ভীনগ্রহের স্বর্ণঝঞ্ঝা

  • লেখক: শঙ্খশুভ্র চট্টোপাধ্যায়
  • শিল্পী: শঙ্খশুভ্র চট্টোপাধ্যায়

রাত বারোটায় আহারের পর ছাদে ঘুরে বেড়ানো টঙ্কার অনেকদিনের অভ্যাস। আজও তার ব্যতিক্রম হয় নি।

     ‘সত্যি, দাদু কলকাতা ছেড়ে এই ফ্যাচাংপুরে বাড়ি না করলে এইরকম প্রাকৃতিক পরিবেশ কোথাও পেতাম?’ মনের আনন্দে আপনমনে বলে উঠলেন ফ্যাচাংপুরের বিখ্যাত পাটের ব্যবসায়ী টঙ্কা, মানে টঙ্কেশ্বর গুপ্ত! আসলে এই টঙ্কেশ্বর নামেরও একটা ইতিহাস আছে।

     ‘নাতি আমার ব্যবসা করবে, প্রচুর টাকা রোজগার করবে, তাই নাম রাখলাম টঙ্কেশ্বর ওরফে টঙ্কা।’ বলেছিলেন টঙ্কার ঠাকুরদা। আর এই গুপ্ত পদবীও কিভাবে তাঁর জীবনে সত্যি হয়েছিল তা এই কাহিনি পড়েই আপনারা বুঝতে পারবেন!

     টঙ্কার বাড়ির সামনে সত্যিইই মনোরম পরিবেশ। সামনে বেশ কয়েকটি নারকেল গাছ, একটু দূরেই দিগন্ত জুড়ে থাকা মাঠ যতদূর চোখ যায়। মাঠ তো নয় যেন ধূ ধূ ধূ করা মরুভুমি। যা আয়তন হেসেখেলে এখানে একটা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট ম্যাচ হতেই পারে!

     আর মাঠের পর যতদূর দেখা যায় বিরাট এক দীঘি, তার পাশে সারি দিয়ে গাছ। আর রাতে এদের সাথে আছে চাঁদের মোলায়েম আলো বয়ে নিয়ে আসা মলয় পবন। আজকে চাঁদের ছায়া দীঘিতে পড়ে মনে হচ্ছে যেন দুদুটো চাঁদ!

     আহা! একে তো আজ পাটের ব্যবসায় অনেকটা লাভ হয়েছে, তার উপর প্রকৃতির এই উপহার। সব মিলিয়ে প্রাণের খুশিতে হঠাৎ টঙ্কার গলা দিয়ে বেরিয়ে পড়ল সেই প্রেমে ভরা গান – ‘চাঁদ ফির নিকলা মগর তুম না আয়ে/জ্বালা ফির মেরা দিল করু কেয়া ম্যায় হায়!’ গান গেয়ে প্রায় নেচে নেচেই ছাদের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরতে লাগলেন তিনি!

     এইভাবে নাচগান করতে করতে যে কত সময় কেটে গেল! ঘড়িতে তাকিয়ে টঙ্কা দেখেন যে দেড়টা বাজে! ভাবলেন আরেকবার গানটা গেয়ে নিয়ে শুতে যাবেন।

     তাই আবার মনের আনন্দে গান ধরলেন – ‘চাঁদ ফির নিকলা মগর তুম না আয়ে/জ্বালা ফির মেরা দিল করু কেয়া ম্যায় হায় –এ!’

     কিন্তু, সত্যিই রাত দেড়টায় নিঝুমপুরী ফ্যাচাংপুরে কে আসবে টঙ্কার কাতর আহবানে সাড়া দিয়ে? মাথার উপর দিয়ে বিটকেল ডাক ছেড়ে একটা পেঁচা উড়ে গেল। পাড়ার ভুলো কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করে ডেকে উঠল আর পাশের বাড়ির একতলা থেকে গোলক আচার্যর হুঙ্কার শোনা গেল – ‘বলি টঙ্কার মাথাটা কি একেবারেই গেছে যে রাতদুপুরে বেসুরো চীৎকার করছ? পাগল হয়েছে টঙ্কা!’ ধড়াম ধড়াম করে গোলকের বাড়ির জানালা বন্ধের আওয়াজ পাওয়া গেল।

     ‘এইসব বেরসিকদের মাঝে কি আর শিল্পসৃষ্টি হয়? ধুর!’ টঙ্কা ভাবলেন এবার শুতে যাবেন, কিন্তু, চাঁদ আজ যেন উছলে পড়ছে, এমন রাতে কি শুতে যেতে চট করে ইচ্ছা করে?

     তিনি ভাবলেন – ‘আমার বাড়িতে আমি সঙ্গীতচর্চা করলে কেউ কিচ্ছু বলতে পারে না! আমি গান গাইবই!’

     আরো মিনিট দশেক চাঁদের দিকে চেয়ে চেয়ে হাততালি দিয়ে কীর্তনের ঢঙে তিনি গাইলেন – ’চাঁদ দেখতে গিয়ে আমি তোমায় দেখে ফেলেছি’তাঁর কলেজ জীবনে এই গানটা গাইতেন টঙ্কা। আহা! কি সব দিন! ক্লাস কেটে ফুটবল ম্যাচ দেখা, সিনেমা দেখা! সে দিন আর ফিরবে না। চাঁদের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে স্মৃতিতে ডুবেই যাচ্ছিলেন টঙ্কা, কিন্তু আচমকা একটা কথা মনে হওয়ায় তিনি চমকে গেলেন– ‘চাঁদ! এ তিনি কি দেখছেন? আজ কি করে চাঁদ উঠবে! আজ যে অমাবস্যা!’

     তিনি যে পাড়ার কালীমন্দিরে অমাবস্যার পুজোর প্রসাদ খেলেন সন্ধেবেলা! তবে এটা কি অলীকবিক্ষণ মানে হ্যালুসিনেশান নাকি? এবং ‘চাঁদ দেখতে গিয়ে’ এটা কি দেখলেন টঙ্কা? চোখ কচলে আবার দেখলেন তিনিচাঁদের গায়ে সিঁড়ি বেয়ে ও কারা নেমে আসছে? সত্যি নাকি? হ্যাঁ, ঠিকই তো দেখছেন তিনিসংখ্যায় তারা প্রচুর। তারা এবার মাঠ পেরিয়ে এগিয়ে আসছে।

     ‘নিশ্চয় ডাল মে কুছ কালা হ্যায়!’ এই বলে তরতর করে ছাদ থেকে নেমে ও চাঁদ সামলে রাখ জোছনাকে’ বলে জোরে জোরে হেঁটে মাঠের দিকে এগোতে লাগলেন তিনিতারপর একটা গাছের আড়ালে লুকোলেন

     যারা আসছে, খুব নিঃশব্দে হাঁটছে। এদের শরীর কি রাবার দিয়ে তৈরি নাকি? ডাকাতি করতে আসছে? তবে তো সবাইকে জানানো দরকার!

