কল-স্বর

  • লেখক: শিবরাম চক্রবর্তী
  • শিল্পী: টিম কল্পবিশ্ব

অবিনাশের আপিসে এসেছে অভিলাষ। সাড়ে চারটা পার তখন, ছুটি হব-হব, কিন্তু তখনো অবিনাশের হাত কামাই নেই। তখনো সে নিজের মেশিনে বসে; মেশিনের মতই কাজ করে যাচ্ছে দু’হাতে।

রাশি রাশি আঁক। লম্বা লম্বা যোগ। বড়ো বড়ো হিসেবের ফিরিস্তি। সে সব চক্ষের পলকে দেখতে না দেখতে মেশিনের সাহায্যে কষিত হয়ে কাগজের পিঠে বসিত হচ্ছে। দেখলে তাক্‌ লাগে।

তাক্‌-লাগানো এই আঁকের কলটার নাম কম্‌প্টোমিটার। বড়ো বড়ো আপিসে থাকে। বারো জন হিসেবীর কাজ একটা মেশিনে মাথা খাটিয়ে নিকেশ করে— মিনিটের মধ্যে, একলা। কলকব্জার এই মাথা, গোড়ায় মানুষের মাথার থেকে বেরুলেও, এখন মানুষের মাথাকে টেক্কা মারছে।

অভিলাষ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল— তাকিয়ে তাকিয়ে। দেখতে দেখতে ছুটির ঘণ্টা বাজলো। নিজের কাজ বাজিয়ে, কাগজপত্তর গুছিয়ে রেখে উঠে পড়লো অবিনাশ। বেরিয়ে পড়লো দুই বন্ধুতে আপিস থেকে। জমলো গিয়ে এস্‌প্ল্যানেডের কাফেটেরিয়ায়।

‘ইস্! মেশিনের এ রকম মাথা!’ খাবার টেবিলে বসেও অভিলাষের মাথায় কম্‌প্টোমিটার ঘুরছে তখনো— ‘ভাবতেই পারা যায় না! বড়ো বড়ো যোগ-বিয়োগ ঠিক দিচ্ছে মিনিটের মধ্যে। ঠিক ঠিক দিচ্ছে তার ওপর।’

‘ঠিকে ভুল হয় না কখনো।’ অবিনাশ তার ওপরে যোগ দেয়।

‘বিজ্ঞানের কী বাহাদুরি! দেখে অবাক হতে হয়।’ অভিলাষ বলে।

‘এ আর কী দেখলি!’ অবিনাশ চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে বাৎলায়— ‘মেশিনে কথা কয় তা জানিস? মেশিনের সঙ্গে চালাকি না! চাট্টিখানি নয়। মেশিন কথা কইছে ভাবতে পারিস এ কথা?’

কেন ভাবতে পারবে না শুনি? সে কথা কি অভিলাষের অবিদিত? গ্রামোফোন, রেকর্ড, রেডিও— এদের বোল্‌চাল কি জানা নেই ওর? কী ওগুলো? মেশিন্‌ই তো? মেশিন ছাড়া কী আর?

আরে না না, তার কথা বলছে না অবিনাশ। এমন মেশিন যা মানুষের মতই কথা কয়, কথার জবাব দেয়, ঠিক তার মতই বুদ্ধির পরিচয় দিয়ে থাকে। টেলিফোনের কল্‌ ধরে, খবরা-খবর লেনদেন করে, ঘরবাড়ি পাহারা দেয়— সেই রবট্‌-মানুষের কথাও সে বলছে না। এমন মেশিন যা মানুষের অন্তস্তল অবধি দেখতে পায়, ভূত, ভবিষ্যৎ, বতমান সব নখদর্পণে, আর সমস্ত ঠিক ঠিক বাৎলায়।

অভিলাষ চোখ বড় করে তাকায়— ‘আছে নাকি এমন মেশিন?’

