওকে৷ পোকাটা তো কমপিউটারের তলা থেকে একেবারেই বেরোয় না৷ খাবার সংগ্রহ করে কখন! অংশুমান সেটাকে চিজ খেতে দিলেন৷ কিন্তু পোকাটা একবার অ্যান্টেনা দিয়ে চিজ ছুঁয়ে কী যেন সিগন্যাল খোঁজার চেষ্টা করে অ্যান্টেনা সরিয়ে নিল৷
এরপর অংশুমান বাবু নানারকম খাবার দিয়ে পরীক্ষা করার চেষ্টা করলেন কোন খাবার ও পছন্দ করে জানবার৷ ডিম সেদ্ধ, পচা ডিম, মাংস, পচা মাংস, শাক-সব্জি, ফল-মূল মায় গোবর পর্যন্ত৷ কিন্তু কোনও খাবারেই তার আগ্রহ নেই৷
শর্বরীকে অংশুমান এই সমস্ত তথ্য ইমেল করে জানাতে যাবেন, তার আগে ডেস্কের তলাটা চেক করতে গিয়ে দেখলেন একটার জায়গা তিনটে পোকা, প্রত্যেকেরই আন্টেনা অল্প অল্প করে কাঁপছে৷
অংশুমান তখনি মোবাইলে পোকাটি তিনটের ছবি তুলে শর্বরীকে পাঠালেন৷ বাকি তথ্যগুলো ইমেলে পাঠালেন৷ কিন্তু এর মধ্যে তিনি খানিকটা ধন্দে পড়ে গেলেন৷ পোকাগুলো কি বংশ বৃদ্ধি করছে? না এরা অন্য কোথাও আত্মগোপন করে ছিল, এখন কোনও কারণে আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করেছে৷ এর মধ্যে একটা পোকা সাইজে বেশ বড়৷ অন্যদের থেকে প্রায় দ্বিগুণ সাইজের চেহারা৷
ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে শর্বরীর ইমেল এল৷ ইমেল পড়ে অংশুমান চমকে গেলেন৷ অবশ্য একেবারে হতবাক হলেন না৷ মনের কোণে যে সন্দেহগুলো দানা বাঁধছিল, সেগুলোই মনে হচ্ছে সত্যি প্রমাণিত হল৷ এ জাতীয় পোকা পৃথিবীর অনেক দেশেই নাকি লোকে দেখেছে৷ বিশেষ করে প্রায় সব দেশেই যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানে বড় মাপের কমপিউটার ল্যাব আছে, সেখানেই এই পোকাগুলোর আবির্ভাব ঘটেছে৷ শুধু তাই নয় রক্তবীজের মতো এদের বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে৷
শর্বরী আরও লিখেছে পোকাগুলো যেন অংশুমান না মারেন৷ সম্ভব হলে একটা বাক্সের মধ্যে পুরে শর্বরীর কাছে ক্যুরিয়র সার্ভিসে পাঠিয়ে দেন৷ আশা করা যায় এর পরের মেলে শর্বরী আরও খবর পাঠাবে৷
৪
অংশুমান একটা কাঠের বাক্স জোগাড় করে পাড়ার একটি ছেলেকে ধরে যতগুলো পারলেন পোকা ধরে বাক্সবন্দী করলেন৷ কতগুলো পোকা এত ক্ষিপ্র যে তাদের কিছুতেই ধরা গেল না৷ অবশ্য অংশুমান বাবু নিশ্চিত যে তারা আবার কমপিউটার টেবিলের তলায় ফিরে আসবে৷ শর্বরী না বললেও অংশুমান আন্দাজ করেছেন যে ওদের খাবারের সঙ্গে ইলেকট্রনিক গ্যাজেটগুলোর একটা সম্পর্ক আছে৷
এ জন্যেই হয়তো পরদিন শর্বরীর মেল পেয়ে খুব একটা বিস্মিত হলেন না অংশুমান৷ শর্বরী লিখেছে নাসা অনেকদিন ধরেই পোকাগুলোর সম্পর্কে অবহিত৷ বেশ কিছুদিন ধরে একটা আমেরিকান সংস্থা আর একটা জাপানী কোম্পানীর সঙ্গে একটা জয়েন্ট প্রজেক্টে নাসা ছোট রোবট বানানোর চেষ্টা করছিল, যাদের স্পেস-ক্র্যাফটে বৃহস্পতি ও শনির উপগ্রহে পাঠানো হবে৷ রোবটগুলো এমন ভাবে তৈরী করা হচ্ছে, যারা চরম আবহাওয়াতেও টিকে থাকতে পারে৷ অংশুমান বাবু যে পোকা গুলির ছবি পাঠিয়েছেন এগুলো সবই রোবট৷ সমস্ত ইলেকট্রনিক গ্যাজেট চালু করলে রেডিয়ো ওয়েভ কম্পনাঙ্কের রেঞ্জের মধ্যে যে সমস্ত রেডিয়েশন বেরোয়, অনুমান করা হচ্ছে এই রেডিয়েশনই ওদের খাদ্য৷ বড় পোকাগুলি হয়তো ইউনিট কম্যান্ডার৷ এরপরের মেলে আরও কিছু বিস্তারিত জানাবে৷