     ‘অ্যাই সুবল! গোবর! ধানু!’ বলে যেই টঙ্কা হাঁক মেরে নিজের পাড়ার বন্ধুদের ডাকতে যাবেন অমনি দেখেন তিনি শূন্যে ভাসছেন! কে যেন তাঁর কলার ধরে দোলাচ্ছে আর এ কি! টঙ্কার কলার ধরে ঝুলিয়ে কুলোর মত পিঠ, মূলোর মত কান, লাল লাল ঠোঁট সমেত অদ্ভূত দাঁত বের করে হাসছে এক মহিলাপরনে জোব্বার মত কি একটা। ‘নির্ঘাত শাকচুন্নী!’ বলেই ফেললেন টঙ্কা

     শাকচুন্নীর সাথে তারই মত দেখতে প্রচুর সঙ্গী। তারা সব ধুতি পরে আছে। তারা সবাই নিজেদের ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে টঙ্কাকে চুপ করতে বলল। টঙ্কার মনে হল এইটাই বোধহয় মৃত্যুর মুহূর্ত। যমদূতরা তাঁকে নিতে এসেছে।

     মরিয়া হয়ে তিনি বলে উঠলেন – ‘যমদূত স্যার! হেল্প মি প্লিজ! আমার বউ অনেকদিন আগেই পরলোকে গেছে! আমার একটি মাত্র ছেলে বেঙ্গালুরুতে চাকরী করে। প্লিজ অন্তত তাকে একটা ফোন করতে দিন স্যারএকবার কথা বলে নিই মরার আগে! স্যার গো! এই যে আমার শেষ ইচ্ছা!’

     কিন্তু টঙ্কার অনুনয়ের বদলে সেই অদ্ভুতদর্শন মহিলা আর তার সঙ্গীরা নিজেদের মধ্যে তাকাতাকি করে নিঃশব্দে লম্বা লম্বা দাঁত বের করে হাসতে লাগল।

     প্রবল আতঙ্কে টঙ্কা ‘ভগবান আমাকে বাঁচাও! আজ তোমার পরীক্ষাভগবান!’ বলে কোন অতলে যেন তলিয়ে গেলেন। তিনি জ্ঞান হারালেন।

     কিন্তু, তারপর? শাকচুন্নীর সাথীদের যেন কোথা থেকে একটা ধোঁয়া এসে ঘিরে ধরল এবং শাকচুন্নী বাদে বাকিদের চেহারা পালটে হয়ে গেল অজস্র টঙ্কেশ্বর গুপ্ত! তারা ‘ঠাঁইঠুঁই গাঁইগুঁই’ বলে কিসব ভাষায় কথা বলতে লাগল। শাকচুন্নী এবার টঙ্কাকে কোলে নিয়ে হুশ করে সোজা উঠে গেল আকাশের ‘চাঁদ’এর দিকে আর নীচে তার সঙ্গীরা ব্যাঙাচি উচ্চিংড়ে ৪২০’ ইত্যাদি বলে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ল। বুঝতে পারছেন তো টঙ্কার গুপ্ত পদবী কেমনভাবে তাঁকে গুপ্ত করে দিল!

     টঙ্কা তো ভ্যানিশ হয়ে গেলেন অজানা অস্তিত্ত্বদের হাতে! এরপরে কি হল?

     এদিকে ফ্যাচাংপুরের শখের গোয়েন্দা তল্লাশ কর ওরফে তাল্লুর মাথায় প্রচুর চিন্তা। দিন পনেরো বাদেই ফিজিক্স অনার্সের পরীক্ষা। কিন্তু এরই মাঝে গোয়েন্দাগিরিরও শখ! কেউ তাকে পাত্তা না দিলেও তল্লাশ জানে কালে কালে একদিন সে শার্লক হোমসকেও ছাড়িয়ে যাবে! গতমাসেই কি সে ব্রজখুড়োর হারিয়ে যাওয়া ছাগল উদ্ধার করে খুড়োর তরফে একটা স্মার্টফোন পায়নি প্রাইজ হিসাবে? তবে? এইভাবেই আস্তে আস্তে লক্ষ্যর দিকে এগোতে হবে। গোয়েন্দাশ্রেষ্ঠ তাকে যে হতেই হবে!

     কিন্তু এদিকে আজ দিনতিনেক হল তার পরীক্ষার জন্য তাকে বাড়িতে ফেলে রেখে বাড়ির সবাই খড়গপুরে বিয়েবাড়িতে গেছে। বাড়িতে তাল্লু একা। একটা বিষয়ে রক্ষে যে পড়াশোনাতে তাল্লু ভালই। সেইজন্যই বাড়ির লোক তার শখের গোয়েন্দাগিরি নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামায় না।

     আজকেও সকাল থেকে বেশ কিছুক্ষণ বইপত্র খুলে পড়াশোনা করার পর নিজের স্মার্টফোনে ‘অষ্টপ্রহর নিউজ চ্যানেল’ অ্যাপে খবর দেখতে দেখতে হঠাৎ তাল্লু হাঁ!

     -‘আপনারা জানেন গতকাল ভোর থেকে কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সোনার দোকানে ডাকাতি হচ্ছে বারবারস্বর্ণব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত! আজও ভোরে ফ্যাচাংপুরে পাঁচটি সোনার দোকানে ডাকাতি হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে ডাকাতির সময় ভোর ৪টে থেকে ৫টার ভিতরে। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।‘

     তৎক্ষণাৎ আরেকটা নিউজ ফ্ল্যাশ দেখে তড়িঘড়ি বই বন্ধ করে উঠে পড়ল তাল্লু

     ‘এইমাত্র খবর পাওয়া গেল কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় সোনা চুরির ঘটনায় এক ব্যক্তিকে তার ফ্যাচাংপুরের বাড়ি থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তার নাম টঙ্কেশ্বর গুপ্ত

     পাশের পাড়ার টঙ্কেশ্বর গুপ্তকে খুব ভাল করেই চেনে তাল্লুদিলদরিয়া মানুষ। মাছিমার্কা গোঁফ, কাঁচাপাকা চুল, নাকের ডানপাশে কালো তিল, পরনে গুরুপাঞ্জাবী, ধুতি আর সবসময় মুখে মিটিমিটি হাসি—এই হলেন টঙ্কেশ্বর ওরফে তাল্লুর টঙ্কাকাকু

     পাড়ার পুজোর চাঁদা চাইতে গেলেই আনন্দের সাথে তা দেন। এই তো পরশুদিনই তিনি ফ্যাচাংপুরের বিখ্যাত ‘দানুর চায়ের দোকান’এর সামনে দাঁড়িয়ে তাল্লুকে চা খাওয়ালেন, তারপর তাল্লু নিজের ফোনে টঙ্কার একটা ছবি তুলল

     যাঁর নিজের ব্যবসায় প্রচুর টাকা লাভ হয়, তিনি কেন সোনা চুরি করতে যাবেন? আর ফ্যাচাংপুরের গোয়েন্দা হয়ে তাল্লু যাবে না ব্যাপারটার একটা সরেজমিনে তদন্ত করতে? যেভাবেই হোক যেতেই হবে!

     ফোনে আরেকবার খবরটা চালিয়ে শুনে নিল তাল্লুখবরে দেখানো একটি গয়নার দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে টকাটক কাচের শোকেস থেকে সোনার গয়না তুলে একটা ব্যাগে পুরে ফেলছেন গোলগোল চোখ করে তাকিয়ে থাকা টঙ্কাতারপর স্মোকবম্বের মত কি যেন একটা ফাটলো! ধোঁয়ায় ঢেকে গেল চারিদিক! আর টঙ্কা হাওয়া!