‘আছে বলে আছে! মানুষের চোখে ধূলো দেয়া যায়, কিন্তু তাদের চোখে? অসম্ভব। তাদের সঙ্গে চালাকি চলে না। একবার তাদের একটার সঙ্গে টক্কর দিতে গিয়ে— না বাবা, কলদের আমি রীতিমত সমীহ করে চলি।’

‘কি রকম, শুনি?’ শোনবার জন্যে হাঁ করে অভিলাষ। —‘সেই মেশিনের সঙ্গে কোথায় তোর-মুলাকাৎ হোলো? হঠাৎ যে কলদের এত খাতির করতে গেলি? বল্‌ আমায় সমস্ত। বিলেতেই বুঝি?’

‘বিলেতে নয় রে, নিউইয়র্কে।’ অবিনাশ প্রকাশ করে। —‘জাহাজের চাক্‌রি করি তখন। ইউরোপ, আমেরিকা, ফার ঈস্‌টের— এ বন্দর থেকে সে বন্দরে— মালের যোগানদারি কাজ আমাদের। এক এক বন্দরে এসে আমাদের জাহাজ লাগে। মাল খালাস হয়, নতুন মালের আমদানি আসে— কিছুদিনের জন্যে নোঙর ফেলে খাড়া থাকে জাহাজ। জাহাজ বন্দরে ভিড়লে কাজের ভিড় থাকে না। হপ্তা দু’ হপ্তার ছুটি মেলে তখন। সবাই মিলে ডাঙায় নেমে পড়ি আমরা। লাগাও সহরে গিয়ে ফূর্ত্তি লাগাই। সময় থাকলে কাছাকাছি আরো দু’-একটা সহর ঘুরে আসা যায়— সেই ফাঁকে দেখে আসা যায় নানান্‌ জায়গা। বুঝলি ভাই অভিলাষ, এতো তো সহর দেখলাম, নিউইয়র্কের মতন ওরকম আর দেখি নি— অমনটি আর হয় না। কী বর্ণনা দেব তোকে নিউইয়র্কের—’

‘জানি জানি।’ কাহিনীর গোড়াতেই অভিলাষ আর আগাতে দেয় না— ‘আমারও দেখা সব— এই চোখেই। সিনেমার ছবিতে দেখেছি ঢের ঢের! আমেরিকার কোন্ সহরটা দেখি নি? কী দেখতে বাকী আছে? হলিউডের দৌলতে এমন কি পিকিং হংকং পৰ্য্যন্ত দেখলাম! গুড্‌ আর্থ্‌? গুড আর্থ্‌ দেখেছিলিস্‌? বিলকুল চায়না।’

না, নিউইয়র্কের কাহিনী শুনতে চায় না অভিলাষ। নগর-বৰ্ণনার একটি বর্ণও সে শুনতে রাজি নয়। শুধু অভিলষিত খবরটিই সে জানতে চায়— ‘তোর সেই আলাপী মেশিনটার কথা বল্‌ আগে।’

‘বলছি তো, তখন আমি নিউইয়র্কে গ্র্যাণ্ড সেন্ট্রাল্‌ ষ্টেশনে বসে। পাঁচটা পঁয়তালিশের গাড়িতে বোসটনে যাবো। বোম্বের আলাপী আমার এক বন্ধু সেখানে থাকেন, তাঁর বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছি। বসে আছি ইষ্টিশনে, বসে বসে দেখছি মানুষের আনাগোনা। আমার একটু দূরে একটা মেশিন। আমাদের হগ্‌ সহেবের বাজারে ওজন নেবার যে অটোমেটিক যন্ত্রটা আছে না?— সেই যাতে আনি ফেলে দিলেই ওজন বলে দেয়? —অনেকটা সেই ধরণের। হঠাৎ দেখি, একটা মোটাসোটা লোক হন্তদন্ত হয়ে ভিড়ের ভেতর থেকে বেরিয়ে এল— এসে সেই মেশিনটার কাছে গিয়ে দাঁড়ালে। তার তলায় পাদপীঠের মতন যে একটুখানি জায়গা ছিলো, খাড়া হোলো সে তার ওপর। মেশিনের গায়ে গর্ত্তের মত একটা ছিলো, তার মধ্যে একটা সেন্ট্‌ ফেলে দিলে—’

‘একটা সেন্ট্‌ নয়, একটু সেন্ট্‌।’ অভিলাষ শুধরে দিতে যায়। ‘ব্যাকরণ ভুল হচ্ছে তোমার। গন্ধদ্রব্য, তরলসার— এ সব জিনিষের একটা হয় না, একটু হয়। যেমন ধরো, জল—। জলকে ধর্তব্য করে, দৃষ্টান্ত দিয়ে, জলের মতই সে সোজা করতে চায়— ‘আমরা কি একটা জল বলি? বলি, একটু জল।’

কিন্তু তারপরেও তার একটা (কিংবা একটু) খটকা থাকে— ‘কিন্তু ভাই, মেশিনের মধ্যে গন্ধ ঢালবার মানে কি? তার কি নাক-মুখ আছে?’