৫
শর্বরীর মেল পাওয়ার পর অংশুমান তন্নতন্ন করে ইন্টারনেট সার্চ করলেন৷ হঠাৎ একটা খবরে চোখ আটকে গেল৷ ভ্যান ক্যাম্পেন বলে একজন ডাচ কেমিস্ট ও সখের জ্যোতির্বিদ্ নাসাকে জানিয়েছেন যে খুব সম্ভবত একটা ধুমকেতু প্রচন্ড বেগে পৃথিবীর দিকে এগিয়ে আসছে, এমনি টেলিস্কোপে এটা উনি দেখেননি৷ কিন্তু ওঁর ল্যাবরেটরিতে রেডিয়ো-টেলিস্কোপে মাপা রেডিয়ো ফ্রিকুয়েন্সীতে খুব স্ট্রং সিগন্যাল পাচ্ছেন তিনি৷ তাই নাসার কাছে ইমেল করে তিনি জানতে চেয়েছেন এটা ধূমকেতু না বহু আলোকবর্ষ দূরের কোনও সুপারনোভা৷ কিন্তু নাসা কোনও জবাব দিয়েছে কি না সেটা উনি নেটে কোথাও খুঁজে পেলেন না৷
আর একটা চিন্তা অংশুমানের মনে এল৷ রোবট কী করে বংশবৃদ্ধি করে? উনি শর্বরীকে মেল করলেন উত্তর পাবার জন্য৷
৬
শর্বরীর গবেষণার অন্যতম বিষয় হল বায়োলজিক্যাল ইন্টেলিজেন্স৷ সম্প্রতি শর্বরীর দুটি কাজ নাসার বৈজ্ঞানিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে৷ নাসার উদ্যোগে জুলাই মাসে আইসল্যান্ডে একটা কনফারেন্স আয়োজিত হবে৷ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় পাঁচশো বৈজ্ঞানিক এই কনফারেন্সে নিমন্ত্রিত হয়েছেন৷ ভারত থেকে কুড়িজন বিজ্ঞানী এতে অংশগ্রহণ করবেন৷ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স আর বায়োলজিক্যাল ইন্টেলিজেন্স ছাড়াও জ্যোতির্বিজ্ঞান, রোবটিক্স এমনকি নিউক্নিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বিশেষজ্ঞরাও থাকবেন৷ নাসা থেকে বেশ কিছু রকেট-বিশেষজ্ঞও এই কনফারেন্সে যোগ দেবেন৷ শর্বরী ইমেল করে এসব জানিয়েছে৷ একেবারে শেষে লিখেছে ও নিজেও এই কনফারেন্সে আমন্ত্রিত৷ এখনও নাসা পোকাগুলো সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য প্রকাশ করেনি৷ তবে পোকাগুলি ঠিক বংশবৃদ্ধি করে না৷ একটি পোকার সিগন্যাল পেয়ে পাশাপাশি পোকারা একত্রিত হয়৷ দরকার পড়লে এরা উড়তেও পারে৷
শর্বরী না লিখলেও অংশুমান বাবু আন্দাজ করেছেন আইসল্যান্ডে কেন কনফারেন্স হচ্ছে৷ মিডিয়া যাতে খুব বেশি এই কনফারেন্স সম্পর্কে প্রচার না করতে পারে৷ অবশ্য এই ডিজিটাল যুগে দুর্গম বলে কোনও বস্তু নেই৷ ইতিমধ্যেই সারা পৃথিবীতে সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলগুলো প্রায় রোজই এ বিষয়ে খবর প্রকাশ করছে৷ টিভি চ্যানেলগুলো ছোট, বড় বা মাঝারী যে মাপের বিজ্ঞানী পাচ্ছে, তাদের নিয়ে স্টুডিয়োতে আলোচনাচক্রের আয়োজন করছে৷ পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশেই বিরোধীরা দাবী করছে যে সরকার এ বিষয়ে স্বচ্ছ হোক৷ কিন্তু বেশিরভাগ রাষ্ট্রনেতারা নিজেরাই জানেন না কী ঘটছে৷