     এই দৃশ্য বারকয়েক দেখার পরই কি একটা মনে হওয়ায় পরশুদিন নিজের ক্যামেরায় তোলা টঙ্কার ছবিটা একবার মন দিয়ে দেখল তাল্লু

     তারপর আচমকা একটু লাফিয়ে উঠে তড়িঘড়ি দরজায় তালা দিয়ে সোজা ফ্যাচাংপুর থানার দিকে রওনা দিল সে

     দুঃখের বিষয় থানায় ঢোকাই গেল না। প্রেসটেসের ভিড়ে ভিতরে এগোনই যাচ্ছে না!

     বিফল মনোরথে যখন সে ফিরে আসছে তখন হঠাৎ দেখে ভিড়ের ভিতর পাড়ার গোলক আচার্য প্রবল বেগে চীৎকার করে কি একটা বলার চেষ্টা করছেন, কিন্তু কেউ তাঁর কথা শুনতে রাজিই নয়

     ‘কি হয়েছে কাকু?’ গোলককে ভিড় থেকে একটু সরিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করল তাল্লু

     ‘আরে, আর বল কেন? যত বলছি আমাকে একটু দারোগাবাবুর সাথে দেখে করতে দিন, একটা জরুরি কথা আছে, থানার পুলিশরা শুনছেই না! কি কান্ড! ধ্যাৎ! এভাবে কি করে তদন্ত হবে? তবে তুমি তো আমাদের পাড়ার গোয়েন্দা! তোমাকে বলতেই পারি।’ এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে একটু জিরিয়ে নেন গোলক

     ‘কিন্তু, কি জরুরি কথা কাকু?’ তাল্লুর প্রশ্নের উত্তরে থমকে গিয়ে গোলক বললেন – ‘জানো তো! আমারও গোয়েন্দাগিরিতে খুব ইন্টারেস্ট। রিটায়ারমেন্টের পরে এখন আমি রাতদিন গোয়েন্দা গল্প পড়ি, আর’ হঠাৎ গলার স্বর খাদে নামিয়ে বললেন গোলক – ‘আর সেই নিয়েই আমার গিন্নীর সাথে কি অশান্তি। তার বক্তব্য এখন আমার ধম্মকম্মোর বই পড়া উচিত, তা না করে কিনা গোয়েন্দা গল্প পড়ছি! কি যে সমস্যা! বল তো ভাইপো, এভাবে কি বাঁচা যায়? যেখানে যাই সেখানে খ্যাঁদানি! পুলিশকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলব ভেবে এলাম, তা ঢুকতেই দিল না!’

     ‘কিন্তু বললেন যে আমাকে বলবেন? বলবেন না?’ তাল্লু যেন আকুল হয়ে ওঠে এবার। তাল্লুর কথার উত্তরে গোলক যা বললেন তা গল্পের শুরুর পরশুরাতের সেই ঘটনা। টঙ্কার গান, কুকুরের ডাক ইত্যাদি। কিন্তু তারপর গোলক যেটা বললেন সেটা শুনে অবিশ্বাস, বিশ্বাস, উচ্ছ্বাস সব মিলিয়ে তাল্লুর মাথার চুল খাড়া হয়ে উঠল।

     গোলক নাকি নিজের চোখে জানালার খড়খড়ি দিয়ে দেখেছেন যে টঙ্কা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় পর তাকে ঘিরে শাকচুন্নীর মত দেখতে এক প্রাণী ও তার সাথীরা নিজেদের মধ্যে বিচিত্র ভাষায় কিঞ্চিৎ বাক্যালাপ করেছিল। তারপর শাকচুন্নী বাদে বাকি প্রাণীরা রূপ পাল্টে পাল্টে হয়ে গেল টঙ্কেশ্বর! অজস্র টঙ্কেশ্বর গুপ্ত!

     এরপর হুশ করে টঙ্কাকে কোলে নিয়ে আকাশের চাঁদে নিয়ে চলে গেল শাকচুন্নী এবং নকল ‘টঙ্কা’রা কিসব বলল – ‘ব্যাঙাচি উচ্চিংড়ে ৪২০’ আর তারপরই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল! একজন তো সোজা ঢুকে গেল টঙ্কার বাড়িতেই!

     ‘তুমিই বল অমাবস্যার রাতে চাঁদ কোথা থেকে উঠবে? অ্যাঁ?’ গোলক বলে উঠতেই তাল্লু বলে উঠল – ‘আপনি ঠিক দেখেছিলেন কাকু?’

     খেঁকিয়ে উঠলেন গোলক – ‘তোমার মত গোয়েন্দার মুখে এই কথাটা কি মানায়? তাও আবার প্রশ্নটা করছ আমাকে? এই গোলক আচার্যকে? এইজন্যই তো সবাইকে সব কথা বলতে নেই! বিশ্বাসই করল না! ধুর! আমি যাচ্ছি!’

     গোলকের হাত টেনে ধরে তাল্লু নরম স্বরে বলে উঠল – ‘সেকি কাকু! আমার উপর রাগ করবেন না প্লিজ! আপনি যা দেখেছেন তা কিন্তু সাংঘাতিক! এতো সাধারণ ঘটনা নয়! আমার মনে হচ্ছে সোনা চুরিতে ভিনগ্রহীদের হাত আছে!’

     ‘সেকি ভীনগ্রহী? আমি তো ভেবেছি কোন ম্যাজিক জানা ডাকাতদলের কান্ডকারখানা!’ হাঁ হয়ে যান গোলক

     ‘কাকু, আমি একটু পরে থানায় আবার এলে আপনি আসবেন তো? আপনি কিন্তু প্রধান সাক্ষী!’ তাল্লু এ কথা বলতেই গোলক বললেন – ‘নিশ্চয় আসব। আসব না মানে? টঙ্কেশ্বরের সাথে মাঝে মাঝে ঝগড়া হলেও ও আমার প্রিয় বন্ধু। ওকে উদ্ধার করতেই হবে!‘

     ‘তাহলে ঘন্টাখানেক বাদে আমি আপনাকে বাড়ির কাছে গিয়ে ডাকব!’ গোলককে এই কথা বলে বাড়ি ফিরে আবার পড়াশোনা করতে বসল তাল্লুকিন্তু মাথার মধ্যে ঘুরছে অন্য চিন্তা।

     ‘এ নিশ্চয় কোন ভীনগ্রহীর কাজ! এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস!’ ভাবতে ভাবতে কি মনে হওয়ায় একটু বাদে ফোনে গুগল সার্চ করে ভীনগ্রহীদের সম্বন্ধে বেশ কিছুক্ষণ নানারকম খবর, প্রবন্ধ ইত্যাদি দেখল সে

     তারপর একটু খেয়ে নিয়ে গোলকের বাড়িতে গিয়ে কড়া নাড়তেই ধড়াম করে দরজা খুললেন এক জাঁদরেল মহিলা। দেখলে মনে হয় ডব্লিউডব্লিউইর যে কোন কুস্তিগীরকে অনায়াসে হারিয়ে দিতে পারেন!

