সম্পাদকীয়

  • লেখক: টিম কল্পবিশ্ব
  • শিল্পী:

গুটি গুটি পায়ে চলতে চলতে পেরিয়ে এলাম অনেকটা পথ, পার হল আর একটা বছর। আবার এসেছে শরৎ ও তার আগমন বার্তা বয়ে, আকাশে বাতাসে বাজছে আগমনী সুর। গত দুটি উৎসবের মরশুম কেটেছে অতিমারীর সঙ্গে লড়াই করে। লক্ষ প্রাণের বলি নিয়ে অবশেষে এই মরশুমে অতিমারী শান্ত হওয়ার আভাস দিয়েছে। জনজীবনে এসেছে নতুন আরম্ভের আশ্বাস। নতুন উদ্দীপনায় জেগে উঠেছে কল্পবিশ্ব ও বাংলা কল্পবিজ্ঞানও। বহু মানুষের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা পাথেয় করে আবার ছন্দে ফিরেছে কল্পবিশ্ব। অনেক যত্নে ও পরিস্রমে আবার নিয়মিত ছন্দে প্রকাশিত হয়েছে বিশ্ব কল্পসাহিত্যের দুই উজ্জ্বল নক্ষত্র স্তানিশল লেম ও রে ব্র্যাডবেরি-কে নিয়ে কল্পবিশ্বের দুটি নিয়মিত সংখ্যা। এতেই শেষ নয়, বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্য এই বছর সাক্ষী হয়েছে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের। বাংলায় এই প্রথম প্রকাশিত হয়েছে রে ব্র্যাডবেরি ফাউন্ডেশন অনুমোদিত লেখকের তিনটি শ্রেষ্ঠ গ্রন্থের অনুবাদ, যা বাংলা তথা অন্য ভারতীয় আঞ্চলিক ভাষায় এই প্রথম এই ধরনের উদ্যোগ। এই বছরের সব কটি সংখ্যা অনেক যত্নে ও অক্লান্ত পরিশ্রমে সময় মতো প্রকাশ করবার জন্য কল্পবিশ্বের বর্তমান টিম অর্থাৎ সন্তু বাগ, দীপ ঘোষ, গৌতম মন্ডল, প্রমিত নন্দী ও সুপ্রিয় দাসের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য একটা বিশেষ ধন্যবাদ অবশ্যই প্রাপ্য।

এবার দিই আর একটি আনন্দ সংবাদ; বাংলা কল্পবিজ্ঞানের স্বর্ণযুগের যে পত্রিকাটির শ্রেষ্ঠত্ব কল্পবিজ্ঞানপ্রেমী মাত্রেই একবাক্যে স্বীকার করেন, সেই স্বনামধন্য আশ্চর্য পত্রিকার প্রথম বর্ষ অর্থাৎ ১৯৬৩ সালের পুজোবার্ষিকী এই বছর পুনরায় প্রকাশিত হয়েছে। ওনেক যত্নে বইটি ছাপা হয়েছে ১৯৬৩ সালের প্রোডাকশনের সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্য রেখে যাতে পাঠক বইটি হাতে নিয়ে অনুভব করতে পারেন এক বিগত অতীতের স্বাদ। কল্পবিজ্ঞান পত্রিকা হিসেবে যে পথিকৃত উদ্যোগকে আমরা আমাদের আদর্শ হিসেবে মেনে এসেছি, তার এই নতুনভাবে আত্মপ্রকাশে আমাদের আনন্দ ভাষার বর্ণনা করা সম্ভব নয়।

বাংলা কল্পবিজ্ঞানের অতীতের প্রসঙ্গ যখন উঠলই তখন আর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ না করলেই নয়। এই বছরেই প্রকাশিত হয়েছে বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্য ও তার স্বর্ণযুগের ইতিহাস সম্পর্কে এক প্রামান্য তথ্যচিত্র। প্রধানতঃ কল্পবিশ্বেরই প্রস্তাবনায়, নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বোধিসত্ত্ব চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ও অরুণাভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচালনায় নির্মিত এই তথ্যচিত্র ইতিমধ্যেই প্রদর্শিত হয়েছে দেশ-বিদেশের বহু চলচ্চিত্র উৎসবে। জিতে নিয়েছে একাধিক পুরস্কার। টিম কল্পবিশ্বের কাছে এই ঘটনা অত্যন্ত গর্বের বিষয় কারণ আমরা জড়িয়ে ছিলাম এই চলচ্চিত্র নির্মানের প্রতিটি অধ্যায়ের সঙ্গে। অনেক অধ্যাবসায়ে ও পরিশ্রমে কল্পবিশ্ব টিমের শ্রী সন্তু বাগ, দীপ ঘোষ ও আরো অনেকে বাংলা কল্পবিজ্ঞানের স্বর্ণযুগ সংক্রান্ত বহু অজানা ঘটনা, তথ্য ও দলিল খুঁজে বার করে তুলে দিয়েছে এই তথ্যচিত্র নির্মাতার হাতে। চিত্রগ্রহণে সাহায্য করা ও বিভিন্ন ব্যাবস্থাপনায় হাত লাগিয়েছিল কল্পবিশ্ব টিমের একাধিক সদস্য। কাজেই এই তথ্যচিত্রের সাফল্যে আজ আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।