৭
সমস্ত দেশের সরকার পক্ষ থেকে যদিও বলা হচ্ছে যে পোকাগুলি যেখান থেকেই আসুক না কেন এরা মানুষের কোনও ক্ষতি করবে না, অংশুমান বাবু কিন্তু জানেন এটা সত্যি নয়৷ টোকিওতে সার্ভার সমস্যার জন্য প্রায় আট ঘন্টার মতো সমস্ত ফ্লাইট ক্যানসেল করতে হয়েছিল৷ এ ছাড়াও নিউইয়র্ক-লন্ডন সহ পৃথিবীর বিভিন্ন শহরের এয়ারপোর্টে একই পরিস্থিতি হয়েছিল৷ সব দেশের সরকারই এটা সাময়িক ত্রুটি বলে নাগরিকদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে৷ কিন্তু অংশুমানবাবুর দৃঢ় বিশ্বাস পোকাগুলোর সঙ্গে এই সব ঘটনার কোনও না কোনও যোগাযোগ আছে৷ ইতিমধ্যে পৃথিবীর নানা দেশে আন্দোলন গড়ে উঠছে পোকাগুলোর সংরক্ষণের দাবীতে৷ আমাদের উচিৎ শুধু পৃথিবীর প্রাণী বৈচিত্র্য রক্ষা করা নয়, মহাবিশ্বে যে কোনও গ্রহেরই প্রাণীদের সংরক্ষণ মানুষের নৈতিক দায়িত্ব ইত্যাদি৷
৮
শর্বরী জার্মানীতে আরও কিছুদিন কাটিয়ে ওখান থেকেই সরাসরি আইসল্যান্ডে চলে গেছে৷ অংশুমান বাবুও চুপচাপ বসে নেই৷ কোন রেডিয়ো ফ্রিকোয়েন্সিতে পোকাগুলো সংকেত পাঠাচ্ছে তা বার করার চেষ্টা করছেন৷ কিন্তু দেখলেন এর জন্য যে উন্নত ধরনের যন্ত্রপাতি দরকার তা ওর কাছে নেই৷ এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কোনও বিজ্ঞানীর সাহায্য নিতে হবে৷ অংশুবাবু জানেন না যে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্রীণ ব্যাংক অবসারভেটরিতে একই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সেখানকার গবেষকরা৷
সম্প্রতি এই অবসারভেটরি প্রায় সমস্ত সংবাদপত্রের শিরোনামে উঠে এসেছে৷ প্রায় চার হাজার আলোকবর্ষ দূরে একটি নিউট্রন নক্ষত্র থেকে বিশেষ রেডিয়ো ফ্রিকুয়েন্সিতে আসা সিগন্যাল ডিটেক্ট করতে সক্ষম হয়েছে৷ বিজ্ঞানীদের ধারণা এটা একটা পালসার৷ জোতির্বিদ্যার ক্ষেত্রে এটা একটা বিশেষ আবিষ্কার৷ অংশুমান বাবু এটাও জানেন না যে এরা নাসার অনুরোধে পোকাগুলো যে সিগনাল পাঠাচ্ছে বা রিসিভ করছে তা ডিটেক্ট করার কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছে৷
৯
শর্বরী আইসল্যান্ড থেকে কোলকাতায় ফিরে পরদিনেই অংশুমানের বাড়িতে চলে এসেছে৷ শনিবার থাকায় দুজনেরই ছুটি৷ যদিও শর্বরী শনিবারও সারাদিন ল্যাবরেটরিতে কাটায়৷ অংশুমানের বাড়ির কাছেই একটা কফির দোকান আছে৷ ওখানেই দুজন বসল৷ শর্বরী কফিতে একটু চুমুক দিয়ে বলল, ‘তোমার নিশ্চই জানতে ইচ্ছে করছে কনফারেন্সে কী হল’
‘কিছুটা তো কাগজে আর টিভি চ্যানেলে দেখলাম’
‘সেটা তো পুরো খবর নয়। ওটা লোকদের আশ্বস্ত করার জন্য’
‘পুরো খবরটা কী?’