     ‘গোলক কাকিমা, কাকু বাড়ি নেই?’ তাল্লু ভয়ডরহীন ভাবে প্রশ্নটা করতেই কাকিমা তেড়েমেরে বলে উঠলেন – ‘তোর অপেক্ষাতেই তো এতক্ষণ ছিলাম রে! আমার বরকে ভুজুং দিয়ে তুই থানায় টেনে নিয়ে যেতে চাস? এত বড় সাহস?’

     ‘কিন্তু, আমি তো টেনে নিয়ে যাইনি, কাকু তো নিজেই’ তার কথা শেষ হওয়ার আগেই গোলক কাকিমা ঘুষি পাকিয়ে বলে উঠলেন -‘আমার স্বামী ভালমানুষ! সব কথা আমাকে বলে দিয়েছে! ওসব ভূতপ্রেতের ব্যাপারে ও নেই! আমি ওকে পাঠিয়েছি ছগন ওঝার কাছে! পরশুরাতে জানালা দিয়ে গোপনে ‘তেনাদের’ কান্ডকারখানা দেখতে গিয়ে ওরও লিচ্চয় অশুভ বাতাস লেগেছে! ওর ভূতের ভর হয়েছে! এখন যা এখান থেকে দূর হয়ে! নইলে মুখে নুড়ো জ্বেলে দেব!’ দুম করে মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেওয়ার পর অপমানে যখন তাল্লুর কানটান লাল হয়ে উঠেছে আর মনে মনে ভাবছে – ‘সত্যি, গোয়েন্দাগিরি করতে গেলে মানসম্মান সব জলাঞ্জলি দিতে হয়!’ ঠিক তখনই ও শুনতে পেল কে যেন ওকে ডাকছে খুব আস্তে আস্তে। এদিক ওদিক তাকাতে দেখল গোলক নিজের বাড়ির দোতলার জানালায় দাঁড়িয়ে তাল্লুকে ইশারা করছেন। তারপর একটা কাগজ টুক করে ছুঁড়ে দিলেন তাল্লুর হাতে এবং করুণ মুখে হেসে চলে গেলেন ভিতরে।

     কাগজটা খুলে তল্লাশ দেখল লেখা আছে – ‘স্নেহের তাল্লু, তোমার খুড়িমা আমাকে বন্দি করিয়াছেন। আপাতত আমার পুলিশের কাছে যাওয়া অসম্ভব! তবে সেদিন টঙ্কাকে অপহরণের ঘটনার আমি একমাত্র সাক্ষী সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই! তবে পুলিশকে বলিও অন্য কোন সময়ে আমি তাঁহাদের কাছে জবানবন্দি দিতে প্রস্তত যদি তাঁহারা আমাকে এসে এখান থেকে উদ্ধার করিয়া ভেঁপু বাজাইতে বাজাইতে মিছিল করিয়া থানায় নিয়ে যেতে পারে! তবেই সহধর্মিণীর কাছে আমার মান রক্ষা হইতে পারে, নচেৎ নয়!

     আমার আশীর্বাদ তোমার উপর সদাই বিরাজমান! ব্যোম শঙ্কর!

     ইতি শ্রী শ্রীল শ্রীযুক্ত গোলক আচার্য

     অতঃপর, আবার থানা!

     থানায় গিয়ে অনেক অনুরোধউপরোধে ঢোকার অনুমতি মিলল তাল্লুর। তারপর কাঁচা ঘুম ভেঙে যাওয়া বিরক্ত চোখে থানার দারোগাবাবু এক হাবিলদারকে হুঙ্কার দিলেন!

     ‘এই হাবিলদার, পাড়ার এই খোকাবাবু ওই সোনাচোরের সাথে দেখা করতে এসেছে। একবার চোরের চাঁদমুখটা একে দেখিয়ে দে তো!’ বলেই দারোগা ভজনলাল মান্না চেয়ারে বসে বসে নাক ডাকাতে লাগলেন। এই বিদঘুটে চেহারার দারোগাকে দেখে তাল্লুর মনে হল এঁর নাম কুম্ভকর্ণ হলেই মানাত!

     টঙ্কার সেলের কাছে নিয়ে যেতেই তিনি তল্লাশকে দেখে বলে উঠলেন – ‘আরে আরে জগমোহন এস এস এস এস! শুনতে পেলাম পোস্তা গিয়ে তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে?’

     -‘সেকি টঙ্কাকাকু! আমাকে জগমোহন বলছেন কেন? আমি তো তাল্লু! পরশুদিনই আমরা একসাথে দানুদার দোকানে চা খেলাম, আমি আপনার ছবি তুললাম! ভুলে গেলেন?’ শঙ্কিত কন্ঠে প্রশ্ন করল তাল্লু

     এদিকে টঙ্কার কান্ড দেখে থানার কনস্টেবল হুতোম সিং খৈনি খেতে খেতে চুপিচুপি আরেক কনস্টেবল ঘন্টাকর্ণ দে কে বলল– ‘লাগতা হ্যায় ইয়ে আদমি গিরেফতারের জন্য পাগলা হয়ে গেছে!‘

     ঘন্টাকর্ণ গম্ভীরমুখে বলল– ‘পাগলের অভিনয়ও করতে পারে!‘

     কিন্তু, এবার তাল্লু গম্ভীর মুখে টঙ্কার কাছে গিয়ে বললেন– ‘আপনার নাটক অনেকক্ষণ ধরে দেখছি! এবার সত্যি কথা বলুন তো আপনি কে? কি চান? কি? আপনার জন্য টঙ্কাকাকুর মত এক ভদ্রলোককে কষ্ট পেতে হচ্ছে। তিনি কোথায়? তাঁকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন?’

     -‘কারো কেউ নইকো আমি, কেউ আমার নয়!’ গানে গানে জবাব দিলেন টঙ্কা

     হঠাৎ ফিক করে হেসে বললেন– ‘ব্যাঙাচি! ব্যাঙাচি! উচ্চিংড়ে! ৪২০’

     হুতোম সিং এগিয়ে এসে তাল্লুকে বলল– ‘ওসব শুনো না খোকাবাবু! বাড়ি যাও! মন লাগাকে পড়াই করো! যাও, বাবু!’

     কিন্তু তাল্লু যেন সিংহ হয়ে টঙ্কার সেলের গরাদ ধরে বলল– ‘ওরে ভিনগ্রহী! কি ভেবেছিস তুই? আমাদের ফ্যাচাংপুরে এসে যা ইচ্ছে তাই করবি? আমি থাকতে তা হতে দেব না! না! না! শুনুন দারোগাবাবু! টঙ্কাকাকুর পড়শি গোলককাকু, টঙ্কাকাকুর অপহরণের ঘটনার একমাত্র সাক্ষী। তিনি আজ আমাকে এই চিঠি দিয়েও জানিয়েছেন সে কথা! তাঁকে নিয়ে নিয়ে এলে এই রহস্যের পর্দা অনেকটা ফাঁস হবেই!’

     তাল্লুর কথায় সারা থানাতে যেন বোমা ফাটার মত শব্দে সব পুলিশকর্মীরা একসাথে হেসে উঠল! কিন্তু তবু তাল্লু জোর করে ঘণ্টাকর্ণর হাতে গোলকের চিঠিটা দিয়ে দিল।

     ‘খোকাবাবু রাতদিন টিভিতে কার্টুন ফিল্ম দেখে দেখে একদম পাগলু হয়ে গেছে!’

