অকাল তমসা পর্ব-১
লেখক: সৌমেন চট্টোপাধ্যায়
শিল্পী: দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (চিত্রচোর)
(এইচ পি লভক্র্যাফটের শ্যাডো আউট অফ টাইম অবলম্বনে)
পর্ব – ১
আমার নাম ন্যাথানিয়েল উইনগেট পিসলি। ছ’সাত বছর আগে যদি কেউ খবরের কাগজ বা বিভিন্ন সাইকোলজিক্যাল জার্নাল নিয়মিত ঘাঁটাঘাঁটি করে থাকেন তাহলে তাঁদের কাছে আমার নামটা চেনা চেনা ঠেকতেও পারে। ১৯০৮ থেকে ১৯১৩ সাল অবধি আমার স্মৃতিবিলোপ তথা স্মৃতিবিভ্রাট নিয়ে ওই সময় কাগজে বিস্তর লেখালিখি হয়েছিল। সাথে সাথে ম্যাসাচুসেটস শহরে ক্রমাগত ঘটতে থাকা ভৌতিক, অদ্ভুত ঘটনার সাথে ডাকিনীবিদ্যার যোগসাজশ নিয়েও লেখা হয়। যার সূত্রপাত ঘটে আমার বাড়িতে। আমি জানি আমার এই উন্মাদনা আমার মধ্যে বংশানুক্রমিক ভাবে আসেনি। বাইরের সমান্তরাল কোনও জগত থেকে হঠাৎ করে অন্ধকার কেন নেমে এল এই পৃথিবীর বুকে! আমার এই লেখা পড়তে পড়তে আপনিও যখন সেই উৎস সন্ধান করবেন, তখন এই তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই লেখার প্রথম দিকের অংশগুলো বাড়ি ফেরার পথে জাহাজের কেবিনে বসে লেখা। এই সব লেখাই আমি আমার মেজো ছেলে উইনগেট পিসলিকে দেবো। উইনগেট এখন মিসকাটোনিক ইউনিভার্সিটির সাইকোলজির প্রোফেসর। ওই আমার পরিবারের একমাত্র সদস্য যে আমার ওই স্মৃতি-বিভ্রাটের সময় থেকে সবসময় আমার পাশে ছিল। শুধু তাই নয় উইনগেট আমার সমস্ত কথা বিশ্বাস করেছিল এবং আমার এই বিচিত্র কেসের সমস্ত খুঁটিনাটি তথ্য জোগাড় করেছিল। আমি উইনগেটকে মুখেও বলতে পারতাম, কিন্তু আমার এলোমেলো কথা দিয়ে সবটা হয়তো বোঝানো সম্ভব নয়। এই লেখা পড়ে আসল সত্যিটা কি সেটা ও ঠিক খুঁজে বের করবে। দুঃস্বপ্ন আর আতঙ্কের মধ্যে বাইশ বছর কাটানোর পর ১৯৩৫ সালের জুলাই মাসের ১৭-১৮ তারিখ নাগাদ এক রাতে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় অবশেষে আমি খুঁজে পাই বহুযুগ ধরে সংরক্ষিত সেই প্রাচীন ভয়ংকর সূত্র। এই সূত্রের আসল সত্যি এতটাই ভয়ানক যে আমার নিজেরই মাঝে মাঝে অবিশ্বাস্য মনে হয়। যদি সত্যিই এটা ঘটতে থাকে, তাহলে পৃথিবীর আসন্ন বিপদ প্রতিরোধের জন্য গোটা মনুষ্যজাতিকে প্রস্তুত থাকতে হবে। হয়তো সেই কারণেই আমি সবকিছু বিসর্জন দিয়ে সারা জীবন খুঁজে বেরিয়েছি সেই আদিম অজানা অপার্থিব শক্তির কারিগরকে। আমার ধারনা সেই অভিশপ্ত বৃহস্পতিবার আমার যে নারকীয় অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তা আর কোনও জীবিত মানুষের হয় নি। সেই আতঙ্কের সময় আমি একা ছিলাম। আমার মানসিক সুস্থতা প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট যুক্তি আমার কাছে ছিল না। আর এখন আমি শুধু নিজের মানসিক সুস্থতা প্রমাণ করতেই নয়, সমস্ত মানুষকে সতর্ক করার জন্যই এটা লিখছি।