শর্বরী হেসে বলল, ‘এটা গোপন ব্যাপার৷ যাইহোক তোমাকে বলছি, কারণ তুমি ঠিকই আন্দাজ করেছিলে৷ পোকাগুলোই কিছু সার্ভারে গন্ডগোল করছিল৷ আর তুমি ওদের পাঠানো রেডিয়ো ফ্রিকুয়েন্সির রেঞ্জ ধরার চেষ্টা করছিলে৷ ভার্জিনিয়ার একটি অবসারভেটরি এই ফ্রিকুয়েন্সি রেঞ্জ বার করেছে৷ কনফারেন্সের পরে পঞ্চাশ জন বিজ্ঞানীদের একটা ক্নোস-ডোর মিটিং হয়েছিল৷ প্রায় দশ ঘন্টা ধরে মিটিং হয়েছিল৷ এই অধমকেও মিটিং-এ ডাকা হয়েছিল৷ মিটিং-এ প্রফেসর ব্রায়ান ফিন আর সেগ্রেই সুশকভ ছিলেন৷ এঁরা বিশ্ববিখ্যাত পতঙ্গবিদ।’
শর্বরীর কথা শুনে অংশুমান খুব একটা অবাক হলেন না৷ বললেন, ‘একটা ব্যাপারে আমার একটা খটকা লেগেছে৷ আর্টিফিশিয়াল আর বায়োলজিক্যাল ইন্টেলিজেন্সের কনফারেন্সে আণবিক বোমার বিশেষজ্ঞদের রোলটা কী?’
‘শোন কনফারেন্সে এনটেমোলজিস্ট বা পতঙ্গবিদদেরও ডাকা হয়েছিল এটা তো শুনলে৷ কারণ ভ্যান ক্যাম্পেন যে তথ্য নাসাকে পাঠিয়েছিলেন তা খুব একটা ভুল নয়৷ তবে উনি যে-টা ধুমকেতু বা সুপার নোভা হিসেবে মনে ভেবেছিলেন সে জিনিসটি হচ্ছে পোকার ঝাঁক।’
‘পোকার ঝাঁক’
‘হ্যাঁ মশাই, পোকা৷ লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি পোকা৷ অনুমান করা হচ্ছে এই ঝাঁকটি কয়েকশো কিলোমিটার লম্বা এবং প্রায় সমপরিমাণ চওড়া৷ পোকাগুলো খুবই উন্নত ধরণের রোবট, যাদের বায়োলজিক্যাল ইণ্টেলিজেন্স আছে৷ এরা এখনও সৌরজগৎ থেকে বেশ দূরে আছে৷ কিন্তু অভাবনীয় এদের গতি৷ আলোর গতির প্রায় টেন পারসেণ্ট৷ পতঙ্গবিদদের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল এই পোকাগুলো মৌমাছির মতো নিজেদের মধ্যে কম্যুনিকেট করতে পারে কি না।’
‘ওনাদের মত কী?’
‘ওনাদের মতে নিশ্চিতভাবে এটা সম্ভব৷ মৌমাছিরা নিজেদের মধ্যে কমুনিকেট করে নেচে নেচে আর কেমিক্যাল সংকেতের মাধ্যমে, আর পোকাগুলো কেমিক্যালের বদলে রেডিয়ো-ওয়েভ পাঠায়।’
‘তুমি কিন্তু আমার কথার জবাব দিলে না৷ আণবিক বোমার বিশেষজ্ঞদের কেন ডাকা হয়েছিল?’