     হুতোম সিং হেসে লুটোপুটি হতে হতে বলল।

     কিন্তু, ইত্যবসরে ঘন্টাকর্ণ ভজনলাল দারোগাকে ঘুম থেকে তুলে কানে কানে বলল– ‘স্যার এই ছোকরা যা বলছে সেটা করলে নাকি কেস সলভড হয়ে যাবে! একবার এই চিঠিটা দেখুন! টঙ্কার পড়শী গোলকের লেখা!’

     অত্যন্ত বিরক্ত মুখে চায়ের অর্ডার দিয়ে ভজনলাল চিঠিটা পড়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন।

     মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই থানার আশেপাশের অঞ্চল ভেঁপুর আওয়াজে কাঁপিয়ে তুলে ‘উন্নত শির’এ এমন ভঙ্গীতে থানায় ঢুকলেন গোলক, মনে হল ঠিক যেন বিশ্বকাপ ফাইনালে লিওনেল মেসি মাঠে খেলতে নেমেছেন!

     আর তাকে দেখেই ‘টঙ্কা’ বলে উঠলেন– ‘এই যে এসে গেছে পান্তভূতের জ্যান্ত ছানা!’

     ‘দেখ! তুমি যে একটি ভেকধারী তা আমি জানি জানি জানি! আমাকে ধোঁকা দিতে পারবেই না! হা হা হা!’ উল্লাশে বললেন গোলক !

     থানার কর্মচারীরা আবার একপ্রস্থ হাসার আগেই তাল্লু সমগ্র থানার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল– ‘গোলক কাকু একদম ঠিক বলেছেন! এবার রহস্যের পর্দা ফাঁশ!’

     কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে ‘টঙ্কা‘ বলে উঠলেন– ‘আরে! আমারও রহস্য হেব্বি লাগে! বলে যাও!’

     কিন্তু তাল্লু পরোয়া না করে গলা ছেড়ে চোখ বুজে বলে উঠল– ‘পুলিশগণ! আমাদের এই পৃথিবীতে বহুকাল ধরেই ভিনগ্রহীরা আসছে, কখনও জানিয়ে কিংবা কখনও চুপিসারে! আজ তার চাক্ষুস প্রমাণ দেখে নিনইনি আদৌ টঙ্কেশ্বর গুপ্ত নন। ইনি একজন আদি এবং অকৃত্রিম ভীনগ্রহী। বল ভিনগ্রহী তোর সাথীরা কোথায়? বল!‘

     আরেকবার অট্টহাসি শুনে তাল্লু চোখ খুলতেই দেখল কুম্ভকর্ণ, থুড়ি দারোগা ভজনলাল চায়ের পেয়ালা হাতে প্রাণখুলে হাসছেন!

     ‘হাসালেন মশাই! ভীনগ্রহী? ওরে সবাই শোন, এই খোকাবাবু বলছেন যে আমরা নাকি সোনা চুরি করার জন্য এক ভীনগ্রহী প্রাণীকে পাকড়েছি! বহুদিন পরে হাসলাম! হা হা হা!’

     রেগেমেগে তাল্লু বলল-‘আপনি জানেন আজও পেরুর চিল্কা শহরে রাতের আঁধারে ভীনগ্রহীরা হানা দেয় খনিজ পদার্থের খোঁজে? জানেন, বহু গবেষকের মতে প্রাচীন গ্রিক বা মিশরীয় সভ্যতার তৈরির মূলে ভিনগ্রহী শক্তি থাকার প্রবল সম্ভাবনা আছে?? জানেন আজও পৃথিবীর কতপ্রান্তে ভীনগ্রহীদের যান দেখা যায়?? তারা আসে আমাদের কাছে, কিন্তু বেশীরভাগ সময়েই আমরা তা বুঝতে পারি না! এবং গোলককাকুর কথামত পরশুদিন আসল টঙ্কেশ্বরকে অপহরণ করার আগের মুহূর্তে সেই ভীনগ্রহীরা নিজেদের মধ্যে যে বাক্যের আদানপ্রদান করেছিল তার মধ্যে এই শব্দগুলোও ছিল– ‘ব্যাঙাচি উচ্চিংড়ে ৪২০’

     আমার গোয়েন্দাগিরি যদি ভুল না হয় তবে এই ভীনগ্রহীরা আমাদের পৃথিবী থেকে ৪২০ আলোকবর্ষ দূরে ট্যাডপোল গ্যালাক্সি বা বাংলায় ব্যাঙাচি ছায়াপথের উচ্চিংড়ে নামের কোন গ্রহের বাসিন্দা!‘

     তাল্লুর এই কথা শুনে সারা শরীর কাঁপিয়ে ভজনলাল খ্যা খ্যা করে আবার হাসতে আরম্ভ করলেন।

     -‘আপনি কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে আমাকে ভীষণ অপমান করছেন। আপনি জানেন কার সাথে কথা কইছেন? আমি হলাম আগামীদিনের গোয়েন্দাচূড়ামনি তল্লাশ কর! ‘এবার রেগেই গেল তাল্লু!

     -‘ধুর মশাই! এক চোরচূড়ামণির সঙ্গে দেখা করতে এসেছে এক পাগল ‘গোয়েন্দাচূড়ামণি’যান যান! বাড়িতে গিয়ে রেস্ট নিন। নইলে…‘ তাল্লুর কথা কেয়ার না করে বললেন ভজনলাল দারোগা।

     -‘নইলে কি?’ এবার শান্ত স্বরে তাল্লু প্রশ্ন করে

     ‘দেখুন, দারোগাবাবু আমি নিজের চোখে দেখেছি এক শাকচুন্নী আর তার শাগরেদরা টঙ্কাকে কিডন্যাপ করে তার মত রূপধারণ করল! আর আপনি বলছেন তা মিথ্যা? এ প্রচন্ড অন্যায়!!’ হাত পা কাঁপিয়ে গোলক বলার সাথে সাথেই সরু চোখে ভজনলাল চায়ের পেয়ালা হাতে বললেন– ‘এই যে এতক্ষণে ভেঁপুসর্দার গর্জন করেছেন! ভেঁপু বাজিয়ে তাঁকে থানায় আনতে হয়েছে! তিনি তো নিজেকে অমিতাভ বচ্চন মনে করেন কিনা! হুতোম! ঘন্টা! বাঁকেলাল!’ সবকটাকে জেলে পোর! তারপরে বাকি কথা!’ ভজনলাল এবার ‘স্পট জাম্পিং’ করে এই আদেশ দেন! তারপরে বাকি চাটা শেষ করতে গিয়ে দেখেন যে লাফানোর ফলে সব চা সারা থানায় ছিটাবৃষ্টির মত ছড়িয়েছে এবং গোলক সবথেকে বিরক্ত মুখে দাঁড়িয়ে আছেন কারণ ভজনলালের খুব কাছে দাঁড়ানোয় চায়ের বৃষ্টির বেশীরভাগ অংশটা তিনিই পেয়েছেন!

     ‘ওরে আমার কেরে, এলি সিং নেড়ে!বজ্রবাঁটুল দারোগা আমাকে জেল থেকে বেরতে দে না! তোকে যদি কুস্তির প্যাঁচে না ঠান্ডা করেছি,তবে আমার নাম ‘আচমকা টঙ্কা বা টঙ্কার রূপধারী ব্যক্তির পিলে চমকানো চিৎকারে ভজনলালের হাতের পেয়ালাটাই এবার ‘জাম্প’ করে ওঠে তাঁর হাতে!