আমি আগেই বলেছি আমার এই উন্মাদনা বংশানুক্রমিক ভাবে আমার মধ্যে আসেনি। আমার বাবা জোনাথন আর মা হানা দুজনেই ছিলেন হ্যাভারহিল শহরের একেবারে আদ্যিকালের মানুষ। আমার জন্ম, লেখাপড়া সবকিছুই হ্যাভারহিলের গোল্ডেন হিলের কাছে বোর্ডম্যান স্ট্রীটের পৈতৃক বাড়িতে। ১৮৯৫ নাগাদ আমি মিসকাটোনিক ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ঢুকি। তার আগে আর্কহ্যামের সাথে আমার কস্মিনকালেও কোনও যোগাযোগ ছিল না। ১৮৯৬ সালে অ্যালিস সিজার বলে হ্যাভারহিলেরই একটি মেয়েকে বিয়ে করি। তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে আমাদের জীবন বছর তেরো বেশ ভালভাবেই কাটল। প্রথমে ইউনিভার্সিটির সহকারী ও পরে অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হলাম। এই সময়গুলো আমার কাজের চাপ এত বেড়ে গিয়েছিলো যে এই সব গুপ্তবিদ্যা, পরা-মনোবিজ্ঞান বা অপ-মনোবিজ্ঞান কোনও কিছু নিয়েই মাথা ঘামাবার মতো অবস্থা আমার ছিল না।
তারপর এলো সেই ভয়ংকর দিনটা। দিনটার পুঙ্খানুপুঙ্খ আমার মনে আছে। ১৪ই মে, ১৯০৮ – বৃহস্পতিবার। এইদিন থেকেই শুরু হল আমার মগজের যাবতীয় স্মৃতির ওলটপালট। ব্যাপারটা প্রথমে তেমন ভাবে টের না পেলেও পরে যখন হঠাৎ করে মৃদু আলোয় ঝড়ের গতিতে শেষ কয়েক ঘণ্টার সব দৃশ্য দেখতে লাগলাম, বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো। এলোমেলো ওই দৃশ্যগুলো আমার মাথা পুরোপুরি ঘেঁটে দিল। হঠাৎ করেই যেন কোনও অশুভ ইঙ্গিত টের পেলাম। মাথায় যেন কেউ হাতুড়ি পিটতে লাগল। আর একটা জিনিস টের পেলাম, কেউ যেন আমার মগজের যাবতীয় চিন্তাভাবনাকে দখল করে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। বেলা দশটা কুড়ি নাগাদ যখন আমি ক্লাস নিচ্ছি, হঠাৎ করেই চোখের সামনে বিদঘুটে কিছু অপরিচিত জ্যামিতিক আকার ভেসে উঠলো। ক্লাসরুমটা মনে হল যেন অন্য কোন একটা অদ্ভুত আকারের ঘর। এরপর অর্থনীতির ছ-নম্বর অধ্যায় থেকে সরে গিয়ে ছাত্রদের খুব গুরুত্ব সহকারে কি বলেছিলাম এখন মনে নেই। তবে ছাত্রদের চাউনি দেখে টের পেয়েছিলাম তারা ভয়ে হতবাক হয়ে গেছে। এরপর প্রায় অচেতন ভাবে চেয়ারে বসে পড়ি। আমি নাকি এমন অসাড় হয়ে গিয়েছিলাম যে কেউ নাকি আমাকে চেয়ার থেকে টেনে তুলতে পারেনি। যেমন তারা পারেনি পাঁচ বছর চার মাস তেরো দিনে, দিনের আলোয় এই দুনিয়ার বিপর্যয় ঠেকাতে। এরপরের ঘটনাগুলো লোকের মুখে শুনেছিলাম। ২৭ নং ক্রেন স্ট্রীটের বাড়িতে আমাকে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসা শুরু হলেও প্রায় সাড়ে ষোলো ঘণ্টা আমার কোনও হুঁশ ছিল না।
১৫ই মে ভোর ৩টে নাগাদ আমি চোখ খুলে কথা বলতে শুরু করি। কিন্তু আমার সেই বিচিত্র ভাষা আর চাউনি দেখে বাড়ির লোকজন আর ডাক্তার রীতিমতো ঘাবড়ে যায়। আমি যে স্মৃতিশক্তি লোপাট হবার ফলে নিজের পরিচিতি পুরোপুরি ভুলে গেছি এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত হয়। যদিও আমি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম স্মৃতি-বিভ্রাটের ব্যাপারটা গোপন করার। ওই সময় আমি আমার আশেপাশের লোকজনদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতাম। আমার মুখের পেশীর নড়াচড়ার সাথে সেই চাউনির কোনও মিল ছিল না। এমনকি আমার কথাবার্তাও কেমন অদ্ভুত হয়ে গিয়েছিল। গলা দিয়ে যে আওয়াজগুলো বের হত, সেগুলো শুনলে হয়তো কারোর মনে হবে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এই কটা ইংরেজি শব্দ আমি আয়ত্ত করতে পেরেছি।