অংশুমানের কথা শুনে শর্বরী বলল, ‘ওটাই তো মন্ত্রগুপ্তি৷ কনফারেন্সে ওঁদের কোনও লেকচার ছিল না৷ তা ছাড়া এই দুই বিশেষজ্ঞ ডঃ রবার্ট হপকিন্স ও ডঃ পল মার্টিন ম্যাকডাওয়েল আমেরিকার আণবিক বোমার ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য৷ দুজন রাশিয়ার রকেট সায়েন্টিস্ট ও চিন থেকে লেসার বিশেষজ্ঞ ভেভিড ওয়াঙ্গও এসেছিলেন৷ এঁদের মধ্যে আলাদা করে বৈঠক হয়৷ ওখানে আমাদের কেউ ছিল না৷’
‘শুনলাম আমেরিকার এফ বি আই-এর দুই কর্তা ব্যক্তি এই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন।’
অংশুমান কিছু বলতে গিয়ে ও থেমে গেলেন৷ শর্বরী বলল, ‘অংশু আমি যা ভাবছি তুমিও কি তা-ই ভাবছ?’
‘এর জন্য শার্লক হোমসের দরকার হয় না।’
অংশুমানের কথা শুনে শর্বরী হেসে ফেলল৷ বলল, ‘ঠিক তাই৷ আমি কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জেনেছি আমেরিকা, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া ও চিনের কাছে সৌরজগৎ ছাড়িয়ে নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ক্যারি করতে পারে এরকম রকেট রয়েছে৷’
‘কিন্তু যে সংখ্যক পোকা বলছ তাদের ধ্বংস করতে তো বেশ কিছু হাইড্রোজেন বোমা লাগবে।’
‘তা লাগবে, তবে সেটা লাস্ট অপশন৷ তার আগেই এদের ভাষাতেই যদি এদের মিস-ইনফরমেশন দেওয়া যায়, তাহলে স্পেসে আণবিক বোমা ফাটানোর দরকার হবে না৷ শোনো, ফ্রান্সে স্পেস-বায়োলজির একটা ওয়ার্কশপ হবে৷ আমার মনে হয় এই পোকার বিষয়ে আলেচনা থাকবেই। আমাকে আমন্ত্রণ করেছে। আর মনে হয় ইতিমধ্যে নাসা থেকে মিডিয়া ও প্রেসকে ডেকে কিছু তথ্য দেবে৷ কারণ যতই এটা চেপে রাখবে ততই নানারকম গুজব ছড়াবে।’
অংশুমান বলল, ‘এখনি তো টিভিতে দেখছি রাস্তায় লোকে নেমে পড়ে আন্দোলন করছে।’
১০
শর্বরীর ভবিষ্যদ্বাণী অচিরেই ফলে গেল৷ তবে শুধু নাসা নয় পৃথিবীর শক্তিশালী দেশগুলো মিলিত ভাবে একটা বিবৃতি দিয়েছে৷ স্পোকস্ পারসন হিসেবে নাসার সিনিয়র বিজ্ঞানী ডঃ রিচার্ড গুল্ডকে সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত করা হয়েছে৷ টিভির সামনে বোধহয় সব দেশের লোক নিবিষ্ট হয়ে দেখছে৷
অংশুমান নিজের টিভিতে বিবিসি চ্যানেল খুলে বসে আছে৷ নাসা একটা কনফারেন্সের আয়োজন করেছে হেলসিঙ্কির একটা ফাইভ স্টার হোটেলে৷ কনফারেন্স হলে বৈদ্যুতিন আর প্রিন্ট মিডিয়ার লোক গিজগিজ করছে৷ ডঃ গুল্ডের দুপাশে রাশিয়া, চিন, জাপান, ফ্রান্স ও গ্রেট বৃটেনের বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী উপস্থিত৷ ডঃ গুল্ডের চেহারা বেশ আকর্ষণীয়৷ গ্রে রং-এর স্যুটের সঙ্গে সোনালী ফ্রেমের চশমা৷ শান্ত সৌম্য এক বিজ্ঞানী৷
অংশুমান বুঝতে পারলেন কেন ওঁকে স্পোকস্ পারসন করা হয়েছে৷ ওঁর কথা লোকে সহজে বিশ্বাস করবে৷ ডঃ গুল্ড প্রথমেই বললেন ওই পোকাদের ব্যাপারে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই৷