     -‘সেটাই তো জানতে চাইছি আপনার নাম কি?’ তাল্লুর প্রশ্নের উত্তরে হেসে বলে ওঠেন ‘টঙ্কা’– ‘কি ব্যাপার জগমোহন? পান্ত ভুতের জ্যান্ত ছানার মত তুমিও এত উতলা কেন? সত্যি বলছি বাংলা ভাষাটা সবে শিখে এই ভাষার প্রেমে পাগল হয়ে গিয়েছি!’

     সবে বাংলা ভাষা শিখেছেন? আচ্ছা টঙ্কা কি সত্যিই পাগল হয়ে গিয়েছেন?

     হুতোম আর ঘন্টা এসে তাল্লুর হাত চেপে ধরতেই ক্রুদ্ধ তাল্লু চীৎকার করে ওঠে– ‘উনি যদি সত্যিই টঙ্কেশ্বর হ’ন, তাহলে ওঁর নাকের ডানপাশের তিলটা কি করে বাঁ পাশে চলে গেল? দারোগাবাবু!! সিসিটিভি ফুটেজেও সেই এক ব্যাপারডানপাশের তিল চলে গেছে বাঁপাশে! দুদিন আগেই দানুদার চায়ের দোকানে আমি আমার মোবাইলে টঙ্কাকাকুর ছবি তুলেছিলামসিসিটিভি ফুটেজ থেকে পাওয়া ছবির সাথে সেটা মিলিয়ে দেখুন! এই দেখুন।‘

     তাল্লুর মোবাইলে টঙ্কার ছবি দেখে ভজনলাল যেই ‘টঙ্কা’র দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়েছেন হঠাৎ দেখা গেল জেলের গরাদ ধরে দাঁড়িয়ে থাকা টঙ্কার বাঁহাতের কব্জি থেকে যেন একটা আলো বেরিয়ে আসছে আর দেখতে দেখতে তিনি পাল্টে গেলেন! টঙ্কা নন! তাঁর বদলে দাঁড়িয়ে আছে কুলোর মত পিঠ আর মুলোর মত কানওয়ালা এক অদ্ভুত জীব!! পরনে শুধু ধুতিআর বাঁহাতের কব্জীতে সেই আলোর বদলে বাঁধা বিরাট ঘড়ির মত দেখতে একটা যন্ত্র।

     ‘এই ত! এরাই আমার জিগরি দোস্তকে হাপিশ করেছে রে!’ বলে হাউহাউ করে কাঁদতে থাকেন গোলক!

     ‘ওরে বাবারে! ভূত!’ বলে হাবিলদার ঘণ্টাকর্ণ তার সহকর্মী হুতোমের কোলে লাফিয়ে উঠতেই সে ঘন্টাকে ফেলে দিয়ে দিয়ে ‘আরে রাম রাম সিয়ারাম! ই তো পিরেত আছে রে!!’ বলতে বলতে এক লাফে থানার বাইরে! আর ঘণ্টাকর্ণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যে ভাবে কাঁপতে লাগল, সেটা কুচিপুরী না ভরতনাট্যমকোন প্রকারে নাচ তা নিয়ে একটা গবেষণা হতেই পারে!

     কিন্তু ঘুমতে পছন্দ করলে কি হবে, দারোগা ভজনলাল আসলে যে বেশ কড়াপাকের, তা এবার বোঝা গেল!

     ‘আপনি কি আমায় ম্যাজিক দেখাচ্ছেন থানায় এসে? এই ঘন্টাকর্ণ, হুতোম সিং, এই মুহূর্তে এই দোঠো আদমি কো অ্যারেস্ট কর!! এরা ওই সোনাচোরের শাগরেদ! ভাঁওতাবাজি করে জেল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে এসেছে!’ রাগে ফেটে পড়ে ভজনলাল লাফাতে থাকেন মেঝের উপরে!

     কিন্ত কে করবে গ্রেপ্তার? ঘণ্টাকর্ণ, হুতোম বা বাকিরা কেউই এগতে সাহসই করল না!

     আর এসব কথায় বিন্দুমাত্র পরোয়া না করে সেই প্রাণীকে বুক ফুলিয়ে তাল্লু প্রশ্ন ঠুকে বসল– ‘এতক্ষণে চাঁদুর আসল চেহারা দেখলাম! বলতো তোমার আসল পরিচয় কি? আর টঙ্কাকাকু কোথায়??’

     ‘…আমার নাম..’ তাল্লুর প্রশ্নের সম্পূর্ণ জবাব দেওয়ার আগেই সেই কিম্ভূত জীবের হাতের ঘড়ি বেজে উঠল! ওটা আসলে এক ধরণের ফোন।

     ঘড়ি, মানে ফোনের ওপারের ব্যক্তির সাথে বিচিত্র সব শব্দের আদানপ্রদান হতে লাগল তারফোন রেখে তাল্লুর দিকে তাকিয়ে সে বলে উঠল– ‘আপনাদের কান্ডকারখানা দেখে আমার খুব মজা লেগেছে! হা হা! কিন্তু দুঃখের বিষয় আর থাকতে পারবু নি! এবার আমার যাওয়ার সময় উপস্থিত।‘

     -‘আরে যাবি বললেই কি ছাড়া পাবি নাকি? মনে আছে তোকে কিভাবে তোর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছিলাম? ভুলে গেছিস নাকি রে?’ ভজনলাল রেগেমেগে বলে উঠলেন।

     কিন্তু, প্রাণীটা মিচকি হেসে ‘তা কি ভুলতে পারি?’ বলে জেলের গরাদে তার লম্বা লম্বা আঙুল ছোঁয়াতেই তা খুলে গেল!

     তারপর থানার মধ্যে পালকের মত উড়তে লাগল আর ভজনলালকে কলা দেখিয়ে বলতে লাগল– ‘আমার হাতের ঘড়ির শক্তি কমে যাওয়াতেই আমাকে ধরেছিলি রে মূঢ়!

     নইলে আমাদের কেউ ধরতে পারে না! ধরতে পারে না!!’

     পাগলের মত ভজনলাল বন্দুক তাক করতেই সেই প্রাণীর হাতের ইশারায় তাঁর হাত থেকে বন্দুক লাফিয়ে উঠে শূন্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নাচতে লাগল!

     প্রাণীটা উড়তে উড়তে হঠাৎ তাল্লুর দিকে ফিরে খুব বিনীতভাবে বলল– ’১০ কিলোমিটার দক্ষিণদিকে যে জলা আছে সেখানে গেলে সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন, ভাই! এখন আমি যাই! টা টা!’ বলে হুশ করে উড়ে চলে যেতেই ভজনলাল হুঙ্কার করলেন—‘মেরা জিপ নিকালো!’