এবার আসি এই সংখ্যার কথায়। প্রতি বছরের মতো এবারের কল্পবিশ্ব পুজো সংখ্যাও আমরা সাজিয়েছি অনেক যত্নে ও পরিশ্রমে। পুজো সংখ্যায় আমরা বাংলার কল্পবিজ্ঞানপ্রেমীদের জন্য নিয়ে এসেছি বর্তমান কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের দুই দিকপাল লেখক, কেন লিউ এবং নীল গাইম্যান-এর দুটি চমকপ্রদ গল্পের বঙ্গানুবাদ। এই দুই স্বনামধন্য লেখকই যে আমাদের এই দুটি গল্প অনুবাদ করতে অনুমতি দিয়েছেন তার জন্য ওঁদের প্রতি আমরা অশেষ কৃতজ্ঞ। এছাড়াও প্রতি বছরের মতো এবারো পুজোয় থাকছে একগুচ্ছ হারিয়ে যাওয়া গল্পের পুনঃপ্রকাশ, সেই তালিকায় রয়েছেন অদ্রীশ বর্ধন, রণেন ঘোষ, সিদ্ধার্থ ঘোষ, নিরঞ্জন সিংহ প্রমুখ। এ ছাড়া শুরুর দিন থেকে কল্পবিশ্ব যাদের স্নেহধন্য, সেই দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য্য, সুমিত বর্ধন ও ঋজু গাঙ্গুলী এবছরও আমাদের কল্পবিশ্বকে সাজিয়ে তুলেছেন তাদের সৃষ্টির ছোঁয়ায়।

এই বছরের পুজো সংখ্যায় একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল আমরা বহু গল্প পেয়েছি আমাদের বাংলাদেশের লেখক বন্ধুদের কাছ থেকে। এ-বছরে প্রকাশিত মৌলিক উপন্যাসগুলির অধিকাংশই এসেছে ওপার বাংলার লেখকদের থেকে যা ওপার বাংলার পাঠক ও লেখকদের কাছে কল্পবিশ্বের জনপ্রিয়তার সাক্ষ্য বহন করে। সীমান্ত পারের বন্ধুদের থেকে এই ভালোবাসার প্রাপ্তিতে আমরা আপ্লুত। অনেক মানুষের কথাই হয়তো আলাদা করে সম্পাদকীয়তে বলা হল না, কল্পবিশ্বের সূচিপত্রে চোখ রাখলেই পাঠক উপলব্ধি করবেন কত লেখক এবার কল্পবিজ্ঞান ও কল্পবিশ্বকে ভালোবেসে আমাদের সঙ্গে থেকেছেন ও কল্পবিশ্বকে সাজিয়ে তুলেছেন তাঁদের অনবদ্য সৃষ্টির ছোঁয়ায়।

পরিশেষে আসছি কল্পবিশ্বের এবারের সংখ্যার অলঙ্করণের বিষয়ে। প্রত্যেক বছরের মতোই শ্রী উজ্জ্বল ঘোষ তাঁর স্বকীয় ও স্বতন্ত্র ধারার ছাপ রেখে আমাদের আরো একবার উপহার দিয়েছেন একটি অনিন্দ্য সুন্দর প্রচ্ছদ। তবে এইবার পুজো সংখ্যার একটি বিশেষ দিক হল গল্পের অলংকরণ। আপনারা হয়তো অনেকেই ইতিমধ্যে লক্ষ করেছেন যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মাধ্যমে সৃষ্ট ছবি ইতিমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ঝড় তুলেছে। মিডজার্নি বা ডাল-ই জাতীয় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সৃষ্ট ছবিতে সারা বিশ্বের নেট মাধ্যম ছেয়ে গেছে গত কয়েক মাসে। সেই ধারায় প্রভাবিত হয়ে কল্পবিশ্বও এবারে পুজো সংখ্যায় বেশির ভাগ গল্পের প্রচ্ছদ এই ধরনের ছবি দিয়ে সাজিয়ে তুলেছে। আমাদের এই পরীক্ষামূলক প্রয়োগ কতটা সফল হয়েছে তার বিচার পাঠকরাই করবেন। কল্পবিশ্ব সর্বদাই পাঠকদের জন্য নতুন কিছুর আস্বাদ পরিবেশনে দায়বদ্ধ। সেই দায়বদ্ধতার থেকে আমরা ভবিষ্যতেও এই ধরনের নতুন কিছু পরিবেশন করে যাবো।

কল্পবিশ্ব সম্পাদকের দফতর থেকে এবারের মতো এটুকুই; সকলে কল্পবিশ্বর আস্বাদ গ্রহণ করুন, সকলের উৎসবের মরশুম খুব ভালো কাটুক আর জীবন হয়ে উঠুক আনন্দময় ও কল্পবিজ্ঞানময়। ধন্যবাদ!

Tags: সপ্তম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, সম্পাদকীয়

Leave a Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!