এরপর যা বললেন তার অধিকাংশ অংশুমান শর্বরীর কাছে শুনেছে৷ পোকাগুলো খুব সম্ভবত আমাদের গ্যালাক্সির কোনও একটা তারার গ্রহমণ্ডল থেকে আসছে৷ অন্তত পঞ্চাশ আলোকবর্ষ দূরে৷ যে পোকাগুলোকে এখন পৃথিবীতে দেখা যাচ্ছে তারা অগ্রদূত হিসেবে এসেছে৷ মূল যে ঝাঁকটা পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে বলে মনে হচ্ছে, তারা অবিশ্বাস্য গতিতে চললে ও আরও দুবছর লাগবে পৃথিবীর কাছে আসতে৷ কিন্তু তার অনেক আগেই এদের কী করে থামানো যায়, সে বিষয়ে আমাদের এই পৃথিবীর সব দেশের বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন এবং আশা করা যাচ্ছে কয়েক মাসের মধ্যেই এই সমস্যার সমাধান হবে৷
এরপর ডঃ গুল্ড ঠাট্টার ছলেই বললেন পোকারা একটা উপকার করেছে৷ পৃথিবীর নানা দেশে যেসব সংঘর্ষ চলছিল তা একেবারে বন্ধ না হলেও অনেকখানি কমেছে৷ পরমাণু অস্ত্রে শক্তিধর সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা জাপানের কোবো শহরে একটা গোপন জায়গায় মিলিত হয়েছিলেন৷ জাপান এবং জার্মানির পরমাণু অস্ত্র না থাকলেও এ দুটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন৷ এমনকি উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্টও এসেছিলেন৷
খুব রুদ্ধদ্বার কক্ষে মিটিং হলেও, মিটিং এর পরে সব রাষ্ট্রপ্রধানদের একটি যৌথ বিবৃতি শীঘ্রই আপনারা পেয়ে যাবেন৷ এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ডঃ গুল্ড বললেন পোকাগুলো যে গ্রহ থেকে আসছে সেই গ্রহের অধিবাসীরা খুবই উন্নত প্রাণী বা অ্যান্ড্রয়েড এমন কী রোবটও হতে পারে।
আর এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, ‘আপনি যে গ্রহের কথা বললেন সেটা কি আমাদের গ্যালাক্সির কোনও গ্রহ?’
‘নিশ্চয়!’
তারপর একটু হেসে ডঃ গুল্ড বললেন, ‘অন্য গ্যালাক্সি থেকে আসতে পোকাগুলোর যা সময় লাগতো তা আমরা কল্পনা করতে পারব না।’
এরপর নানা রকম প্রশ্ন আসতে লাগল৷ ডঃ গুল্ড খুব সাবলীলভাবে সব কটা প্রশ্নের উত্তর দিলেন৷ তিনি জানালেন বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী, রাজনৈতিক নেতা ও সামরিক বাহিনীর অধিকর্তাদের নিয়ে ‘গ্রুপ নাইনটি নাইন’ বলে একটি কমিটি করা হয়েছে৷ দু-মাসের মধ্যে এই কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে৷ একটা প্রেস কনফারেন্স হবে হায়দ্রাবাদে৷
১১
ডঃ গুল্ড মিথ্যে বলেননি৷ নভেম্বরের শেষ শনিবার ভারতীয় সময় দুপুর দুটোয় প্রেস কনফারেন্স বসল হায়দ্রাবাদের একটি নামকরা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে৷ এখানের একটা লেকচার হলে ২৫০০ লোক ধরে৷ এ ছাড়া পৃথিবীর সমস্ত দেশ থেকে ভিডিও কনফারেন্সেরও ব্যবস্থা আছে৷ কমিটি নাইনটি নাইনের স্পোকস পারসন ডঃ আলেকজান্ডার মিলোস্লাভ জন্মসূত্রে চেক কিন্তু এখন রাশিয়ার নাগরিক৷ নিউক্লিয়ার সায়েন্সে তাঁর অবদানের জন্য রাশিয়ার সর্বোচ্চ সম্মান পেয়েছেন৷ দুবনার রিসার্চ সেন্টারের ডেপুটি ডাইরেক্টর৷ এখন নিউক্লিয়ার অস্ত্রের ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের প্রধান উপদেষ্টা৷