‘সে সেন্ট্‌ নয় গো পণ্ডিত, সে সেন্ট্‌ নয়। মহাপুরুষদের আমরা যে সেন্ট্‌ বলি তাও না। এক ডলারে একশ’ সেন্ট্‌ হয়— জানিস্‌ নে? এ হচ্ছে সেই সেন্ট্‌। আমাদের আনির মতন নিকেলের চাকতি। যাক, শোন্ তারপর। সেন্ট্‌টা চালান্‌ করে লোকটা পাদপীঠের সেন্টারে গিয়ে দাঁড়ালো। কী আশ্চয্যি, পর মুহূর্তেই লাউড্‌ স্পীকারে যন্ত্রটার গলা খন খন করে উঠলো— তোমর ওজন হচ্ছে একশ’ সত্তর পাউণ্ড। নাম— বেসটার চাওয়েল্‌স্‌। পাঁচটা কুড়ির গাড়িতে তুমি ব্রুষ্টারে যাচ্ছো। চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম্‌। ভালো কথা, ক্যাথারিন্‌ তোমাকে যে উল্‌ নিয়ে যেতে বলেছিলো তা তোমার মনে আছে তো?

‘ঐঃ যাঃ! উল কিনতে তো ভুলে গেছি!’ বলেই লোকটা এক লাফে নেমে পড়লো মেশিনের থেকে। হন্তদন্ত হয়ে ছুটলো আবার— ষ্টেশনের বাইরে।

‘আমি তো তাজ্জব বনে গেছি। “মানুষ আমরা নহি তো মেষ।” মেশিন্‌ও নই। কিন্তু মেশিন যে মানুষকে হার মানাবে এমন কথা ভাবাও যায় না। ক্যাথারিনের ছেলের ক্যাঁথার জন্যে কি তার বাবার গলাবন্ধ বুনতে উলের দরকার, তার খবরদারি করবে বেপাড়ার এক মেশিন? জানা নেই, শোনা নেই— বিল্‌কুল্‌ অচেনা, বেস্‌টারের বেস্ট ফ্রেণ্ডের মধ্যেও নয়, চাওয়েল্‌স্‌ এর পারিবারিক চৌহদ্দীতে গতিবিধিও নেই যার— পয়সা দিলে বড় জোর সে ওজন জানাতে পারে, কিন্তু তাই বলে কি প্রয়োজনও জানাবে? আদার ব্যাপারীর কাছে জাহাজের খবর?

‘জাহাজের ব্যাপারী হ’লেও তাক্‌ লেগে গেল আমার। অবাক হয়ে ভাবছি, এমন সময়ে এক মেম, বেশ নাদুসনুদুস, এসে দাঁড়াল সেই মেশিনটার ওপর।

‘নিকেলটা ফেলতে না ফেলতে বিটকেল আওয়াজ বেরিয়েছে মেশিনটার— আপনার ওজন এখন দু’শো চল্লিশ পাউণ্ড। গত মাসের থেকে চার পাউণ্ড কমেছে। এজন্য, মিসেস্‌ উইলমট, আপনাকে আমার অভিনন্দন। আপনার গাড়ি ছাড়ো ছাড়ো। সাত নম্বর গেট দিয়ে ছুটুন এক্ষুণি— যদি পাঁচটা তিরিশের গাড়ি ধরতে চান।

‘মেয়েটি তখনই নেমে পড়লো মেশিনের থেকে ফিরে তাকে ধন্যবাদ জানাবারও ফুরসৎ পেল না। সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে ছুট লাগালো থপ্‌ থপ্‌ করে।