     ‘এসব তো স্পিলবার্গের সিনেমায় দেখেছি। এ কি সত্যি?’ জলার ধারে আকাশ থেকে নেমে আসা আলোয় ভেসে যেতে যেতে মন্তব্য করলেন ভজনলাল।

     এতো সত্যিই কল্পনার অতীত! আজ চাঁদ যেন মাটির কাছে নেমে এসেছে। কিন্তু একে তো চাঁদ বলা যাবে না। এখানে যেন এক কর্মশালা চলছে। আর সেই চাঁদের গায়ে সিঁড়ি লাগিয়ে ওঠানামা করছে অনেক প্রাণী যারা প্রত্যেকেই কুলোর মত পিঠ আর মুলোর মত কানওয়ালা এক অদ্ভুত জীব! আর… আর এদের মধ্যিখানে ছোটাছুটি করছেন টঙ্কা এবং এক প্রাণী, যাকে দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না ইনিই টঙ্কার ‘অপহরণকারী’ সেই ‘শাকচুন্নী’পুলিশের লোকরা হাঁ করে বসে আছে। আর গোলকের মুখে কোন কথা নেই!

     আসলে সব দেখে বুঝে এদের হাঁ করে বসে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

     জিপ চালিয়ে তাল্লু এবং গোলক সমেত পুলিশফোর্স নিয়ে ভজনলাল জলার ধারে উপস্থিত হওয়ার পরেই থানার সেই নকল টঙ্কারূপী প্রাণীর সাথে এগিয়ে এসে তাঁদের সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল ‘শাকচুন্নী’

     ‘স্বাগতম! ব্যাঙাচি ছায়াপথের উচ্চিংড়ে গ্রহের তরফ থেকে আমি আপনাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি!’ শাকচুন্নীর মুখে এরকম পরিশীলিত বাংলা ভাষা শুনে তাল্লু তো অবাক!

     ‘আর আমার নাম হল JGB9, আপনারা আমাকে আপনাদের উচ্চারণের সুবিধার্থে জগবন্ধু বা জগুও বলতে পারেন!’ থানায় টঙ্কার রূপধারী সেই প্রাণী করজোরে নিবেদন করল।

     ভজনলাল আবার রেগে গিয়ে বললেন– ‘যাত্রাপালার মত মেকআপ নিয়ে এসব কি হচ্ছে? আমার এরিয়ায় কোন অকাজকুকাজ আমি সহ্য করি না! ব্যাঙাচিট্যাঙাচি! ইয়ার্কি হচ্ছে আমার সঙ্গে? এই বুড়োবাবু (গোলক কে দেখিয়ে) নাকি সেদিন এসব শুনেছিল আর এই খোকাবাবুও এই কথা বলছিল! সবকটাকে একসাথে জেলে পুরব!’

     ‘শান্ত হন! আমি বুঝিয়ে বলছি!’ কোথা থেকে গোলাপ হাতে হঠাৎ উদিত সূর্যের মত আবির্ভূত হলেন এবার টঙ্কেশ্বর গুপ্ত!

     ‘আরে এই তো আমার প্রাণের দোস্ত টঙ্কা!’ বলে টঙ্কাকে জড়িয়ে ধরলেন গোলকদুই বন্ধু কিছুক্ষণ কোলাকুলি করার পর টঙ্কা কথা বললেন।

     ‘জগু আমাকে বলেছে তাল্লু দুর্দান্ত গোয়েন্দা! ঠিক এদের আদিনিবাস কোথায় বুঝে গেছে! ওয়ান্ডারফুল তল্লাশ! আই অ্যাম প্রাউড অফ ইউ মাই বয়! আর আমার বন্ধু গোলকের জবাব নেই!

     আমাদের গ্রহের এই অতিথিরা সত্যিই ৪২০ আলোকবর্ষ দূরে Tadpole Galaxy বা ব্যাঙাচি ছায়াপথের উচ্চিংড়ে গ্রহ থেকে এসেছেনইনি হলেন সেই গ্রহের রানি KDM9, তবে আমি নাম দিয়েছি কাদম্বিনী! আমার কাদু!’ গদগদ স্বরে বলে উঠলেন টঙ্কা

     ভজনলাল এবার ধপ করে মাটিতে বসেই পড়লেন আর সঙ্গে নিয়ে আসা ফ্লাস্ক থেকে একটা কাপে চা ঢেলে নিয়ে খেতে লাগলেনশুধু চা পানের গতি দেখা গেল ভীষণ তীব্র! গোলকও হঠাৎ ছুটে গিয়ে ঢাকনা টেনে নিয়ে দারোগার হাত থেকে ফ্লাস্ক নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিয়েছেন– ‘একটু চা দিন! একটু চা দিন’ বলে!

     রানি কাদম্বিনী বিচিত্র পেঁচানিসুলভ কন্ঠে বলে চলেছেন– ‘আসলে আমরা এই গ্রহের পরিমণ্ডল দিয়ে যাওয়ার সময়, আমাদের মহাকাশযান, যাকে আবার আপনাদের গ্রহের উপগ্রহ চাঁদের মত দেখতে, হঠাৎই খারাপ হয়ে যায়। আর’

     এবারে রানির কথার মাঝেই জগু বলে উঠল– ‘আর আমাদের যান সারানোর জন্য প্রয়োজন ছিল সোনার। আপনারা এখানে যেমন সোনার গয়না পরেন, কিন্তু আমাদের গ্রহে সব সারাই মেরামতির জন্য প্রয়োজনীয় হল সোনা! কিন্তু আমাদের কাছে সোনা ছিল না স্টকে! কোথায় পাব? পৃথিবীতে নেমে এলাম। জানি এখানে সোনার কদর খুব বেশী।‘

     -‘! এবারে বুঝলাম কেন সোনাচুরির হিড়িক পড়েছে। কিন্তু টঙ্কাবাবুর এতে কি ভূমিকা?’ ভজনলালের প্রশ্নের পরেই জগু বলল– ‘আমরা তখন এই ফ্যাচাংপুর অঞ্চলের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ যান বিগড়ে যাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে আমরা নেমে পড়তে বাধ্য হই। আর নেমে হাঁটার সময় গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকা টঙ্কাকে দেখে ফেলি এবং সঙ্গে সঙ্গে তার ঘেঁটি চিমটে ধরে তুলে ফেলি, কারণ আমাদের একজন পৃথিবীর মানুষের মানসিক এবং জৈবিক লিঙ্কের প্রয়োজন ছিল। আর–‘

     -‘আর উনি সবদিক থেকে যোগ্য!‘ কথাটা বলেই রানি যেন কিরকম আরক্তিম হয়ে ফিক করে হেসে উঠলেন!

     সেই হাসিতে আলোরিত জগু বলে উঠল– ‘আসল কথাটা শুনুন দিকি! আমাদের রানির টঙ্কাকে খুব মনে ধরেছে! আমরা যে কোন রূপধারণ করতে পারি। তাই টঙ্কাকে দেখেই আমাদের মাথায় খেলে গেল যে আমরা এর রূপ ধরেই নির্দিষ্ট সোনা সংগ্রহ করে টঙ্কাকে নিয়েই উচ্চিংড়ে গ্রহে ফিরে যাব।‘

     জগুর কথা শেষ হতে না হতেই গোলাপ হাতে টঙ্কা এবার বললেন– ‘আমিও তাই চাই। কিন্তু, কাদু, মানে রানি তাতে রাজি নয়। বলছে আরো কিছুদিন পরে! এখন নাকি মাঝেই মাঝেই ওরা আমার সাথে দেখে করতে আসবে! আহা কি আনন্দ! সেদিন গাছের আড়াল থেকে কিছু বোঝার আগেই হুশ করে এরা আমাকে নিয়ে এসেছিল এদের যানের ভিতরকিন্তু,আমাকে যা খাতির করেছে না! এদের ব্যবহারে আমি মুগ্ধ! সেইজন্য আমি আমার মানসিক জৈবিক ভাবধারা সব ওদের দিয়ে দিলাম!’ এইবার টঙ্কা প্রাণের উচ্ছ্বাস আর চাপতেই পারেন না!