অংশুমান দুপুর একটা থেকেই টিভির সামনে বসে আছেন৷ সঙ্গে শর্বরীও আছে। শর্বরী ফ্রান্স থেকে ফিরেছে৷ ওর হায়দ্রাবাদ যাবার কথা ছিল, কিন্তু বাড়িতে আরাম করে বসে দেখাই শ্রেয়৷ এ ছাড়া ডঃ মিলোস্লাভ কি বলবেন শর্বরীর মোটামুটি জানা৷ অংশুমানের লাঞ্চের অফারটা তাই সে অগ্রাহ্য করতে পারল না৷ লাঞ্চ একটু আগেই খাওয়া হয়েছে৷
১২
ডঃ মিলোস্লাভ প্রথমেই এই প্রেস কনফারেন্সের নিয়ম ব্যাখ্যা করলেন৷ একটা বৈশিষ্ট্য হল সাংবাদিকদের সব প্রশ্নের আলাদা করে উত্তর দেওয়া হবে না৷ একটা কমপিউটার সব প্রশ্ন প্রসেস করবে, যে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে সেগুলি হবে নন-ওভারল্যাপিং৷ যে যার নিজের ল্যাপটপ বা অত্যাধুনিক স্মার্ট ফোনে প্রশ্ন কম্পোজ করে পাঠাতে পারবেন৷ সবাইকে একটা নম্বর দেওয়া হয়েছে৷ একই নম্বরে সবাই প্রশ্ন পাঠাতে পারেন৷ কোনও মাইক ব্যবহারের দরকার হবে না৷ যদি ল্যাপটপ বা ফোন বা আইপ্যাড কাস্টোমাইজ করা থাকে তা হলে প্রত্যেকে নিজের মাতৃভাষায় তা দেখতে পাবেন৷ আমি ইংরাজিতে আমার বক্তব্য রাখব৷ আমার পেছনে পাঁচটা জায়ান্ট স্ক্রীন আছে৷ পৃথিবীর প্রধান পাঁচটা ভাষায় তার ট্র্যানস্লেশন দেখা যাবে৷ অংশুমান দেখলেন ডঃ মিলোস্লাভ যা বলছেন পেছনের পাঁচটা স্ক্রিনে তা যথাক্রমে চাইনিজ, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, রাশিয়ান ও হিন্দিতে ট্রান্সলেট হয়ে যাচ্ছে৷
ডঃ মিলোস্লাভকে দেখে মনে হয় ছ-ফুটের উপর লম্বা৷ কাঁধ পর্যন্ত সোনালী চুল৷ চোখে গোল চশমা৷ বেশ বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা। প্রেস কনফারেন্সের নিয়ম ব্যাখ্যা করার পর নাটকীয় ভঙ্গিতে বললেন যে ওঁর বক্তব্য শোনার পর আশা করছেন ওঁকে খুব বেশী প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে না৷ আশা করি যাঁরা প্রশ্ন করবেন তাঁরা হোমওয়ার্ক করে এসেছেন৷
আপনাদের একটা ভাল খবর দিই৷ পোকাদের ঝাঁকটার গতিপথ চেঞ্জ হয়ে গেছে৷ আমরা ওদেরই ভাষায় ওদের মিস-ইনফরমেশন দিতে সক্ষম হয়েছি৷ ওরা ভেবেছে যে এই ইনফরমেশন পৃথিবী থেকে পাঠানো পোকাদের কাছ থেকেই এসেছে৷ এই ইনফরমেশনের মূল কথা হল পৃথিবী অন্য গ্রহবাসী প্রাণীদের পক্ষে কলোনী হিসেবে উপযুক্ত নয়৷ পোকার ঝাঁক অন্য কোনও নক্ষত্রের দিকে রওনা দিয়েছে৷ এ ছাড়াও সবরকমের পরিস্থিতির জন্য আমরা যথাযোগ্য প্রস্তুতি নিয়েছি।
এরপর অনেক সাংবাদিকই নিজেদের ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন৷ শেষ প্রশ্ন ডঃ মিলোস্লাভের কমপিউটারে আসার পরে নিমেষের মধ্যে স্ক্রীনগুলোতে ছ-টা প্রশ্ন দেখা গেল৷
মিলোস্লাভ একটু হেসে বললেন, ‘অনেক প্রশ্নই আপনারা করেছেন৷ কমপিউটার কিন্তু প্রসেস করে ছ-টা প্রশ্ন তৈরী করেছে৷ আশা করি এগুলির উত্তরের মধ্যেই আপনারা আপনাদের সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন৷
১ নং প্রশ্ন প্রায় সবাই করেছেন৷ পোকারা আবার পথ পরিবর্তন করতে পারবে কি না?