প্রায় বছর কুড়ি বাদে ১৯০৮ সালে আর্কহ্যামের সেই বিচিত্র পেশেণ্টের রহস্যময় কথাগুলো অক্ষরে অক্ষরে ফলেছিল। প্রথমে ইংল্যান্ড ও পরে আমেরিকায়। আর্কহ্যামের ডাক্তারবাবুরাও নিশ্চয়ই টের পেয়েছিলেন। আমার শারীরিক শক্তি ফিরে এলেও হাত পা ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চালানোর জন্য আমাকে বিশেষভাবে তালিম দেওয়া হতো ডাক্তারবাবুদের কড়া তত্ত্বাবধানে। যখন আমি দেখলাম আমার স্মৃতি-বিভ্রাটকে লুকাবার যাবতীয় প্রচেষ্টা মাঠে মারা গেল, তখন বাধ্য হয়ে আমি হাল ছেড়ে দিলাম। ডাক্তারবাবুরা ভাবলেন ওই স্মৃতি-বিভ্রাটকে আমি মেনে নিয়েছি স্বাভাবিক হবার বদলে। ইতিহাস, বিজ্ঞান, ভাষা, শিল্প, উপকথা ইত্যাদি বিষয়ে আমার তুমুল আগ্রহ তাঁদের কাছে দুর্বোধ্য ঠেকল। আবার কিছু আচরণ নেহাতই খোকা-গিরি মনে হোল তাঁদের। বলাই বাহুল্য, এই পরস্পরবিরোধী ব্যাপারগুলো শুধুই জটিলতা বাড়ায়, আর কিছু নয়। এই সময় আমি লক্ষ্য করলাম কোনও অদ্ভুত ভাষায় কে যেন আমার মাথার ভেতর থেকে আমাকে ক্রমাগত নির্দেশ দিয়ে চলেছে। এই ভাষাটাকে পার্থিব কোনও কিছু দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। তাই এই ব্যাপারটা লুকিয়ে রাখাই শ্রেয় বলে মনে করি। অতীত বা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলা আমার কাছে ছেলেখেলার মতো হয়ে যায়। অবশ্য এই ভবিষ্যৎ বলাটা দু তিনবার মিলে যাওয়ায় রীতিমতো আতঙ্কের সৃষ্টি হয় চারপাশে। একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিলাম এই ভবিষ্যৎগুলো যখন বলতাম একটা ভুতুড়ে বিদ্যুতের ঝলক এসেই গায়েব হয়ে যেত। এই ব্যাপারটা আমি ছাড়া আর কেউ লক্ষ্য করে নি। এদিকে আমি চেষ্টা চালাতে লাগলাম যত জলদি পারিপার্শ্বিক সবকিছু শিখে নেওয়া যায়। দূরদেশ থেকে কোনও পর্যটক নতুন জায়গায় এলে যেমন করে আর কি। ডাক্তারবাবুদের অনুমতি পাবার পর আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইব্রেরীতে কাটাতে লাগলাম। আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে যোগাড় করা তথ্য আর আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে যেসব গুপ্তবিদ্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেই সব বিষয়ের ওপর লাগাতার গবেষণা চালিয়ে যাওয়া। যেগুলো পরবর্তীকালে রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করে।
ইতিমধ্যে সমসাময়িক মনোবিদদের কাছে আমি তখন রীতিমতো এক সেলেব্রিটি। দ্বৈত সত্ত্বার আদর্শ উদাহরণ হিসেবে আমাকে পেশ করে নানা জায়গায় বক্তৃতাও দেওয়া হয়। যদিও বক্তারা আমার আচরণ নিয়ে বক্তৃতায় যা যা বলেছিলেন সেগুলো আদৌ গুরুত্ব সহকারে বলেছিলেন নাকি মজা করে তা আমার কাছে আজও রহস্য। এইসময় কারোর কাছ থেকেই বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার পাইনি। আমার হাবভাব সবার মনেই ভয়ের সৃষ্টি করেছিল। আমি যেন সুস্থ স্বাভাবিক সবকিছু ছেড়ে ধীরে ধীরে এক আদিম অন্ধকার ও গোপন আতঙ্কের জগতে প্রবেশ করছিলাম। আমার নিজের পরিবারও কোনও ব্যতিক্রমী আচরণ করেনি। আমার স্ত্রী আমাকে দেখে ভয়ে শিউরে উঠত। যেন আমি কোন ভিনগ্রহের বাসিন্দা। ১৯১০ সালে তার সাথে আমার ডিভোর্স হয়। এমনকি ১৯১৩ সালে আমি স্বাভাবিক হবার পরেও সে আমার সাথে কোনও যোগাযোগ রাখেনি। এরপর আমার বড় ছেলে আর ছোট মেয়ে কারোর সাথেই আমার আর কোনোদিন দেখা হয়নি।
একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল আমার মেজো ছেলে উইনগেট। যার কথা এই লেখার গোড়াতেই আমি বলেছি। আমার আচরণ অচেনা লোকের মতো হলেও উইনগেট সেই ভয়টা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিল। হয়তো ওর কচি মাথা ওকে ভরসা জুগিয়েছিল যে একদিন ওর বাবা স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। পরে যখন আমি আদালতের নির্দেশে রেহাই পেলাম, আমি উইনগেটের কাছেই ছিলাম। উইনগেট আমাকে সমস্তরকম সাহায্য করে। অনেক পড়াশোনা, গবেষণা চালায় আমার ওই পরিস্থিতির ওপর। এখন ও মিসকাটোনিক ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক সে কথা তো আগেই বলেছি।
আমি যদিও এগুলো নিয়ে আর ভাবছিলাম না। কারণ সেই অভিশপ্ত বৃহস্পতিবারে আমার যা যা পরিবর্তন হয়েছিল সেটা আমার এই স্বাভাবিক সত্ত্বার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ১৯০৮ থেকে ১৯১৩ এই পাঁচ বছরে আমার জীবনে ঠিক কি কি ঘটেছিল হাজার চেষ্টা করলেও আমি আর মনে করতে পারব না। যদি পাঠকরা বিশেষ কৌতূহলী হন তাহলে পুরনো খবরের কাগজ বা সায়েন্স জার্নালের সাহায্য নিতে পারেন। আমি নিজেও তাই নিয়েছি। আমার যা কিছু পুঁজি ছিল খুব বুঝেশুঝে খরচা করতে হতো। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে গবেষণা, পড়াশোনা করতে হতো। যদিও আমি একাই যেতাম কিন্তু জায়গাগুলো এমন পাণ্ডববর্জিত যে যেতে প্রচুর সময় লাগতো, তাই খরচাও যেত বেড়ে।
১৯০৯ সালে হিমালয়ে প্রায় একমাস কাটাই। ১৯১১ নাগাদ আবার আরবের এক অচেনা মরুভূমিতে উটের পিঠে চেপে ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়ালাম। অবশ্য ওই অভিযানগুলো একেবারে ব্যর্থ হয়নি। কিছু জিনিস আমি শিখতে পেরেছিলাম। ১৯১২এর গ্রীষ্মে একটা চার্টার্ড জাহাজে করে উত্তরমেরু রওনা হলাম। গন্তব্য স্পিৎজ বার্গেনের উত্তরদিক। এবারেও হতাশ হলাম। ওই বছরেরই মাঝামাঝি পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় একটা পেল্লায় চুনাপাথরের গুহার সন্ধান পেলাম। গুহা তো নয় যেন গোলকধাঁধা ! আমার নিজের পায়ের ছাপ খুঁজতেই অসুবিধে হচ্ছিলো রীতিমতো। এদিকে আমার নিজের আচরণ দেখে আমি নিজেই ঘাবড়ে যেতাম। ইউনিভার্সিটির লাগোয়া যেখানে থাকতাম, সেখানে সব জায়গায় আমার উন্মাদনার ছাপ ছড়িয়ে ছিল। সবথেকে ঘাবড়ে দেবার মতো ব্যাপার ছিল সবসময় যেন কোনও দ্বিতীয় সত্ত্বা আমাকে গ্রাস করতে চাইছে। যেকোনো বই আমি এক ঝলক দেখেই মুখস্থ করে ফেলতাম। যে কোনও জটিল ধাঁধা যেভাবে মুহূর্তের মধ্যে সমাধান করে ফেলতাম, তা সত্যিই তারিফ করার মতো। এইসময় ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের কাছে আমার পড়ানো ও অন্যান্য আচরণ নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ আসতে লাগলো। যদিও এই চাকরি নিয়ে আমার তেমন কোনও মাথাব্যথা ছিল না। এদিকে আর একটা রিপোর্ট এলো যার বক্তব্য ছিল আমার সাথে বিভিন্ন গুপ্তবিদ্যার চক্রের নেতাদের যোগাযোগ আছে। ছাত্ররা সন্দেহ করতে লাগলো সমান্তরাল জগতের কোনও বাসিন্দাই এই গুপ্তবিদ্যার উপাসক। যদিও এগুলো গুজব হিসেবেই থেকে যায়। কিছুই প্রমাণ হয় নি। আমার ধারনা আমি লাইব্রেরী থেকে যেসব প্রাচীন আর নিষিদ্ধ বই নিয়ে পড়াশোনা আরম্ভ করেছিলাম সেগুলোই এই গুজবের উৎস। ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরী বলে কথা ! গোপন করা যায় নি। অবশ্য যে বইগুলো থেকে আমি নোটস নিতে শুরু করি, সেগুলো দেখে যে কোনও কারোরই সন্দেহ করার কথা। ডি এরলেটসের কাল্টস ডি গাউলস, লুডউইগ প্রিনের ডি ভারমিন মিস্ট্রিজ, ভন জানৎসের আনঅসপ্রেলিচেন কাল্টেন বা সেই উন্মাদ আরবি আব্দুল আলহাজারদের লেখা কুখ্যাত “নেক্রোনোমিকন”। নিঃসন্দেহে কোনও সক্রিয় অশুভ শক্তিই ওই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আমার ভেতর এক অন্য সত্ত্বার সৃষ্টি করেছিল।
১৯১৩-এর গ্রীষ্মকালে আমি গতানুগতিক কিছু বিষয়ে আগ্রহ দেখাতে শুরু করলাম। সবাই ভাবল খুব শিগগির হয়তো আমি স্বাভাবিক হয়ে উঠবো। পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ শুরু করলাম। যদিও মনোবিদদের কাছে এগুলো নিছক মেকি বলেই মনে হতে লাগলো। হয়তো তারা ভেবেছিল আমি নিজের পুরনো লেখালিখি থেকেই এগুলো আয়ত্ত করেছি।
আগস্টের মাঝামাঝি আমি আর্কহ্যাম থেকে ফিরে এসে আস্তানা গাড়লাম বহুদিন ধরে খালি পরে থাকা ক্রেন স্ট্রীটের বাড়িতে। ইউরোপ আর আমেরিকায় নতুন যত কিছু বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি পাওয়া যায় খুব সাবধানে আনাতে লাগলাম। অবশ্যই একেবারে নয়, বারেবারে। কারণ একটাই, যদি কোনও অতিচালাক জিনিসটা বুঝতে পেরে যায় তাহলে মহাসমস্যার সৃষ্টি হবে। যদিও একজন মজুর, কাজের লোক আর হাউস-কিপার ছাড়া ব্যাপারটা আর কেউ জানত না। আর তারা এব্যাপারে কিই বা বুঝত? কাঁড়ি-খানেক রড, হুইল আর আয়না সমৃদ্ধ খুড়োর কল। এই খুড়োর কল লম্বায় ছিল দু ফুট, চওড়ায় এক ফুট আর এর ঘনত্ব ছিল এক ফুট। এর কেন্দ্রের আয়নাটা ছিল উত্তল গোলাকার।
২৬শে সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধেবেলায় আমি হাউস-কিপারকে তার হিসাবপত্র বুঝিয়ে বিদায় করলাম। আর কাজের লোককে বললাম পরেরদিন দুপুরের আগে না আসতে। সে দিন অনেক রাত অবধি আমার ক্রেন স্ট্রীটের বাড়িতে আলো জ্বলেছিল। আর কথামতই এক রোগা, শ্যামলা ভিনদেশী গাড়ি চড়ে এসে হাজির হয়েছিল ক্রেন স্ট্রীটের বাড়ির সামনে। রাত একটা নাগাদ বাড়ির সব আলো জ্বলতে দেখা গিয়েছিল। রাত ২.১৫ নাগাদ একজন টহলদারি পুলিশ নাকি দেখেছিল গোটা বাড়িই অন্ধকার কিন্তু সামনে সেই ভিনদেশীর গাড়িটা ঠায় দাঁড়িয়ে। ভোর ৪টে নাগাদ হঠাৎ করেই গাড়িটা যেন গায়েব হয়ে যায়। সকাল ৬টা নাগাদ খসখসে, ভাঙা গলায় বিদেশি উচ্চারণে কেউ ডঃ উইলসনকে ফোন করে জানায় আমার অজ্ঞান হয়ে যাবার কথা। পরে ওই ফোন কলের হদিশ পাওয়া যায়। ফোনটা করা হয়েছিল বোস্টনের নর্থ স্টেশনের এক পাবলিক বুথ থেকে। দূরপাল্লার ওই কলের হদিশ পাওয়া গেলেও পাওয়া যায়নি ওই রহস্যময় ভিনদেশীর কোনও হদিশ।