     জগুর কথা শেষ হতে না হতেই এক প্রাণী চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলল— ‘রানিমা! যান মেরামত হয়ে গেছে! সময় হয়ে গেছে প্রত্যাবর্তনের!

     তারপরেই রানি কেমন যেন উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তাঁর ঠোঁট কাঁপতে থাকল থরথর করে, আর চোখ দিয়ে জলের মত কি যেন একটা গড়িয়ে পড়ল।

     আর টঙ্কা লাফিয়ে উঠে হাতের গোলাপ নিয়ে রানির কাছে গিয়ে বললেন– ‘কাদম্বিনী কেঁদো না! কেঁদো না কাদু! আমি তোমার সাথে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত! চল যাই প্রিয়ে!’

     ‘তা হয় না টঙ্কেশ্বর! আমি আসব মাঝে মাঝেই! তবে পরে তোমায় নিয়ে আমি যাবই! এই নাও, এই যন্ত্রের সাহায্যে আমাদের যোগাযোগ অক্ষুণ্ণ থাকবে! বিদায় প্রিয়!’ রানি টঙ্কার বাঁ-হাতের কব্জীতে সেই বেঢপ আকৃতির ঘড়ির মত দেখতে একটা ‘ফোন’ বেঁধে দিলেন

     ‘এদের রোম্যান্স দেখে আমার উত্তমসুচিত্রার আর রাজ কাপুরনার্গিসের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে! আহা! চোখের জল আর সামলে রাখা যাচ্ছে না!’ গোলক বলার সাথে সাথেই ‘নিন আপনাদের আমি আর কিচ্ছু বলব না! যা টঙ্কাকাদু জি লে আপনি জিন্দেগী!’ – ফোঁচ ফোঁচ করে কেঁদে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’র অমরীশ পুরীর বিখ্যাত সংলাপটা একটু পালটে বললেন ভজনলাল।

     আর বিদায়ের ক্ষণে টঙ্কা কম্পিত হস্তে গোলাপটা রানির হাতে তুলে দেন।

     এইবার যান ছাড়ার সময় হয়ে গেছে।

     সবাই যখন বিদায় জানিয়ে যানে উঠে যাচ্ছে

     তাল্লু হঠাৎ ছুটে সামনে গিয়ে বলল -‘কিন্তু, রানি কাদম্বিনী! একটা প্রশ্ন! এত সোনা যে লস গেল তার কি হবে??’

     ‘! সেটা তো মাথা থেকেই বেরিয়েই গিয়েছিল! এই নিন! এতে ক্ষতিপূরণ মেটানোর পর যা বাঁচবে আপনারা নিজেরা ভাগ করে নেবেন! আমাদের গ্রহে এই বস্তু অঢেল! ঠিক আপনাদের পৃথিবীর বালির মত! বিদায় বন্ধুগণ!’ কাদম্বিনী যান থেকেই কিসব ছড়িয়ে দিলেন তাল্লুদের দিকে!

     টঙ্কার এসবে অবশ্য কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি হাত তুলে হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে রইলেন চন্দ্রসম মহাকাশযানের দিকে যতক্ষণ না তা অদৃশ্য হয়ে যায় চোখের সামনে থেকে। তাল্লুও কিরকম যেন আনমনা হয়ে গেল।

     ‘এ আমি কি দেখছি! আমি যে এবার ভির্মি খাব!’’ আমি কি বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি রে টঙ্কা!’ ভজনলাল এবং গোলকের যৌথ আর্তনাদে তাল্লু এগিয়ে গিয়ে রানির উপহার দেওয়া সেই বস্তুগুলো হাতে নিতেই চমকে উঠল! এ যে রাশিরাশি হীরে! তাই উনি বালির কথা বললেন! আমাদের যেমন রাশিরাশি বালি! দুর! কোথায় আমাদের বালি আর কোথায় ওদের হীরে! রাশিরাশি বালির মত রাশিরাশি হীরে ওদের গ্রহে! ওরা কত বড়লোক! হায় হায়!

     ওদিকে হীরের আলোর ছটার মধ্যে দিয়ে কবিতার মত বলে চলেছেন টঙ্কেশ্বর– ‘প্রেম! বড় মধুর! কভি কাছে কভি সুদূর!’ আবেগের চাপে উনি হিন্দি বাংলা মিশিয়ে ফেলেছেন। বলে চলেছেন

     ‘এসবই তুচ্ছ আমার আর কাদুর প্রেমের কাছে! আমার সুদূর গ্রহের কাদু গো!’

     জলার ধার মুখরিত হয়ে উঠল টঙ্কার কন্ঠে।

     টঙ্কার কান্নাকে বিদীর্ণ করে উচ্চকিত কন্ঠে তল্লাশ বলে উঠল সবাইকে

     ‘আমার কাজ শেষ! মেকানিক্সের অনেক ইক্যুয়েশান, ইলেক্ট্রোম্যাগ্নেটিজমের অনেক থিয়োরি এখন আমার জন্য অপেক্ষা করছে। সামনেই আমার পরীক্ষা।

     হীরকবন্টন, ঝঞ্ঝা মিটমাট বাকি সব দারোগাকাকুর! আমার এখন ছুটি। তাহলে? চলি! গুডবাই! টাটা!’

     আর দারোগাবাবু হুঙ্কারে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে দিয়ে বললেন– ‘চল চল সব! অনেক কাজ আছে! লেফট রাইট! লেফট রাইট! লেফট রাইট!’

     এরপরে ওরা চলতে থাকুক, চলতে থাকুক, চলুন আমরাও চলি।

     চরৈবেতি! চরৈবেতি! চরৈবেতি!

Tags: দ্বিতীয় বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, পূজাবার্ষিকী, ফ্যান্টাসি গল্প, ভীনগ্রহের স্বর্ণঝঞ্ঝা, শঙ্খশুভ্র চট্টোপাধ্যায়

3 thoughts on “ভীনগ্রহের স্বর্ণঝঞ্ঝা

  • October 7, 2017 at 1:33 am
    Permalink

    ঝঞ্ঝাই বটে, শেষ অবধি আগে এগোতে পারলুম না, অনেক জায়গা থেকে অনুপ্রাণিত হলে ব্যাপারটা এরকম এইরকম না রিসোতো না খিচুড়ি হয়ে যায় ফলে বদহজম

    Reply
  • October 10, 2017 at 7:13 pm
    Permalink

    Khub susthu bhabe parikalpito ekti lekha . Bachader janyo kalpabigyan r lekhar je prayash lekhok korechen ta satyi proshongshoniyo .. ajkal natun lekhak utchai nai tai oporer comment ta pore ektu byathitoi holam .. amader uchit uthti ei lekhokder uddipto kora , agdum bagdum samalochona kore tader manobal bhenge deoa noi

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!