‘আমি আর বসে থাকতে পারলাম না। উঠে গেলাম মেশিনটার কাছে। কাছে গিয়ে ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম। গ্লাস কেসের ভেতর দিয়ে বেশ নজর যায়। অনেক ঘোর-প্যাঁচ আছে তার ভেতরে, চাকা আর জড়ানো তার। ইলেকট্রিক মোটর, কয়েল্ড কয়েল, রেডিয়ো পার্টস, ফোটো সেল্‌স্‌— দেখলাম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। সব নিয়ে এক ঘোরালো ব্যাপার।…’

‘তোমার কাছে কোন সেন্ট ছিল না?’ অভিলাষ জিজ্ঞেস করে।

‘কেন থাকবে না? এমন কিছু আমি ডেভিল নই। সেন্টরা আমার কাছে হরদম আসে যায়। একটা সেন্ট খসিয়ে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের এই বাচ্চাটাকে পরখ করার আমার সখ হোলো। তার ঘাড়ে একবার চেপে দেখার আশ্‌টা আমিও মিটিয়ে নিলাম—

‘দাঁড়াতে না দাঁড়াতে আওড়াতে শুরু করেছে মেশিনটা—

‘তোমার ওজন হচ্ছে একশ’ ত্রিশ পাউণ্ড— তার মধ্যে আট পাউণ্ড তোমার ওভার-কোটটারই ওজন। আর একটু মোটা হওয়ার দরকার তোমার। ভোজন বাড়াও বাপু, ওজন বাড়বে তা হ’লেই। তুমি একজন বাঙালী। বিক্রমপুরের বাঙাল। তোমার নাম ওবিনাশ ট্রাফ্‌ডার।’

‘আমি বাধা দিয়ে বল্লাম, উঁহু, ভুল হচ্ছে, ঠিক ঠিক হোলো না। ট্রাফ্‌ডার নয়, তরফদার। বলব কি ভাই, মেশিনটা আমার কথার জবাব দিল চোটপাট— বল্লে, ও একই কথা। ট্রাফ্‌ডারও বা টারাফডারও তাই।’

অভিলাষ বলে— ‘তোমারও যেমন! ওদের সঙ্গে তক্কাতক্কি করতে গেছ! সাহেবরা কি ত-উচ্চারণ করতে পারে? উচ্চারণ শুদ্ধু হতে এখনো ঢের দেরী ওদের।’

‘যা বলেছিস। আমিও মেশিন সাহেবকে বেশী আর ঘাঁটাই নে। তকার নিয়ে বাজে তকবার করে কী হবে? মেশিনটা থামে নি তখনো— বলেই চলছে একটানা,— তা বাপু, ঠিক ঠিক ট্রাফ্‌ডার না হলেও তুমি একজন ওস্তাদ লোক। ফাঁকি দিতে ওস্তাদ। সেন্ট বলে আমার কাছে একটা পাকিস্তানি আনি চালিয়েছো, ভাবছো তা কি আমি টের পাই নি? কিন্তু সে কথা যাক্‌, বোস্‌টনে যাবার পাঁচটা পঁয়তাল্লিশের গাড়ী যদি ধরতে চাও তা হ’লে আর দেরি কোরো না। তের মিনিট মাত্র বাকী আছে তোমার ট্রেনের। চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম।’

‘তের মিনিট, সে ঢের সময়। টিকিট কাটা ছিলো আমার। আমি বল্লাম— দাঁড়াও! তোমায় দেখাচ্ছি। মজা টের পাবে। মেশিনটাকেই বল্লাম, কিন্তু নিজের মনে মনে। তোমাকে যদি না বেকুব বানাতে পারি তো আমি বাংলা দেশের ছেলে নই। তক্ষুনি চলে গেলুম এক সালুনে— সেখানে গিয়ে আমার গোঁফ জোড়া কামিয়ে ফেল্লাম। তারপর পোষাক বদলালাম আমার। একটা পরচুলা আঁটলাম মাথায়। হাতে নিলাম একটা বেলুন। এই ভাবে ভেক বদলে ফের ঢুকলাম ষ্টেশনে। এবারটি বাছাধন? চিনতে পারবে আমায় আর? গোঁফ বাদ দিয়ে এই পোষাকে আর এমন পরচুলায়? অন্য পর কি, আমাকে দেখে আমার বাবাও চিনতে পারবেন না। হুঁ হুঁ!