ডঃ উইলসন যখন আমার বাড়ি এলেন, তখন আমি আরাম কেদারায় বেহুঁশ অবস্থায় পড়ে আছি। সামনে একটা টেবিল। ডঃ উইলসন টেবিলের ওপর অনেক আঁচড়ের দাগ দেখতে পান, যেন কোনও ভারি জিনিস ওপর আছড়ে পড়েছে। বিদঘুটে সেই খুড়োর কল মার্কা যন্ত্রটাও গায়েব। নিঃসন্দেহে সেই রোগা, শ্যামলা ভিনদেশীই ওটা নিয়ে গেছে। স্মৃতি-বিভ্রাটের পর আমি টুকরো টাকরা কাগজে যা যা লিখেছিলাম, তার সবকিছু পোড়ানো হয়েছে নিপুণভাবে। লাইব্রেরীর ঝাঁঝরি সেই কাগজ পোড়া ছাইয়ে ভর্তি। ডঃ উইলসন লক্ষ্য করেন আমি খুব অস্বাভাবিক ভাবে নিঃশ্বাস নিচ্ছি। তিনি একটা হাইপোডারমিক ইনজেকশন দেবার পর সেটা স্বাভাবিক হয়।
২৭ শে সেপ্টেম্বর বেলা ১১.১৫ নাগাদ জোরে ঝটকা মেরে নড়ে উঠি; এবং আমার সেই পাথুরে মুখে স্বাভাবিক অভিব্যক্তি ফিরতে থাকে। ডঃ উইলসনের মতে আমার ওই অভিব্যক্তিগুলো কোনও দ্বৈত সত্ত্বার অভিব্যক্তি ছিলনা। একেবারেই আমার নিজস্ব ও স্বাভাবিক অভিব্যক্তি। ১১.৩০ নাগাদ আমি বিড়বিড় করে কিছু বলতে আরম্ভ করি। ডঃ উইলসনের মতে সেগুলো কোনও পার্থিব ভাষা ছিল না। আমাকে দেখে মনে হচ্ছিল আমি যেন কোনকিছুর বিরুদ্ধে আপ্রাণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। দুপুরের দিকে বাড়ির কাজের লোক এসে দেখে আমি স্বাভাবিক ভাষায় বিড়বিড় করছি, “ওই সময়ের অর্থনীতি ছিল নিতান্তই একমুখী। জেভেলস ব্যাখ্যা করেন ওই সময় অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণকারী যে কোনও বাণিজ্যই বিজ্ঞানের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ওনার মূল প্রচেষ্টা ছিল বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির চক্রের সাথে সৌরকলঙ্কের ক্রমবৃদ্ধির মধ্যে একটা যোগসূত্র স্থাপন …”।
ন্যাথানিয়েল উইনগেট প্রিসলি হিসেবে আমি ফিরে এলাম নিজের মধ্যে। যদিও আমার কাছে দিনটা ছিল সেই অভিশপ্ত বৃহস্পতিবার। ১৪ই মে ১৯০৮। আমি অর্থনীতির ক্লাস নিচ্ছি।
এই অবধি পড়ার পর কেউ হয়তো ভাবছেন ১৯১৩ সালে আমার স্মৃতিশক্তি ফিরে আসার পর সবকিছু হয়তো খুব স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু আদপেই তা হয় নি। জীবন থেকে যে পাঁচ পাঁচটা বছর বেমালুম গায়েব হয়ে গেল, সেই ঘাটতি পোষাতে যে আমাকে কি পরিমাণ নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে তা কেউ ধারনাও করতে পারবেন না। ক্রেন স্ট্রীটের বাড়িতে বসে বসে এই পাঁচ বছর আমার আচরণ (অন্যদের থেকে শোনা) নিয়ে অনেক দার্শনিক ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করেছি, কিন্তু ধোপে টেকে নি। ভাবতে ভাবতে নিজেই অবাক হয়েছি আবার বিরক্তও হয়েছি। এই সময় আমার মেজো ছেলে আমাকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাবার সব রকম চেষ্টা চালিয়ে গেছে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ১৯১৪র ফেব্রুয়ারি নাগাদ ইউনিভার্সিটির চাকরিটায় আবার যোগ দিলাম। আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে লাগলাম যাতে সব ভণ্ডুল না হয়ে যায়। কোনোমতে যাতে চাকরিটা টিকে যায়। এই পাঁচটা বছর যে আমাকে কিভাবে ঘেঁটে দিয়েছে পদে পদে টের পেতে লাগলাম। আমার আগের মতো মনের জোর আর না থাকলেও নিজের হাবভাব যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চালিয়ে গেলাম। কিন্তু নানারকম অদ্ভুত চিন্তা আর দুঃস্বপ্ন আমাকে নাজেহাল করে রেখেছিল। এদিকে শুরু হল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। আমিও ইতিহাসের বিভিন্ন কালান্তরি ঘটনা নিয়ে ভাবতে বসে গেলাম (অবশ্যই একটু অন্যরকম ভাবে)। সময় সম্পর্কে আমার ধারনা পুরো পাল্টে গিয়েছিল। সময়ের বিবর্তন, ধারাবাহিকতা সব কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল আমার কাছে। সময় নিয়ে নিজেই এক নয়া কাল্পনিক ধারনা বানিয়ে বসলাম। যুগের ঘেরাটোপে আটকে না থেকে অতীত ও ভবিষ্যতের মধ্যে ছড়িয়ে থাকা সেই অনন্ত-ব্যাপী জ্ঞানের সমুদ্রে নিজেকে সঁপে দিলাম। এই বিশ্বযুদ্ধের পরিণতি কি হতে চলেছে তা যেন আমার সামনে ছবির মতো ভেসে উঠলো ভবিষ্যতের আলোয়। যুদ্ধের সব ভয়াবহ স্মৃতি মগজে জমা রইলো, এবং কিছু মানুষের ব্যক্তিগত স্বার্থ কি রকম কৃত্রিমভাবে এই যুদ্ধের মাধ্যমে সারা দুনিয়ার ভোল পাল্টে দিচ্ছে, সেটাও টের পেলাম। আমি অনেককেই আমার এই ধারনার কথা বলেছিলাম। কেউ কেউ আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকতো যেন আমিই পৃথিবীর সেই অষ্টম আশ্চর্য! গণিত বিভাগের কয়েকজন অবশ্য কিছুটা মন দিয়ে আমার এই ব্যাখ্যা শুনলেন এবং আপেক্ষিকতার ওপর নয়া নয়া আবিষ্কারের ওপর কিছু জ্ঞানও দিলেন আমাকে। ওনারা যে নিজেদের চেনা গণ্ডির বাইরে বেরোতে চান না সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। সময়কালের ওপর আইনস্টাইনের মতবাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও দু চার কথা শুনতে হল। বিশেষকরে ওই অতি-মাত্রিক মতবাদের সমালোচনা।
যাইহোক আবার নিজের কথায় ফিরে আসি। ওইসব দুঃস্বপ্নের ভয়ানক অনুভূতির প্রভাব আমার ওপর এতটাই পড়েছিল যে ১৯১৫ নাগাদ চাকরিটা ছাড়তে বাধ্য হলাম। যদিও ওই দুঃস্বপ্ন আমার রোজকার রুটিনে ঢুকে গিয়েছিল। কিন্তু যেটা বলার ব্যাপার সেটা হল, এইসময় ওই দুঃস্বপ্ন একটা নির্দিষ্ট আকার নিতে শুরু করল। টের পেলাম আমার স্মৃতি-বিভ্রাট কোন সাধারণ ব্যাপার ছিলো না। একটা অশুভ ইঙ্গিতের পূর্বাভাস ছিল মাত্র। আমার মনের ঘরে সেই দ্বিতীয় সত্ত্বা অনধিকার প্রবেশ শুরু করে দিল রীতিমতো। উদ্দেশ্য একটাই– আমার প্রাথমিক সত্ত্বাকে হটিয়ে দিয়ে সেই থাকবে আমার মগজের নিয়ন্ত্রক হিসেবে। ব্যাপারটা দাঁড়াল এই, একজন চালাতে লাগলো আমার শরীর আর একজন আমার মগজ। এই সময় আমি বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ঘেঁটে আমার এই আচরণ সম্পর্কে খোঁজ লাগালাম এবং আরও ভয় পেয়ে গেলাম। আমার আচরণ হয়তো অন্যদের পিলে চমকে দিয়েছিল, কিন্তু আমার ক্ষেত্রে যেটা হল আমার সচেতন আর অবচেতন মনের গণ্ডি গেল ঘুচে। বিভিন্ন অশুভ জ্ঞান আমার মাথায় কিলবিল করে ঘুরত। ওই অভিশপ্ত পাঁচ বছরে আমি বিভিন্ন বইপত্র ঘেঁটে আর নানা জায়গায় ঘুরে আমি যা যা তথ্য পেয়েছিলাম তার ওপর শুরু করলাম আরও পড়াশোনা আর গবেষণা। যদিও আমার আসন্ন সব বিপদ একইরকম অদ্ভুত ছিল না। এমন কিছু কিছু স্বপ্ন দেখতাম যেগুলো সেই আসন্ন বিপদ সম্পর্কে ধারনা আরও মজবুত করে তুলত। আমার মেজো-ছেলে উইনগেট আর কিছু