এর উত্তর—না৷ অন্তত পাঁচশ বছর আগে নয়৷
২ নং প্রশ্ন হল যে গ্রহ থেকে পোকারা এসেছে সেই গ্রহের প্রাণীরা পৃথিবী আক্রমণ করবে কি না?
এর উত্তর এখন দেওয়া সম্ভব নয়৷ তবে পাঁচশ বছর আগে এটা ঘটবে না৷
৩ নং প্রশ্ন হল যে পোকাগুলি পৃথিবীতে এসে গেছে তাদের সম্পর্কে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? এ বিষয়ে আমাদের ওয়েবসাইটে বিশদ বিবরণ দেওয়া আছে৷ যেসব জায়গায় পোকাগুলো জড়ো হচ্ছে সেখানে অন্তত পাঁচশ পাওয়ারের একটা বাল্ব লাগান৷ পোকাগুলো নিস্তেজ হয়ে যাবে৷ তবে ওদের ধ্বংস করবেন না৷ একটা মিউজিয়াম করা হবে ওদের জন্য৷
৪ নং প্রশ্নটি বেশ ভালো প্রশ্ন৷ অন্য কোনও গ্রহের প্রাণীরা পৃথিবী আক্রমণ না করে বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে চাইবে? এ ব্যাপারে স্টিফেন হকিং-এর সাবধানবাণী মনে রাখতে হবে৷ আমাদের ধরেই নিতে হবে যারা পাঁচশ বা হাজার আলোকবর্ষ দূর থেকে পৃথিবীতে আসছে তারা আমাদের থেকে অনেক বেশী উন্নত জীব, তারা আসবে পৃথিবীকে কলোনী বানাতে৷ তাই আমাদের প্রস্তুত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। অবশ্য ততদিনে যদি আমরা নিজেরাই না নিজেদের ধ্বংস করে ফেলি, আমাদের প্রযুক্তি কত এগিয়ে যাবে তা আমাদের সব কল্পনার বাহিরে৷ ডঃ মিলোস্লাভ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন তাঁর মতে এই প্রশ্নটি কমপিউটার নিজেই করেছে৷
সাধারণ মানুষের করণীয় কি?
প্রথমতঃ প্যানিক সৃষ্টি করবেন না৷ গুজবে কান দেবেন না৷ ব্যক্তিগত প্রশ্ন থাকলে আমাদের ওয়েব সাইটে গিয়ে একটা ইমেল দেওয়া আছে ওখানে প্রশ্ন পাঠাতে পারবেন৷
আবার বলছি যারা খুব উন্নত ধরণের ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ব্যবহার করেন তারা যন্ত্রগুলোর কাছে বা টেবিলের তলায় পাঁচশ ওয়াটের আলো জ্বালাবেন৷ পোকাগুলি নিস্তেজ হয়ে জাংকে পরিণত হবে৷
মিলোস্লাভ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন আজকের প্রেস কনফারেন্স শেষ৷ এর পরে নতুন তথ্য পেলে আবার আমরা মিলিত হব৷ করতালিতে হল ফেটে পড়ল৷
শর্বরী বলল, ‘মিলোস্লাভ একটা খবর চেপেছেন।’
‘কী খবর’
ইতিমধ্যেই রাশিয়া, চিন ও উত্তর কোরিয়া থেকে প্রায় দশটা রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে৷ প্রত্যেকটিতে সর্বাধুনিক থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্র রয়েছে। পোকার ঝাঁকের সন্ধান পেলে ধ্বংস করে দেওয়া হবে।’
‘আর যদি সন্ধান না পায়?’
‘তাহলে মহাশূন্যের দিকে রওনা হবে, হয়তো কোনও গ্রহাণুর সঙ্গে মোলাকাত হবে।’
‘আমি কিন্তু কোরিয়ানদের উপর ভরসা রাখি না৷ হয়তো আমাদের একমাত্র চাঁদকেই ওরা ধ্বংস করে দিল।’
অংশুমানের কথা শুনে শর্বরী হেসে ফেলল। ‘তাহলে কবিরা বেকার হয়ে যাবে৷ এসব এখন না ভেবে চল কফি খেয়ে আসি।’
Tags: কল্পবিজ্ঞান গল্প, তৃতীয় বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য্য, পূজাবার্ষিকী, পোকা, রাজকুমার রায়চৌধুরী