‘ছদ্মবেশ ধরে আপন মনে হাসতে হাসতে গিয়ে দাঁড়িয়েছি মেশিনটার ওপর। নিকেলটা দিয়েছি ওর ফোকরে। দাঁড়িয়ে আছি চুপ করে। ওটাও চুপচাপ। উচ্চবাচ্যই নেই ওর কোন!

‘হ্যাঁ, হয়ে গেছে বাছাধনের! যেমনি না একটু ভোল ফিরিয়ে আসা আর সমস্ত গোল! আর ওর মুখে কোন বোল নেই। টু-শব্দটিও না। চাকাওয়ালা ঘোরালো তারের বৈদ্যুতিক ব্রেনের সাধ্যি হোলো না যে আমার ছদ্মবেশ ধরতে পারে। আমার সঙ্গে চালাকি?

‘জয়গর্বে মশগুল হচ্ছি মনে মনে, ও মা, এমন সময়ে ঘ্যানঘ্যান করে উঠেছে মেশিনটা:

‘তোমার ওজন একমণ বাইশ পাউণ্ড। ওভার কোটটা ছেড়ে এসেছো বলে আট পাউণ্ড কম আগের থেকে। গোঁফটা ফেলে আসার জন্য এমন কিছু ইতর-বিশেষ হয় নি। যে ছিটে-ফোঁটা কমেছিল তোমার হাতের বেলুনে সেটা পুষিয়ে গেছে। তুমি একজন বাঙ্গালী; তোমার নাম হচ্ছে ওবিনাশ ট্রাফডার। ট্রাফডার কি টারাফ্‌ডার যা তোমার অভিরুচি— যেটা বল্লে তুমি খুসি হও। ফাঁকি দিতে ওস্তাদ বলেছিলুম তোমায়, তাই না? কিন্তু বোকামি করে ফের আমায় ফাঁকি দিতে এসে পাঁচটা পঁয়তাল্লিশের গাড়ী তুমি হারিয়েছ। সেই সঙ্গে দুঃখের সঙ্গে জানাতে বাধ্য হচ্ছি, সালুনে তোমার যে ওভারকোট ছেড়ে এসেছো সেখানাও তুমি হারালে। এইমাত্র সেখানকার আর এক খদ্দের সেটা নিজের গায়ে চড়িয়ে সট্‌কান দিচ্ছেন। সেই ওভারকোটের পকেটে আছে তিনশ’ পঞ্চাশ ডলার নগদ, তোমার ট্রাভলার্‌স্‌ চেক্-বই, পার্কার ফিফ্‌টি ওয়ান, আর তোমার পাস্‌পোর্ট্‌ এবং অন্যায় কাগজপত্র…’

‘কিন্তু তার ফিরিস্তি শোনার জন্য আমি আর দাঁড়াই নে। ছুট্‌ মারি সালুনের দিকে। পরচুলা পড়ে খসে। কিন্তু না হ’ক হয়রানি কেবল!’

‘পেলে না তোমার কোট?’ অভিলাষ জিজ্ঞেস করে।

‘ট্রেনও হারালাম— আর আমার ওভারকোটও।’ পুরানো স্মৃতি উথলে উঠে দীর্ঘনিশ্বাস পড়ে অবিনাশের। —‘তারপর থেকে মেশিনকে আমি ডরাই। মানুষের কাছে যদি বা কোন চাল মারি কখনও— মেশিনের কাছে একদম কোনো বেচাল নয়!’

পুনঃমুদ্রিত, প্রথম প্রকাশ: রামধনু, বৈশাখ ১৩৫৯

বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

Tags: কল্পবিজ্ঞান গল্প, গল্প, শিবরাম চক্রবর্তী, ষষ্ঠ বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা

One thought on “কল-স্বর

  • October 17, 2021 at 1:58 pm
    Permalink

    অপূর্ব হাস‍্যরসাত্মক কাহিনী।।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published.

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!