পরিচিত মনোবিদ ছাড়া কাউকেই কিছু বলি নি। পাশাপাশি স্মৃতি-বিভ্রাটের বিভিন্ন কেস নিয়েও ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করে দিলাম নিজের সাথে মিলিয়ে দেখার জন্য। আগেই বলেছি সেই সময়কার মনোবিজ্ঞানের দুনিয়ায় আমি একজন সেলেব্রিটি হয়ে গিয়েছিলাম, এবং আমার এই দ্বৈত-সত্ত্বার কেস নিয়ে যে যে চিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী, পরা-মনোবিজ্ঞানী এমনকি প্রেত-তত্ত্ববিদরাও যা যা লিখেছিলেন বা বলেছিলেন সেগুলো পড়ে ফেললাম। প্রথমে একটু ভয়ের উদ্রেক হলেও সত্যি বলতে কি পরের দিকে কিছুটা সান্ত্বনাও পাই। কারণ আমি বুঝেছিলাম যে আমার ওই সব স্বপ্ন বা আচরণ কোন সাধারণ স্মৃতি-বিভ্রাটের কেস ছিল না। কারণ যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমি পাঁচ বছর কাটিয়েছি, তার কাছে এগুলো শিশু। কিছু চিকিৎসা হয়েছিল মান্ধাতা আমলের পদ্ধতিতে, আর কিছুটা ছিল সাংবাদিকদের রং চরানো আষাঢ়ে গপ্প। আরও বুঝলাম যে মানুষের বিবর্তনের বহুযুগ বাদে এই বিরল ঘটনা ঘটেছে, যার শিকার ও সাক্ষী শুধু আমি। হয়তো বিগত কয়েক শতকের ইতিহাস ঘাঁটলে আরও এরকম একটা দুটো কেস পাওয়া যেতে পারে আবার নাও পারে। এত ঘাঁটাঘাঁটি করে যেটা সারমর্ম বুঝলাম যে এই ঘটনার শিকার হয়েছে সবসময় কোন ভাবুক বা কল্পনাপ্রবণ ব্যক্তি– যেমন এক্ষেত্রে আমি। এবং সৃষ্টি হয় এক দ্বিতীয় সত্ত্বার, যা সচেতন ও অবচেতন মনকে শুরু করে দেয় নিয়ন্ত্রণ। এই অপার্থিব সত্ত্বার প্রভাবে গলা, আচার-আচরণ সবই যায় পাল্টে। আগ্রহ জন্মায় ইতিহাস, বিজ্ঞান, নৃতত্ত্ব, পুরাতত্ত্ব ও শিল্পকলা সম্পর্কে। এবং শুধু আগ্রহই জন্মায় না অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলে জ্ঞান আহরণ। এবং ফলস্বরূপ দেখা দেয় ভয়ঙ্কর সব স্বপ্ন, যার প্রভাবে স্বাভাবিক জীবন হয়ে ওঠে অস্বাভাবিক। এই অবধি জানার পর আমার সেই ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নগুলোর প্রকৃতি যে ঠিক কিরকম তা বুঝলাম। দু একটা কেস দেখলাম, যেখানে মহাজাগতিক যোগাযোগের কথাও বলা হয়েছে, বলাই বাহুল্য সেগুলোর সাথে নিজের ঘটনার মিল পেয়ে আমি আরও আগ্রহী হয়ে উঠলাম। তিনটে কেসে স্পষ্টভাবে কোন অজানা যন্ত্রের কথা বলা হয়েছে, আমার মনে পড়ে গেল আমার স্মৃতি ফিরে আসার আগের ঘটনা, এইরকম একটা যন্ত্র তো আমিও বানিয়েছিলাম ! যে মহাজাগতিক সংযোগের কথা বলা হয়েছে তা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ও অপার্থিব যন্ত্রণার সূত্রপাত ঘটাতে পারে। আরও কয়েকটা জিনিস লক্ষ্য করলাম। এই সবগুলো কেসেই আক্রান্ত ব্যক্তি মাঝারি মানের বুদ্ধিবিশিষ্ট, ওই ধরনের যন্ত্র তৈরির কথা ভাবাও তাদের সাধ্যের বাইরে। দ্বিতীয়ত এরা প্রত্যেকেই চালিত হয়েছে কোন অশুভ ভিনগ্রহী শক্তি দ্বারা। তারপরেই সেই স্মৃতি-বিভ্রাট ও মগজে থেকে যাওয়া সেই অপার্থিব আতঙ্কের ক্ষীণ স্মৃতি।
(চলবে )
[দ্বিতীয় পর্ব এই লিঙ্কে]
Tags: দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য (চিত্রচোর), ধারাবাহিক উপন্যাস, প্রথম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, সৌমেন চট্টোপাধ্যায়